শুল্কযুদ্ধে বিশ্ব অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা এবং মধ্যপ্রাচ্য উত্তেজনার জেরে আবারও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করেছে সোনার দাম। গতকাল মঙ্গলবার মূল্যবান এই ধাতুর দাম আবারও তিন হাজার ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। এর আগে গত শুক্রবার ইতিহাসে প্রথম সোনার দাম তিন হাজার ডলারে ওঠে। তারপর দাম কমে যায়।
কিন্তু গতকাল আবার সোনার দাম আউন্সপ্রতি তিন হাজার ২২ ডলারে উঠেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের শুল্কনীতির প্রভাবে বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়ছে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে যুদ্ধের তীব্রতা বৃদ্ধি।
বাজারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং ইকোনমিকস জানায়, গতকাল সোনার দাম ০.৮১ শতাংশ বা ২৪ ডলার বেড়ে প্রতি আউন্স ৩০২৪ ডলারে উঠেছে।
এক সপ্তাহে দাম বেড়েছে ৩.৭২ শতাংশ। বার্তা সংস্থা বিবিসির সংবাদে বলা হয়েছে, চলতি বছর এখন পর্যন্ত সোনার দাম বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ।
নানা কারণে সোনার দাম বাড়ছে। তার মধ্যে আছে ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা, বিভিন্ন দেশের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির চাপ ও তার জেরে শুল্কযুদ্ধের আশঙ্কা।
ফলে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক জটিলতা তৈরি হচ্ছে। সুরক্ষিত বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে অনেকে সোনার দিকে ঝুঁকছেন। শেয়ারবাজার থেকে পুঁজি প্রত্যাহার করেও অনেকে কিনছেন।
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের প্রধান বাজার কৌশলবিদ জো কাভাতোনি বলেছেন, ‘চলমান ভূ-অর্থনৈতিক সংকট ও অনিশ্চয়তার কারণে মানুষ নিজেদের অর্থ ব্যবস্থাপনার বিষয়ে শঙ্কিত। এই পরিস্থিতিতে তাঁর ধারণা, মানুষ নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে আবারও সোনার দিকে ঝুঁকছেন এবং সে কারণে সোনার দাম বাড়বে।
’
ট্রাম্প যেভাবে শুল্ক আরোপ করছেন, তাতে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। এর পাল্টা হিসেবে অন্যান্য দেশও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে শুল্ক আরোপ করবে। ফলে ওই সব দেশেও মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির আশঙ্কা থেকে যায়। এসব কারণেও মানুষ সোনার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন বলে মনে করেন জো কাভাতোনি। জ্বালানি তেলের কেনাবেচার সঙ্গেও সোনার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। সাধারণত দেখা যায়, জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে সোনার দামও বাড়ে। দাম বাড়লে অনেক দেশ সোনার বিনিময়ে জ্বালানি তেল বিক্রি করে থাকে। ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের ওপর মার্কিন হামলার জেরে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম গত দুই দিনে বেড়েছে। বিশ্ববাজারে সোনার দাম হূাসবৃদ্ধির প্রভাবে দেশের বাজারেও সোনার দাম বাড়ে ও কমে। গত রবিবার দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়ানো হয়েছে ভরিপ্রতি দুই হাজার ৬১৩ টাকা। এতে ভালো মানের এক ভরি সোনার দাম পড়ছে এখন এক লাখ ৫৩ হাজার টাকা। নতুন এই দর গত সোমবার থেকে কার্যকর হয়েছে।
বাস্তবতা হলো, বিশ্বে সোনাকেই সবচেয়ে স্থিতিশীল ও নির্ভরযোগ্য পণ্য হিসেবে ধরা হয়। একমাত্র সোনার দরেই বড় ধরনের অস্থিতিশীলতা দেখা যায় না। ডলারের মান প্রতিদিনই বাড়ে বা কমে। শেয়ারবাজার নিয়ে তো কথাই নেই, অন্তত বাংলাদেশে শেয়ারবাজারের ঠিকঠিকানা নেই।