<p><span style="font-size:14pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">দাওয়াত ও তাবলিগ হলো দ্বিনের প্রতি মানুষের আগ্রহ জাগানোর মাধ্যম। যার ভেতর দ্বিনের প্রতি আগ্রহ নেই, দাওয়াতের কাজ হলো তাকে দ্বিনদার বানানো, মুত্তাকি বানানো। যখন কারো মনে দ্বিনের ব্যাপারে আগ্রহ জাগে, সে আগ্রহ পূরণ করার জন্য তাকে কোরআন-সুন্নাহর সবক নিতে হয়। যারা ইলমের মেহনত করছেন, তাদের কাছে এসে ধর্মের শিক্ষা নিয়ে তবেই তাবলিগের মাঠে নামতে হবে। এ জন্যই তাবলিগের মেহনত শুরু করার আগে হজরতজি ইলিয়াস (রহ.) দীর্ঘ সময় রশিদ আহমদ গাঙ্গোহী, আশরাফ আলী থানবী, শাইখুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মাওলানা খলিল আহমদ সাহরানপুরী (রহ.)-এর মতো যুগশ্রেষ্ঠ আলেমদের সোহবতে থেকেছেন।   </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:14pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">হজরতজি ইলিয়াস কান্ধলভি ছিলেন ভারতবর্ষের একজন প্রতিথযশা আলেম। তিনি ১৮৮৫ সালে ভারতের কান্ধলায় জন্ম গ্রহণ করেন। শিশুকালেই তিনি কোরআনের হিফজ সম্পন্ন করেন। এরপর দীর্ঘ ১০ বছর আল্লামা রশিদ আহমদ গাঙ্গোহী (রহ.)-এর সান্নিধ্যে থেকে ইলমে শরিয়ত ও তরিকতের উচ্চ মাকাম অর্জন করেন। ১৯০৮ সালে তিনি দারুল উলুম দেওবন্দে শায়খুল হিন্দ মাহমুদুল হাসানের (রহ.) কাছে বুখারি ও তিরমিজির দরস নেন। এরপর মাওলানা খলিল আহমদ সাহারানপুরীর কাছে বায়াত নেন। এর দুই বছর পর তিনি মাজাহিরু উলুম সাহারানপুরে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এর কিছু দিন পর তিনি দিল্লির নিজামুদ্দিনের বাংলাওয়ালী মসজিদে তাবলিগের মেহনত শুরু করেন। বিংশ শতাব্দীর এই মহান দাঈ, মুবাল্লিগ ও আলেম দাওয়াত ও তাবলিগের ময়দানে এক ইতিহাস সৃষ্টি করেন। সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে ইসলামী নীতি ও আদর্শের মহিমা ফিরিয়ে আনতে ১৯২০ সালে তিনি তাবলিগ জামাতের সূচনা করেন। তাবলিগ জামাত মানুষকে আল্লাহর পথে চলার দাওয়াত দেয়। ব্যক্তিজীবনের কাজকর্ম, অফিস, ব্যবসা-বাণিজ্য, অন্য সব কিছু ঠিক রেখে কোরআন-সুন্নাহ মেনে চলা যে কষ্টসাধ্য বিষয় নয়, তা হাতে-কলমে শেখানোই তাবলিগ জামাতের মূল উদ্দেশ্য।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:14pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তাবলিগ জামাতের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ইলিয়াস (রহ.) বলেন, </span></span><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আমি এই  ঈমানি আন্দোলনের মাধ্যমে প্রত্যেক জায়গায় ওলামায়ে কিরাম এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে পারস্পরিক বন্ধন গড়ে তুলতে চাই।</span></span><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> (মালফুজাত, মালফুজ নম্বর ১০২) </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:14pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ইলিয়াস (রহ.) আরো বলেন, </span></span><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আমাদের এই তাবলিগি মেহনত সুন্দর জীবন গঠন করার মেহনত। আর এর উসুল যথাযথভাবে পালন করার মধ্যেই কামিয়াবি ও সফলতা নিহিত। এই মেহনতের গুরুত্বপূর্ণ একটি উসুল হলো, মুসলমানদের মনমানসিকতা বুঝে তাদের সামনে ইসলামের আহ্বান তুলে ধরা। মুসলমানদের মধ্যে সাধারণত তিনটি স্তর দেখা যায়। এক. হতদরিদ্র শ্রেণি। দুই. উন্নত শ্রেণি। তিন. ওলামায়ে দ্বিন। এই তিন শ্রেণির সঙ্গে যে আচরণ করতে হবে তা একত্রে এই হাদিসের মধ্যে উল্লেখ আছে, </span></span><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদের স্নেহ করল না, বড়দের সম্মান করল না এবং ওলামায়ে কিরামকে ইজ্জত করল না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।</span></span><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> (মালফুজাত, মালফুজ নম্বর ১৩৫)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:14pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ইলিয়াস  (রহ.) বলেন, </span></span><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তাবলিগি কাজের একটি উসুল হলো, স্বাধীনভাবে নিজের মনমতো না চলা; বরং নিজেকে ওই সব বুজুর্গের পরামর্শ অনুযায়ী পরিচালনা করা, যাদের ওপর দ্বিনি বিষয়ে আমাদের পূর্ববর্তী আকাবির হজরতরা আস্থা রেখে গেছেন এবং আল্লাহ তাআলার সঙ্গে যাদের খাস সম্পর্কের ব্যাপারটি সর্বস্বীকৃত। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পর সাহাবায়ে কিরামের সাধারণ নিয়ম এই ছিল যে নবীজি (সা.) যাঁদের ওপর বেশি আস্থা রেখেছিলেন তাঁরাও তাঁদের ওপর বেশি আস্থা রাখতেন। পরবর্তী যুগে বেশি আস্থার পাত্র ছিলেন ওই সব বুজুর্গানে দ্বিন, যাঁদের ওপর আবু বকর (রা.) ও ওমর (রা.) আস্থা রেখেছিলেন।</span></span><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> এরপর তিনি (রহ.) বলেন, </span></span><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">দ্বিনের কাজে আস্থাশীল ব্যক্তি নির্বাচন করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্কতা জরুরি, অন্যথায় অনেক বড় ধরনের গোমরাহির আশঙ্কা আছে।</span></span><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> (মালফুজাত, মালফুজ নম্বর ১৪৩)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:14pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আলেমদের কাছে দ্বিন শেখার নিয়তে যাওয়ার ব্যাপারে হজরতজি ইলিয়াস (রহ.) বলেন, </span></span><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আমাদের তাবলিগের সাথিদের তিন শ্রেণির লোকদের কাছে তিন উদ্দেশ্যে বিশেষভাবে যাওয়া উচিত। ওলামায়ে কিরাম ও বুজুর্গানে দ্বিনের খেদমতে যাওয়ার উদ্দেশ্য হবে তাদের থেকে দ্বিন শেখা। নিজের চেয়ে নিম্ন শ্রেণির লোকদের কাছে যাওয়ার উদ্দেশ্য হবে দ্বিনি কথাবার্তা প্রচার করে নিজের ইমান মজবুত করা। আর বিভিন্ন শ্রেণির লোকদের কাছে  যাওয়া উদ্দেশ্য হবে তাদের ভালো গুণাবলি গ্রহণ করা।</span></span><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> (মালফুজাত, মালফুজ নম্বর ৮৬) </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:14pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">হে তাবলিগি ভাই! যেসব সোনালি উসুলের কারণে হজরতজির মেহনত ব্যাপক পরিসরে মকবুল হয়েছে এগুলো সংরক্ষণ করা জরুরি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:14pt"><span style="font-family:Kantho"><strong><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">লেখক : প্রতিষ্ঠাতা</span></span></strong><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> পরিচালক, চরপাথালিয়া সালমান ফারসি (রা.) মাদরাসা, মুন্সীগঞ্জ</span></span></span></span></p> <p> </p> <p> </p> <p> </p>