<p>একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সর্বোত্তম ব্যবস্থার চিত্র এমন হতে পারে, যেখানে রাষ্ট্রের প্রতিটি অংশ স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক এবং একই সঙ্গে জনগণের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অংশগ্রহণ তথা মতামতের ভিত্তিতে <img alt="দলীয়করণ নীতির অবসান ঘটাতে হবে" height="428" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2025/1. january/12-01-2025/Rif/13-01-2024-p14-6.jpg" style="float:left" width="300" />পরিচালিত হবে। এমন একটি রাষ্ট্র চাই, যেখানে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মধ্যে সততা, যোগ্যতা ও দেশপ্রেম থাকবে এবং একই সঙ্গে থাকবে অবাধ, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচনী ব্যবস্থা। এ রকম রাষ্ট্রব্যবস্থা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের নীতিগত ভিত্তি, কার্যকর কাঠামো এবং এর সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বহুমাত্রিকভাবে মূল্যায়ন করতে হবে।</p> <p>গণতন্ত্রের আদর্শ ও বাস্তব গণতন্ত্র—এই দুইয়ের মধ্যে একটা ফাঁক রয়েছে, যা পূরণ করা বর্তমান রাষ্ট্রের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবু এমন একটি রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখি, যেখানে ধর্ম ও গণতন্ত্র সহাবস্থানে থাকবে। এটি তখনই সম্ভব হবে, যখন ধর্মকে রাষ্ট্রীয় নীতি থেকে পৃথক রাখা যাবে। রাষ্ট্রকে সর্বোত্তমরূপে প্রতিষ্ঠা করতে হলে শুধু রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নয়, একে একটি সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে পরিণত করতে হবে। এটি তখনই সম্ভব, যখন রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তর তথা নাগরিক, প্রশাসন, রাজনৈতিক দল ও আন্তর্জাতিক অংশীদাররা একসঙ্গে কাজ করবে।</p> <p>জুলাই বিপ্লবের পর বাংলাদেশকে নতুনভাবে ঢেলে সাজানোর দ্বার উন্মোচন হয়েছে। দেশে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় রয়েছে রাজনৈতিক পরিবেশ। রাজনৈতিক দলগুলোর দলীয়করণ নীতির অবসান ঘটাতে হবে। প্রশাসন, শিক্ষা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে দলীয় নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে উন্মুক্ত সংলাপের সংস্কৃতি চালু করলে আমাদের প্রত্যাশিত স্বপ্নের বাংলাদেশ দেখতে পাব বলে আশা করা যায়।</p> <p>বিপ্লবোত্তর নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে প্রতিটি সেক্টরে পরিবর্তন আনা জরুরি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনতে হলে এর মূল কাঠামো, প্রক্রিয়া ও সংস্কৃতিতে ব্যাপক পরিবর্তন প্রয়োজন। মূলত দলকেন্দ্রিক ও ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতির অসহিষ্ণুতা, সহিংসতা বন্ধ করে সংলাপ ও সহনশীলতার সংস্কৃতি চালু করার মাধ্যমে পরিবর্তন আনা অত্যাবশ্যক। সেই সঙ্গে লক্ষণীয়, যেখানে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতাই প্রশ্নবিদ্ধ, সেখানে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সংস্কার তীব্রভাবে প্রয়োজন। নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন, শক্তিশালী ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে সাংবিধানিকভাবে সুরক্ষা দিয়ে আইন সংস্কার করতে হবে। পরিবর্তনের জোয়ারে অন্যতম সংস্কারের জায়গা হলো আর্থিক সচ্ছলতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের দ্বারা রাজনীতির বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধ করা। প্রভাবশালী ও ধনী ব্যক্তিদের আর্থিক ক্ষমতায়নের যে অযাচিত দৌরাত্ম্য, তা রুখতে রাজনৈতিক দলগুলোকেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে আইন প্রণয়ন করে এই জায়গাটা সংস্কার করা উচিত বলে মনে করি। এ ছাড়া আরো অনেক অনেক পরিবর্তন প্রয়োজন, তবে এই পরিবর্তনগুলো শুধু রাজনৈতিক দল নয়; নাগরিক, সুধীসমাজ ও প্রশাসনিক কাঠামোর সম্মিলিত উদ্যোগে বাস্তবায়ন করতে হবে। পরিবর্তন ধীরে ধীরে আসবে, তবে তা সঠিক পথে পরিচালিত হলে একটি ন্যায়ভিত্তিক ও উন্নত বাংলাদেশ নিশ্চিত করা সম্ভব।</p> <p> </p>