<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ঢাকা রাজধানী হয়ে ওঠার পেছনে অবদান এক মোগল সুবাদারের। তিনি ইসলাম খান চিশতি। মূলত তাঁর হাতেই ৪০০ বছর আগে এই ঐতিহাসিক ঘটনাটি ঘটে। অনেকে বলতে পারেন, এর আগে কি তবে ঢাকার অস্তিত্ব ছিল না? অবশ্যই ছিল, কিন্তু ‘রাজধানী’ হয়ে ওঠে এই ইসলাম খানের হাতে। অনেক ভেবেচিন্তে ঢাকাকে তিনি সুবা বাংলার রাজধানী করেছিলেন। এর পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ ছিল সেই সময়কার বাংলার বিদ্রোহীদের দমন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বারো ভূঁইয়াদের নেতা ঈসা খাঁ মারা গেলেও অন্য ভূঁইয়ারা মোগলদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এর অবসানে ইসলাম খান পূর্ব বাংলার একদম কেন্দ্রে বসে সব সামরিক অভিযান পরিচালনা করতে চাইলেন। অনেক হিসাব-নিকাশ করে অবশেষে ১৬১০ সালে সদলবলে ঢাকায় হাজির হন তিনি। সুবা বাংলায় তিনি দায়িত্ব পালন করেছিলেন পাঁচ বছর। কিন্তু ঢাকায় ছিলেন মাত্র তিন বছর। এই তিন বছরে তিনি যে ভিত্তি তৈরি করেছিলেন, সেটার ওপর ভর করে ঢাকা নিজের গুরুত্ব ধরে রাখতে পেরেছিল প্রায় ১০০ বছর।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">৪০০ বছরে বুড়িগঙ্গার অনেক জল গড়িয়েছে। ঢাকা এখন একটি স্বাধীন দেশের রাজধানী। কিন্তু এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পর্কে জানে কয়জন? তাঁর স্মৃতিবিজড়িত ঢাকার ইসলামপুর ও চাঁদনীঘাট ছাড়া কি তাঁকে আর কোথায় খুঁজে পাওয়া যায়? </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নতুন প্রজন্মের অনেকেই হয়তো জানেন না ইসলামপুর ও চাঁদনীঘাটের সঙ্গে ইসলাম খাঁর সম্পর্ক কী। কিংবা তাঁর জীবনের শেষ দিকের কথা কতটুকুই বা জানি? তিনি ঢাকার অদূরে মারা গেলেও কোথায় তাঁর সমাধি?</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">১৬১৩ সালে তিনি মারা গিয়েছিলেন এই বাংলাতেই। অবসর কাটাতে শিকারে যান ঢাকার অদূরে ভাওয়ালের বনে। শিকারের পর দুপুরের খাওয়াদাওয়া শেষে হাতির পিঠে করে নিজের শিবিরের উদ্দেশে রওনা হন। এ সময় তিনি খানিকটা অসুস্থ বোধ করেন। সন্ধ্যায় শিবিরে পৌঁছে মাত্র ৪৩ বছর বয়সেই শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সময়টা ১৬১৩ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর। তাঁকে ঢাকায় এনে ‘বাগ-ই-শাহী’তে দাফন করা হয়। তেমনই বর্ণনা পাওয়া যায় ইসলাম খানের অধীন বাংলার মোগল সেনাপতি আলাউদ্দীন ইসফাহান ওরফে মির্জা নাথান রচিত ‘বাহারিস্তান-ই-গায়েবী’ বইয়ে। মির্জা নাথান সে সময় বাংলাতেই ছিলেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ড. দানীর মতে, এখনকার হাইকোর্টের মাজারে ইসলাম খানকে প্রাথমিকভাবে দাফন করা হয়েছিল। পরে সেখান থেকে তাঁর মৃতদেহ তুলে নিয়ে ভারতের ফতেহপুর সিক্রিতে তাঁর পিতামহ এবং বিখ্যাত সাধক শেখ সেলিম চিশতির মাজারের পাশে দাফন করা হয়। এ তথ্যের সমর্থন পাওয়া যায় সেই সময়কার মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের স্মৃতিকথা ‘তুজুক-ই-জাহাঙ্গীরী’তেও। শুধু তাই নয়, ১৭৮০ সালে প্রকাশিত মোগল প্রশাসকদের একটি জীবনীমূলক অভিধান ‘মাসির-উল-উমারা’-এর দ্বিতীয় সংস্করণে ‘ইসলাম খান চিশতী ফারকী’ শিরোনামে ইসলাম খানের ওপর ছোট জীবনী আছে। তাতে উল্লেখ রয়েছে—‘৮ম বর্ষ ১, ১০২২ হিজরিতে (১৬১৩ খ্রিস্টাব্দ) তাঁর জীবন শেষ হয়। তাঁর দেহ ফতেপুরে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল, যা ছিল তাঁর জন্মস্থান আর এখানেই তাঁর পূর্বপুরুষদের সমাহিত করা হয়েছিল।’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নানা সূত্র থেকে এটা নিশ্চিত হওয়া গেল যে সেলিম চিশতির মাজারেই রয়েছে ইসলাম খানের সমাধি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তাঁর সমাধির খোঁজে এ বছরের মার্চে হাজির হই ফতেপুর সিক্রিতে। শহরটি ভারতের উত্তর প্রদেশের আগ্রা জেলায় অবস্থিত। ১৫৭১ থেকে ১৫৮৫ সাল পর্যন্ত সম্রাট আকবর শহরটিকে মোগল সাম্রাজ্যের রাজধানী ঘোষণা করেন। ১৬১০ সালে শহরটি সম্পূর্ণরূপে পরিত্যক্ত হয়। আগ্রার ভ্রমণ শেষ করে হাজির হই মোগলদের পরিত্যক্ত সেই শহরে। খোঁজ শুরু করি ইসলাম খান চিশতির সমাধির।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কিন্তু শেখ সেলিম চিশতির মাজার কমপ্লেক্সের ঠিক কোথায় রাজধানী ঢাকার প্রতিষ্ঠাতার সমাধি? এ জন্য আবার শরণাপন্ন হতে হলো মাইকেল ব্র্যান্ড ও গ্লেন ডি. লোরির গবেষণাপত্রে। সেখানে ফতেহপুর সিক্রির একটি ম্যাপ আছে। ১৯ নম্বরে চিহ্নিত করা হয়েছে ইসলাম খানের সমাধি। যদিও তাতে উল্লোছে ‘নওয়াব ইসলাম খানের সমাধি’। পরে অবশ্য মাজারের খাদেমদের কাছ থেকে জেনেছি, এখানে ‘সুবাদার ইসলাম খান’-এর পরিবর্তে ‘নওয়াব ইসলাম খান’ হিসেবেই অধিক পরিচিত তিনি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সেই ম্যাপের সূত্র ধরে বলা যায়, সেলিম চিশতির সমাধির প্রায় ১০ মিটার পূর্বে রয়েছে ইসলাম খানের সমাধিটি। আর ম্যাপে উল্লিখিত সেই জায়গায় রয়েছে লাল বেলেপাথরের এক সমাধিক্ষেত্র। সেটি সেলিম চিশতির সমাধির চেয়ে বেশ বড়। এটির শীর্ষে একটি গম্বুজসহ ৩৬টি ছোট গম্বুজবিশিষ্ট ছত্রী রয়েছে। আর এই স্থাপনার ভেতরেই রয়েছে শেখ সেলিম চিশতির বংশধরের পুরুষদের অনেকগুলো কবর। নামহীন কবরগুলো মধ্য থেকে ইসলাম খানের সমাধি কোনটি তা বের করার জন্য এবার গেলাম মাজারের প্রধান খাদেম সাহেবের কাছে। তিনি ছিলেন সেলিম চিশতির সমাধিতে। বিষয়টি বুঝিয়ে বলতেই তিনি একজন কিশোরকে দিলেন আমাদের সাহায্য করতে। তাঁর সাহায্য নিয়ে অবশেষে খুঁজে পেলাম রাজধানী ঢাকার প্রতিষ্ঠাতা সুবাদার ইসলাম খানের সমাধি। বিশাল এক কক্ষের প্রথম সারির একদম বায়ে তাঁর কবরটি। যদিও এই কামরায় অনেকগুলো কবর থাকলেও সুবাদারের কবরটি সহজেই আলাদা করা যায়। চারদিক খুঁটি দিয়ে একটি ছাদের মতো করে ইসলাম খানের কবরটিকে ঘিরে রাখা হয়েছে। কবর দেখে একটু আনমনা হয়ে গেলাম। আহা সেই ৪০০ বছর আগে এখানে শুয়ে থাকা ব্যক্তিটি প্রায় এক হাজার ৬০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে হাজির হয়েছিলেন ঢাকা নামের একটি অঞ্চলে! ঢাকাকে সম্মান দিয়েছিলেন প্রথমবারের মতো রাজধানী হওয়ার। জীবনের যবনিকা শেষের পর কিছুদিন শায়িতও ছিলেন সেই নতুন রাজধানীতে।</span></span></span></span></p>