<p style="text-align:justify">আমরা প্রায় সময় অনুভব করি নামাজে যথেষ্ট মনোযোগ দিতে পারছি না। কখনো কখনো আমরা বুঝতে পারি না যে কিভাবে আমাদের নামাজের ‘খুশু’ নষ্ট হচ্ছে। অথচ ‘খুশু’ নামাজের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কোরআনে বলেছেন, ‘সাফল্য লাভ করেছে মুমিনরা, যারা নামাজে বিনম্রভাবে মনোনিবেশ করে।’</p> <p style="text-align:justify">(সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ১-২)</p> <p style="text-align:justify">নিম্নে নামাজে মনোযোগ ধরে রাখার উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলো—</p> <p style="text-align:justify">মনের জঞ্জাল পরিষ্কার করা : প্রতিদিন আমাদের মস্তিষ্কে হাজারো তথ্য প্রবেশ করে। আমাদের সমাজ, পরিবেশ, কর্মক্ষেত্র ইত্যাদি হারাম উপাদানে ভরপুর, যা আমাদের মস্তিষ্কের স্বচ্ছতা বিঘ্নিত করে। শয়তান এই বিভ্রান্তি নামাজের সময় সৃষ্টি করে, ফলে আমরা আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে থাকলেও মন সম্পূর্ণ অন্য কোথাও থাকে। এই পরিস্থিতি এড়াতে দিনে কিছু সময় চিন্তার জন্য নির্ধারণ করুন। সব কিছু থেকে বিরতি নিন। বিশেষত প্রত্যেক নামাজের আগে বাসায় বা মসজিদে নীরবে চোখ বুঁজে বসে মনকে জঞ্জালমুক্ত করুন; ভাবুন, আমাকে মহামহিম প্রভুর সামনে দাঁড়াতে হবে। মূল লক্ষ্য হলো এই চিন্তাগুলোকে দূর করা, যাতে সেগুলো নামাজের সময় মনে না আসে।</p> <p style="text-align:justify">তাড়াহুড়ার অনুভূতি : নামজের সময় এমন কোনো পূর্ব-সংশ্লিষ্টতা না রাখা, নামাজের মধ্যে যার প্রতি টান অনুভব হতে পারে। এমনকি জুতাও নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণ করা, শয়তান যেন মনে তা চুরির বাহানা উদ্রেক করতে না পারে। প্রথমত, বুঝতে হবে যে এটি শয়তানের একটি কৌশল। দ্বিতীয়ত, মনে করিয়ে দিন যে জ্ঞান আল্লাহর কাছ থেকেই আসে। যদি আল্লাহ চান, আপনি নামাজের পরে বিষয়টি মনে করতে পারবেন। আল্লাহ বলেন, ‘তারা বলল, আপনি পবিত্র; আমরা তো কেবলমাত্র তাই জানি, যা আপনি আমাদের শিখিয়েছেন। নিশ্চয়ই আপনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ৩২)</p> <p style="text-align:justify">অজুর বৈধতা নিয়ে সন্দেহ : অনেকেই অজু নিয়ে এত বেশি সন্দেহ করেন যে তাঁরা নামাজ ছেড়ে দেন। এ বিষয়ে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যতক্ষণ না শব্দ শুনে বা গন্ধ পায়, ততক্ষণ নামাজ ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়।’ (বুখারি, হাদিস : ১৩৭)</p> <p style="text-align:justify">আপনি যদি নিশ্চিত হন যে অজু করেছেন, তবে আপনার অজু বৈধ বলেই ধরে নিতে হবে, যতক্ষণ না নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয় যে তা ভঙ্গ হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">ভুল করার ভয়ে চিন্তিত হওয়া : নামাজে যেমন আপনি কি রুকুতে ‘সুবহানা রব্বিয়াল আজিম’ বলেছিলেন, না ‘সুবহানা রব্বিয়াল আলা’? বা একবার না দুইবার সিজদা করেছেন? এ ধরনের চিন্তা এড়িয়ে নামাজে বর্তমান সময়ের কাজের ওপর মনোযোগ দিন।</p> <p style="text-align:justify">ভবিষ্যতের ভুল নিয়ে চিন্তিত হওয়া : আপনি হয়তো লক্ষ করেছেন যে সুরা ফাতিহা পড়ার সময় পরবর্তী সুরা কী পড়বেন তা নিয়ে চিন্তায় থাকেন। এর সহজ সমাধান হলো নামাজ শুরুর আগে সুরাগুলো ঠিক করে নেওয়া।</p> <p style="text-align:justify">অস্বস্তিকর পরিবেশ : ধরা যাক, ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় আপনি ফ্যান বন্ধ করে নামাজ পড়ছেন। এতে কতটা খুশু আশা করা যায়? সাহাবিরা এমনকি অস্ত্রোপচারের সময়েও নামাজ পড়তে পারতেন। তবে আজ আমাদের এই সহনশীলতা কম, তাই পরিবেশ যতটা সম্ভব আরামদায়ক রাখা উচিত।</p> <p style="text-align:justify">অস্বস্তিকর বা বিভ্রান্তিকর পোশাক : এটি নারীদের জন্য বেশি প্রযোজ্য। কখনো কখনো নারীরা এমন পোশাক পরেন, যা নামাজের সময় ঝামেলা তৈরি করে। এই সমস্যাগুলো নামাজের আগে সমাধান করুন। নামাজের জন্য উপযুক্ত পোশাক বা স্কার্ফ ব্যবহার করুন, যা সহজে সামঞ্জস্য করা যায়।</p> <p style="text-align:justify">একটি হাদিসে বলা হয়েছে, আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) এমন একটি পোশাকে নামাজ পড়লেন, যাতে চিহ্ন ছিল। নামাজ শেষে তিনি বললেন, ‘আমার এই পোশাক আবু জাহমের কাছে দিয়ে দাও এবং তার অনবিজানিয়া (চিহ্নবিহীন পোশাক) নিয়ে এসো, কারণ এটি আমাকে নামাজে বিভ্রান্ত করেছে।’ (বুখারি : ৩৭৩)</p> <p style="text-align:justify">পুরুষদের জন্যও এ বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি। প্রয়োজনে নামাজের জন্য পাঞ্জাবি বা বিশেষ কোনো পোশাক নির্দিষ্ট করে রাখা। যার দরুন নামাজের সময়, বিশেষত সিজদার সময় দৃষ্টিকটু পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, নিজের, পেছনের কাতারের বা আশপাশের মুসল্লিদের অস্বস্তিতে পড়তে হয়—এমন ছোট বা আঁটসাঁট পোশাক পরিধান না করা।</p> <p style="text-align:justify">নামাজ আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতার চাবিকাঠি। তবে যদি আমরা এই চাবির যত্ন না করি বা হারিয়ে ফেলি, তাহলে আমরা দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের দরজা খুলতে পারব না।</p>
