<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দীর্ঘদিন ধরে আস্থার সংকটে রয়েছে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান। নামে-বেনামে ঋণ দিয়ে সেই টাকা আদায় করতে পারছে না তারা। ফলে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে অপারগ ডজনখানেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। বলতে গেলে ব্যাংকবহির্ভূত কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান এখন মৃতপ্রায়। কারণ পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ ৯৫ শতাংশের বেশি। আর মোট ঋণের অর্ধেক বা এর বেশি খেলাপি ২২ প্রতিষ্ঠানের। সব মিলিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণের  প্রায় ৩৬ শতাংশ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বর্তমানে ৩৫টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে। তিনটি সরকারি, ১২টি দেশি-বিদেশি যৌথ মালিকানায় এবং বাকিগুলো দেশীয় ব্যক্তিমালিকানায় পরিচালিত। এর মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি বাদে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান তারল্য সংকটে ভুগছে। মূলত আলোচি প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার কাণ্ডের পর ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ায় আমানত টানতে পারছে না খাতটি। পাশাপাশি ঋণগ্রহীতাদের ব্যবসা-বাণিজ্য খারাপ থাকার কারণে অনেকে সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। তাই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ ক্রমেই বাড়ছে। আবার বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকির অভাবেও খেলাপি ঋণ বাড়ছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৭৩ হাজার ৬৬৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২৬ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা খেলাপি হয়ে পড়েছে, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৩৫.৫২ শতাংশ। তিন মাস আগে গত জুন পর্যন্ত এ খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২৪ হাজার ৭১১ কোটি টাকা বা ৩৩.১৫ শতাংশ। গত ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ২১ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা বা ২৯.২৭ শতাংশ। সে হিসাবে ৯ মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে চার হাজার ৫৯৬ কোটি টাকা বা ২১.৩১ শতাংশ। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দেশের ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দুরবস্থা নতুন নয়। আর্থিক খাতের বহুল আলোচিত ব্যক্তি পি কে হালদার বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যে অনিয়ম করেছেন, পুরো খাত এখন তার জের টানছে। পি কে হালদারের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় ছিল এমন কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণের হার সবচেয়ে বেশি। পাশাপাশি এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও খেলাপি ঋণ বাড়ছে, যে কারণে সার্বিকভাবে এ খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এফএএস বা ফার্স্ট ফাইন্যান্সের খেলাপি ঋণের হারই এখন বেশি। প্রতিষ্ঠানটির বিতরণ করা ঋণের ৯৯.৯২ শতাংশ বা এক হাজার ৮২০ কোটি টাকাই খেলাপি হয়ে গেছে। ফারইস্ট ফাইন্যান্সের খেলাপি ঋণের হার ৯৮.০৬ শতাংশ বা ৮৭৩ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফসি) খেলাপির হার ৯৭.২৭ শতাংশ বা ৭৫১ কোটি টাকা। পিপলস লিজিংয়ের খেলাপি ঋণের হার ৯৭ শতাংশ বা এক হাজার ২৬ কোটি টাকা। ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের খেলাপি ঋণের হার ৯৬.১৯ শতাংশ বা তিন হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। ইউনিয়ন ক্যাপিটালের খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে এক হাজার ১৩২ কোটি টাকা বা ৯৪.৬০ শতাংশ। আভিভা ফাইন্যান্সের খেলাপি ঋণ দুই হাজার ৬২৯ কোটি টাকা বা ৮৯.৮১ শতাংশ। ফিনিক্স ফাইন্যান্সের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা বা ৮৮.৫৭ শতাংশ। ফার্স্ট ফাইন্যান্সের খেলাপি ঋণ ৮৭.৮২ শতাংশ বা ৬৬৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া প্রাইম ফাইন্যান্সের ৭৭.৬২ শতাংশ, প্রিমিয়ার লিজিংয়ের ৭৫.২০ শতাংশ, আইআইডিএফসির ৬৬.৭৪ শতাংশ, বে লিজিংয়ের ৬৫.৮৭ শতাংশ, ন্যাশনাল ফাইন্যান্সের ৬৩.০৩ শতাংশ, সিভিসি ফাইন্যান্সের ৫৯.৫৪ শতাংশ, জিএসপি ফাইন্যান্সের ৫৮.২৪ শতাংশ, মেরিডিয়ান ফাইন্যান্সের ৫৭.৬৯ শতাংশ, উত্তরা ফাইন্যান্সের ৫৬.৩৬ শতাংশ, হজ ফাইন্যান্সের ৫৫.৪৫ শতাংশ, মাইডাস ফাইন্যান্সের ৪৮.৯৮ শতাংশ, ইসলামিক ফাইন্যান্সের ৪৮.৬৫ শতাংশ ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের ৪৪.৩৪ শতাংশ ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের সাবেক চেয়ারম্যান এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নূরুল আমিন বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ব্যাংকের পর আর্থিক প্রতিষ্ঠান গড়ার ভিন্ন উদ্দেশ্য ছিল। তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও ব্যাংকের মতোই পণ্য নিয়ে একই গ্রাহকের পেছনে ছুটেছে। তবে ব্যাংকের দক্ষতা ও সক্ষমতা এসব প্রতিষ্ঠানের নেই বলে পিছিয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে এত ব্যাংকের পর আবার ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আদৌ প্রয়োজনীয়তা আছে কি না তা পর্যালোচনা করা হয়নি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p>