<p>করোনার আগে রাজধানীতে দরিদ্রের হার ছিল ৯.৫২ শতাংশ। এখন আড়াই বছরের মাথায় তা হয়েছে ১৬.৮২ শতাংশ। একই সময় নগরে দরিদ্র বেড়েছে ৬.০৮ শতাংশ। সংখ্যার হিসাবে তা প্রায় ৪৫ লাখ।</p> <p>গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিধারা’ নামের একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এ তথ্য দেন প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক বিনায়ক সেন। বিআইডিএস মূলত ঢাকা শহরের এক হাজার ৮১১ জনের ওপর এ জরিপ চালিয়ে এই তথ্য-উপাত্ত দিয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান।</p> <p>বিনায়ক সেন বলেন, ‘আমাদের তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী দেশে প্রথম লকডাউনের সময় আমাদের করা জরিপে দরিদ্রের হার ছিল ৯.৫২ শতাংশ। তারপর যখন ডেলটা ভাইরাসের প্রকোপ শুরু হয়, তখন এই হার বেড়ে দাঁড়ায় ৩৬ শতাংশে। ওমিক্রনের সময় সেটা কিছুটা কমে দাঁড়ায় ২১ শতাংশে, আর এখন সেটা আরো কমে দাঁড়িয়েছে ১৬.৮২ শতাংশে।’</p> <p>বিনায়ক সেনের দেওয়া তথ্যানুযায়ী করোনার আগের সময়ের তুলনায় দরিদ্রের হার বাড়লেও করোনার শুরুর দিকের বৃদ্ধির হারের চেয়ে পরে তা ক্রমান্বয়ে কমেছে। বিনায়ক সেন বলেন, ‘আমাদের হয়তো দরিদ্র কিছুটা বেড়েছে। তবে যতটা ভাবা হয় ঠিক ততটা নয়। আড়াই বছরের এ রকম অবস্থার মধ্যে আমাদের দরিদ্রতা কমছে এটি ভালো বিষয়। অনেকে বলে দরিদ্রতা ৪২ শতাংশের ওপর, আসলে কোনোভাবে এ তথ্য সমর্থন করা যাবে না।’</p> <p>২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের এক জরিপ ফলাফলে বলা হয়েছিল, করোনার আঘাতে দেশে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে দুই কোটি ৪৫ লাখ মানুষ।</p> <p>মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে পিপিআরসি চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুুর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে দরিদ্রের সংখ্যা নিয়ে তর্কবিতর্ক হচ্ছে। তবে আমি বিনায়ন সেনের তথ্য শুনে কিছুটা আশ্বস্ত হলাম যে আমরা সঠিক পথে আছি। বিআইডিএস দুই হাজারের কম হাউসহোল্ডের ওপর একটি গবেষণা করে দেখেছে, ওই খানাদের মাঝে দরিদ্রতা দ্বিগুণ হয়েছে। তার মানে করোনাকালে দরিদ্রের একটা অবনতি হয়েছে। মাত্রা নিয়ে একটা বিতর্ক হচ্ছে। মূল বিষয় হচ্ছে দরিদ্রতা বেড়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এটি একটা ভাবনার বিষয় যে এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেল সরকার কেন দরিদ্রতা নিয়ে একটা জরিপ করতে পারল না। যদি করত তাহলে আমরা দেখতে পারতাম কোথায় সমস্যা।’</p> <p>সংক্ষিপ্ত আলোচনায় সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আধুনিক বিশ্বে বৈষম্যকে ভোগ-সম্পদ দিয়ে বিবেচনা করা যায় না। এখানে অন্য বিষয়গুলো আসে। যখন বিনিয়োগ, কর আহরণের বিষয়কে চ্যালেঞ্জ হিসেবে আনা হয়। ২০১০ ও ২০১৫-এর খানাভিত্তিক জরিপ যদি দেখেন তাহলে দেখবেন আয়ভিত্তিক বৈষম্য বেড়েছে। মাঠ পর্যায়ের ডাটা থেকে দেখছি, বহুমাত্রিক বৈষম্যের বিষয়টি প্রকট আকারে এসেছে। মধ্যবিত্তের যে আকাঙ্ক্ষা তা পূরণ হয়নি। তাই আমি মনে করি বৈষম্যের বিষয়টি আরেকটু প্রাধান্য দিয়ে আলোচনা করতে হবে। কারণ অতিমাত্রায় বৈষম্য বাড়লে প্রবৃদ্ধিও হুমকির মধ্যে পড়ে।’</p> <p>দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরো বলেন, আগে যেমন গ্রামীণ অর্থনীতি ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও গ্রামীণ অর্থনীতির দিকে একটু আগ্রহ ছিল, এখন সেটা আছে কি না দেখতে হবে। একদিকে সামাজিক সুরক্ষা হচ্ছে আরেক দিকে দেশ থেকে বিদেশে নিয়ে যাওয়া টাকা বৈধভাবে নিয়ে আসতে দেওয়া হচ্ছে।</p> <p>সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘অর্থনীতি নিয়ে সাধারণ মানুষের এখন আগ্রহ বেড়েছে। আমাদের প্রবৃদ্ধি, উন্নয়ন যাই বলি না কেন, এর মূলে রয়েছে বিনিয়োগ। আমাদের গার্মেন্টশিল্প ভালো করেছে, তবে এ খাতের সক্ষমতা আরো কিভাবে বাড়ানো যায় সেদিকে আমাদের নজর দিতে হবে। যেসব অর্থনৈতিক জোন গড়ে তোলা হয়েছে, সেখানে কিভাবে বিনিয়োগ করা হবে তা নিয়ে ভাবতে হবে। তিনি বলেন, তবে আমাদের অনেক তথ্যের ঘাটতি রয়েছে, সেই ঘাটতির জন্য আমরা অর্থনীতিকে বিশ্লেষণ করতে পারছি না। সামনে মধ্যম আয়ের দেশের ফাঁদে পড়ব কি না সে বিষয়ে আমাদের ভাবতে হবে।’</p> <p> </p>