পড়াশোনায় পেছাচ্ছে শিক্ষার্থীরা

শরীফুল আলম সুমন
শরীফুল আলম সুমন
শেয়ার
পড়াশোনায় পেছাচ্ছে শিক্ষার্থীরা

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা, শিক্ষকদের আন্দোলন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনসহ নানা কারণে পড়াশোনা থেকে পিছিয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া সময়মতো বই দিতে না পারায় গত আড়াই মাসে সঠিকভাবে পড়াশোনা করতে পারেনি শিক্ষার্থীরা। বেসরকারি স্কুল-কলেজে শিক্ষকসংকট প্রকট। এতে চলতি শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতির আশঙ্কা করছেন শিক্ষাবিদরা।

গত সাত মাসে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করাসহ নানা দাবিতে আন্দোলন জোরদার হয়। বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের মধ্যে মারামারি, সংঘর্ষেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বড় ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এর বড় উদাহরণ। রাজধানীর সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনও বড় ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি করে।

বর্তমানে ছোটখাটো দাবিতেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বড় ধরনের আন্দোলন করছেন। এমনকি যা আলোচনার টেবিলে সমাধান সম্ভব, সেগুলো নিয়ে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাইরে বিক্ষোভ করছেন, ক্লাস-পরীক্ষাও বন্ধ করছেন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভোস্টের পদত্যাগ নিয়েও অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। শিক্ষার্থীরা এখন কথায় কথায় আন্দোলনে নেমে যাচ্ছে।
এতে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে. চৌধূরী কালের কণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশে আগে থেকেই শিক্ষার মান নিয়ে সবার মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। আমরা এখনো করোনার থাবা থেকে মুক্ত হতে পারিনি। এরপর জুলাই আন্দোলন যা অবধারিত ছিল, সেটা হয়েছে। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।

এখন সময় হয়েছে, সব শিক্ষার্থীর ক্লাসে ফিরে যাওয়ার। তবে যাঁরা রাজনীতি করবেন, তাঁরা তো একটি পথ বেছে নিয়েছেন। আবার শিক্ষকরাও অনেক দাবি নিয়ে মাঠে ছিলেন। তাঁদেরও কিছু দাবি পূরণ হয়েছে। তবে সবার দাবি মানতে শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, স্কুল-কলেজে আন্দোলন না থাকলেও তাদের সমস্যা ভিন্ন। চলতি শিক্ষাবর্ষে নতুন কারিকুলাম বাতিল করে ২০১২ সালের কারিকুলামে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। খুব স্বল্প সময়ে পরিমার্জনের কাজ করতে গিয়ে দরপত্র প্রক্রিয়ায় দেরি হয়ে যায়। এতে শিক্ষার্থীদের সব বই পেতে পেতে অনেক দেরি হয়ে যায়। রমজানে স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা বই না নিয়েই ছুটিতে চলে গেছে। ফলে তারা পড়ালেখা থেকে পিছিয়ে পড়েছে।

জানা যায়, বেতন-ভাতার দাবিতে গত সাত মাসে শ্রেণিকক্ষের চেয়ে আন্দোলনের মাঠেই বেশি ব্যস্ত ছিলেন শিক্ষকরা। রাজধানীতে এমন কোনো শিক্ষক সংগঠন নেই, তারা তাদের দাবি নিয়ে আন্দোলন করেনি। একাধিক শিক্ষক সংগঠন রাজধানীতে অবস্থান কর্মসূচি, অনশন, কর্মবিরতি, বিক্ষোভ-ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি পালন করেছে। অনেক সময় শিক্ষকদের আন্দোলন থামানোর জন্য জলকামান, লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেডের ব্যবহার করতে হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে।

সূত্র জানায়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা বর্তমানে ১৩তম গ্রেডে বেতন পান। তাঁরা দশম গ্রেডে বেতনের দাবিতে জোরদার আন্দোলন করছেন। নন-এমপিও শিক্ষকরা এমপিওভুক্তির দাবিতে আন্দোলন করছেন। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা বাড়িভাড়া, শতভাগ উৎসব ভাতার দাবিতে আন্দোলন করেছেন। পাশাপাশি তাঁরা মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ চান। বেসরকারি প্রাথমিকের শিক্ষকরা জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন করছেন। স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকরা এমপিওভুক্তি চান। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের শিক্ষকরা তাঁদের দাবি আদায়ে আন্দোলনের মাঠে রয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, শিক্ষকরা যদি আন্দোলনে থাকেন, ছাত্ররা যদি নানা কাজে ব্যতিব্যস্ত থাকে, তাহলে শিক্ষার মান আরো খারাপ হবে। তবে যে দেশে এ ধরনের রাজনৈতিক পরিবর্তন এসেছে, সেখানে অস্থিরতা হয়েছে। আমার বিশ্বাস এ অবস্থা দীর্ঘদিন থাকবে না। তবে এটা স্বীকার করতেই হবে, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা খাদের কিনারে চলে গেছে। এটাকে উদ্ধার করা না গেলে দেশ এগোতে পারবে না। রাজনৈতিক দল ও সরকারকে এ ব্যাপারে বিশেষ নজর দিতে হবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর সূত্র জানায়, দেশের ৩২ হাজারের বেশি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বর্তমানে লক্ষাধিক শিক্ষকের পদ শূন্য। গত বছরের শুরুতে ৯৬ হাজার ৭৩৬ জন শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। কিন্তু পদ্ধতিগত জটিলতায় মাত্র ২৩ হাজার ৯৩২ জন আবেদন করতে পেরেছেন। এর মধ্যে মাত্র ২০ হাজার জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ফলে আগে থেকেই ৭৬ হাজার পদ খালি। এর সঙ্গে গত দেড় বছরে প্রায় ২০ হাজার শিক্ষক পদ শূন্য হয়েছে। ফলে শিক্ষকসংকটের কারণে মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলগুলোতে শ্রেণি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শুরুতে অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টার দায়িত্ব পান ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। শুরুতে ভিসি-প্রোভিসি নিয়োগে উপদেষ্টাকে বেশ বেগ পেতে হয়। তারপর নতুন পাঠ্যবই নিয়ে প্রচণ্ড চাপে পড়তে হয়। ফলে শিক্ষার অন্যান্য কাজে খুব একটা সময় দিতে পারেননি তিনি। এ অবস্থায় মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর শুধু বদলি-পদায়ন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা থেকে আরো পিছিয়ে পড়ে। তবে গত ৫ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন অধ্যাপক সি আর আবরার। এখন শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তাঁর পদক্ষেপের অপেক্ষায় রয়েছেন।

জানা যায়, গত বছরের জুন মাস থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সর্বজনীন পেনশন স্কিমে তাঁদের অন্তর্ভুক্তি বাতিলের দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করেন। এতে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। একই সঙ্গে চলতে থাকে কোটা আন্দোলন। তবে জুলাই মাস থেকে এই আন্দোলন জোরদার হয়, যা শুধু বিশ্ববিদ্যালয়েই নয় দেশের সব স্কুল-কলেজেও ছড়িয়ে পড়ে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। জোর করে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। এ ছাড়া অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। ফলে ভিসি, প্রোভিসি ও ট্রেজারার নিয়োগ দিতে দিতেই আরো দু-তিন মাস চলে যায়। এ অবস্থায় স্কুল-কলেজগুলোতে পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষাবর্ষ শেষ করা হলেও শিক্ষার্থীরা ভালো করতে পারেনি। তাদের শিখন ঘাটতি নিয়েই পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হতে হয়েছে। কিন্তু নতুন শিক্ষাবর্ষেও আন্দোলন-অস্থিরতা-সংকট পিছু ছাড়েনি। 

ব্র্যাক বিশ্ববিদালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমদ কালের কণ্ঠকে বলেন, শিক্ষায় সমস্যা আগে থেকেই ছিল। তবে নতুন সরকার এসে শিক্ষায় তেমন কোনো উদ্যোগও নেয়নি। একটা কমিশন করার কথা ছিল, সেটাও হয়নি। প্রাথমিকে একটা পরামর্শক কমিটি হয়েছে। এখন তাদের সুপারিশ বাস্তবায়ন হতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ালেখার সার্বিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। এ জন্য ছাত্রনেতারাও উদ্যোগ নিতে পারেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নতুন উপদেষ্টা যোগ দিয়েছেন, তিনি কী করেন, সেটাও দেখার বিষয়।

 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ছুটির ঘোষণা

শেয়ার
ছুটির ঘোষণা

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ৩০-৩১ মার্চ ও ১ এপ্রিল কালের কণ্ঠ বন্ধ থাকবে। তাই ৩১ মার্চ এবং ১-২ এপ্রিল পত্রিকা প্রকাশিত হবে না। পবিত্র ঈদুল ফিতর ১ এপ্রিল হলে ৩ এপ্রিলও পত্রিকা প্রকাশিত হবে না। তবে ঈদের ছুটিতে কালের কণ্ঠ অনলাইন চালু থাকবে।

সম্পাদক

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

শ্রমসচিবের গাড়ির সামনে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীরা

শেয়ার
শ্রমসচিবের গাড়ির সামনে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীরা

বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীরা গতকাল বিজয়নগরে শ্রমসচিবের গাড়ির সামনে বসে পড়েন।ছবি : কালের কণ্ঠ

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

ব্যারিস্টার তানিয়া আমীরের দেশে জরুরি অবস্থা জারির উসকানি

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
ব্যারিস্টার তানিয়া আমীরের দেশে জরুরি অবস্থা জারির উসকানি

দেশে জরুরি অবস্থা জারির উসকানি দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এই উসকানি দেন।

গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সেনাপ্রধানের মনে কী আছে (হোয়াটস অন বাংলাদেশস আর্মি চিফস মাইন্ড?) শিরোনামে ইন্ডিয়া টুডেতে একটি সংবাদ বিশ্লেষণ প্রকাশিত হয়। সেখানে মূলত সেনাপ্রধান বাংলাদেশের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়বেন কি না, তা নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ নিয়ে কাজ করা বিবিসি ও রয়টার্সের সাবেক সাংবাদিক সুবির ভৌমিকের লেখায় বলা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান একজন রক্ষণশীল ও পেশাদার কর্মকর্তা, যিনি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করেন। তাঁর সহকর্মীরা জানান, তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশে সামরিক শাসন কার্যকর নয়। ইতিহাস, বিশেষ করে পাকিস্তানি সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা তাঁকে এই দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্কের উদ্ধৃতি দিয়ে সেখানে বলা হয়েছে, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে কঠোর দমন-পীড়ন না চালাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জাতিসংঘ সতর্ক করেছিল এবং তা কার্যকর হয়েছিল।

তবে ওয়াকার সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি গুলি চালানোর অনুমতি দেননি এবং শেখ হাসিনা ও তাঁর উপদেষ্টাদের নিরাপদে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেন।

সম্প্রতি কিছু ব্লগার ও অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতারা অভিযোগ করেছেন, জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ভারতের প্রতি অনুগত এবং তিনি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছেন। তবে সেনাপ্রধানের ঘনিষ্ঠরা বলেন, তিনি কোনো গোষ্ঠীর অনুগত নন, বরং তিনি পেশাদার ভারতীয় সেনাবাহিনীকে অনুকরণ করে রাজনীতির বাইরে থাকতে চান।

এদিকে সেনাপ্রধান চাইলে দেশে জরুরি অবস্থা জারিতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে সমর্থন দিতে পারেন বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানিয়া আমীর।

আওয়ামী লীগপন্থী এই আইনজীবী বলেন, রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ১৪১ অনুচ্ছেদ ব্যবহার করে জরুরি অবস্থা জারি করতে পারেন; আর এ ক্ষেত্রে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান তাঁকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করতে পারেন। এর ফলে রাষ্ট্রপতি অন্তর্বর্তী সরকার বাতিল করে দ্রুত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের আয়োজন করতে পারবেন। সেনাবাহিনী সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের কঠোর হস্তে দমন করতে পারবে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সঠিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারবে।

তবে তানিয়া আমীরের এমন মন্তব্য উড়িয়ে দিয়েছেন সেনা কর্মকর্তারা।

এক সেনা কর্মকর্তা ইন্ডিয়া টুডেকে বলেন, তিনি (সেনাপ্রধান) সেনা ও বাইরের সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে চান। তিনি সেনা কর্মকর্তা ও অন্যান্য দায়িত্বশীল ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা না করে তাড়াহুড়া করে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। কারণ তিনি একটি ঐকমত্য চান।

অন্যদিকে এক অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল, যাঁর অধীনে সেনাপ্রধান আগে চাকরি করেছেন, তিনি বলেন, যদি মনে হয় তাঁকে (সেনাপ্রধান) সরিয়ে দেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে, তাহলে তিনি কঠোর ভূমিকা পালন করবেন।

ইন্ডিয়া টুডের সংবাদ বিশ্লেষণে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সেনাপ্রধান সম্প্রতি আফ্রিকা সফর শেষে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আমাকে এমন কিছু করতে বাধ্য করবেন না, যা আমি করতে চাই না। এতে বোঝা যায়, তিনি কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য হতে পারেন, যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। তাঁর বাবা ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম কিনেছিলেন কুষ্টিয়া-৩ আসনের জন্য।

মন্তব্য

রমজানে সহনীয় পণ্যের দামে স্বস্তিতে রোজা পার

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
রমজানে সহনীয় পণ্যের দামে স্বস্তিতে রোজা পার

প্রতিবছর পবিত্র রমজান মাসকে কেন্দ্র করে অসাধু মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা বাজার অস্থিতিশীল করে তোলেন। রমজান এলেই মাছ-মাংস, শাক-সবজি থেকে শুরু করে কয়েকটি পণ্যের দাম বাড়তে বাড়তে দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে যায়। বিশেষ করে রোজার ভোগ্যপণ্য হিসেবে পরিচিত ছোলা, খেজুর, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, চিনির বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। বছরের পর বছর ধরে এমন চিত্রই দেখে আসছে দেশবাসী।

তবে এবার ভিন্ন চিত্র। এবার রোজার ভোগ্যপণ্যের বাজার অনেকটাই স্থিতিশীল। ভোক্তারা বলছেন, গত কয়েক বছরের মধ্যে এবার রজমানে পণ্যের দাম সবচেয়ে কম। বেশির ভাগ খাদ্যপণ্যই ক্রেতাসাধারণের হাতের নাগালে রয়েছে।

রমজান মাসে ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি এবং পণ্যের দাম কমানোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নানামুখী পদক্ষেপ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। ফলে এবার রমজানে নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি এসেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিগত সরকারের টানা ১৫ বছরের শাসনামলে অসাধু ব্যবসায়ীদের যে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিল তা এখন ভেঙে গেছে। এ ছাড়া এ বছর রমজান সামনে রেখে ট্যাক্স-ভ্যাট কমার পাশাপাশি পণ্য আমদানি বেড়েছে, যার সুফল মিলছে বাজারে।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানি বাড়ানো ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভোজ্যতেল, ছোলা, চিনি, পেঁয়াজ, আলু, খেজুরসহ বিভিন্ন পণ্যে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে আমদানিতে উৎসাহ বাড়ায় এবার ব্যাপক হারে ভোগ্যপণ্য আমদানি করেছেন আমদানিকারকরা। এতে গত বছরের তুলনায় কিছুটা কমে বিক্রি হয়েছে ছোলা, পেঁয়াজ, চিনি, দেশি রসুন, আলু ও আদাসহ কয়েকটি পণ্য। সবজি ও মুরগির বাজারেও কিছুটা স্বস্তি ছিল। 

এবার রমজানে পেঁয়াজ ও আলু গত বছরের তুলনায় অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া বেশির সবজি গত বছরের তুলনায় অনেকটাই কম দামে বিক্রি হয়েছে। রমজানে ইফতারসামগ্রীর বাজারেও তেমন বাড়াবাড়ি নেই। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সমন্বিত তদারকি জোরদার করায় সবজির বাজার সিন্ডিকেট কাঁচা মরিচ ও বেগুনের দাম বাড়াতে পারেনি।

গত রমজানে রাজধানীর খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ কেজি ১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। এবার বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে। আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়, যা গত বছর রমজানে বিক্রি হয় ৪০ টাকা কেজি। পাকা টমেটো কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত বছর বিক্রি হয় মানভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। এখন ঈদ ঘিরে মুরগির দাম বাড়লেও রোজার শুরু থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত অনেকটাই সহনীয় দরেই এবার মুরগি বিক্রি হয়। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০ টাকা এবং সোনালি মুরগি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। ঈদ উপলক্ষে এখন মুরগির দাম কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় ব্রয়লার মুরগি কেজি ২১০ থেকে ২২০ টাকা এবং সোনালি মুরগি কেজি ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর রোজায় ব্রয়লার মুরগি কেজি ছিল ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা, রোজার আগে আগে যা ২৫০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। দাম কমে চিনি কেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানিয়েছেন, গত বছরের রমজানের তুলনায় এ বছর বেশির ভাগ পণ্যের দাম কমেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তালিকায় রয়েছে গম, ডাল, মুরগি, ডিম, মাছ, সয়াবিন, পামঅয়েল, চিনি, লবণ, আলু, টমেটো, মরিচ, পেঁয়াজ, আদা, রসুন ও হলুদ।

বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন বলেছেন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ায় এবার রমজানে বাজারে পণ্যের দাম সহনীয়।

এদিকে এবার রোজায় পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে সরকারের একাধিক সংস্থা মাঠে আছে। সংস্থাগুলো হলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল, র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি), কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর মনিটরিং টিম। এ ছাড়া নিত্যপণ্যের বাজারে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিও করা হচ্ছে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ