ঢাকা, বুধবার ১৯ মার্চ ২০২৫
৫ চৈত্র ১৪৩১, ১৮ রমজান ১৪৪৬

ঢাকা, বুধবার ১৯ মার্চ ২০২৫
৫ চৈত্র ১৪৩১, ১৮ রমজান ১৪৪৬
রমজান ঐতিহ্য

রমজানজুড়ে নাইজেরিয়ায় কোরআনচর্চা

মো. আবদুল মজিদ মোল্লা
মো. আবদুল মজিদ মোল্লা
শেয়ার
রমজানজুড়ে নাইজেরিয়ায় কোরআনচর্চা

একজন সম্মানিত অতিথির মতোই উষ্ণ আন্তরিকতায় রমজানকে বরণ করা হয় নাইজেরিয়ায়। রমজানের চাঁদ ওঠার পর আনন্দ মাহফিল হয় সেখানে এবং পুণ্য ও বরকতের মাস রমজানকে স্বাগত জানিয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়কে বের হয় আনন্দ মিছিল। মাহফিল ও মিছিলে বিশেষ ধর্মীয় সংগীত পরিবেশিত হয়।

নাইজেরিয়ান মুসলিম সমাজ রমজানের জন্য মানসিক ও বস্তুগত উভয়ভাবে প্রস্তুত হয়ে থাকে।

রজব মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে রমজানের প্রস্তুতি শুরু হয় নাইজেরিয়ায়। রমজানের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কিনে রাখে। সঙ্গে সঙ্গে প্রস্তুত হয় আমলের জন্যও। রমজানের পূর্বেই তারা দিনে রোজা ও রাতে তাহাজ্জুদের আমল শুরু করে।
সর্বত্র অপার্থিব প্রশান্তি বিরাজ করে। রমজান নাইজেরিয়ানদের কাছে পুণ্য ও আত্মীয়তার বন্ধন সুদৃঢ় করার মাস। রমজানে প্রত্যেকে আত্মীয়-স্বজন ও আপনজনের সঙ্গে দেখা করে এবং তাদের উৎসাহিত করে রমজানের ধর্মীয় পবিত্রতা, গাম্ভীর্য ও শিক্ষা মান্য করে চলতে। নাইজেরিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তারাবি আদায় করা হয়।
বেশির ভাগ মসজিদে আসরের পর নসিহত, কোরআন তিলাওয়াত ও কোরআনের তাফসির হয়; কোথাও কোথাও হয় এশার নামাজের পর।

ইফতারের সামান্য আগে নাইজেরিয়ান পরিবারগুলো পরস্পরে মধ্যে ইফতার বিনিময় করে। ইফতার আয়োজনে তারা হুমকোকো নামক পানীয় পছন্দ করে, যা গম ও চিনি দিয়ে তৈরি করা হয়। ইফতার আয়োজনে স্থানীয় ফলগুলো বেশ জনপ্রিয়। সামান্য ইফতার গ্রহণ করে তারা মাগরিবের নামাজ আদায় করতে যায়।

নামাজ শেষে রাতের খাবার গ্রহণ করে। এ সময়ের আয়োজনে থাকে গোশত, ভাত ও আলু। খাবার শেষে তারা চা পান করে। এ ছাড়া ভুট্টার আটায় তৈরি রুটি, ডিম ভাজা, কলা ইত্যাদিও ইফতারে সময় খেয়ে থাকে সে দেশের মুসলিমরা। নাইজেরিয়ান মুসলিমদের আরেকটি ইফতার সংস্কৃতি হলো, প্রতিবেশী কয়েক ঘরের লোক কোনো বাড়ির আঙ্গিনায় একত্র হয়ে ইফতার করা। এ ছাড়া তাদের কাছে রমজানে আসিদাহ, দাউয়্যাহ, উনজুঝিলুবিয়া নামের খাবারগুলো বেশ জনপ্রিয়।

তারাবির নামাজ আদায় করতে পুরুষরা মসজিদে যায় এবং শিশুরা ঘরে আলাদা জামাত করে। তারাবির নামাজ শেষ করে তারা আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে যায়। এটি নাইজেরিয়ান সমাজের সৌন্দর্য। মহিলারা রমজানে হরেক রকম খাবার তৈরি করে। আর যারা ধর্মীয় জ্ঞান রাখে তারা মেয়েদের ইসলামী আচার-আচরণ ও শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়। আবার কোনো কোনো পুরুষ স্ত্রীদের তাদের সঙ্গে মসজিদে নিয়ে যায়। রমজানের শেষাংশে জাকাত ও ফিতরা আদায় করে। নাইজেরিয়ার মুসলিমরা খোলা প্রাঙ্গণে ঈদের নামাজ পড়তে পছন্দ করে।

নাইজেরিয়া একটি মিশ্র ধর্মবিশ্বাসের দেশ। এখানে বিপুলসংখ্যক খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী বসবাস করে। নাইজেরিয়ার মুসলিমরা তাদেরকেও রমজান আয়োজনে সংযুক্ত করে, বিশেষ করে রমজান মাসে যেসব জনসেবামূলক কাজ করা হয়, তাতে ধর্মের ভিন্নতা বিবেচনা করা হয় না। ইফতার আয়োজনেও ডাকা হয় অমুসলিম প্রতিবেশীদের। মূলত নাইজেরিয়ার মুসলিমরা রমজানকে ধর্মীয় সম্প্রীতি স্থাপনেরও একটি মাধ্যম মনে করে।

সূত্র : আফ্রিকা নিউজ ডটকম, হাওজা নিউজ ডটকম

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

যেভাবে রমজানের বরকত লাভ করব

আলেমা হাবিবা আক্তার
আলেমা হাবিবা আক্তার
শেয়ার
যেভাবে রমজানের বরকত লাভ করব
ছবি : কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরি

রমজান মাস বান্দার প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ। এই মাসকে তিনি অপার মহিমায় মহিমান্বিত করেছেন। এই মাসকে তিনি বান্দার জন্য বরকতময় করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কাছে রমজান উপস্থিত হয়েছে, যা একটি বরকতময় মাস।

তোমাদের ওপরে আল্লাহ তাআলা এই মাসের রোজা ফরজ করেছেন। এ মাসের আগমনে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, আর আল্লাহর অবাধ্য শয়তানদের গলায় লোহার বেড়ি পরানো হয়। এ মাসে একটি রাত আছে, যা এক হাজার মাস অপেক্ষাও উত্তম। যে ব্যক্তি সে রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত রয়ে গেল সে প্রকৃত বঞ্চিত রয়ে গেল।

(সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২১০৬)

 

বরকতের পরিচয়

বরকতের শাব্দিক অর্থ প্রবৃদ্ধি ও প্রাচুর্য। সাধারণত কোনো ইতিবাচক বিষয়ে প্রবৃদ্ধি ও অগ্রগতিকে বরকত বলা হয়। ইমাম রাগেব ইস্পাহানি (রহ.) বরকতের সংজ্ঞা দিয়ে বলেছেন, কোনো বিষয়ে আল্লাহ প্রদত্ত কল্যাণকে বরকত বলা হয়। অর্থাত্ আল্লাহ যে জিনিসে যে কল্যাণ রেখেছেন সে কল্যাণ অর্জন করাকেই বরকত লাভ করা বলে।

(লিসানুল আরব : ১০/৩৯৫; আল মুফরাদাত ফি গারিবিল কোরআন, পৃষ্ঠা-১১৯)

 

রমজানের বরকত কী

ইমাম রাগেব ইস্পাহানি (রহ.)-এর সংজ্ঞা অনুসারে রমজান মাসে আল্লাহ যেসব কল্যাণ রেখেছেন সেগুলোই রমজান মাসের বকরত। যে ব্যক্তি এসব কল্যাণ অর্জন করতে পারবে সেই রমজানের বরকত অর্জন করতে পারবে। কোরআন ও হাদিসের আলোকে এমন কয়েকটি কল্যাণ হলো—

১. আল্লাহর ক্ষমা : আল্লাহ রোজাদারের জন্য ক্ষমার ঘোষণা দিয়েছেন, পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অবশ্য আত্মসমর্পণকারী পুরুষ ও আত্মসমর্পণকারী নারী, মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী, অনুগত পুরুষ ও অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ ও বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, রোজা পালনকারী পুরুষ ও রোজা পালনকারী নারী, লজ্জাস্থান সংরক্ষণকারী পুরুষ ও লজ্জাস্থান সংরক্ষণকারী নারী, আল্লাহকে বেশি স্মরণকারী পুরুষ ও বেশি স্মরণকারী নারী—এদের জন্য আল্লাহ রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপ্রতিদান।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৩৫)

২. জাহান্নাম থেকে মুক্তি : রমজান হলো জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস। রাসুলুল্লাহ (সা.) এ সম্পর্কে বলেন, ‘আল্লাহ প্রতিদিন ইফতারের সময় কতিপয় বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন এবং তা প্রতি রাতেই হয়ে থাকে।

(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৬৪৩)

৩. আমলের প্রতিদান বৃদ্ধি : রমজান মাসে আল্লাহ আমলের প্রতিদান বৃদ্ধি করেন। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি এই মাসে নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অনুসন্ধান করবে তাকে অন্য মাসের ফরজের সমান সওয়াব দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি এই মাসে একটি ফরজ আদায় করবে সে অন্য মাসে ৭০টি ফরজ আদায়ের সওয়াব পাবে। এই মাস ধৈর্যের মাস এবং এই মাসে মুমিনের রিজিক বৃদ্ধি করা হয়।’

(সুনানে বায়হাকি)

৪. দোয়া কবুল হওয়া : পূর্বসূরি আলেমরা রমজান মাসকে দোয়ার মাস বলেছেন। কেননা রমজান মাসে দোয়া কবুলের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না : ন্যায়পরায়ণ শাসক, রোজাদার যখন সে ইফতার করে এবং অত্যাচারিত ব্যক্তির দোয়া।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৭৫২)

 

যেভাবে বরকত লাভ করব

কোরআন ও হাদিসের আলোকে রমজান মাসে বরকত লাভের কয়েকটি উপায় হলো—

১. কোরআন তিলাওয়াত : আল্লাহ পবিত্র কোরআনকে বরকতময় বলেছেন। তাই কোরআন তিলাওয়াত ও তা অনুসরণের মাধ্যমে বরকত লাভ করা সম্ভব। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি এই কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যা বরকতময়। সুতরাং তার অনুসরণ করো এবং সাবধান হও, তাহলে তোমাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা হবে।’

(সুরা : আনআম, আয়াত : ১৫৫)

২. কদরের রাত অনুসন্ধান করা : আল্লাহ কদরের রাতকে বরকতময় করেছেন এবং এই রাতকে হাজার রাতের চেয়ে উত্তম বলেছেন। তাই কদরের রাত অনুসন্ধানের মাধ্যমে রমজান মাসের বরকত লাভ করা যায়। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি তা (কোরআন) অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় রাতে। আমি তো সতর্ককারী।’

(সুরা : দুখান, আয়াত : ৩)

৩. মসজিদে সময় কাটানো : আল্লাহ সাধারণভাবে মসজিদকে বরকতময় করেছেন। আর বিশেষ মর্যাদা দান করেছেন তিনটি মসজিদকে। তাহলো মসজিদুল হারাম, মসজিদে নববী ও মসজিদুল আকসা। তাই রমজানে সম্ভব হলে উল্লিখিত তিন মসজিদে সময় কাটানো। আর তা না হলে নিজ নিজ এলাকার মসজিদে সময় কাটানো। ইরশাদ হয়েছে, ‘পবিত্র ও মহিমময় তিনি, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত। যার পরিবেশ আমি করেছিলাম বরকতময়, তাকে আমার নিদর্শন দেখানোর জন্য; তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’

(সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ১)

৪. তাকওয়ার জীবন অবলম্বন করা : মহান আল্লাহ মুত্তাকি বান্দার জন্য তাঁর বরকতের দ্বার উন্মুক্ত করে দেন। আর রমজানের একটি উদ্দেশ্যও তাকওয়া অর্জন করা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যদি সেসব জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত ও তাকওয়া অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের জন্য আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর কল্যাণ উন্মুক্ত করতাম। কিন্তু তারা প্রত্যাখ্যান করেছিল। সুতরাং তাদের কৃতকর্মের জন্য তাদেরকে শাস্তি দিয়েছি।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৯৬)

৫. ইস্তিগফার করা : পাপ থেকে তাওবা ও ইস্তিগফারের মাধ্যমে ব্যক্তি আল্লাহর বরকত লাভ করতে পারে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি বলেছি, তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, তিনি তো মহাক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন, তিনি তোমাদের সমৃদ্ধ করবেন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে এবং তোমাদের জন্য স্থাপন করবেন উদ্যান ও প্রবাহিত করবেন নদী-নালা।’

(সুরা : নুহ, আয়াত : ১০-১২)

৬. ব্যবসায় সততা অবলম্বন করা : সততার সঙ্গে ব্যবসা করলে আল্লাহ তাতে বরকত দান করেন। নবীজি (সা.) বলেন, ‘ক্রেতা-বিক্রেতা (একে অপরের সঙ্গে) বিচ্ছিন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের উভয়ের ইখতিয়ার থাকবে। যদি তারা উভয়ে সত্য কথা বলে ও (পণ্যের দোষ-ত্রুটি) যথাযথ বর্ণনা করে, তবে তাদের কেনাবেচায় বরকত হবে, আর যদি তারা মিথ্যা বলে ও (ত্রুটি) গোপন করে, তবে তাদের কেনাবেচার বরকত নষ্ট হয়ে যাবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২১১০)

৭. আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা : আনাস ইবনু মালিক (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে, তার জীবিকা বৃদ্ধি হোক অথবা তাঁর মৃত্যুর পরে সুনাম থাকুক, তবে সে যেন আত্মীয়ের সঙ্গে সদাচরণ করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০৬৭)

৮. বরকতের দোয়া করা : মুমিন বান্দা দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর বরকত লাভ করতে পারে। রাসুলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর কাছে বরকত লাভের দোয়া করতেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে মৌসুমের প্রথম ফল রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে দেওয়া হতো। তিনি তখন বলতেন : ‘হে আল্লাহ! আমাদের মদিনায়, আমাদের ফলে, আমাদের মুদে  ও আমাদের সা-তে বরকত দান করুন, বরকতের ওপর বরকত দান করুন। অতঃপর তিনি ফলটি তাঁর কাছে উপস্থিত সবচেয়ে ছোট শিশুকে দিয়ে দিতেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩২২৬)

আল্লাহ সবাইকে রমজানের বরকত দান করুন। আমিন।

 

 

 

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

প্রশ্ন-উত্তর

    সমাধান : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা
শেয়ার
প্রশ্ন-উত্তর

মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কি রোজা রাখা যায়?

প্রশ্ন : মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কাজা রোজা ও কাফফারার ৬০টি রোজা রাখা যাবে কি না? দয়া করে জানালে উপকৃত হব।

মো. ইয়াকুব, মহেশখালী

উত্তর : মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে তার কাজাকৃত রোজার কাফফারা হিসেবে অন্য কারো রোজা রাখার বিধান নেই। তবে মৃত্যুকালে সে ব্যক্তি ফিদিয়া দেওয়ার অসিয়ত করে গেলে তার রেখে যাওয়া সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ থেকে অসিয়ত পূর্ণ করা জরুরি। অসিয়ত না করলে ফিদিয়া দেওয়া জরুরি নয়।

তবে সাবালক ওয়ারিশরা নিজ নিজ অংশ থেকে তা আদায় করলে আদায় হওয়ার আশা করা যায়। (আদ্দুররুল মুখতার : ২/৪২৪, আফকে মাসায়েল আওর উনকা

হল : ৩/২৯৬, ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ৫/৪৭০)

 

 

মন্তব্য

কোরআন থেকে শিক্ষা

    পর্ব, ৭২৪
শেয়ার
কোরআন থেকে শিক্ষা

আয়াতের অর্থ : ‘যারা সাধ্বী, সরলমনা ও ঈমানদার নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে তারা দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত এবং তাদের জন্য আছে মহাশাস্তি। যেদিন তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে তাদের জিহ্বা, তাদের হাত-পা তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে, সেদিন আল্লাহ তাদের প্রাপ্য প্রতিফল পুরোপুরি দেবেন এবং তারা জানবে, আল্লাহই সত্য, স্পষ্ট প্রকাশক।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ২৩-২৫)

আয়াতগুলোতে অপবাদদাতার পরকালীন শাস্তি বর্ণনা করা হয়েছে।

শিক্ষা ও বিধান

১. আয়াতে সাধ্বী দ্বারা সতীত্ব রক্ষাকারী স্বাধীন নারী উদ্দেশ্য।

চাই সে বিবাহিত হোক অথবা অবিবাহিত।

২. আর গাফিল রমণী দ্বারা এমন সরলমনা নারী উদ্দেশ্য যে পাপাসক্ত নয় এবং যার ব্যাপারে পাপের কোনো অভিযোগ নেই।

৩. বান্দার প্রতি আল্লাহর অভিশাপ হলো তাঁর দয়া ও অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত করা। আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ ছাড়া বান্দার দুনিয়া ও আখিরাতে কোনো মুক্তি নেই।

৪. সতী নারীর প্রতি অপবাদদাতার পার্থিব শাস্তি হলো শরয়ি হদ, সাক্ষ্য রহিতকরণ এবং সামাজিক গ্রহণ যোগ্যতা নষ্ট হওয়া।

৫. অপবাদদাতা যদিও পৃথিবীতে তার মিথ্যা দাবি প্রমাণ করে ফেলে, পরকালে তা প্রকাশ পাবে। তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। ফলে তাদের অস্বীকার করার সুযোগ থাকবে না।

(তাফসিরে শারভি, পৃষ্ঠা-১০২৩৬)

 

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

যাদের রোজা মানে শুধুই না খেয়ে থাকা

সাইফুল ইসলাম
সাইফুল ইসলাম
শেয়ার
যাদের রোজা মানে শুধুই না খেয়ে থাকা

আত্মসংযম, আত্মনিয়ন্ত্রণ, আত্মশুদ্ধি ও আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধনে রোজা একটি অপরিহার্য ইবাদত। ব্যক্তির আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধন এবং তাকওয়ার প্রশিক্ষণ গ্রহণের নিমিত্তে রোজার বিধান প্রবর্তন করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, হে মানুষ! তোমরা যারা ঈমান এনেছ, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করে দেওয়া হয়েছে, যেমন করে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর। যেন তোমরা (রোজার মাধ্যমে) মুত্তাকি হতে পারো (আল্লাহকে ভয় করতে পারো)।

(সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৮৩)

আলোচ্য আয়াতের মাধ্যমে মহান আল্লাহ তাআলা গোটা ঈমানদারদের সতর্ক করেছেন, যেন তারা তাদের জাগতিক কাজকর্মে সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহকে ভয় করে। অর্থাত্ তাদের সব কাজকর্ম যেন শরিয়াভিত্তিক হয়, কোরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক হয় তথা আল্লাহর নির্দেশ এবং আল্লাহর রাসুলের আদর্শ অনুযায়ী হয়।

মহান আল্লাহর কাছে রোজাদারের মর্যাদা সীমাহীন। মহান আল্লাহ হাদিসে কুদসির মাধ্যমে বলেন, রোজা আমার জন্য এবং আমিই এর প্রতিদান দেব।

প্রিয় নবী (সা.) বলেন, যখন রমজান মাসের আগমন ঘটে তখন বেহেশতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানদের শৃঙ্খলিত করা হয়। (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)

কোরআন-হাদিসে রোজাদারদের সম্মানে এত কিছু বলার পরও কিছু কিছু মানুষের রোজা থাকা একেবারে মূল্যহীন হবে; অর্থাত্ তাদের জন্য রোজা থাকা হবে শুধু না খেয়ে থাকা। নিম্নে তাদের বিষয়ে আলোচনা করা হলো

মিথ্যাবাদী : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলা এবং তা অনুসারে কার্যকলাপ করা পরিত্যাগ করেনি, তার পানাহার পরিত্যাগ করাতে (রোজা রাখাতে) আল্লাহর কাছে কোনো মূল্য নেই। (মিশকাতুল মাসাবিহ)

আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠায় বাধাদানকারী : পবিত্র আল-কোরআনে অতি স্পষ্টভাবে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠায় বাধাদানকারীদের বিষয়ে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে।

মহান আল্লাহ বলেন, যেসব লোক আল্লাহ যা নাজিল করেছেন, তদানুযায়ী বিচার-ফয়সালা করে না, তারা কাফির। (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৪৪)

সুতরাং আলোচ্য আয়াতের ভাষ্য অনুসারে কাফিরের রোজা রাখা আর না খেয়ে থাকা সমান।

নেশাকারী : নেশাকারীর বিষয়ে মহানবী (সা.) বলেছেন, নেশাদ্রব্য পানকারী যদি তাওবা না করে মারা যায়, তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (সুনান আন-নাসাঈ)

পিতা-মাতার সঙ্গে খারাপ

ব্যবহারকারী : মহানবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি পিতা-মাতা উভয়কে অথবা তাঁদের একজনকে বার্ধক্যে পাওয়ার পরও (তাঁদের সেবা করে) জান্নাত লাভ করতে পারল না, ধ্বংস হোক সে ব্যক্তি।

(সুনান আত-তিরমিজি ও সহিহ ইবনে হিব্বান)

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি রোজা রাখা সত্ত্বেও মিথ্যা কথা বলা এবং মিথ্যার ভিত্তিতে কাজ করা ছাড়তে পারেনি, তার পানাহার ত্যাগে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।

(বুখারি, হাদিস : ১৯০৩)

আবু হুরাইরা (রা.) আরেক বর্ণনায় বলেন, নবী (সা.) ইরশাদ করেন, অনেক রোজাদার এমন আছে, রোজা থেকে তার প্রাপ্য কেবলই ক্ষুধার্ত থাকা ও পিপাসার্ত থাকা। এবং অনেক রাতের নামাজ আদায়কারী এমন আছে, যাদের এ নামাজের অংশ শুধুই দাঁড়িয়ে থাকা।

(সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৩৪৮১)

রোজা রাখার বিধান প্রবর্তনের অন্যতম কারণ হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তাকওয়া অর্জন তথা আল্লাহভীতি। সুতরাং রোজা রেখে মহান আল্লাহর অপছন্দীয় ও নিষেধাজ্ঞামূলক কাজ করা রোজার উদ্দেশ্য পরিপন্থী। যেমনআর্থ-সামাজিক অসাধুতা, প্রতারণা, মিথ্যাচার, অশ্লীলতা, বেপর্দায় চলা, অন্যায়-অত্যাচার, অনাচার-পাপাচার, খুন-রাহাজানি, সন্ত্রাসবাদ, ব্যভিচার, মদ-জুয়া, সুদ-ঘুষ, অযথা কথা বলা, গিবত করা, পণ্যে ভেজাল, ওজনে কম দেওয়া, ধোঁকাবাজি করা, মজুদদারি ও কালোবাজারি, ব্যবসায় অধিক মুনাফা অর্জন, অন্যায়ভাবে ওপরে উল্লেখিত সম্পদ অর্জনে চেষ্টা করা, দুর্নীতি করা, অপচয়-অপব্যয়, প্রতিবেশীর প্রতি দায়িত্ব পালন না করা, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা, অধীন কর্মচারীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার, অধীন কর্মচারীর ওপর অযৌক্তিক কাজ চাপিয়ে দেওয়া, অবিচার করা, কারো মনে কষ্ট দেওয়া, নাচ-গান করা, হারাম উপার্জন করাসর্বোপরি পৃথিবীতে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠায় বিরোধিতা করা ইত্যাদি।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ