<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ইতিহাস অধ্যয়ন করে জানা যায়, জাহেলি যুগে (ইসলাম আগমনের পূর্ব সময়) আরবে এমন কোনো আইন ও বিধান বহাল ছিল না, যা তারা মেনে চলত এবং পারস্পরিক বিরোধ নিষ্পত্তির ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করত। প্রচলিত অর্থে কোনো রাষ্ট্রীয় কাঠামোও ছিল না, যার অধীনে বিচারব্যবস্থা পরিচালিত হতে পারে, যার কর্ণধাররা মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে, জনজীবনের শৃঙ্খলা রক্ষা করবে, অত্যাচারীকে প্রতিহত করবে এবং নিপীড়িত ব্যক্তিকে অধিকার ফিরিয়ে দেবে। সে সমাজে শক্তির জয়-জয়াকার ছিল, সত্যের নয়। দুর্বল ও অসহায় ব্যক্তিকে সাহায্য করার এবং ক্ষমতাবানের অত্যাচার থেকে রক্ষা করার কেউ ছিল না।</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ছিল সামাজিক আইন</span></span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তবে আরব সমাজে কিছু সামাজিক মূল্যবোধ ও নীতি ছিল, যেগুলো সামাজিক আইনের মর্যাদা রাখত। এসব মূলনীতি মেনের চলার বাধ্যবাধকতা না থাকলেও বেশির ভাগ আরব গোত্র তা মেনে চলত। যেমন</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আশ্রয়দাতা ও চুক্তিবদ্ধ গোত্রের জীবন ও সম্পদ রক্ষার চেষ্টা করা, নিষিদ্ধ মাসে যুদ্ধ পরিহার করা, রক্তপণ আদায়, পবিত্র কাবাঘরের সম্মান রক্ষা করা ইত্যাদি। এসব মূল্যবোধ ও নৈতিকতার প্রভাব ব্যক্তি পর্যায়ে সীমাবদ্ধ ছিল। জাহেলি যুগে যারা নৈতিক জীবন যাপন করত তারা নিজেরা অন্যের ওপর অন্যায় ও জুলুম করা থেকে বিরত থাকত, কিন্তু অন্যের অন্যায়-জুলুম প্রতিহত করার শক্তি তাদের ছিল না। মূর্তিপূজা, শিরক ও জুলুম থেকে যারা নিজেদের পরিচ্ছন্ন রাখত তাদেরকে দ্বিনে হানিফের অনুসারী বলা হতো। </span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">হিলফুল ফুজুল প্রথম আইনি সংস্থা</span></span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">নবুয়ত লাভের আগে নবীজি (সা.) সমাজ থেকে জুলুম ও অত্যাচার দূর করতে </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">হিলফুল ফুজুল</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> গঠন করেন। যাকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রতিষ্ঠিত প্রথম প্রতিষ্ঠান বলা যায়। হিলফুল ফুজুল মূলত একটি সামাজিক অঙ্গীকার। শাওয়াল মাসে হারবুল ফুজ্জার শেষ হলে জিলকদ মাসে মক্কার একদল সত্যান্বেষী যুবক ফিলফুল ফুজুল নামের এক ঐতিহাসিক সামাজিক অঙ্গীকারবদ্ধ হয়। যেহেতু এটি একটি অতিরিক্ত সামাজিক অঙ্গীকার ছিল এবং প্রাতিষ্ঠানিক কোনো চুক্তি ছিল না; তাই তাকে হিলফুল ফুজুল বা অতিরিক্ত অঙ্গীকার নাম দেওয়া হয়। মহানবী (সা.)-এর চাচা জোবায়ের ইবনে আবদুল মুত্তালিব ফিলফুল ফুজুলের প্রথম উদ্যোক্তা এবং আবদুল্লাহ ইবনে জুদআনের ঘরে তা সংঘটিত হয়। তিনি অতিথিদের আপ্যায়ন করেন। হিলফুল ফুজুলের মূল কথা ছিল মক্কা থেকে সব ধরনের অন্যায়-অবিচার দূর করা। কোনো ব্যক্তি বিপদগ্রস্ত হলে সে স্থানীয় হোক ও ভিনদেশি হোক তাকে সাহায্য করা। (খাতামুন নাবিয়্যিন, পৃষ্ঠা-১৩৬; সিরাতে মোস্তফা : ১/৯২)</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">নবুয়ত লাভের পর মহানবী (সা.) এই সামাজিক অঙ্গীকারে অংশগ্রহণের বিষয়টি আনন্দের সঙ্গে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আমি আবদুল্লাহ জুদআনের ঘরে একটি অঙ্গীকারে উপস্থিত ছিলাম, যা আমার কাছে লাল উটের চেয়ে প্রিয়। যদি ইসলাম আগমনের পরও আমাকে এ কাজের জন্য আহ্বান করা হতো, তবে আমি সাড়া দিতাম।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">(খাতামুন নাবিয়্যিন, পৃষ্ঠা-১৩৫)</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">যেভাবে বিরোধ নিষ্পত্তি করা হতো</span></span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আরবে সুবিদিত কোনো আইনি কাঠামো না থাকলেও আরবের গোত্র ও ব্যক্তির বিচারক হিসেবে সুখ্যাতি ছিল। তাঁরা মূলত ব্যক্তিগত ও গোত্রীয় পর্যায়ের বিরোধগুলো নিষ্পত্তি করতেন। তাঁদের এই নিষ্পত্তি মান্য করার বিশেষ কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না। উভয় পক্ষ যত দিন খুশি তা মেনে চলত। এরপর তা প্রত্যাখ্যান করত।</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">জাহেলি যুগের গোত্রীয় বিচারক</span></span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বিরোধ নিষ্পত্তির কাছে কুরাইশের বনু সাহামের সুখ্যাতি ছিল। আরবের লোকেরা তাঁদের কাছে বিরোধ মীমাংসার জন্য আসত। তাঁরা বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ফায়সালা করতেন, তবে তা মান্য করা বা না করার এখতিয়ার ছিল উভয়। আবার অনেক ব্যক্তি নিজ গোত্রের সালিস-বিচার করতেন। গোত্রের লোকেরা তাঁদের মান্য করে চলত। তাঁদের হাক্কাম বা ফায়সালাকারী বলা হতো। যেমন</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আকসাম বিন সাইফি, হাজিব বিন আবি জুরারাহ, আকরা বিন হাবিস, রাবিআ বিন মাখাস, জামরা বিন আবি জামরা ছিলেন বনু তামিমের বিচারক (ফায়সালাকারী)। আমির বিন জরব ও গাইলান বিন মাসলামাহ ছিলেন কায়েস গোত্রের বিচারক। আবদুল মুত্তালিব, আবু তালিব, কাদি বিন ওয়ায়েল ও আলা বিন হারিসা কুরাইশের বিচারক। রাবিআ বিন হিজার ছিলেন বনু আসাদের বিচারক। ইয়ামার বিন শাদ্দাখ ও সাফওয়ান বিন উমাইয়া, সালমা বিন নাওফেল ছিলেন বনু কিনানার বিচারক।</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">গোত্রীয় বিচারকদের দুর্বলতা</span></span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">উল্লিখিত ব্যক্তিরা গোত্রীয় বিবাদ-বিরোধের নিষ্পত্তি করতেন। তবে তাঁদের ফায়সালা সব সময় সব ক্ষেত্রে সমানভাবে কার্যকর হতো না এবং বাদী-বিবাদী তা মেনে নিতে বাধ্য ছিল না। এর কারণ দুটি : ক. এসব ব্যক্তির নির্দেশ বাস্তবায়ন করার মতো নিজস্ব উপায়-উপকরণ ছিল না, খ. তাঁদের ফায়সালার চিরায়ত কোনো ভিত্তি ছিল না। যেমন</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">রাষ্ট্রীয় ফরমান ও ধর্মগ্রন্থ। তাঁরা বিচার করতেন নিজের মন-মর্জির ওপর ভিত্তি করে। ফলে তাঁরা সব ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারতেন না। কখনো কখনো তাঁদের বিচার পক্ষপাতগ্রস্ত হতো।</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বিচারকের ভূমিকায় গণক</span></span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">গোত্রীয় বিচারকরা চিরায়ত আইনি ভিত্তির ওপর নির্ভর না করার কারণে অনেকেই গণকদের কাছে বিচার প্রার্থনা করত। কেননা তারা বিশ্বাস করত গণকদের কাছে অদৃশ্যের অনেক খবর আছে। যেমন ফাকাহ বিন মুগিরা ও তাঁর স্ত্রী হিন্দ বিনতে উতবা বিচারের জন্য ইয়েমেনের একজন গণকের কাছে যান। ফাকাহ বিন মুগিরা তাঁর স্ত্রীর ব্যাপারে কিছু গুরুতর অভিযোগ করেছিলেন, যাতে তাঁর মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়। গণক হিন্দকে নির্দোষ ঘোষণা করে। এরপর তিনি ফাকাহর কাছে ফিরে যেতে অস্বীকার করেন এবং আবু সুফিয়ান (রা.)-কে বিয়ে করেন।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এককথায় বলা যায়, নবীজি (সা.)-এর আগমনের আগে আরবে এমন কোনো সুসংহত আইনি প্রতিষ্ঠান বা বিচারব্যবস্থা ছিল না, যা গণমানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে পারে, যা অন্যায়কারীকে প্রতিহত ও নিপীড়িতকে রক্ষা করতে পারে। নবীজি (সা.) আসমানি ফায়সালার আলোকে আরব সমাজে ন্যায়বিচারের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করেন এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামোর অধীনে বিচারব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আল্লাহ মহানবী (সা.), তাঁর পরিবারবর্গ, সাহাবি ও কিয়ামত পর্যন্ত ঈমানের সঙ্গে তাঁর অনুসরণকারীদের প্রতি অবিরাম শান্তি ও রহমত বর্ষণ করুন। আমিন।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তথ্যসূত্র : তারিখুল</span></span></span></strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> কাজা ফিল ইসলাম, পৃষ্ঠা-৩৭; নিজামুল কাজা ফিল ইসলাম, পৃষ্ঠা-৩৫।</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p> </p> <p> </p>