পার্বত্য বাংলায় ইসলাম

মো. আলী এরশাদ হোসেন আজাদ
মো. আলী এরশাদ হোসেন আজাদ
শেয়ার
পার্বত্য বাংলায় ইসলাম

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রায় এক-দশমাংশ পার্বত্য অঞ্চলের প্রশাসনিক জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি। নৃতাত্ত্বিক, ভৌগোলিক পর্যটনে জেলাগুলো বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। বাঙালিরা ব্যবসায়-বাণিজ্য, জীবিকায়নের স্বার্থে মোগল ও ব্রিটিশ আমল থেকে এখানে বসবাস করছেন।

পার্বত্য ত্রিপুরা ও আরাকানিদের মধ্যেই এ অঞ্চলের কর্তৃত্ব আবর্তিত হতো।

৯৫৩ সালে আরাকানের রাজা এ অঞ্চল অধিকার করেন। সুলতান ফখরুদ্দিন মুবারক শাহ (১৩৩৮- ৪৯) চট্টগ্রাম ও পার্বত্য অঞ্চলে মুসলিম আধিপত্য নিশ্চিত করেন। ১৫৫০ সালে প্রকাশিত বঙ্গের প্রথম মানচিত্রে অঞ্চলটির উল্লেখ আছে। মোগলরা ১৬৬৬-১৭৬০ পর্যন্ত অঞ্চলটি সুবা বাংলার অধীনে শাসন করেন।
১৭৬০ সালে অঞ্চলটির কর্তৃত্ব নেয় ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানি। চিটাগাং হিল ট্র্যাক্টস নামে ব্রিটিশরা ১৮৬০ সালে স্বতন্ত্র জেলা প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৪৭ সালে অঞ্চলটি পাকিস্তানের এখতিয়ারভুক্ত এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়।

এ অঞ্চলে বাঙালি মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ।

উপজাতিদের মধ্যেও আছে ধর্মান্তরিত মুসলমান। বাঙালিদের মধ্যে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ এবং কিছু ধর্মান্তরিত খ্রিস্টানও আছে। এখানে বাঙালি ছাড়াও চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, ম্রো বা মুরং, তঞ্চঙ্গ্যা, বোম, পাংখোয়া, চাক, খুমি, লুসাই বা মিজো, কুকি বা চিন জনগোষ্ঠীর বসবাস আছে।

 

পার্বত্য বাংলায় ইসলাম

রাঙামাটি

নৈসর্গিক লীলাভূমি ও পার্বত্যাঞ্চলের রাজধানী খ্যাত রাঙামাটি, রিকশামুক্ত জেলা। ২০১১ সালের জনশুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যা ছয় লাখ ২০ হাজার ২১৪ জন।

আয়তন ৬১১৬.১৩ বর্গকিলোমিটার। উপজেলা ১০টি, থানা ১২টি। পৌরসভা দুইটি, ইউনিয়ন ৫০টি, গ্রাম ১৩৪৭টি। শিক্ষার হার ৪৩.৬০ শতাংশ। জেলায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বেশির ভাগ বৌদ্ধ, কিছু হিন্দু ও খ্রিস্টান। বাঙালিদের বেশির ভাগ মুসলমান।

 

রাঙামাটির অন্যতম মসজিদ

ইসলামপুর জামে মসজিদ, পুরানা বস্তি জামে মসজিদ, তৈয়বিয়া জামে মসজিদ, নিউ রাঙামাটি জামে মসজিদ, সওজ জামে মসজিদ, পুরাতন কোর্ট বিল্ডিং জামে মসজিদ, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড জামে মসজিদ, বায়তুশ শরফ জামে মসজিদ, ডিসি বাংলো জামে মসজিদ, পুলিশ লাইন জামে মসজিদ, কাশেম বাজার জামে মসজিদ, বায়তুল আমান জামে মসজিদ, ফরেস্ট অফিস কমপ্লেক্স জামে মসজিদ, আনসার ভিডিপি জামে মসজিদ, টিঅ্যান্ডটি জামে মসজিদ, সদর থানা জামে মসজিদ, বাইতুস সালাম জামে মসজিদ, কোর্ট জামে মসজিদ, হাসপাতাল জামে মসজিদ,

বনরূপা জামে মসজিদ, ব্রিগেড জামে মসজিদ, রিজার্ভমুখ জামে মসজিদ ইত্যাদি।

রাঙামাটির মসজিদগুলোর অন্যতম পুরাতন রাঙামাটি জামে মসজিদ। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্থানে নির্মিত দারুস সালাম জামে মসজিদ রাঙামাটির সাজেক ভ্যালির রুইলুপাড়ায় অবস্থিত।

খাগড়াছড়ি

খাগড়াছড়ির আয়তন ২,৬৯৯.৫৬ বর্গকিলোমিটার। ২০২২ সালের জনশুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যা সাত লাখ ১৪ হাজার ১১৯ জন। উপজেলা ৯টি। পৌরসভা তিনটি, ইউনিয়ন ৩৮টি। মসজিদ ৬৩৪টি, বৌদ্ধ মন্দির (ক্যাং) ৮৩৬টি, হিন্দু মন্দির ২১২টি, গির্জা ২৬৬টি। শিক্ষার হার ৭১.৮০ শতাংশ।

 

খাগড়াছড়ির অন্যতম মসজিদ

বিজিবি ক্যাম্প মসজিদ, সিঙ্গিনালা মসজিদ, জেলা পরিষদ মসজিদ, টার্মিনাল মসজিদ, উপজেলা মসজিদ, খেজুরবাগান মসজিদ, সবুজবাগ মসজিদ, এমইএস মসজিদ, আর্মি জোন মসজিদ, ব্রিগেড মসজিদ, টিলা মসজিদ, আনসার ক্যাম্প মসজিদ, বাঙ্গালকাটি মসজিদ, চেঙ্গী ব্রিজ মসজিদ, বায়তুশ শরফ মসজিদ, মুসলিমপাড়া মসজিদ, পুরাতন পুলিশ লাইন মসজিদ, কলাবাগান মসজিদ, কোর্টবিল্ডিং মসজিদ, সদর থানা মসজিদ, ইসলামপুর মসজিদ, দারুল আইতাম মসজিদ, দারুল উলুম মসজিদ, নতুন পুলিশ লাইন মসজিদ, গারাংগিয়া মসজিদ, মধ্য শালবন মসজিদ, ওয়াপদাপাড়া মসজিদ, বাজার শাহি মসজিদ, নয়নপুর মসজিদ, জেলা পরিষদ মার্কেট মসজিদ, গাউছিয়া জামে মসজিদ, এপিবিএন জামে মসজিদ, এপিবিএন ব্যাটালিয়ন মসজিদ ইত্যাদি।

বান্দরবান

বান্দরবানের আয়তন ৪৪৭৯.০২ বর্গকিলোমিটার। জেলায় সাতটি উপজেলা, দুইটি পৌরসভা, ৩৩টি ইউনিয়ন, ১৪৮২টি গ্রাম রয়েছে। শিক্ষার হার ৫৩.৫৪ শতাংশ। আছে বিশ্ববিদ্যালয় একটি, কলেজ ছয়টি, মাদরাসা আটটিসহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

জনসংখ্যার ৫২.৬৮ শতাংশ মুসলিম, ৩.৪২ শতাংশ হিন্দু, ২৯.৫২ শতাংশ বৌদ্ধ এবং ৯.৭৮ শতাংশ খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী।

 

বারন্দবান সদরের অন্যতম মসজিদ

বান্দরবান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, বান্দরবান বাজার জামে মসজিদ, গোরস্তান মসজিদ, স্টেডিয়াম জামে মসজিদ,

বনরূপা জামে মসজিদ, বালাঘাটা জামে মসজিদ, বান্দরবান থানা জামে মসজিদ, আর্মিপাড়া জামে মসজিদ, কালেক্টরেট স্কুল জামে মসজিদ, হাফেজ ঘোনা জামে মসজিদ, ইসলামপুর জামে মসজিদ, লাঙ্গিপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, বান্দরবান বাসস্ট্যান্ড মসজিদ, নিউ গুলশান জামে মসজিদ, উজানীপাড়া জামে মসজিদ, মধ্যপাড়া জামে মসজিদ, লালমোহন জামে মসজিদ, নতুনপাড়া বাজার জামে মসজিদ, কেচিংঘাটা মসজিদ, ক্যান্টনমেন্ট জামে মসজিদ, কলেজ জামে মসজিদ ইত্যাদি।

বান্দরবানের ওমর ফারুক ত্রিপুরা ২০১৪ সালে মুসলমান হন। তাঁর প্রচেষ্টায় ৩০টি পরিবার মুসলমান হয়। তিনি নিজ উদ্যোগে মসজিদ তৈরি করে ইমামতি শুরু করেন।

শান্তি মানবতার শত্রু কিছু অপশক্তির ইন্ধনে ১৮ জুন, ২০২১ ইসলামের নিবেদিতপ্রাণ সৈনিক ওমর ফারুক ত্রিপুরাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

        লেখক : সহকারী অধ্যাপক

তথ্যঋণ ও কৃতজ্ঞতা

জাতীয় তথ্য বাতায়ন, বাংলাপিডিয়া, উইকিপিডিয়া ও অন্যান্য

 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

উম্মতে মুহাম্মদির সিয়াম সাধনার বৈশিষ্ট্য

মো. আবদুল মজিদ মোল্লা
মো. আবদুল মজিদ মোল্লা
শেয়ার
উম্মতে মুহাম্মদির সিয়াম সাধনার বৈশিষ্ট্য

ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের একটি রোজা। মুসলিমদের মতো পূর্ববর্তী জাতিগোষ্ঠীর ওপর রোজা ফরজ ছিল। এমনকি আসমানি ধর্মের অনুসারী নয় এমন সম্প্রদায়ের ভেতরও রোজাসদৃশ আচার-আয়োজন খুঁজে পাওয়া যায়। তবে প্রথমেই শরিয়তে রমজানের রোজা ফরজ হয়নি, বরং তা কয়েক ধাপে হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম জাতির মতো পূর্ববর্তী জাতিগুলোর ওপরও রোজা ফরজ করেছিলেন। ইরশাদ হয়েছে, হে মুমিনরা! তোমাদের ওপর রমজানের রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যেন তোমরা আল্লাহভীতি অর্জন করতে পারো। (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৮৩)

কোরআনে মারিয়াম (আ.)-এর ভাষ্যে বলা হয়েছে, মানুষের মধ্যে কাউকে যদি তুমি দেখ তখন বলবে, আমি দয়াময়ের উদ্দেশ্যে রোজার (মৌনতা অবলম্বনের মাধ্যমে) মানত করেছি। সুতরাং আজ আমি কিছুতেই কোনো মানুষের সঙ্গে বাক্যালাপ করব না।

(সুরা : মারিয়াম, আয়াত : ২৬)

ইসলাম আগমনের পূর্বে আরব সমাজেও রোজার প্রচলন ছিল। আয়েশা (রা.) বলেন, জাহেলি যুগে কুরাইশরা আশুরার রোজা পালন করত এবং আল্লাহর রাসুল (সা.)-ও এই রোজা পালন করতেন। যখন তিনি মদিনায় আগমন করেন তখনো এই রোজা পালন করেন এবং তা পালনের নির্দেশ দেন। যখন রমজানের রোজা ফরজ করা হলো তখন আশুরার রোজা ছেড়ে দেওয়া হলো।

যার ইচ্ছা সে পালন করবে আর যার ইচ্ছা পালন করবে না। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০০২)

রোজা বা সিয়াম সাধনা একটি প্রাচীন ইবাদত, যা ইসলাম ধর্মেও বহাল রয়েছে। তবে পূর্ববর্তী জাতিগোষ্ঠীর রোজা থেকে মুসলিম উম্মাহর রোজার বৈশিষ্ট্য কিছুটা ভিন্ন। আল্লাহ মুসলিম উম্মাহর সিয়াম সাধনাকে অনন্য মর্যাদা দান করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত অপর হাদিস থেকে মাহে রমজানের অনন্য মর্যাদা প্রমাণিত হয়।

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমার উম্মতকে রমজানে এমন পাঁচটি বৈশিষ্ট্য দেওয়া হয়েছে, যা পূর্ববর্তী কোনো উম্মতকে দেওয়া হয়নি :

ক. রোজা পালনকারীর মুখের (অনাহারজনিত) গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশকের সুঘ্রাণ থেকেও উত্তম।

খ. ইফতারের পূর্ব পর্যন্ত ফেরেশতারা সিয়াম পালনকারীর জন্য ক্ষমার দোয়া করতে থাকে।

গ. আল্লাহ তাআলা প্রতিদিন তাঁর জান্নাতকে সুসজ্জিত করে বলেন, আমার নেককার বান্দারা কষ্ট স্বীকার করে অতি শিগগিরই তোমাদের কাছে আসছে।

ঘ. দুষ্ট প্রকৃতির শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, ফলে তারা অন্য মাসের মতো এ মাসে মানুষকে পথভ্রষ্ট করতে পারে না।

ঙ. রমজানের শেষ রাতে রোজা পালনকারীদের ক্ষমা করে দেওয়া হয়। বলা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! এ ক্ষমা কি কদরের রাতে করা হয়? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, না, বরং কোনো শ্রমিককে তার পারিশ্রমিক তখনই দেওয়া হয়, যখন সে কাজ শেষ করে।

(মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৭৯১৭)।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মাহে রমজানের এই অনন্য মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্যগুলো অর্জন করার তাওফিক দিন। আমিন।

 

মন্তব্য

তারাবিতে কোরআনের বার্তা

    পর্ব : ১৮
শেয়ার
তারাবিতে কোরআনের বার্তা

সুরা নুর

আলোচ্য সুরায় মুসলিম উম্মাহকে ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনের নানা শিষ্টাচার শেখানো হয়েছে। এই সুরায় পারিবারিক জীবন গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জিনা ও ব্যভিচারের শাস্তি বর্ণিত হয়েছে। নিরপরাধ নারীদের প্রতি অপবাদ আরোপের শাস্তি বর্ণনা করা হয়েছে।

এই সুরায় আয়েশা (রা.)-এর চারিত্রিক পবিত্রতা বর্ণনা করা হয়েছে। এতে ঘরে প্রবেশের সময় সালাম ও অনুমতি নিতে বলা হয়েছে। চোখ ও লজ্জাস্থান হেফাজত করতে বলা হয়েছে। কাদের সঙ্গে দেখা করা জায়েজ এবং কাদের সঙ্গে জায়েজ নয়, তার একটি তালিকা উল্লেখ করা হয়েছে।
খাদেম ও বুঝমান শিশুদের শোয়ার ঘরে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। মহানবী (সা.)-কে সম্বোধন করার ক্ষেত্রে  সম্মানসূচক শব্দ ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। সুরার শেষের দিকে আল্লাহর সার্বভৌমত্বের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

 

আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত

১. বিচার ও শাস্তি প্রয়োগে পক্ষপাত কোরো না।

(আয়াত : ২)

২. ইসলামী শরিয়তে অপবাদ শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

(আয়াত : ৪)

৩. নিজেকে শুধরে নাও, আল্লাহ ক্ষমা করবেন। (আয়াত : ৫)

৪. মুমিন অপর মুমিনের প্রতি সুধারণা পোষণ করবে। (আয়াত : ১২)

৫. মানুষের দোষ প্রচার গুরুতর অপরাধ। (আয়াত : ১৫)

৬. পাপের পুনরাবৃত্তি করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়।

(আয়াত : ১৭)

৭. অশ্লীলতার প্রসার করা গুরুতর অপরাধ এবং আল্লাহ অশ্লীলতার শাস্তি দুনিয়ায়ই দেন। (আয়াত : ১৯)

৮. অসহায় আত্মীয়-স্বজন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না। (আয়াত : ২২)

৯. মানুষকে ক্ষমা করলে আল্লাহর ক্ষমা পাওয়া যায়।

(আয়াত : ২২)

১০. পবিত্র জীবনযাপনকারীর জন্য রয়েছে সম্মানজনক জীবিকা। (আয়াত : ২৬)

১১. অনুমতি ছাড়া কারো ঘরে প্রবেশ কোরো না।

(আয়াত : ২৭)

১২. দৃষ্টি অবনত রাখো। কেননা পবিত্র জীবন যাপনে সহায়ক। (আয়াত : ৩০)

১৩. পরপুরুষ থেকে নিজের সৌন্দর্য আড়াল করবে নারীরা। (আয়াত : ৩১)

১৪. বিয়ে জীবনে সচ্ছলতা আনে। তাই সাবলম্বী হওয়ার আশায় বিয়ে করতে বিলম্ব করা উচিত নয়। (আয়াত :  ৩২)

১৫. দ্বিনি কাজ দ্বারা মসজিদ সজীব রাখো। (আয়াত : ৩৬)

১৬. পার্থিব জীবনের ব্যস্ততা মুমিনকে আল্লাহর স্মরণবিমুখ না করে। (আয়াত : ৩৭)

১৭. দ্বিন পালনে স্বার্থের বিবেচনা অতি নিন্দনীয়।

(আয়াত : ৪৮-৪৯)

১৮. শরিয়তের একটি মূলনীতি হলো, দায়িত্ব যার, দায়ও তার। (আয়াত : ৫৪)

১৯. তিন সময় ঘরে প্রবেশে অনুমতি নেবে ঘরের মানুষও। ফজরের আগে, দুপুরে বিশ্রামের সময় এবং এশার পর। (আয়াত : ৫৮)

২০. ইসলামী সমাজের একটি সর্বজনীন শিষ্টাচার হলো ঘরে প্রবেশের আগে সালাম দেওয়া। (আয়াত : ৬১)

২১. সামষ্টিক কাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখো না।

(আয়াত : ৬২)

২২. রাসুলের আদেশ অমান্য কোরো না। (আয়াত : ৬৩)

 

সুরা ফোরকান

আলোচ্য সুরার শুরুতেও আসমান ও জমিনে আল্লাহর রাজত্ব ও আধিপত্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহর একত্ববাদের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। কোরআন নিয়ে মক্কার কাফিরদের মিথ্যা অপবাদ খণ্ডন করা হয়েছে। আগের কয়েকজন নবীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সাগর-নদী, আসমান-জমিন সৃষ্টি, বাতাস ও বৃষ্টির সৃষ্টির কথা উল্লেখ করে মহান আল্লাহর অস্তিত্বর প্রমাণ দেওয়া হয়েছে। সুরাটি শেষ হয়েছে রহমানের বান্দাদের বিশেষ গুণাবলি বর্ণনা মাধ্যমে।

 

আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত

১. যারা পরকালে বিশ্বাস করে না তারাই দ্বিনের ব্যাপারে ত্রুটি খোঁজে। (আয়াত : ১১)

২. অসত্ বন্ধুর জন্য কিয়ামতে বিপদে পড়তে হবে।

(আয়াত : ২৮-২৯)

৩. কোরআনকে অকার্যকর ও পরিত্যাজ্য মনে করা গুরুতর পাপ এবং অবিশ্বাসীদের বৈশিষ্ট্য। (আয়াত : ৩০)

৪. ধীরস্থিরভাবে কোরআন তিলাওয়াত করো। (আয়াত : ৩২)

৫. আল্লাহ তাঁর দ্বিনের ভেতর সব সমস্যার সমাধান দিয়েছেন। (আয়াত : ৩৩)

৬. আল্লাহর শাস্তি থেকে শিক্ষা নাও। (আয়াত : ৩৭)

৭. প্রবৃত্তিকে উপাস্য হিসেবে গ্রহণ কোরো না। (আয়াত : ৪৩)

৮. রাতে বিশ্রাম করো এবং দিনে পরিশ্রম করো।

(আয়াত : ৪৭)

৯. বংশ ও বৈবাহিক সম্পর্ক আল্লাহর নির্ধারিত।

(আয়াত : ৫৪)

১০. চলাফেরায় বিনম্র হও। (আয়াত : ৬৩)

১১. মূর্খদের সঙ্গে তর্ক কোরো না। (আয়াত : ৬৩)

১২. তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করো। (আয়াত : ৬৪)

১৩. আল্লাহর কাছে জাহান্নামের আগুন থেকে আশ্রয় চাও। (আয়াত : ৬৫-৬৬)

১৪. ব্যয়ে মধ্যপন্থা অবলম্বন করো। (আয়াত : ৬৭)

১৫. তাওবা পাপকে পুণ্যে পরিণত করে। (আয়াত : ৭০)

১৬. অর্থহীন কাজ পরিহার করো। (আয়াত : ৭২)

১৭. পরিবারের জন্য কল্যাণের দোয়া করো। (আয়াত : ৭৪)

 

গ্রন্থনা : মুফতি আতাউর রহমান

 

 

মন্তব্য

রমজান মাসের ৩০টি বৈশিষ্ট্য

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা
মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা
শেয়ার
রমজান মাসের ৩০টি বৈশিষ্ট্য

সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাস পবিত্র মাহে রমজান। এ মাসে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য অফুরন্ত রহমত লাভের পথ উন্মুক্ত করে দেন। পাপমুক্ত হয়ে ঈমানদীপ্ত জীবনযাপনের প্রশিক্ষণ দেন। নিম্নে পবিত্র এই মাসের ৩০টি বিশেষ বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো

১.   রমজানের রোজা শুধু মুসলিমদের জন্য নির্দিষ্ট।

  (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৮৩)

২.   এটি আল্লাহর দেওয়া একটি বিধান। (প্রাগুক্ত)

৩.   রোজা তাকওয়া বৃদ্ধি করে। (প্রাগুক্ত)

৪.   এই মাসে পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে।

  (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৮৫)

৫.   এতে রয়েছে এমন এক রজনী, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।

(সুরা : কদর, আয়াত : ৩)

৬.   জান্নাতে রোজাদারদের জন্য রাইয়্যান নামে বিশেষ দরজা রয়েছে। (তিরমিজি, হাদিস : ৭৬৫)

৭.   এ মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়।

  (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৬৪২)

৮.   জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। (প্রাগুক্ত)

৯.   শয়তানদের অবাধ্য দলগুলোর শৃঙ্খলিত করা হয়।

(প্রাগুক্ত)

১০. আদম সন্তানের সব আমল তার জন্য, কিন্তু রোজা একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট।

  (বুখারি, হাদিস : ৫৯২৭)

১১. রোজা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে গুনাহ থেকে রক্ষা করে। (বুখারি, হাদিস : ৭৪৯২)

১২. এটি শরীরের জন্য উপকারী এবং সুস্থতা বাড়ায়। (তাবরানি)

১৩. রোজা আত্মগঠন ও নৈতিক উন্নতি ঘটায়।

  (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৮৩)

১৪. এটি সেই মাস, যখন সবচেয়ে বেশি কোরআন তিলাওয়াত করা হয়।

(বুখারি, হাদিস : ৬)

১৫. এ মাসে সবচেয়ে বেশি নফল ইবাদত করা হয়।

১৬. এ মাসে ফেরেশতারা বেশি অবতরণ করেন।

  (সুরা : কদর, আয়াত : ৪)

১৭. মুসলিমরা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি দান-সদকা করে। (বুখারি, হাদিস : ৬)

১৮. এটি গুনাহ মাফের মাস। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৬৪২)

১৯. আল্লাহ অসংখ্য রোজাদারকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। (প্রাগুক্ত)

২০. এই মাসে মানুষ পরস্পরের প্রতি বেশি দয়া ও সহমর্মিতা দেখায়।

২১. আল্লাহ এ মাসে নেকির পরিমাণ বহুগুণ বাড়িয়ে দেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৬৬৩)

২২. অন্যান্য মাসের তুলনায় মসজিদগুলো অধিক পরিপূর্ণ থাকে।

২৩. রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশকের সুগন্ধির চেয়েও প্রিয়। (তিরমিজি, হাদিস : ৭৬৪)

২৪. সাহরির খাবার ও পানীয়তে রয়েছে বিশেষ বরকত। (বুখারি, হাদিস : ১৯২৩)

২৫. মুসলিমদের মধ্যে পাপাচার কমে যায়, তাদের অনেকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সব কাজ থেকে অবসর নিয়ে ইতিকাফ করে। আমাদের নবীজি (সা.)-ও ইন্তেকালের আগ পর্যন্ত প্রতিবছর ইতিকাফ করতেন। (বুখারি, হাদিস : ২০২৬)

২৬. অন্যান্য মাসের তুলনায় এ মাসে নেক কাজের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।

২৭. দোয়া কবুল হওয়ার অন্যতম সময় এটি। (বায়হাকি, হাদিস : ৬৬১৯)

২৮. কিয়ামতের দিন রোজা রোজাদারদের জন্য সুপারিশ করবে। (বায়হাকি)

২৯. রোজা রাখার মাধ্যমে বান্দার আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক আরো দৃঢ় হয়।

৩০. এ মাসের শুরু হয় মুসলিমদের আনন্দে, আর শেষ হয় ঈদুল ফিতরের খুশিতে।

এককথায় রোজা ইবাদতের এক মহান প্রশিক্ষণ, যা আত্মসংযমের ঢালস্বরূপ, আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম, চরিত্র গঠনের শ্রেষ্ঠ উপায়। প্রত্যেক মুমিনের উচিত রমজানের প্রতিটি মুহূর্তকে গুরুত্ব দেওয়া।

মন্তব্য
ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি

মিসরে ভিন্ন আমেজে রমজান উদযাপন

আবরার আবদুল্লাহ
আবরার আবদুল্লাহ
শেয়ার
মিসরে ভিন্ন আমেজে রমজান উদযাপন

চলতি বছর মিসরে রমজান মাস অন্য রকম চেতনা ও অনুভূতির সঙ্গে উদযাপিত হচ্ছে। গাজায় চলমান ইসরায়েলি নৃশংসতা মিসরীয়দের রমজান উদযাপনকে পাল্টে দিয়েছে। মিসরের আলেকজেন্দ্রিয়ায় হাঁটলে যে কারো মনে হবে, মিসরীয়দের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি বিষয়ে ফিলিস্তিনিদের দাবির প্রতিফলন ঘটছে। তারা সব কিছুতে ফিলিস্তিনিদের প্রতিনিধিত্ব করছে।

যেমনরমজান মাসের সৌন্দর্য ও মাহাত্ম্য তুলে ধরতে প্রতিবেশীরা মিলে রাস্তায় আলোকসজ্জা করে থাকে। এবার আলোকসজ্জায় ফিলিস্তিনসংশ্লিষ্ট প্রতীকগুলো ব্যবহার করা হয়েছে।

ফিলিস্তিনের ব্যাপারে পুরো মিসর এক ও অভিন্ন। সাধারণত আলোকসজ্জায় লণ্ঠন ও ফেয়ারি লাইটস (ঝালর বা তারাবাতি) ব্যবহার করা হয়।

এবার এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ফিলিস্তিনি পতাকা। মিসরীয় বিভিন্ন শপিং মল তাদের লভ্যাংশের একাংশ ফিলিস্তিনিদের সহযোগিতায় ব্যয় করার ঘোষণা দিয়েছে। যেমন মধ্য আলেকজেন্দ্রিয়ার মানশেয়া জেলায় অবস্থিত হাক্কানিয়া বাজার। এটি মিসরের একটি বিখ্যাত খেজুর বাজার।
এই বাজারের ব্যবসায়ীরা রমজানে বিপুল পরিমাণ খেজুর বিক্রি করে। তারা ফিলিস্তিনের বিভিন্ন অঞ্চলের নামের সঙ্গে মিলিয়ে খেজুরের নাম নির্ধারণ করেছে। যেমন—‘আরব গাজা খেজুর, মিসরীয় রাফাহ খেজুর ইত্যাদি। এই বাজারের একজন ব্যবসায়ী মুহাম্মদ হামদান। তিনি বলেন, এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে গাজাবাসীর প্রতি সংহতি প্রকাশের জন্য।
যারা ভয়াবহ পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যাচ্ছে এবং যাদেরকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে; আমরা এই বার্তাটিও দিতে চাই যে ফিলিস্তিনিদের দাবির সঙ্গে প্রতিটি আরব একমত।

তিনি আরো বলেন, যখন ক্রেতারা খেজুরের নাম সম্পর্কে জানতে চান, তখন আমরা বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিই। এভাবে মানুষের ভেতর সচেতনতা তৈরির একটি সুযোগ আমাদের সামনে আসে। আমরা তাদের আবেগ ও অনুভূতি দেখে আপ্লুত হই। ক্রেতারাও ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতির উদ্যোগে আনন্দিত। ৫১ বছর বয়সী আহমদ সাঈদ বলেন, এই পরিকল্পনা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আরব গাজা খেজুর কিনে বিষয়টির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করব। যদিও এটি সাধারণ একটি চিন্তা, তবু এর মাধ্যমে সংহতি জানানো যায়। গৃহবধূ সালমা ফুয়াদও মনে করেন, ব্যবসার সঙ্গে মিলিয়ে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানানোতে দোষের কিছু নেই। ক্রেতারা শুধু পণ্য কিনে ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছে না, বরং তারা এ জন্য দায়ী কিছু দেশের পণ্যও বর্জন করছে।

মিসরের রাস্তাঘাটে রমজান উপলক্ষে যে আলোকসজ্জা করা হয়েছে, তাতে যুক্ত করা হয়েছে ফিলিস্তিনের পতাকা। একই সঙ্গে আলোকসজ্জায় ব্যবহার করা হচ্ছে মুখোশ পরানো লণ্ঠন, যা মূলত হামাসের আল কাসসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু উবায়দার দিকেই ইঙ্গিত করে। সাজসজ্জার এই পরিবর্তন শিশুদের ভেতরও গাজা-ফিলিস্তিন সম্পর্কে কৌতূহলী করে তুলেছে। শিশুরা তাদের ঘরোয়া সজ্জায়ও ফিলিস্তিনের পতাকা ব্যবহার করছে এবং অভিভাবকদের ফিলিস্তিন বিষয়ে প্রশ্ন করছে। ফাতেমা আল জাহরাকে তাঁর ছেলে প্রশ্ন করেছিল, রাস্তায় কেন ভিন্ন একটি পতাকা প্রদর্শন করা হচ্ছে। তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, গাজায় তোমার মতো অনেক শিশু আছে। তারা কষ্ট পাচ্ছে। এটা তাদের দেশের পতাকা। আমাদেরকে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে এবং তাদেরকে সমর্থন করতে হবে।

মিসরীয়রা বিশ্বাস করে, এ বছর রমজান কেবল উপবাস বা আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধির মাস নয়, বরং এটি সংহতি প্রকাশ ও প্রতিরোধের ধারণাকে সমর্থন করার মাস। ফলে তারা ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশের এমন কতগুলো মাধ্যম বেছে নিয়েছে, যাতে মানুষ খুব সহজে তাতে অংশ নিতে পারে।

দ্য নিউ আরব অবলম্বনে

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ