তবে সুশাসিত গণতান্ত্রিক শাসনে যদি উত্তরণ হতে না পারি, তাহলে এই ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্য হওয়া উচিত এটাই। আমাদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো একটি ভালো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিত রচনা করা।’
তিনি বলেন, রপ্তানিতে গতি ফিরে এসেছে। রেমিট্যান্স আগের চেয়ে বাড়ছে। এটা আশার কথা। মূল্যস্ফীতি সবাই বলছে কিছুটা কমেছে, কিন্তু এটাকে কম বলে না। মূল্যাস্ফীতি এখনো বাড়তিই আছে।
উপদেষ্টা বলেন, চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪০ হাজার কোটি টাকার এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৬২ হাজার কোটি টাকা। এখন অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া প্রকল্পে আসায় এডিপি বাস্তবায়নেও গতি আসবে।
বাংলাদেশে ভোজ্য তেলে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী দিনের পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের জন্য দেশের পানি ব্যবস্থাপনার সার্বিক পরিকল্পনা দরকার।
উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, ‘বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলির প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। এটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে হবে। এ ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ, বাড়িসহ অন্য সুযোগ-সুবিধা বিবেচনা করা হবে। আমি এসব মৌলিক কাজ করছি, সেখানে মহার্ঘ ভাতার বিষয়টি মাথায় রাখছি না। এ ছাড়া এর মধ্যে ৫৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি দিয়ে শান্ত করেছি। এটা একটা চ্যালেঞ্জ ছিল।’
তিনি বলেন, ‘২০১০ সাল থেকে কোনো বছরই মার্চের আগে বই যায়নি। কোনো কোনো বছর বই গিয়েছিল জুন-জুলাইয়ে। আমরা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে দিয়েছি। ৫০ বছর ধরে বাংলাদেশের ইতিহাস বিতর্কিত হয়েছে, সেটি নিয়ে কোনো সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয় ছাপা হয়নি। অথচ রংপুরের আবু সাঈদের মৃত্যুর তারিখ ভুল হওয়া নিয়ে ব্যাপক নিউজ হয়েছে। আমরা বলেছি ভুলভ্রান্তি হতে পারে। সেগুলো সংশোধন করা হবে।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশের নদী ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমরা একটা পর্যালোচনা ও পরিকল্পনা তৈরি করছি। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি নিয়ে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য-উপাত্ত দরকার। তবু ডেল্টা প্ল্যান তার জায়গায় থাকবে। ওটা শত বছরের পরিকল্পনা। কিন্তু কোনো বিশেষজ্ঞই বলতে পারবেন না. শত বছরে বাংলাদেশের কী অবস্থা হবে। তাই মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা দরকার।’
এদিকে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় চার হাজার ২৪৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয়ের ১০টি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন তিন হাজার ৬৩২ কোটি এক লাখ টাকা, প্রকল্প ঋণ ২০৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৪০৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা।
একনেকসভায় অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলো অর্থ মন্ত্রণালয়ের চট্টগ্রাম কর ভবন নির্মাণ প্রকল্প; নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের তিনটি প্রকল্প মোংলা বন্দরে পশুর চ্যানেলে সংরক্ষণ ড্রেজিং প্রকল্প, মোংলা বন্দরের জন্য সহায়ক জলযান সংগ্রহ (১ম সংশোধিত) প্রকল্প। কৃষি মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রকল্প ডাল ও তৈলবীজ উৎপাদনের মাধ্যমে টেকসই পুষ্টি নিরাপত্তা জোরদারকরণ প্রকল্প (২য় পর্যায়) প্রকল্প ও সিলেট বিভাগে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প।
এ ছাড়া স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দেশের দক্ষিণাঞ্চলের আয়রন ব্রিজ পুনর্নির্মাণ/পুনর্বাসন (২য় সংশোধিত) প্রকল্প; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ডুপিটিলা-১ ও কৈলাশটিলা-৯ নং কূপ (অনুসন্ধান কূপ) খনন প্রকল্প, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার নির্মাণ (৪র্থ সংশোধিত) প্রকল্প। এ ছাড়া আরো দুটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়।
সভায় পরিকল্পনা উপদেষ্টা অনুমোদিত ৯টি প্রকল্প সম্পর্কে একনেক সদস্যদের অবহিত করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো রংপুর বিভাগীয় সদর দপ্তর কমপ্লেক্স, বিভাগীয় কমিশনার ও ডিআইজির বাংলো নির্মাণ (১ম সংশোধিত) প্রকল্প, সরকারি কর্মচারী হাসপাতালকে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে উন্নীতকরণ (২য় সংশোধিত) প্রকল্প, উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী সুবিধাবঞ্চিত ৮৬টি এলাকা ও নদী বিধৌত চরাঞ্চলে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন (২য় সংশোধিত) প্রকল্প, সমতল ভূমিতে বসবাসরত অনগ্রসর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক ও জীবন মানোন্নয়নের লক্ষ্যে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন (২য় সংশোধিত) প্রকল্প, মুজিবনগর সেচ উন্নয়ন প্রকল্প (২য় সংশোধিত), আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগের কৃষি উন্নয়ন (১ম সংশোধন) প্রকল্প, পদ্মা বহুমুখী সেতুর ভাটিতে মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলাধীন বিভিন্ন স্থানে পদ্মা নদীর বাঁ তীর সংরক্ষণ (২য় সংশোধিত) প্রকল্প।