করোনা মহামারির মধ্যেই সংক্রামক অন্য ব্যাধিগুলো নিয়ে ভয়ংকর খবর জানা গেল। ফিরে আসতে পারে হাম পোলিও, রুবেলা, কলেরা, ডিপথেরিয়া ও ডায়রিয়ার মতো রোগগুলো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও), ইউনিসেফ ও দরিদ্র দেশগুলোতে টিকা কর্মসূচির তদারক সংস্থা গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন্স অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনের (গ্যাভি) সাম্প্রতিক যৌথ সমীক্ষা এ অশনিসংকেত দিয়েছে।
সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে করোনা সংক্রমণ ও লকডাউনের জের ধরে টিকা কর্মসূচি দারুণভাবে ব্যাহত হয়েছে।
গ্যাভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সেথ বার্কলে বলেন, ‘মহামারি শুরু হওয়ার আগে টিকা কর্মসূচি ব্যাপকভাবে কার্যকর হওয়ায় উন্নয়নশীল দেশগুলোতে পোলিও, হামসহ বহু রোগ নির্মূল করার লক্ষ্যে অনেক দূর পর্যন্ত এগোনো সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু করোনা মহামারি রুখতে বিশ্বজুড়ে লকডাউন শুরু হওয়ার পর সার্বিকভাবে টিকা দেওয়ার কাজ দারুণভাবে ব্যাহত হয়েছে। এ কারণে পোলিও ও হামের মতো বহু রোগের আবার ফিরে আসার আশঙ্কা জোরালো হয়ে উঠেছে।’
সমীক্ষায় আরো বলা হয়, গত বছর বাংলাদেশ, ভারতসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ডাব্লিউএইচওর সদস্য ১১টি দেশে হামে আক্রান্ত হয় ১৯ হাজার ৭২৬ জন। এই সংখ্যার সাড়ে তিন ভাগের এক ভাগ আক্রান্ত হয়েছে এ বছরের প্রথম চার মাসেই।
ভারতের ইন্ডিয়ান একাডেমি অফ পিডিয়াট্রিক্সের (আইএপি) সংক্রামক ব্যাধি বিভাগের চেয়ারপারসন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ জয়দীপ চৌধুরী বলেন, ‘রুবেলায় আক্রান্ত হন গর্ভবতীরা। তার ফলে তাঁরা বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম দেন। তাই সঠিক সময়ে রুবেলার টিকা দেওয়া খুব জরুরি।’
করোনার সংক্রমণ শুরু সম্ভবত গত আগস্টে
হাসপাতালে রোগীর যাতায়াত বাড়া ও কভিড-১৯-এর উপসর্গ সম্পর্কিত বিষয়ে ইন্টারনেটে খোঁজাখুঁজির কারণে গবেষকরা মনে করছেন, চীনের উহানে করোনাভাইরাস সম্ভবত ২০১৯ সালের আগস্ট থেকেই ছড়াতে শুরু করেছে। বোস্টন ও হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকদের প্রাথমিক গবেষণায় এ কথা বলা হয়েছে। যদিও নতুন গবেষণাপত্রটি পিয়ার রিভিউ জার্নালে এখনো প্রকাশ হয়নি।
পশু থেকে মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস গত ডিসেম্বরে উহানের একটি সিফুড মার্কেটে প্রথম শনাক্ত হয়। পরে বিশেষজ্ঞরা জেনেটিক পূর্বপুরুষের সূত্র ধরে ২০১৯ সালের মধ্য নভেম্বরে ভাইরাসটির ছড়িয়ে পড়ার কথা বলেন।
এলাইন নসেসির নেতৃত্বে বোস্টন ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত উহানের ১১১টি স্যাটেলাইট ইমেজ এবং চীনা সার্চ ইঞ্জিন বাইদুতে কভিড-১৯-এর উপসর্গ সম্পর্কিত তথ্য খোঁজাখুঁজি বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁরা বলছেন, গত বছরের আগস্ট থেকে উহান হাসপাতালের পার্কিং লটে অবিশ্বাস্য রকম ভিড় দেখা গেছে। এ ছাড়া সার্চ ইঞ্জিনে কভিড-১৯-এর সুনির্দিষ্ট উপসর্গ কাশি ও ডায়রিয়া বিষয়ে খোঁজাখুঁজি চোখে পড়েছে।
গবেষকরা বলছেন, এর আগের ফ্লু মৌসুমে ডায়রিয়া নিয়ে এত খোঁজাখুঁজি করা হয়নি। আর এ ডায়রিয়া কমিউনিটি ট্রাসমিশনে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে বলে তাঁরা মনে করছেন।
তবে গবেষকরা বলছেন, যে সব ডাটা তাঁরা ব্যবহার করেছেন তার সঙ্গে করোনার সম্পর্কের বিষয়ে তাঁরা সুনির্দিষ্টভাবে নিশ্চিত হতে পারেননি। কিন্তু তাঁদের গবেষণা চীনের দক্ষিণাঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবেই ভাইরাসটি ছড়ানোর ধারণাকে সমর্থন দিচ্ছে বলে তাঁরা মনে করছেন।
পেরুতে আক্রান্ত দুই লাখ ছাড়াল
বৈশ্বিক মহামারি করোনার আরেকটি কেন্দ্র হিসেবে দেখা দেওয়া পেরুতে আক্রান্তের সংখ্যা গত মঙ্গলবার দুই লাখ ছাড়িয়ে গেছে। ফলে করোনায় আক্রান্তের দিক থেকে দক্ষিণ আমেরিকার এ দেশটি বিশ্বে অষ্টম সর্বোচ্চ স্থানে উঠে এসেছে।
পেরুর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৭৩৮ জন। আর আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে দুই লাখ তিন হাজার ৭৩৬ জন।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে পেরু এখন শুধু ব্রাজিলের পেছনে আছে। আর মৃতের সংখ্যার দিক থেকে এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে পেরু তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে। এ ক্ষেত্রে প্রথম স্থানে ব্রাজিল ও দ্বিতীয় স্থানে মেক্সিকো আছে।
বৈশ্বিক আক্রান্ত সাড়ে ৭৩ লাখ
বৈশ্বিক পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার বলেছে, গতকাল বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা পর্যন্ত বিশ্বের ২১৩টি দেশ ও অঞ্চলে আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ৭৩ লাখ ছাড়িয়েছে। এ সময় মৃত্যু হয়েছে চার লাখ ১৪ হাজার মানুষের। সুস্থ হয়েছেন সোয়া ৩৬ লাখ রোগী।
অঞ্চল হিসেবে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ইউরোপে। সেখানে করোনায় অন্তত এক লাখ ৮০ হাজার ৫৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরপর আছে উত্তর আমেরিকা। সেখানে মৃতের সংখ্যা এক লাখ ৩৮ হাজার ৫৮৯। এশিয়ায় প্রাণ গেছে ৩৬ হাজার ৬৫০ জনের। দক্ষিণ আমেরিকায় এই সংখ্যা ৫২ হাজার ৮৫৭। আফ্রিকায় মৃত্যু হয়েছে পাঁচ হাজার ৫৭৮ জনের। ওশেনিয়া অঞ্চলে মৃতের সংখ্যা সবচেয়ে কম; ১২৪। সূত্র : আনন্দবাজার, এএফপি।