রাত পোহালেই কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ। আগামীকাল শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ হবে নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের ১০৫টি কেন্দ্রে।
গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে। নগরীতে এখন আলোচনার বিষয়বস্তু ভোটের দিন কেমন থাকবে নির্বাচনের পরিবেশ।
ভোটারদের ভাষ্য, এরই মধ্যে তাঁদের কেন্দ্রে না যেতে একাধিকবার হুমকি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। মেয়র পদের চার প্রার্থীর তিনজনই ভোটের দিনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। তবে রিটার্নিং অফিসার বলেছেন, নির্বাচন অনুষ্ঠান সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে নির্বাচন কমিশন সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে। পুরো সিটি এলাকায় থাকছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা।
দলীয় প্রতীকবিহীন এই নির্বাচনে মহানগর আওয়ামী লীগের দুই নেতার সঙ্গে প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে রয়েছেন বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে বহিষ্কৃত দুই নেতা। বাস প্রতীকে নির্বাচন করছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাহসীন বাহার সূচনা। তিনি কুমিল্লা সদরের এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের মেয়ে। বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা দুইবারের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর প্রতীক টেবিলঘড়ি।
ঘোড়া প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার। অন্য প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক ভিপি নুর-উর রহমান মাহমুদ তানিমের প্রতীক হাতি।
গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের মহেশপুর গ্রামে কথা হয় ৮০ বছর বয়সী সরাফত আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ভোটের দিন কী হবে, এখনো জানি না। কয়েক দিন ধরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে, যেন কেন্দ্রে না যাই।
’ তবে কারা হুমকি দিচ্ছে, সে বিষয়ে মুখ খোলেননি তিনি।
একই শঙ্কা দেখা গেছে ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার আলমগীর হোসেনের মধ্যেও। তিনি বলেন, ‘একজন প্রার্থীর লোকেরা এসে বলেছে, কেন্দ্রে যাওয়ার দরকার নেই। আর গেলেও ভোটটা যেন সবার সামনে ওই প্রার্থীর প্রতীকে দিই। এখন চিন্তায় আছি ভোটের দিন কেন্দ্রে যাব কি না।’
নগরীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার হেনা বেগমও ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার বিষয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিভিন্নভাবে বলা হচ্ছে, যেখানেই ভোট দিই—পাস করবে একজনই। কেন্দ্রে যাব কি না, তা নির্ভর করছে ভোটের দিনের পরিবেশের ওপর।’
এদিকে ভোটের দিনের পরিবেশ নিয়ে তিন প্রার্থীর মধ্যে শঙ্কার কারণ বাস প্রতীকের প্রার্থী সূচনার বাবা এমপি বাহার বলে জানিয়েছেন তাঁরা। হাতি প্রতীকের প্রার্থী তানিম বলছেন, ‘এমপি বাহারের কারণে কুমিল্লার মানুষের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। তবে আশা করি, অচিরেই কুমিল্লার মানুষ উনাকে জবাব দিয়ে দেবে।’
টেবিলঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী সাক্কু বলেন, ‘প্রতিদিন রাত ১২টার পর বিশেষ করে বাস প্রতীকের নেতারা ঘরে ঘরে গিয়ে আমাদের কর্মীদের বলতেছে, মারব-ধরব। ১০ তারিখের পর এলাকায় আসতে পারবে না, বিভিন্ন রকমের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’
ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী কায়সার বলেন, ‘আমি নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানাচ্ছি, তারা যেন সব কেন্দ্রকেই ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে সমানভাবে গুরুত্ব দেয়।’
এই উপনির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ফারহাদ হোসেন বলেছেন, ভোটের দিনের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা থাকার কোনো সুযোগ নেই। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী মোতায়েন শুরু হয়ে যাচ্ছে। প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে পুলিশের একটি ও র্যাবের একটি মোবাইল টিম এবং একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।’
রিটার্নিং অফিসার জানান, জাতীয় নির্বাচনে প্রতি কেন্দ্রে দুজন করে পুলিশ ছিল, এখানে থাকবে পাঁচজন করে। পুলিশ, আনসার মিলিয়ে প্রতি কেন্দ্রে ১৫ জনের বেশি থাকবেন। প্রতি তিনটি ওয়ার্ডে একজন বিচারিক হাকিম থাকবেন। ১২ প্লাটুন থাকছে বিজিবি। কেউ নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্টের চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হামলার অভিযোগ, নগরীতে নিরাপত্তা বেষ্টনীর দাবি
ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সারের প্রচারণা এবং নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় পুরো নগরী নিরাপত্তার বেষ্টনীতে আনার দাবি জানিয়েছেন কায়সার।
প্রচারণার শেষ দিন গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রিটার্নিং অফিসারের কাছে কায়সারের পক্ষে এ অভিযোগ করেন তাঁর ভাই ও নির্বাচনী এজেন্ট মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন। অভিযোগটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং অফিসার ফরহাদ হোসেন। রিটার্নিং অফিসারের কাছে দেওয়া অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বুধবার রাতে ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের রাজাপাড়া উত্তর চৌমুহনী এলাকায় বাস প্রতীকের কর্মীরা ঘোড়া প্রতীকের কর্মী আনোয়ার হোসেনের ওপর হামলা করেন।