<p style="text-align:justify"><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুর দাপ্তরিক নাম দ্য রিপাবলিক অব পেরু, যা দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম ও মধ্য অঞ্চলে এবং প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলে অবস্থিত। দেশটির উত্তরে ইকুয়েডর ও কলম্বিয়া, পূর্বে ব্রাজিল, দক্ষিণ-পূর্বে বলিভিয়া, দক্ষিণে চিলি, দক্ষিণ ও পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগর অবস্থিত। ভৌগোলিকভাবে দারুণ বৈচিত্র্যের অধিকারী। যেখানে আছে জনবিরল মরুভূমি, সবুজ মরূদ্যান, বরফাবৃত পর্বতমালা, উচ্চ মালভূমি, দুর্গম উপত্যকা ও ঘন ক্রান্তীয় অরণ্য। সমুদ্রতীরবর্তী লিমা শহর পেরুর প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র ও রাজধানী। পেরুর মূল আয়তন ১২ লাখ ৮৫ হাজার ২১৬ বর্গমাইল। মোট জনসংখ্যা তিন কোটি ৪৩ লাখ ৫২ হাজার ৭২০ জন। এর ভেতর প্রায় ৯৫ শতাংশই খ্রিস্টান। পেরুতে মুসলমানের সংখ্যা ১ শতাংশেরও কম। </span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ঐতিহাসিকদের দাবি, পেরুতে খ্রিস্ট-পূর্ব সাড়ে ১২ হাজার বছর আগে মানববসতি গড়ে ওঠে। নিকট অতীতের ইনকা সাম্রাজ্যের কেন্দ্রভূমি ছিল পেরু। ইনকা সাম্রাজ্যের সময় গড়ে ওঠা মাচুপিচু শহর দেশটির অন্যতম আইকনিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। খ্রিস্টীয় ১৬ শতকে ঔপনিবেশিক স্প্যানিশ বাহিনীর হাতে ইনকা সাম্রাজ্যের পতন হয় এবং ১৯ শতকের শুরুতে পেরু স্বাধীনতা লাভ করে।</span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পেরুতে ইসলাম আগমন কিভাবে হয়েছিল তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের ভেতরে মতভিন্নতা আছে। কোনো কোনো ঐতিহাসিক দাবি করেন, লাতিন আমেরিকায় এমন কিছু নিদর্শন পাওয়া গেছে, যা দ্বারা প্রমাণিত হয়, কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কার করার প্রায় চার শ বছর আগে মুসলিমরা আমেরিকা মহাদেশ সম্পর্কে জানতে পেরেছিল। আফ্রিকা ও স্পেনের মুসলিমরাই সর্বপ্রথম সেখানে পদার্পণ করেছিল, বিশেষ করে ১১০০ থেকে ১১৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে আমেরিকা মহাদেশে মুসলিম আগমনের একাধিক নিদর্শন পাওয়া গেছে। সেখানে পশ্চিমা বিশ্বে ভৌগোলিক আবিষ্কারের আন্দোলন শুরু হয়েছিল ১৪৯০ খ্রিস্টাব্দে।</span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পেরুতে ইসলামী নিদর্শনগুলোর ভেতর অন্যতম রাজধানী লিমায় অবস্থিত আন্দুলুসীয় স্থাপত্য রীতিতে গড়ে ওঠা ভবনগুলো। লিমার কোনো কোনো সড়কে হাঁটলে আপনার মনে হতে পারে আপনি কর্ডোভা বা সেভিলে হাঁটছেন। এ ছাড়া মুসলিম সভ্যতা ও সংস্কৃতির নানা উপাদান এখনো পেরুর সমাজব্যবস্থায় দৃশ্যমান। যেমন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্থাপত্যরীতি, নির্মাণশৈলী, পোশাক ও খাদ্যরীতি ইত্যাদি।</span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মুসলিম স্পেনের পতনের পর বিপুলসংখ্যক মুসলিমকে লাতিন আমেরিকায় নির্বাসন দেওয়া হয় এবং সেখানে তাদের দাসের জীবন যাপন করতে বাধ্য করা হয়। তাদের মাধ্যমেই আমেরিকা মহাদেশের বেশির ভাগ দেশে ইসলামের সূচনা হয়। যদিও মুসলিমদের ধর্ম পালনে কঠোর নিষেধাজ্ঞা ছিল। ঐতিহাসিকরা লেখেন, ১৫৬০ খ্রিস্টাব্দে পেরুর ঔপনিবেশিক স্প্যানিশ শাসক লোপে ডে লা পেনাকে ইসলামচর্চার অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। তাঁকে মুর (উত্তর আফ্রিকার মুসলিম জনগোষ্ঠী) আখ্যা দেওয়া হয়। তিনি ছিলেন মূলত মেক্সিকোর গোয়াদালাজারা শহরের অধিবাসী। তাঁকে ইসলামচর্চা ও ইসলাম প্রচারের অপরাধে পেরুর কুজকো শহর থেকে আটক করা হয়। কারাবাসের পুরো সময় তাঁর গলায় সানবেনিতো (অপরাধীদের জন্য অপমানজনক পোশাক) পরতে বাধ্য করা হয়। তাঁর মতোই ইসলাম প্রচারের অপরাধে কারাভোগ করতে হয় স্প্যানিশ বংশোদ্ভূত জুয়ান সোলানো এবং একজন আফ্রিকান নারীকে। লুইস সোলানোকে ইসলাম প্রচারের অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। ধারণা করা হয়, কঠোর ইসলামবিদ্বেষী মনোভাব ও জুলুম-নির্যাতনের কারণে পেরু থেকে ধীরে ধীরে ইসলাম ও মুসলমান নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। </span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দীর্ঘদিন পর ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে ঘরবাড়ি হারানো মুসলিমদের একটি দল ১৯৪৮ সালে পেরুতে আশ্রয় নিয়েছিল। ফলে দেশটিতে আবারও ইসলামের চর্চা শুরু হয়। পেরুর নাগরিক লুইস কাস্ট্রো ইসলাম গ্রহণ করেন এবং ১৯৮০ সালে তিনি মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান, যা ছিল পেরুর ইতিহাসে একটি অনন্য ঘটনা।</span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">১৯৯৩ সালে পেরুর মুসলিম সম্প্রদায় রাজধানীর </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জেসাস মারিয়া</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> জেলায় একটি মসজিদ নির্মাণ করে। তবে আর্থিক সংকটে তা বন্ধ হয়ে যায়। ভিলা এল সালভাদর জেলায় প্রতিষ্ঠিত অপর একটি মসজিদও বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে পেরুতে আটটি অনুমোদিত মসজিদ আছে এবং বেশ কিছু নামাজকক্ষ আছে। বাবে ইসলাম দেশটির সবচেয়ে সুন্দর মসজিদ। পেরুর মুসলিমদের সবচেয়ে বড় সংকট ইসলামী শিক্ষা ও শিক্ষা উপকরণের অভাব। স্প্যানিশ ভাষায় দক্ষ আলেমের অভাব পেরুতে ইসলাম প্রসারে একটি প্রতিবন্ধক বলে মনে করা হয়। তবে শত বাধার মধ্যেও পেরুতে ইসলাম একটি বিকাশমান ধর্ম। ধীরে ধীরে এখানে মুসলমানের সংখ্যা বাড়ছে।</span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সূত্র : দাওয়াহ ডটসেন্টার, ইসলাম ওয়েবডটনেট, ইসলামিক বোর্ড ডটকম ও উইকিপিডিয়া</span></span></span></span></p>