<p>অবলোপনকৃত মন্দমানের খেলাপি ঋণ আদায়ে ভাটা পড়েছে। গত বছর অবলোপনকৃত এ খেলাপি ঋণের বিপরীতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর আদায়ের হার দাঁড়িয়েছে মাত্র ২ শতাংশ, যা পাঁচ বছরের মধ্যে সবনিম্ন। এ ছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ—এই তিন মাসে অবলোপন খেলাপি ঋণের বিপরীতে আদায়ের হার মাত্র দশমিক ৫০ শতাংশ।</p> <p>ব্যাংকগুলোর জোরালো কোনো পদক্ষেপ ও উদ্যোগ না থাকার কারণেই অবলোপনকৃত খেলাপি ঋণ আদায়ের এমন নাজুক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাই খেলাপি ঋণ অবলোপন নিরুৎসাহিত করার পক্ষে আর্থিক খাতের এ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। কিন্তু বেসরকারি ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণ আদায়ে তৎপরতা বাড়ানোর বদলে অবলোপনেই বেশি আগ্রহী। কারণ এ প্রক্রিয়ায় সহজেই খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা সম্ভব হয়। এ জন্য তারা মন্দমানের খেলাপি ঋণ বছরের যেকোনো সময় অবলোপনের সুযোগ পেতে নীতিমালা সংশোধনের দাবি জানিয়েছে।</p> <p>এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, “ওই সব ঋণ হিসাবসমূহ অবলোপন করা হয় যাদের থেকে ঋণ আদায়ের সম্ভাবনা একেবারেই কমে যায়। কিন্তু এর মানে এই নয় যে এই ঋণ আদায়ে ব্যাংকগুলোর তৎপরতা থাকবে না। আমরা নীতিমালায়ই বলে দিয়েছি, এ ঋণ আদায়ে প্রত্যেক ব্যাংকে ‘ডেট কালেকশন ইউনিট’ গঠন করতে হবে। এ ছাড়া অবলোপন ঋণ হিসাবের বিপরীতে দায়েরকৃত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।”</p> <p>ব্যাংকব্যবস্থায় মন্দমানে শ্রেণীকৃত খেলাপি ঋণ মূল স্থিতিপত্র (ব্যালান্সশিট) থেকে বাদ দেওয়াকে ঋণ</p> <p>অবলোপন বলা হয়। তবে আলাদা আরেকটি লেজারে সেগুলোর হিসাব সংরক্ষণ করা হয়। এত দিন ২০০৩ সালের নীতিমালা মেনে খেলাপি ঋণ অবলোপন হলেও এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে নতুন নীতিমালা জারি করা হয়। এ নীতিমালা অনুযায়ী, যেসব মন্দ ঋণ তিন বছরেও আদায় করা যায়নি সেসব ঋণ হিসাব ব্যাংকগুলো অবলোপন করতে পারবে। কিন্তু এ নীতিমালা জারির মাত্র দুই মাস পর গত এপ্রিলে সেটি সংশোধনের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চিঠি পাঠায় বেসরকারি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)।</p> <p>সংগঠনটি বলছে, নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে মন্দমানে শ্রেণীকৃত কোনো ঋণ অবলোপন করার জন্য কমপক্ষে তিন বছর অপেক্ষা করতে হবে। ফলে আদায়ের সম্ভাবনা না থাকা সত্ত্বেও ব্যাংককে ওই সময় পর্যন্ত এই মন্দ ঋণ তাদের স্থিতিপত্রে দেখিয়ে যেতে হবে। এতে করে ব্যাংক খাতের ঊর্ধ্বমুখী মন্দ ঋণ ঋণ না কমারই সম্ভাবনা রয়েছে।</p> <p>এবিবির আবেদনের বিষয়ে গত মাসে ব্যাংকার্স সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ একটি পর্যালোচনা প্রতিবেদন উপস্থাপন করে। সেখানে বলা হয়, অবলোপন নীতিমালায় কী ধরনের পরিবর্তন আনা যেতে পারে, সে বিষয়ে বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে নীতিমালাটি তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া ঋণ অবলোপন নীতিমালা তৈরির সময় অবলোপনকৃত ঋণের বিপরীতে আদায়ের হার বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।</p> <p>পর্যালোচনা প্রতিবেদনে গত পাঁচ বছরে অবলোপনকৃত খেলাপি ঋণের বিপরীতে আদায়ের একটি চিত্রও দেওয়া হয়। এতে দেখা যায়, ২০১৪, ২০১৫, ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে অবলোপনকৃত ঋণের বিপরীতে আদায়ের হার ছিল যথাক্রমে ২.৫৬, ২.৫৯, ২.৫৭, ২.৮৯ ও ২.০০ শতাংশ। একে খুবই অসন্তোষজনক মন্তব্য করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে অবলোপনকৃত ঋণ আদায়ে ব্যাংকগুলো জোরালো পদক্ষেপ নেয় না। এ ছাড়া কোনো ঋণ অবলোপন করা হলে যেহেতু তার তথ্য ব্যাংকের স্থিতিপত্রে থাকে না, তাই ওই ঋণ আদায়ের জন্য ব্যাংক ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের তেমন উদ্যোগ থাকে না। তাই মন্দ ঋণ আদায়ে যাতে ব্যাংকের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকে সে জন্য ঋণ অবলোপনে ব্যাংককে নিরুৎসাহিত করা প্রয়োজন। তা না হলে কোনো ঋণ মন্দমানে শ্রেণীকৃত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা অবলোপন করা ব্যাংকের স্বাভাবিক রীতিতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়ে যায়।</p> <p>তবে ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা (এমডি) বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন পর্যবেক্ষণের সঙ্গে একমত হতে পারেনি বলে জানা গেছে।</p> <p>এ বিষয়ে এবিবির চেয়ারম্যান ও বেসরকারি ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঋণ অবলোপনের নতুন নীতিমালা জারির পর তা সংশোধনের দাবি জানিয়েছি। বিষয়টি নিয়ে ব্যাংকার্স সভায় আলোচনা হয়। আমরা যুক্তি দিয়ে গভর্নরকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছি, নীতিমালাটি সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বিষয়টি দেখা হবে বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন গভর্নর।’</p>