<p>ইন্টারনেটের মাধ্যমে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের তলব অনুযায়ী কাজ করার নাম হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং। এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্রে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি হলো, কাজের ওপর নির্ভর করে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা কখনো বৈধ, আবার কখনো অবৈধ। এ ক্ষেত্রে মূলনীতি হলো, যদি আপনি এমন কাজ করেন, যেটা মূলত শরিয়তে হালাল; যাতে হারামের সংস্পর্শ নেই, তাহলে তা হালাল এবং সেখান থেকে উপার্জিত অর্থও হালাল, আর যদি কাজটা হারাম হয় তাহলে তা করা হারাম এবং সেখান থেকে উপার্জিত অর্থও হারাম। তবে উপার্জনের ক্ষেত্রে সর্বদা হালাল-হারামের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে এবং হারাম ও সন্দেহপূর্ণ বিষয় থেকে দূরে থাকতে হবে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘অবশ্যই হালাল স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট। আর এ দুটির মাঝখানে আছে কিছু সন্দেহপূর্ণ বস্তু, যা অনেক লোকেই জানে না। অতএব যে ব্যক্তি এই সন্দেহপূর্ণ বিষয় থেকে দূরে থাকবে, সে তার দ্বিন ও মর্যাদা রক্ষা করবে এবং যে সন্দেহপূর্ণ বিষয়ে পতিত হবে সে হারামে পতিত হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ২০৫১, মুসলিম, হাদিস : ১৫৯৯)</p> <p>উপার্জনের ক্ষেত্রে জীবিকা হালাল হতে হলে বেশ কতগুলো বিষয় শরিয়াহসম্মত হতে হবে। প্রথমত, দেখতে হবে প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড ইসলামী নীতির মধ্যে আছে কি না। কোনো অবৈধ বা অনৈসলামিক বিষয় নিয়ে ওই প্রতিষ্ঠান কায়কারবার করে কি না।</p> <p>এমন অনেক বস্তু আছে, যার ব্যবসা করাকে ইসলাম বৈধ মনে করে না। যেমন মৃত প্রাণীর ব্যবসা, শূকর বেচাকেনা, নেশাজাতীয় বস্তু, মূর্তি ইত্যাদি। এসব কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া যাবে না।</p> <p>সুদ বা জুলুমের অন্য কোনো বিষয়ের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক আছে কি না, সেটাও বিশেষভাবে বিবেচ্য।</p> <p>আর অবশ্যই সদ্ভাবে, ঘুষ ও প্রতারণা ছাড়া তাঁর কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হবে। সততা ও দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে তাঁকে নিষ্ঠাবান হতে হবে। তা হলেই ওই ব্যক্তির উপার্জন হালাল হবে।</p> <p>এ ছাড়া উপার্জন শতভাগ হালাল হওয়ার জন্য নিম্নোক্ত বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখাও জরুরি। যেমন : কাজটি দেশের প্রচলিত আইনপরিপন্থী না হওয়া। মানুষ, সমাজ ও দেশের জন্য ক্ষতিকারক না হওয়া। কারো অধিকার খর্ব না করা (যেমন কপিরাইট লঙ্ঘন করা ইত্যাদি)।  মিথ্যা, ওয়াদা ভঙ্গ ও প্রতারণার আশ্রয় না নেওয়া ইত্যাদি।</p> <p>বিশেষ সতর্কতা</p> <p>ফ্রিল্যান্সিংয়ের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে অনেকে এমএলএম ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। নানা আকর্ষণীয় প্যাকেজ দেখিয়ে তারা সদস্য ভর্তি করে এবং প্রায় বিনা পরিশ্রমে মোটা অঙ্ক লাভের প্রতিশ্রুতি দেয়। এরা অসাধু এমএলএম ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে এদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হওয়া মোটেই বৈধ হবে না।</p> <p>উল্লেখ্য যে ডেসটিনি, নিউওয়ে, এ্যাপটেক, ইউনিপেটু ইত্যাদি প্রতারক কম্পানির মতো ডোলেন্সারও দেশের বেকার তরুণদের কাজে লাগিয়ে মাউসের সামান্য ক্লিকে আকাশকুসুম লাভের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। মূলত তারা মানুষের সস্তা আবেগকে কাজে লাগিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার নতুন ফাঁদ পেতেছে। তাই এদের থেকে দূরে থাকা আবশ্যক।</p> <p>যারা নতুন নতুন সোর্স থেকে অর্থ উপার্জন করতে চায়, তাদের জন্য নিম্নোক্ত হাদিস মনে রাখা দরকার। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে বিষয়ে তোমার সন্দেহ হয়, তা ছেড়ে দিয়ে যাতে সন্দেহের সম্ভাবনা নেই তা গ্রহণ করো। যেহেতু সত্য হলো শান্তি ও স্বস্তি এবং মিথ্যা হলো দ্বিধা-সন্দেহ।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৫১৮)</p> <p> </p>