২০১৬ সালে বিয়ে হয়েছিল মুন্সীগঞ্জের সুজন দাস ও স্মৃতি রানীর। বছর দুয়েকের মাথায় এই দম্পতির কোল আলো এলো পুত্রসন্তান সুস্ময়। নিম্নমধ্যবিত্ত এই পরিবারে আনন্দ যেন ধরছিল না। আর দশটি শিশুর মতো স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে উঠছিল সুস্ময়।
অন্য জীবন
মেয়ের জন্য মায়ের ফাউন্ডেশন
পিন্টু রঞ্জন অর্ক ও মুহাম্মদ শফিকুর রহমান

পপি সাহা নামের খুলনার আরেকজন অভিভাবক বললেন, ‘আমার ছেলে ইভান হাইপার ছিল। এই ফাউন্ডেশনে এক বছর স্কুলিংয়ের পর এখন ওকে নরমাল স্কুলে ভর্তি করিয়েছি।’
শুধু সুস্ময় বা ইভান নয়, অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন এমন অন্তত ১৭টি শিশুকে মূলধারার বিদ্যালয়ের উপযোগী করে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে আলোর পাখি ফাউন্ডেশন। এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার অভিভাবককে দিয়েছে কাউন্সেলিং সেবা।
ধকল সহ্য হতো না
এই প্রতিষ্ঠান গড়ার পেছনে আছে এক মায়ের নিরন্তর লড়াইয়ের গল্প। নাম তাঁর ঝুমনা মল্লিক ঝুমি। জন্ম পুরান ঢাকার সূত্রাপুরে। ভীষণ দুরন্ত ছিলেন শৈশবে। সাইকেলে চষে বেড়িয়েছেন পুরান ঢাকার অলিগলি। ছেলেদের সঙ্গেই খেলতেন বেশি। ডাকনাম ছিল মুন্নি। ডানপিটে স্বভাবের কারণে নানুর বাসায় তাঁকে ‘মুন্না ভাই’ বলে ডাকত। এসএসসির পর হোপ টেকনোলজি নামের একটি ট্রেনিং সেন্টারে কম্পিউটার শিখলেন। এইচএসসির পর মাওলা বখশ সরদার দাতব্য হাসপাতালে প্যারামেডিক কোর্স করলেন। এরপর ভর্তি হলেন কবি নজরুল কলেজে ইংরেজি বিভাগে। স্নাতক সম্পন্নের আগেই সেই হাসপাতাল থেকে চাকরির অফার পেলেন। চাকরিতে যোগদানের সুবাদে নিয়মিত ক্লাস করা হতো না। এক পর্যায়ে ড্রপ-আউট হলেন। পরে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ডিগ্রি সম্পন্ন করলেন। চাকরিরত অবস্থায় স্নাতকোত্তরও করলেন।
২০০৯ সালে ঝুমির কোল আলো করে এলো ফুটফুটে এক কন্যাসন্তান। নাম লাবিবা খান। মেয়ের বয়স যখন পাঁচ মাস তখন হঠাৎ একদিন খেয়াল করলেন অস্বাভাবিক কিছু লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। মাথার গড়নও বয়সের তুলনায় বেশ ছোট। চোখের চাহনিতে কেমন ট্যারা ভাব আছে। ভেবেছিলেন ঠিক হয়ে যাবে, কিন্তু হলো না। ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেন। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসক জানালেন, লাবিবা মাইক্রোসেফালি অ্যান্ড সেরিব্রাল পালসিতে ভুগছে। পরের সময়টা মেয়েকে নিয়ে ঝুমির সংগ্রামের গল্প। মেয়ের জন্য চাকরি ছাড়লেন। তখন থেকে নিয়মিত থেরাপি দিতে হতো। সূত্রাপুর থেকে নিয়ে যেতে হতো মিরপুর, সাভারসহ বিভিন্ন জায়গায়। যেতে-আসতে পথেই লেগে যেত তিন ঘণ্টার বেশি। অতটুকুন বয়সে যাতায়াতের এই ধকল সহ্য করতে পারত না লাবিবা। এক পর্যায়ে তার খিঁচুনিও দেখা দিল। ঝুমি দেখলেন, থেরাপিতে যেটুকু অগ্রগতি হচ্ছিল, পথের ধকলে আবার অনেকটা পিছিয়ে পড়তে হচ্ছে। কিন্তু তখন পুরান ঢাকায় এ ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠানও ছিল না।
ঝুঁকি নিলেন ঝুমি
লাবিবার বয়স যখন সাড়ে তিন বছর, তখন তাকে বিশেষায়িত স্কুলে ভর্তি করাতে বললেন ডাক্তার। কিন্তু স্কুলে ভর্তি করাতে গিয়ে বেশ বাধার সম্মুখীন হন ঝুমি। তখন পুরান ঢাকায় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য কোনো স্কুল ছিল না। লাবিবাকে ভর্তি করাতে হলে নিয়ে যেতে হতো ধানমণ্ডি, মহাখালী বা মিরপুরের কোনো স্কুলে। কয়েক ঘণ্টার যানজট ঠেলে যাতায়াত করতে যেখানে স্বাভাবিক মানুষই হিমশিম খায়, সেখানে এক বিশেষ শিশুর পক্ষে তা অবর্ণনীয় কষ্টদায়ক। পুরান ঢাকায় তত দিনে তাঁর মতো আরো অনেক মায়ের সঙ্গে পরিচিত হলেন, যাঁরা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের নিয়ে লড়ছিলেন। ঝুমি উপলব্ধি করলেন, তাঁর মতো পুরান ঢাকার অনেক অভিভাবক নিজের বিশেষ শিশুকে স্কুলিং করাতে পারছেন না। তখন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আইটি অফিসার হিসেবে কাজ করতেন ঝুমি। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের প্রয়াস ইনস্টিটিউট অব স্পেশাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ থেকে চার মাসের কোর্স করলেন। বিশেষ শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আরো কিছু প্রতিষ্ঠান থেকেও প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠা করেন আলোর পাখি ফাউন্ডেশন। শুরুতেই বিপাকে পড়তে হয়েছিল ঝুমিকে। কারণ বিশেষ শিশুদের স্কুল হবে শুনে অনেক বাড়িওয়ালা ভাড়া দিতে চাননি। অগত্যা একসময় নিজের বাসায় একটি কক্ষে শুরু করেন কার্যক্রম। এখন সূত্রাপুরের কাঠের পুলে মোট তিন হাজার ৪০০ বর্গফুটের দুটি ভবনে চলছে এই ফাউন্ডেশন। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু, তাদের অভিভাবক ও শিক্ষকদের এক ছাতার নিচে এনেছে তারা। স্পেশাল নিডস এডুকেশন বিষয়ে ঝুমি এখন মাস্টার্স করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে। বললেন, ‘এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠান গড়া চাট্টিখানি কথা নয়। আমি ঝুঁকি নিয়েছিলাম। অদম্য ইচ্ছার কারণে শেষ পর্যন্ত সফল হয়েছি।’
কানিজ ফাতেমা রুমি নামের ধূপখোলার একজন অভিভাবক বললেন, ‘আমার ছেলের কথা বলার ক্ষেত্রে সমস্যা ছিল। রামিমকে আরো কয়েকটা স্কুলে ভর্তি করিয়েছিলাম। কিন্তু সেবা মানের ঘাটতির কারণে নিয়ে এসেছি। আলোর পাখি ফাউন্ডেশনে দুই বছর ছিল সে। ওদের সেবা নিয়ে প্রশ্ন নেই। এখন একটা নরমাল স্কুলে নার্সারি পড়ছে রামিম।’
যে ধরনের সেবা দেয়
ফাউন্ডেশনে এখন নিয়মিত শিক্ষার্থী ৬২ জন। আউটডোরে প্রতি মাসে গড়ে শতাধিক শিশু থেরাপি সেবা নেয়। মাসে প্রায় ২০০ অভিভাবককে কাউন্সেলিং সেবা প্রদান করা হয়। এখন স্থায়ী কর্মী আছেন ২০ জন। এ ছাড়া অস্থায়ী থেরাপিস্ট আরো পাঁচজন। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের শিক্ষা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করেন তাঁরা। এসবের মধ্যে রয়েছে স্কুলিং, শিশু বিকাশ কেন্দ্র, বিশেষ থেরাপি কেন্দ্র, সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিং, কারিগরি শিক্ষা, শিক্ষক-অভিভাবকদের প্রশিক্ষণ, সাংস্কৃতিক চর্চা ইত্যাদি। শিশুদের তৈরি খাবার এবং গহনা, ব্লক-বাটিক দিয়ে তৈরি পোশাক বিক্রির জন্য দোকানও আছে। এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে গত আট বছরে কয়েক হাজার অভিভাবক কাউন্সেলিং সেবা পেয়েছেন।
ঝুমি বললেন, ‘বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরা সমাজের বোঝা নয়। যত্ন, ভালোবাসা আর সঠিক চিকিৎসা পেলে এ ধরনের শিশু সেরে ওঠে দ্রুত। অনেক অভিভাবকই মানতে চান না তাঁর শিশুটি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন। এ কারণে সেবা নিতে দেরি করে ফেলেন। শুরুর দিকে সেবা নিলে প্রতিবন্ধিতার মাত্রা অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব।’
তিনি জানান, শিশু কোন বয়সে কী ধরনের আচরণ ও বিকাশের মধ্যে দিয়ে যাবে, তার একটি ডেটা আছে। ডেভেলপমেন্টাল মাইলস্টোন নামে পরিচিত এই ডেটা যে কেউ ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করে নিজের শিশুর আচরণের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে পারেন। কোনো অসংগতি দেখলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
এক ছাতার নিচে অভিভাবকরা
বাংলাদেশ সোসাইটি ফর প্যারেন্ট অব দ্য ডিফারেন্টলি অ্যাবলড নামের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু ও ব্যক্তির অভিভাবকদের ফেসবুকে একটি গ্রুপও আছে। এ ধরনের শিশুর অভিভাবকদের এক ছাতার নিচে আনা, তাদের সচেতনতা বৃদ্ধি, অধিকার আদায়ে একটি চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী হিসেবে কাজ করে তারা। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ এমএসএইসহ আরো বেশ কিছু সম্মাননা আছে আলোর ফাউন্ডেশনের ঝুলিতে।
ভবিষ্যতে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সন্তানদের জন্য একটি সেফ হোম তৈরি করতে চান ঝুমি, যেখানে অভিভাবকহীন শিশুরা নিরাপদ আশ্রয় এবং সব ধরনের সেবা পাবে।
সম্পর্কিত খবর

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলা
খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিল
নিজস্ব প্রতিবেদক

দুই দশক আগে ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা মামলার বিচারিক আদালতের রায় অবৈধ ঘোষণা করা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে পৃথক আবেদন (লিভ টু আপিল) করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।
এসব আবেদন গতকাল বুধবার আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের কার্যতালিকায় শুনানির জন্য ছিল বলে সাংবাদিকদের জানান আসামিপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। এ মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবরের আইনজীবী ছিলেন তিনি।
গত বছর ১ ডিসেম্বর বিচারিক আদালতের রায় অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
রায়ে বলা হয়, আইনের ভিত্তিতে মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়নি। ফলে বিচারিক আদালতের বিচার অবৈধ। তাই বিচারিক আদালতের ডেথ রেফারেন্স নাকচ এবং আসামিদের আপিল মঞ্জুর করা হলো। এ রায়ের ফলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবরসহ বিচারিক আদালত যাঁদের সাজা দিয়েছিলেন, তাঁদের সবাইকে খালাস দেওয়া হয়।
খালাসের এ রায়ের বিরুদ্ধে ‘আপিল করা উচিত’ বলে সেদিন মন্তব্য করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যা করা হয়। আওয়ামী লীগের দাবি, এ হামলা ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এই হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক, সাবেক রাষ্ট্রপতি (প্রয়াত) জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন।

সংস্কারে এখনো লিখিত মতামত দেয়নি বিএনপিসহ বড় দলগুলো
রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ শুরু আজ
নিখিল ভদ্র

সংস্কার কমিশনগুলোর করা সুপারিশ চূড়ান্ত করতে আজ বৃহস্পতিবার থেকে আনুষ্ঠানিক সংলাপ শুরু করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। প্রথম দিনের সংলাপে অংশ নেবে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। লিখিত মতামত পাওয়ার পর অন্য দলগুলোকে সংলাপে ডাকবে কমিশন। তবে এখনো বিএনপিসহ বড় রাজনৈতিক দলগুলোর অনেকে লিখিত মতামত জমা দেয়নি বলে জানা গেছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার কালের কণ্ঠকে জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সুপারিশগুলো চূড়ান্ত করতে বৃহস্পতিবার থেকে আনুষ্ঠানিক সংলাপ শুরু হচ্ছে। সংসদ ভবনের এলডি হলে এই সংলাপে প্রথম দিনে অংশ নেবে এলডিপি। আগামী শনিবার দুটি এবং রবিবার একটি দল সংলাপে অংশ নেবে। পর্যায়ক্রমে সব দলকে আমন্ত্রণ জানানো হবে।
গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম সংগঠক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে সংস্কার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর মতামত চাওয়া হয়েছে। কমিশনের সুপারিশগুলো নিয়ে আমাদের পার্টি ফোরামে আলোচনা হয়েছে। আমরা দলীয়ভাবে মতামত দেওয়ার বিষয়ে এরই মধ্যে কমিশনকে জানিয়েছি।’ জোটগতভাবে সংলাপে অংশগ্রহণের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের শীর্ষ নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘কমিশনের পক্ষ থেকে পাঠানো সুপারিশগুলোর বিষয়ে লিখিতভাবে মতামত জানানো হবে।’
সূত্র মতে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কাজ শুরু করে। তারা সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিশনের দেওয়া প্রতিবেদনগুলো থেকে গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশ চিহ্নিত করে। এর মধ্যে সংবিধান সংস্কার সংক্রান্ত ৭০টি, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার বিষয়ে ২৭টি, বিচার বিভাগ সংক্রান্ত ২৩টি, জনপ্রশাসন-সংক্রান্ত ২৬টি এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংক্রান্ত ২০টি সুপারিশ রয়েছে। ওই সুপারিশগুলো ছক আকারে বিন্যস্ত করা হয়েছে। ওই ছকগুলো গত ৬ মার্চ ৩৪টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ ১২টি দল নিবন্ধিত নয়। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪৯। কমিশনের পক্ষ থেকে আগামী ১৩ মার্চের মধ্যে রাজনৈতিক দল এবং জোটগুলোকে তাদের মতামত জানানোর জন্য বলা হয়। তবে নির্ধারিত সময়ে সাতটি দল মতামত দিলেও পরবর্তী সময়ে আরো আটটি দল মতামত জমা দিয়েছে। অন্যরা অতিরিক্ত সময় নিয়েছে।
কমিশন সূত্র জানায়, ঐকমত্য কমিশনের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কমিউনিস্ট লীগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির পক্ষ থেকে এখনো কিছুই জানানো হয়নি। এ পর্যন্ত মতামত জমা দেওয়া ১৫টি দল হলো এলডিপি, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, জাকের পার্টি, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), আমজনতার দল, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), নাগরিক ঐক্য, জাতীয় গণফ্রন্ট ও বাংলাদেশ জাসদ।
মতামত দেওয়ার জন্য সময় নিয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণফোরাম, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদী), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণ অধিকার পরিষদ (জিওপি), জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ১২ দলীয় জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট।

অর্থ উপেদষ্টা
দেশীয় শিল্প সুরক্ষার বাজেট দেওয়া হবে
নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী অর্থবছরের বাজেটে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ও দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় নজর দেওয়া হবে। পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষা ভাতা বাড়ানো হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
আগামী বাজেটে ব্যক্তি খাতের করমুক্ত আয়সীমা বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকার করার প্রস্তাব দিয়েছেন দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক ও টেলিভিশনের শীর্ষ নির্বাহীরা। একই সঙ্গে বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বাজেট বক্তব্যের কলেবর কমানো, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং নির্ভুল ডাটা-পরিসংখ্যান তৈরির উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশ করেছেন তাঁরা।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা এমন একটি বাজেট দিয়ে যেতে চাই যেটি পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক সরকার যে-ই আসুক, যেন ছুড়ে ফেলে দিতে না পারে, আমরা সেভাবেই একটি বাজেট দিতে চাই। আগামী বাজেটে আমরা প্রবৃদ্ধির দিকে নজর দিচ্ছি না, বরং আমরা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকেই প্রধান অগ্রাধিকার হিসেবে দেখছি। আমরা দেশীয় শিল্প সুরক্ষার একটি বাজেট দিতে চাই। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং উৎপাদনমুুখিতাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
প্রাক-বাজেট আলোচনায় ফিন্যানশিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ বলেন, ‘সামনেই তো নির্বাচন। আর জুনে নতুন বাজেট। ফলে আপনারা যে বাজেট দিতে যাচ্ছেন সেটা পরবর্তী সরকারের জন্য কতটা সহায়ক হবে?’ যুগান্তর সম্পাদক আবদুল হাই সিকদার বলেন, ‘বিপর্যস্ত অর্থনীতি সামলাতে আপনি সফল হয়েছেন। এ জন্য ধন্যবাদ আপনি পেতেই পারেন। আগামী বাজেট সত্যিই আপনার জন্য চ্যালেঞ্জ।
সিনিয়র সাংবাদিক শওকত হোসেন মাসুম বলেন, ‘একটি অর্থবছরে প্রকৃতপক্ষে কতসংখ্যক কর্মসংস্থান হয় সে হিসাবটা কখনো আমরা পাইনি। এবার আপনারা সে হিসাব দেবেন বলে আমাদের প্রত্যাশা। ১৫ বছরে গণমানুষের প্রকৃত আয় বাড়েনি। আপনারা একটা মেকানিজম করে এই হিসাবটা বের করুন যে এক অর্থবছরে কতসংখ্যক কর্মসংস্থান হয়। সবখানে সংস্কার হচ্ছে, আপনারা বাজেট বত্তৃদ্ধতার আকারে সংস্কার আনুন। ঢাউস আকৃতির বাজেট বত্তৃদ্ধতার কোনো প্রয়োজন নেই। এটা কমিয়ে আনুন। বাস্তবমুখী বাজেট দিন। ডিজিটাল বাংলাদেশের নামে যে বাজেট দেওয়া হতো সেটা ছিল অহেতুক। বাজেট উপস্থাপনের নামে দেখানো হতো এক রকমের প্রামাণ্যচিত্র।’
ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের অ্যাসোসিয়েট এডিটর শামীম জাহেদী বলেন, ‘কালো টাকা বৈধ করার ক্ষেত্রে কর সমান হবে কি না সেটায় আপনারা নজর দেবেন। দেশে এতগুলো টেলিভিশন আছে, দেড় হাজার কেবল অপারেটর আছে, সারা দেশে সাড়ে তিন কোটি বাড়ি আছে। এর ৫৪ শতাংশ বাড়িতে টেলিভিশন দেখা যায়। প্রত্যেকে ৩০০/৫০০ টাকা দিয়ে সংযোগ নেন। এখানকার টাকাটা আমরা এক টাকাও পাই না। সরকার পায় কি না আমি জানি না। এখানে একটা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তাহলে আমরা কিছু টাকা পাব। সরকারও রাজস্ব পাবে।’
সময়ের আলোর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক শাহনেওয়াজ করিম বলেন, সবার জন্য সুখবর ও স্বস্তিদায়ক বাজেট দিন। করদাতাদের জন্য ট্যাক্স কার্ড প্রবর্তন করা যায় কি না ভেবে দেখুন। এটা করতে পারলে তাঁরা সম্মানিত বোধ করবেন।
ডিবিসি নিউজের সম্পাদক লোটন একরাম বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রতিফলন বাজেটে থাকবে বলে আমার প্রত্যাশা। করমুক্ত আয়সীমা বাড়িয়ে পাঁচ লাখ করা হোক। বেকারত্ব কমনোর উদ্যোগ নেওয়া হোক। এ জন্য এসএমই উদ্যোক্তাদের যথেষ্ট সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন। সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ভাতা বাড়ানো প্রয়োজন। নয়তো বন্ধ করে দিন। এটা মিনিমাম পাঁচ হাজার টাকা হওয়া উচিত। টেলিভিশনে কোনো ওয়েজ বোর্ড নেই। একটি ওয়েজ বোর্ড এখানেও থাকা প্রয়োজন। ভারতীয় চ্যানেলগুলো এখানে দেদার চলছে, আমাদের কোনো চ্যানেল ভারতে চলে না। এখানেও কাজ করা প্রয়োজন।’
এটিএন বাংলার হেড অব নিউজ মনিউর রহমান বলেন, করমুক্ত আয়সীমা পাঁচ লাখ করা হোক। বাজেট বাস্তবায়ন কতটুকু হলো সেটা দেখা দরকার।

নাহিদ ইসলাম
আওয়ামী লীগ নির্বাচনে আসুক, আমরা তা প্রত্যাশা করি না
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ চান না বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা চাই না আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিক। প্রথমত, দলের ভেতরে যারা অন্যায়ের জন্য দায়ী, তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। গত ১৭ মার্চ দ্য ডিপ্লোম্যাটকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নাহিদ ইসলাম আরো বলেছেন, নতুন দলের চ্যালেঞ্জ নির্বাচন এবং আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যত্ নিয়ে।
আন্দোলন থেকে সরকারে, তারপর আবার রাজনীতিতে অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে ‘বাংলাদেশ ডিপ্লোম্যাট’কে নাহিদ ইসলাম বলেন, একটি সরকারকে বাইরে থেকে দেখা আর ভেতর থেকে দেখা সম্পূর্ণ আলাদা অভিজ্ঞতা। অন্তর্বর্তী সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখন বাংলাদেশের জন্য এটি অত্যন্ত সংকটপূর্ণ সময় ছিল। এটি আমার জন্যও চ্যালেঞ্জিং ছিল। আমি সময়ের দাবিতেই পদত্যাগ করে মূলধারার রাজনীতিতে ফিরেছি।
নিজের দল এনসিপি সম্পর্কে নাহিদ বলেন, এনসিপি একটি মধ্যপন্থী রাজনৈতিক দল এবং আমরা এই আদর্শ বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের লক্ষ্য হলো নতুন কণ্ঠস্বর, বিশেষ করে তরুণ এবং সব সামাজিক শ্রেণির ব্যক্তিদের জন্য জায়গা তৈরি করা, যারা বছরের পর বছর ধরে ঐতিহ্যবাহী রাজনীতি থেকে বাদ পড়েছে।
জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পৃক্ততা প্রসঙ্গে নাহিদ বলেন, এনসিপি এবং জামায়াতে ইসলামী সম্পূর্ণ ভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং আমাদের এজেন্ডাও সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমাদের মধ্যে কোনো সংযোগ নেই। কিছু দাবিতে মিল থাকতে পারে, যেমন আমরা সাংবিধানিক সংস্কার ও গণপরিষদ গঠনের পক্ষে। কিন্তু আমাদের আদর্শিক অবস্থান ভিন্ন এবং উগ্রবাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।
নির্বাচন প্রসঙ্গেও কথা বলেছেন এনসিপি প্রধান নাহিদ ইসলাম।
সূত্র : বাংলাদেশ ডিপ্লোম্যাট