<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মুসলিম সভ্যতার উৎসমূল হলো পবিত্র কোরআন। এর দ্বিতীয় উৎস রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সিরাহ ও সুন্নাহ। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনকাঠামো মূলত কোরআনের সার্থক রূপায়ণ। এর সঙ্গে আরবি ভাষা, সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতি সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইসলামের আগমনে আরব সভ্যতায় আমূল পরিবর্তন আসে। ইসলাম ও আরব সভ্যতা পরস্পরকে আত্মস্থ করে। ইসলামপূর্ব অনেক আরবরীতিকে ইসলাম স্বীকৃতি দিয়েছে। আরব সমাজে চর্চিত বিষয়গুলো ইসলামী আইনের উরফ বা প্রথার মর্যাদা দিয়েছে। একইভাবে আরব সভ্যতার অসততা, অনৈতিকতা, স্খলন, অবিশ্বাস, জুলুম, সংকীর্ণ গোত্রচিন্তাকে দূরীভূত করেছে ইসলাম। বিশ্বাসের সংস্কার দিয়ে শুরু করলেও ধীরে ধীরে আরব সভ্যতা ইসলামী সভ্যতায় রূপান্তরিত হয়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অন্যদিকে মুসলিম সভ্যতা আরো সম্প্রসারিত হয় খলিফা ও মুসলিম শাসকদের আমলে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মুসলিম সভ্যতার স্বর্ণযুগ বলতে অষ্টম শতাব্দী থেকে চতুর্দশ শতাব্দী পর্যন্ত ইসলামের ইতিহাসে সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও বৈজ্ঞানিকভাবে সমৃদ্ধ হওয়ার সময়কালকে বোঝায়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">(Saliba, George, A history of Arabic astronomy : planetary theories during the golden age of Islam| New York: New York University Press) </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এটি ৬২২ সালে মদিনায় প্রথম ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও ইসলামের উত্থানের সময় থেকে শুরু হয়। ১২৫৮ সালে মঙ্গোলদের দ্বারা বাগদাদ অবরোধের সময়কে এর শেষ ধরা হয়। ১৪৯২ সালে ইবেরিয়ান উপদ্বীপের আন্দালুসে খ্রিস্টান রিকনকোয়েস্টার ফলে গ্রানাডা আমিরাতের পতনকেও এর সমাপ্তিকাল হিসেবে গণ্য করা হয়। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞের মতে, অবশ্য এ সময়কাল পঞ্চদশ-ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত দীর্ঘায়িত। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মুসলিমরা জ্ঞানের প্রতি ব্যাপক আগ্রহ দেখিয়েছে। তারা গ্রিক, পারস্য, ভারতীয়, চীনা, মিসরের সভ্যতার প্রাচীন জ্ঞানের বইগুলো আরবি ও পরে তুর্কিতে অনুবাদ করেন। [(উইকিপিডিয়া সোর্স) :  </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">Vartan Gregorian, “Islam: A Mosaic, Not a Monolith”, Brookings Institution Press, 2003, pg 26–38]</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উমাইয়া ও আব্বাসিয়া খলিফাদের পৃষ্ঠপোষকতায় গ্রিক দার্শনিকদের কাজগুলো এবং বিজ্ঞানের প্রাচীন জ্ঞানগুলোকে সিরিয়ান ভাষা অনুবাদ করান, যা পরে আরবিতে অনূদিত হয়। [(উইকিপিডিয়া সোর্স) </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">Hill, Donald. Islamic Science and Engineering</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">. </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">1993. Edinburgh Univ. Press]</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তখনকার দিনের মুসলিম সমাজকে বলা হয়ে থাকে বিশ্বের ইতিহাসের প্রথম </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সত্যিকারের এক বৈশ্বিক সভ্যতা, যা কিনা জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার জন্য বিশ্বের বহু প্রান্ত-ধর্ম-বর্ণ-মানসিকতা-অভিজ্ঞতার মানুষের মিলন ঘটাতে পেরেছিল। ভারত, চীন, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, ইউরোপ তথা বিশ্বের উল্লেখযোগ্য সব প্রান্ত থেকেই জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিবর্গের সমাবেশ ঘটত </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হাউস অফ উইজডম</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">-এ জ্ঞান চর্চার উদ্দেশ্যে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এর মধ্য দিয়ে নানা সভ্যতার উপাদানে এক মিশ্র সভ্যতা তৈরি করেছিল মুসলমানরা। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওফাতের মাত্র ১০ বছরের মধ্যে হাজার বছরের প্রাচীন সভ্যতার লীলাভূমি নীলনদের উপত্যকা, দজলা-ফুরাত উপত্যকা, ইরানের মালভূমি অঞ্চল আরবদের অধীনে চলে আসে। আরবদের যাযাবর জীবনযাত্রার চেয়ে এসব অঞ্চলের শহুরে সভ্যতা অনেক চাকচিক্যপূর্ণ ও উন্নত ধরনের ছিল। এক শতাব্দীর মধ্যে আরবরা এসব সভ্যতার উল্লেখযোগ্য দিকগুলো আত্তীকরণ করে নেয়। মরুভূমির আরবরা ধীরে ধীরে নতুন শহরের পত্তন করে সেখানে বসবাস করতে শুরু করে। ওমর (রা.) মুসলিম সৈনিকদের প্রাচীন শহরের উপকণ্ঠে সেনানিবাসে বসবাসের আদেশ দেন। কিন্তু এসব সেনানিবাস কালক্রমে নতুন শহরে উন্নীত হয়। যেমন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সিরিয়ায় আল-জাবিয়া, হিমস, তাবারিয়া ও রামরা; ইরাকে কুফা ও বসরা এবং মিসরে ফুসতাত। উমাইয়া খলিফারা শহর ও মরুভূমির উভয় জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত ছিলেন। আব্বাসীয় খলিফাদের শাসনামল থেকে রাজনৈতিক ও সামরিক কারণে তাঁরা সম্পূর্ণ নাগরিক জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। এভাবে আরব সভ্যতার নগরায়ণ ঘটে। আরো পরবর্তী যুগে মুসলিম বিশ্বে বাগদাদ, নিশাপুর, কায়রো, পালার্মো ও কর্ডোভার মতো সমৃদ্ধশালী নগরীর উদ্ভব হয়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""> (G. E. von Grunebaum, The Sources of Islamic Civilization. vol 2) </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ওই সময় ইউরোপের শহর ও নগর অনেক নিম্নমানের ছিল। উমাইয়াদের খিলাফত স্পেনে কায়েম হওয়ার ফলে কালক্রমে গোটা ইউরোপ ও আফ্রিকায় ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতির আলো ছড়িয়ে পড়ে। মুরদের আমলে স্পেন গোটা ইউরোপ ও আফ্রিকার </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">seat of learning</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">  বা শিক্ষার বেদিমূল হিসেবে গৌরবময় মর্যাদা লাভ করেছিল।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মুরদের আগমন, রাজ্য প্রতিষ্ঠা ও শিক্ষা-সাংস্কৃতিক বিকাশ তখনকার দিনে স্পেনে না ঘটলে আজও বোধ হয় স্পেন শিক্ষা ও সভ্যতার আলো থেকে বঞ্চিত থাকত। এর পরিণতিতে গোটা ইউরোপও থাকত নিকষ কালো আঁধারে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গৌরব-যুগের মুসলমানদের জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে গ্রিক, সিরীয় ও পাহলবি ভাষায় রচিত পুস্তিকাদি এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মুসলমানদের বিজ্ঞান ও দর্শনচর্চা এসব প্রাচীন ঐতিহ্যের সাহায্যে উৎসাহিত হয়। (মফিজুল্লাহ কবীর, মুসলিম সভ্যতার স্বর্ণযুগ, আলোর ভুবন, ১২ বাংলাবাজার, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ : জুলাই ২০২০)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মূলত ইসলাম ও ইসলামী সভ্যতা কোনো সভ্যতাকে ধ্বংস করতে কখনো উদ্যত হয়নি, বরং নিজস্ব নীতিমালার আলোকে তা আত্মস্থ করা এবং তা থেকে উপকৃত হওয়ার চেষ্টা করেছে। মানুষের কল্যাণে তার উন্নয়নও করেছে। এ জন্য সমকালে ইসলামী সভ্যতার যে কাঠামো আমরা দেখতে পাই, তাতে আরব, পারস্য, ইউরোপ ও ভারতীয় সভ্যতার অনেক উপকরণ খুঁজে পাওয়া যায়।</span></span></span></span></p>