<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যেসব ফুল বছরজুড়ে আবহমান গ্রামবাংলার প্রকৃতিকে সাজিয়ে তোলে, তার একটি নয়নাভিরাম বরুণ। গ্রীষ্মে শোভা ছড়ায় এ ফুল। ঝাঁকড়া গাছের শাখা-প্রশাখার মধ্যে সাদা-হলুদ এ ফুল দৃষ্টি কাড়ে দূর থেকেও। হাওর, জলাভূমি, নদীর তীরসহ অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকায় বরুণগাছের দেখা মেলে বেশি। গ্রীষ্মের শুরুতে বৃষ্টির সঙ্গে নতুন পাতা গজানো শুরু হয় এ গাছে। ক্রমে নতুন সবুজ পাতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ধরে থোকায় থোকায় ফুল। গাছে মাসখানেক ফুল থাকার পর দেখা যায় অনেকটা কদবেলের মতো দেখতে ছোট গোলাকার ফলের উপস্থিতি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বরুণ ছোট থেকে মাঝারি আকারের বৃক্ষ। বাকল ধূসর-বাদামি ও মসৃণ। সাধারণত গাছ ১০ থেকে ২০ মিটার উঁচু হয়। বাংলাদেশের প্রায় সব জেলায় কমবেশি দেখা যায় এ গাছ। বুক সমান পানিতেও বহালতবিয়তে টিকে থাকতে পারে বলেই হয়তো এটি জলাভূমির গাছ। বরুণের বীজ ও শিকড় থেকে চারা হয়। দেশের অনেক স্থানে বরুণ আঞ্চলিক নাম </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বৈন্যা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> হিসেবে পরিচিত। বরুণ ছাড়া এর অন্যান্য কেতাবি নামের মধ্যে আছে শ্বেতপুষ্প, কুমারক, সাধুবৃক্ষ, শ্বেতদ্রুম, মহাকপিথা, মারুতাপহ, বর্ণা, বিদাসি ইত্যাদি। ইংরেজি নাম স্পাইডার ট্রি, টেম্পল প্ল্যান্ট ও গার্লিক পিয়ার। আর বৈজ্ঞানিক নাম Crataeva nurvala। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বরুণ প্রাচীনকাল থেকেই ভেষজ গাছ হিসেবে পরিচিত। বেদে এর কথা উল্লেখ আছে। এর ফলে আছে বেশ কিছু ঔষধি গুণ। এতে আছে রক্তদোষ ও অর্শ্ব রোগ সারানোর উপাদান। ছাল ও পাতার রাসায়নিক উপাদান মূত্রনালির রোগে উপকারী। বরুণের পাতা গরম করে সেঁক দিলে গেঁটেবাতের ব্যথা অনেকটা সেরে যায়। এ ছাড়া পাতা চর্মরোগ নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়। শিকড় ও বাকলের নির্যাস গ্যাস্ট্রিক রোগে ব্যবহার করা হয়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একসময় ফল পাকাতেও বরুণগাছের পাতার বহুল ব্যবহার ছিল। পরে ক্ষতিকর রাসায়নিক ক্যালসিয়াম কার্বাইডের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় এ কাজে গাছটির ব্যবহার কমে যায়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ভাটি অঞ্চলে ধান কাটার সময় শ্রমিকদের গরম ভাতের সঙ্গে বরুণের কচি ডগা ভর্তা করে বা ভেজে খেতে দেওয়া হয়। বরুণের কাঁচা ফল রান্না করে সবজি হিসেবে খাওয়া হয় কোথাও কোথাও। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ফুলের এত সৌন্দর্য আর গুণের পরও নগরের সবুজায়নে বরুণের কদর দেখা যায় না। রাজধানী ঢাকার সৌন্দর্যায়নে এর উপস্থিতি নেই বললেই চলে। তথাকথিত আভিজাত্যহীন হাওর-বাঁওড়-জলার দেশি ফুল বলেই কি!</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বরুণগাছের আদি আবাস ভারত, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. আব্দুল আউয়াল জানান, এ অঞ্চলের বাইরে জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জেও বরুণের দেখা মেলে। এটি অন্য কিছু জায়গায়ও ফলের জন্য জন্মানো হয়, বিশেষভাবে আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন অংশে। </span></span></span></span></p> <p> </p>