<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">উজবেকিস্তানের বুখারার একটি ধর্মীয় ঐতিহ্যবাহী স্থান ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন চাশমা-ই-আইয়ুব। বুখারা শহরে অবস্থিত ইসমাইল সামানির সমাধিক্ষেত্র এবং শহরের ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রাচীন নগরপ্রাচীরের কাছেই এর অবস্থান। ধারণা করা হয়, নবী আইয়ুব (আ.) এই স্থান পরিদর্শন করেন এবং তাঁর সহচরদের নিয়ে একটি কূপ খনন করেন। এখনো যে কূপের পানি সুপেয়। উজবেকিস্তানের মানুষ এই কূপের পানিতে আরোগ্য আছে বলেই বিশ্বাস করে। কূপের পাশেই একটি সমাধিসৌধ রয়েছে, যা আমির তৈমুরের যুগে নির্মাণ করা হয় এবং তাতে খাওয়ারিজম স্থাপত্যরীতি অনুসরণ করা হয়। ১৮ জানুয়ারি ২০০৮ ইউনেসকো চাশমা-ই-আইয়ুব বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ ঘোষণা করে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">চাশমা-ই-আইয়ুব একটি সমাধিক্ষেত্রও বটে। অনেকের বিশ্বাস এখানে আইয়ুব (আ.)-এর কবর রয়েছে। সমাধিক্ষেত্রে কয়েক শ বছরের পুরনো স্থাপনা আছে। সমাধিক্ষেত্রের সবচেয়ে পুরনো অংশ খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতাব্দীতে নির্মিত। এখানে ১৩৮০ খ্রিস্টাব্দের একটি শিলালিপি পাওয়া গেছে। খ্রিস্টীয় ষষ্ঠদশ শতাব্দীর আরেকটি শিলালিপির বর্ণনা অনুসারে আমির তৈমুরের খাওয়ারিজম অভিযানের সময় তা নির্মাণ করা হয়। উজবেকিস্তানের একাধিক বরেণ্য মনীষীকে চাশমা-ই-আইয়ুব সমাধিক্ষেত্রে দাফন করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ধর্মতাত্ত্বিক ও মুহাদ্দিস খাজা হাফেজ গুনজারি (রহ.) অন্যতম। তাঁকে ১০২২ খ্রিস্টাব্দে দাফন করা হয়।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আইয়ুব (আ.)-এর স্মৃতিধন্য ঐতিহাসিক এই স্থানে স্থাপনা নির্মাণ শুরু করেন তৈমুর যুগের আমির হাজ্জাজ। সাইবানীয় শাসক দ্বিতীয় আবদুল্লাক্সনের (মূল নাম আবদুল্লাহ বিন ইস্কান্দার) যুগে সমাধিক্ষেত্রের সংস্কার, আধুনিকায়ন ও নির্মাণকাজ শেষ হয়। চাশমা-ই-আইয়ুবের প্রধান প্রবেশপথ পূর্বমুখী। এখানে একটি বিশেষ কক্ষ রয়েছে, যার ভেতর আইয়ুব (আ.)-এর পদচিহ্ন বা কবর আছে। কক্ষের ভেতর একটি কাঠের বোর্ডে আইয়ুব (আ.)-এর বুখারা সফরের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। সোভিয়েত শাসনামলে অন্যান্য ইসলামী স্থাপত্যের মতো চাশমা-ই-আইয়ুবও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উজবেকিস্তান সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে মুক্ত হওয়ার পর সমাধিক্ষেত্র সংস্কার করা হয়।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কথিত আছে, আইয়ুব (আ.) যখন বুখারায় গমন করেন তখন সেখানে ভয়াবহ পানির সংকট চলছিল। বহু মানুষ ও পশুপাখি তৃষ্ণায় মারা যাচ্ছিল, তাঁর অনুসারীরাও তৃষ্ণায় কষ্ট পাচ্ছিল। আইয়ুব (আ.) আল্লাহর নামে শুষ্ক মাটিতে আঘাত করলে মাটি ফেটে পানি উঠতে শুরু করে। এটা ছিল আল্লাহর কুদরত ও আইয়ুব (আ.)-এর মুজিজা। পরবর্তী সময়ে এই কূপ কেন্দ্র করেই বুখারা শহরের গোড়াপত্তন হয়। ইসলামী শাসনামলে বুখারা ছিল বিশ্বের সুন্দরতম নগরীগুলোর একটি এবং মুসলিম বিশ্বের অন্যতম প্রধান জ্ঞানকেন্দ্র। সুফি আলেমরা মনে করেন, এটা ছিল আইয়ুব (আ.)-এর পদচিহ্নের বরকত। এখনো চাশমা-ই-আইয়ুবের চারপাশের সজীবতা আল্লাহর অনুগ্রহের কথা ও নবী আইয়ুব (আ.)-এর বরকতের কথা মনে করিয়ে দেয়। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বর্তমান সমাধিসৌধটি অনেকটাই সাদাসিধে ও সাজসজ্জাহীন। মূল সমাধিসৌধটি এক কক্ষবিশিষ্ট। এর ওপরে আছে চারটি গম্বুজ। যার প্রত্যেকটি ভিন্ন ভিন্ন শাসকের শাসনামলে নির্মিত হয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন কাঠামো ও নির্মাণশৈলী একেকটি যুগের প্রতিনিধিত্ব করে। মূল গম্বুজটি তাঁবুর মতো। মূল কক্ষ ছাড়াও সেখানে আলো-আঁধারির রহস্যে ঘেরা ছোট ছোট কয়েকটি কক্ষ আছে, যাতে একই সঙ্গে রহস্য ও আধ্যাত্মিকতার ঘ্রাণ পাওয়া যায়।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বর্তমানে চাশমা-ই-আইয়ুবে একটি জাদুঘর স্থাপন করা হয়েছে, যাতে বুখারা শহরের পানি সরবরাহের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। জাদুঘরে ১৮-১৯ শতকে নির্মিত পানির পাইপ, তামার পাইপ এবং ১৯-২০ শতকে নির্মিত পানির মশক (চামড়ার তৈরি পানির পাত্র) প্রদর্শন করা হয়েছে। এর বিপরীত আছে ইমাম বুখারি (রহ.) কমপ্লেক্স। যাঁকে বুখারার সবচেয়ে বিখ্যাত মনীষী মনে করা হয়। তাঁর রচিত সহিহ বুখারি বিশুদ্ধতম হাদিসগ্রন্থ হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত।</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তথ্যসূত্র : ইউনেসকো</span></span></span></strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> ডটঅর্গ,<br /> উজবেক ট্রাভেল ডটকম, উইকিপিডিয়া,<br /> সেন্ট্রাল এশিয়া ট্রাভেল ডটকম</span></span></span></span></span></p>