সরকারের ডিজিটাইজেশনের সুফল কাজে লাগিয়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (এসএমই) উদ্যোক্তারা ব্যবসার প্রসার ঘটাচ্ছে। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার থেকে বিদ্যুৎ বিল, জমির ই-পর্চা, মিউটেশন, ব্যাংকিং, পাসপোর্ট ফরম পূরণ, ভিসা আবেদন, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, ই-চালান, পেনশন ভাতাসহ নানা সেবা মিলছে। ঘরে বসে কোনাকাটা, মোবাইল রিচার্জ, ইউটিলিটি বিল, ব্যাংক-বীমার কিস্তি পরিশোধ, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা পরিশোধ, রেমিট্যান্স, রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ মুহূর্তেই হয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের ডিজিটাল অবকাঠামো আর সময়োপযোগী নীতি সহায়তায় দেশের মানুষের মধ্যে প্রযুক্তিনির্ভরতা বাড়ছে।
এর ফলে দেশে ডিজিটাল অর্থনীতির দ্রুত বিকাশ ঘটছে।
করোনাকালে পড়ালেখা, আড্ডা, কেনাকাটাসহ অনেক কাজই এখন হচ্ছে অনলাইনে। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে গত এক দশকে দেশের বিভিন্ন সেবা ব্যাপকভাবে ডিজিটাইজ হয়েছে। আর এর সুফল নিতে এখন দেশের ১৬ কোটি ২৯ লাখ মোবাইল গ্রাহকের একটি বড় অংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে।
তাদের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে তাই সরকারি সেবার ডিজিটাইজেশনে জোর দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন সরকরি দপ্তরের মাধ্যমে ৩৮৯ ধরনের ই-সেবা চালু করা হয়েছে। নতুন বছরে এক হাজার ৮৮৭ ধরনের ই-সেবা দেওয়া হবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন প্রকল্প সূত্র জানায়, গত ১২ বছরে বর্তমান সরকার এ পর্যন্ত বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের মাধ্যমে এ পর্যন্ত সরকারি সেবা সহজ করা হয়েছে ৩৭৪টি। ২০২১ সালে এ সংখ্যা হবে এক হাজার ৮৬৭টি। এ ছাড়া ৩৮৯ ধরনের ই-সেবা চালু করেছে। ২০২১ সাল নাগাদ মোট এক হাজার ৮৮৭ ধরনের ই-সেবা দেওয়া হবে। এ পর্যন্ত ৩৮ কোটি ই-সেবা নিয়েছে মানুষ।
২০২১ সাল নাগাদ এ সংখ্যা ৯২ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের কর্মকর্তারা।
বিশ্বের ৬৭টি দেশে তথ্য-প্রযুক্তি খাতের বিভিন্ন পণ্য ও সেবা রপ্তানি হচ্ছে। এ খাতের রপ্তানি আয় ছাড়িয়ে গেছে এক বিলিয়ন ডলার। ২০২৫ সালের মধ্যে এ খাত থেকে পাঁচ বিলিয়ন ডলার আয় করতে চায় সরকার। এ জন্য দেশে ২৮টি সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক তৈরি করা হচ্ছে। দেশের সফটওয়্যার সেবার বাজার দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।
তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ঘোষণা করেছিলেন। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আরো এগিয়ে নিতে এর রোডম্যাপ, পলিসি, অবকাঠামোয় নেতৃত্ব দিয়েছেন তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির আওতায় গত ১১ বছর যে তথ্য-প্রযুক্তি অবকাঠামো গড়ে উঠেছে তার সুফল পেতে শুরু করেছে দেশের মানুষ। করোনা সংকটকালেও জরুরি সেবাসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু রাখা যাচ্ছে ডিজিটাল প্রযুক্তির কল্যাণে।
বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকীতে ১০০টি নতুন নাগরিক সেবাকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আনবে আইসিটি ডিভিশন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহেমদ পলক বলেন, ‘বৈষম্য কমাতে সরকার প্রযুক্তি ব্যবহার বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে ডিজিটাল বাংলাদেশ ভিশন দিয়েছেন, সেখানে সজীব ওয়াজেদ জয় ভাইয়ের রোডম্যাপ, পলিসি, অবকাঠামোয়, পরিকল্পনায় ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ বাস্তব।’ তিনি আরো বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে গ্রামের ১০ কোটি মানুষ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের আওতায় আসবে। আর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে ২০ লাখ মানুষের। এ ছাড়া ২০২৫ সালের মধ্যে আইসিটি পণ্য ও সেবা রপ্তানি করে পাঁচ বিলিয়ন ডলার আয় হবে। ফলে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ১ শতাংশের বেশি বাড়বে বলে আশা করছেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী।
জানতে চাইলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে এম-গভর্ন্যান্সে জোর দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য আমরা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার সঙ্গে সরকারি সেবার ডিজিটাইজেশনে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এরই মধ্যে সারা দেশে ৯ হাজার ২২৪টি ডিজিটাল সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এখন থেকে ৬০০ ধরনের সেবা পাচ্ছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী।’
জিয়াউল আলম আরো বলেন, ‘শুধু ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার থেকেই প্রতি মাসে ৪৫ লাখ মানুষ বিভিন্ন ধরনের সেবা গ্রহণ করছে। ভোলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চরকুকরিমুকরি এবং চট্টগ্রামের উপকূলীয় দ্বীপ মহেশখালীকেও ডিজিটাল সেবার আওতায় আনা হয়েছে। আমাদের প্রচেষ্টা সারা দেশের প্রতিটি অংশে ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দেওয়া, যাতে প্রযুক্তির মাধ্যমে বৈষম্য কমে আসে।’