ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২০ মার্চ ২০২৫
৬ চৈত্র ১৪৩১, ১৯ রমজান ১৪৪৬

ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২০ মার্চ ২০২৫
৬ চৈত্র ১৪৩১, ১৯ রমজান ১৪৪৬
কুমিল্লা সিটির উপনির্বাচন

রাত পোহালেই ভোট পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা

কুমিল্লা প্রতিনিধি
কুমিল্লা প্রতিনিধি
শেয়ার
রাত পোহালেই ভোট পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা
কুমিল্লা সিটির উপনির্বাচনে গতকাল প্রচারণা চালান মেয়র পদপ্রার্থী তাহসীন বাহার সূচনা। ছবি : কালের কণ্ঠ

রাত পোহালেই কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ। আগামীকাল শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ হবে নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের ১০৫টি কেন্দ্রে।

গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে। নগরীতে এখন আলোচনার বিষয়বস্তু ভোটের দিন কেমন থাকবে নির্বাচনের পরিবেশ।

ভোটারদের ভাষ্য, এরই মধ্যে তাঁদের কেন্দ্রে না যেতে একাধিকবার হুমকি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। মেয়র পদের চার প্রার্থীর তিনজনই ভোটের দিনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। তবে রিটার্নিং অফিসার বলেছেন, নির্বাচন অনুষ্ঠান সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে নির্বাচন কমিশন সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে। পুরো সিটি এলাকায় থাকছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা।

দলীয় প্রতীকবিহীন এই নির্বাচনে মহানগর আওয়ামী লীগের দুই নেতার সঙ্গে প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে রয়েছেন বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে বহিষ্কৃত দুই নেতা। বাস প্রতীকে নির্বাচন করছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাহসীন বাহার সূচনা। তিনি কুমিল্লা সদরের এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের মেয়ে। বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা দুইবারের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর প্রতীক টেবিলঘড়ি।

ঘোড়া প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার। অন্য প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক ভিপি নুর-উর রহমান মাহমুদ তানিমের প্রতীক হাতি।

গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের মহেশপুর গ্রামে কথা হয় ৮০ বছর বয়সী সরাফত আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ভোটের দিন কী হবে, এখনো জানি না। কয়েক দিন ধরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে, যেন কেন্দ্রে না যাই।

তবে কারা হুমকি দিচ্ছে, সে বিষয়ে মুখ খোলেননি তিনি।

একই শঙ্কা দেখা গেছে ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার আলমগীর হোসেনের মধ্যেও। তিনি বলেন, একজন প্রার্থীর লোকেরা এসে বলেছে, কেন্দ্রে যাওয়ার দরকার নেই। আর গেলেও ভোটটা যেন সবার সামনে ওই প্রার্থীর প্রতীকে দিই। এখন চিন্তায় আছি ভোটের দিন কেন্দ্রে যাব কি না।

নগরীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার হেনা বেগমও ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার বিষয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের বিভিন্নভাবে বলা হচ্ছে, যেখানেই ভোট দিইপাস করবে একজনই। কেন্দ্রে যাব কি না, তা নির্ভর করছে ভোটের দিনের পরিবেশের ওপর।

এদিকে ভোটের দিনের পরিবেশ নিয়ে তিন প্রার্থীর মধ্যে শঙ্কার কারণ বাস প্রতীকের প্রার্থী সূচনার বাবা এমপি বাহার বলে জানিয়েছেন তাঁরা। হাতি প্রতীকের প্রার্থী তানিম বলছেন, এমপি বাহারের কারণে কুমিল্লার মানুষের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। তবে আশা করি, অচিরেই কুমিল্লার মানুষ উনাকে জবাব দিয়ে দেবে।

টেবিলঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী সাক্কু বলেন, প্রতিদিন রাত ১২টার পর বিশেষ করে বাস প্রতীকের নেতারা ঘরে ঘরে গিয়ে আমাদের কর্মীদের বলতেছে, মারব-ধরব। ১০ তারিখের পর এলাকায় আসতে পারবে না, বিভিন্ন রকমের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী কায়সার বলেন, আমি নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানাচ্ছি, তারা যেন সব কেন্দ্রকেই ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে সমানভাবে গুরুত্ব দেয়।

এই উপনির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ফারহাদ হোসেন বলেছেন, ভোটের দিনের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা থাকার কোনো সুযোগ নেই। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী মোতায়েন শুরু হয়ে যাচ্ছে। প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে পুলিশের একটি ও র‌্যাবের একটি মোবাইল টিম এবং একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।

রিটার্নিং অফিসার জানান, জাতীয় নির্বাচনে প্রতি কেন্দ্রে দুজন করে পুলিশ ছিল, এখানে থাকবে পাঁচজন করে। পুলিশ, আনসার মিলিয়ে প্রতি কেন্দ্রে ১৫ জনের বেশি থাকবেন। প্রতি তিনটি ওয়ার্ডে একজন বিচারিক হাকিম থাকবেন। ১২ প্লাটুন থাকছে বিজিবি। কেউ নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্টের চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

হামলার অভিযোগ, নগরীতে নিরাপত্তা বেষ্টনীর দাবি

ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সারের প্রচারণা এবং নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় পুরো নগরী নিরাপত্তার বেষ্টনীতে আনার দাবি জানিয়েছেন কায়সার।

প্রচারণার শেষ দিন গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রিটার্নিং অফিসারের কাছে কায়সারের পক্ষে এ অভিযোগ করেন তাঁর ভাই ও নির্বাচনী এজেন্ট মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন। অভিযোগটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং অফিসার ফরহাদ হোসেন। রিটার্নিং অফিসারের কাছে দেওয়া অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বুধবার রাতে ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের রাজাপাড়া উত্তর চৌমুহনী এলাকায় বাস প্রতীকের কর্মীরা ঘোড়া প্রতীকের কর্মী আনোয়ার হোসেনের ওপর হামলা করেন।

 

 

মন্তব্য

যাত্রী পরিবহন

শেয়ার
যাত্রী পরিবহন
কয়েক দিনের মধ্যেই বহু মানুষ ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়ি যাবে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে। এসব যাত্রী পরিবহনের জন্য পুরনো বাসে রং করছে অনেক কম্পানি। গতকাল রাজধানীর মাতুয়াইল থেকে তোলা। ছবি : ফোকাস বাংলা
মন্তব্য
সাবেক সেনা কর্মকর্তা আমলাদের উদ্যোগ

‘জনতার দল’ আত্মপ্রকাশ করছে আজ

সাইদ শাহীন
সাইদ শাহীন
শেয়ার
‘জনতার দল’ আত্মপ্রকাশ করছে আজ

নতুন বাংলাদেশের অঙ্গীকার নিয়ে আসছে আরেকটি নতুন রাজনৈতিক দল। নাম জনতার দল। দলের স্লোগান হবে ইনসাফ জিন্দাবাদ। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর খামারবাড়িতে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে দলটি।

দলটি গড়ার পেছনে রয়েছেন সাবেক সামরিক ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তারা। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও এই দলে যোগ দেবেন। কৌশলগত কারণে সবার নাম প্রকাশ করছে না দলটি।

দলটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম কামাল।

দলের মুখপাত্র হবেন জাতিসংঘে কাজ করে আসা সাবেক সেনা কর্মকর্তা এবং ভূ-রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাবিষয়ক লেখক ডেল এইচ খান। নতুন দলটিতে নবীন-প্রবীণের সমন্বয় কমিটি গঠন করা হবে। মধ্যমপন্থা হিসেবে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ধারণ করেই বাংলাদেশের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করবে নতুন এই রাজনৈতিক দল।

জানা গেছে, কয়েক মাস ধরে এই রাজনৈতিক দলের গঠনপ্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে ব্যক্তিগত ও সামষ্টিকভাবে বেশ কয়েকটি বৈঠক ও আলোচনাসভা করেছেন প্রস্তাবিত এই দলের চেয়ারম্যান মো. শামীম কামালসহ অন্যরা।

দল গঠন ও পরিচালনার জন্য বেশ কয়েকটি কমিটি কাজ করছে। এর মধ্যে রয়েছে থিংকট্যাংক ও গঠনতন্ত্র প্রণয়ন কমিটি, উপদেষ্টা কমিটি, সংসদ সদস্য বাছাই কমিটি ও সাংগঠনিক পরিচালনা কমিটি। আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুধীসমাজের প্রতিনিধিদের কাছে আমন্ত্রণপত্র দিয়েছে দলটি।

এই দলে কারা যোগদান করছেনএমন প্রশ্নের জবাবে জনতার দলের মুখপাত্র ডেল এইচ খান কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা এই মুহূর্তে সবার নাম প্রকাশ করতে পারছি না। তবে সাবেক সামরিক কর্মকর্তা ও সৈনিকদের পাশাপাশি দেশের সব ধরনের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি, মাদরাসাছাত্রদের সংগঠন প্রতিনিধি, এনজিওদের জোট, নারী সংগঠনের প্রতিনিধি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সংগঠন প্রতিনিধি, দেশের শীর্ষস্থানীয় বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধি, প্রবাসের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ এই দলে যোগ দেবেন।

আমরা খুব শিগগির দেশব্যাপী সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম পরিচালনা করব।

জানা গেছে, দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোর বেশ কয়েকজন নেতা জনতার দলে যোগ দিতে পারেন। সাবেক সামরিক কর্মকর্তা ছাড়াও সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক আমলা, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, আইনজীবী নতুন এই রাজনৈতিক দলে যোগদানে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

এ ছাড়া দেশের শীর্ষ ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন উদ্যোক্তা এই দলে যোগ দিতে পারেন। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের নেতৃত্ব দেওয়া কয়েকজন ব্যবসায়ীর এই দলে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দলের গঠনপ্রক্রিয়া শেষ না হওয়ার কারণে সবার নামের তালিকা প্রকাশ করছে না দলটি। আইনগতভাবে গঠনপ্রক্রিয়া শেষে পূর্ণাঙ্গ কমিটিসহ তালিকা প্রকাশ করা হবে।

বড় সম্মেলনের মাধ্যমে জাতীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করবে দলটি। দেশের ও প্রবাসের আপামর মানুষের জনতার দলে যোগ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত অনেক সদস্য এই রাজনৈতিক দলে যুক্ত হতে পারেন। পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংগঠন থেকেও এই রাজনৈতিক দলে অনেকে যোগ দেবেন।

দল গঠনে সার্বিক কার্যক্রম সমন্বয় করছেন মেজর জেনারেল (অব.) মাহবুব, মেজর জেনারেল (অব.) ইসমাইল ফারুক চৌধুরী, মেজর জেনারেল (অব.) ইবনে ফজল সায়েখুজ্জামান, লে. জেনারেল (অব.) সাব্বির আহমেদ, মেজর জেনারেল (অব.) এফ এম জাহিদ হোসেন ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আবুল হাসেম।

দলের চেয়ারম্যান ব্র্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. শামীম কামাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ন্যায্যতাভিত্তিক বাংলাদেশ গঠনের উদ্দেশ্যে সত্, শিক্ষিত, দেশপ্রেমিক, নিঃস্বার্থ ভালো মানুষকে নিয়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আদর্শের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দলটি পরিচালিত হবে। আমরা একেবারেই প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের সমন্বয়ে দলটি গঠন করতে চাই, যেখানে সত্ ও দক্ষ মানুষ নেতৃত্ব দেবেন। গত ৫৩ বছরের বিতর্কিত রাজনীতিকে পেছনে ফেলে স্বচ্ছ রাজনীতি করতে চাই আমরা।

নির্বাচনের জন্য বিভিন্ন এলাকায় আঞ্চলিক কমিটির মাধ্যমে সত্ ও যোগ্য প্রার্থী খুঁজে বের করতে চায় দলটি। তবে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়াই তাদের মূল লক্ষ্য নয়। প্রাথমিকভাবে সামরিক সদস্য সমর্থিত হলেও এখানে সব পেশাজীবীর সমন্বয় থাকবে। এই দলের বড় অংশজুড়ে নেতৃত্ব দেবেন সমাজের তরুণ ও ছাত্ররা।

কেন এই রাজনৈতিক দলএমন প্রশ্নের জবাবে দলের চেয়ারম্যান বলেন, ইতিহাস বলছে, অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় নিয়ে ক্ষমতায় আসে। কিন্তু কিছুদিন পর তারা ভূমিছাড়া হয়ে যান। আমরা সেখান থেকে ব্যতিক্রম হয়ে দলটি এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। মীমাংসিত ঐতিহাসিক কোনো বিষয়ে আমরা বিতর্ক করব না। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কিংবা ভূ-রাজনৈতিক পক্ষভুক্ত হবে না দলটি।

মন্তব্য

গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনে তথ্য দিলেন সাবেক সেনাপ্রধান আইকেবি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনে তথ্য দিলেন সাবেক সেনাপ্রধান আইকেবি

গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের আহ্বানে তাদের গুলশান কার্যালয়ে গিয়েছিলেন সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া (আইকেবি)। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা তিনি গুমসংক্রান্ত বিষয়ে কমিশনের প্রশ্নের জবাব দেন এবং নিজের স্মৃতিতে থাকা বিষয়গুলোও জানান।

গতকাল বুধবার নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি বিষয়টি জানান এবং গুম ও অপহরণ সংক্রান্ত যেসব মানবতাবিরোধী অপরাধ দেশে সংঘটিত হয়েছে, এর সঙ্গে জড়িতদের সম্পর্কে যে যেখানে যতটুকুই জানেন তা কমিশনকে জানাতে আহ্বান জানান। 

এর আগে এই সাবেক সেনাপ্রধান তাঁর লেখায় চাকরিচ্যুত সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য তুলে ধরেন।

দীর্ঘ সময় র‌্যাবে দায়িত্ব পালনকারী জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে অপহরণ, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। জিয়াউল বর্তমানে কারাবন্দি এবং তাঁর অপরাধের বিচারপ্রক্রিয়া চলমান। 

সাবেক এই সেনাপ্রধান তাঁর পোস্টে লিখেছেন, আমার কর্ম অভিজ্ঞতায় সঞ্চিত কিছু লেখা সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় তা রাষ্ট্র, সমাজ ও সংস্থার বিভিন্ন অংশের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সেই পটভূমিতে অনেক ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এর বিভিন্ন দিক ও বিষয়ে জানার আগ্রহ জন্মেছে।

সেই পরিপ্রেক্ষিতে গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশন আজ ১৯ মার্চ বুধবার বেলা ১১টায় গুলশানে অবস্থিত তাদের কার্যালয়ে আমাকে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিল। তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে আমি যথাসময়ে সেখানে যাই এবং মহামান্য কমিশন বিভিন্ন বিষয়ে আমার কাছে আরো বিস্তারিত জানতে চায়। আমার স্মৃতিতে থাকা বিষয়গুলো তাদের জানাই এবং উনাদের নানা প্রশ্নের জবাব দিই। জাতীয় প্রয়োজনে গঠিত গুরুত্বপূর্ণ এই কমিশনের কার্যক্রম অধিকতর ফলপ্রসূ করার লক্ষ্যে আমার সঙ্গে উনাদের আলোচনা তিন ঘণ্টা ২৩ মিনিট স্থায়ী হয়ে বেলা ২টা ২৩-এ শেষ হয়।

তিনি আরো লেখেন, বিগত বছরগুলোতে জ্ঞাত বা অজ্ঞাত স্থানে বলপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান ও তাঁদের শনাক্ত করা এবং কোন পরিস্থিতিতে গুম হয়েছিলেন তা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। সেই উদ্দেশ্যে গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যসহ কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের নিকট থাকা তথ্য ও প্রমাণাদি সরবরাহ করে গুমসংক্রান্ত কমিশনের কার্যক্রমকে বেগবান করা আমাদের সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য। আর তা যথাযথভাবে পালন করা গেলেই কেবল ভবিষ্যতে মানবতাবিরোধী অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।

তাঁর বক্তব্য, একজন নাগরিক হিসেবে আমি বিশ্বাস করি, গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজে সহযোগিতা করার জন্য এ কাজে জড়িত সব পক্ষ, ব্যক্তি ও চাকরিরত বা অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসা উচিত। গুম ও অপহরণ সংক্রান্ত যেসব মানবতাবিরোধী অপরাধ দেশে সংঘটিত হয়েছে, এর সঙ্গে জড়িতদের সম্পর্কে যে যেখানে যতটুকুই জানেন তা এই কমিশনকে অবহিত করা দরকার।

 

 

মন্তব্য

সব মামলা থেকে খালাস বাবর

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
সব মামলা থেকে খালাস বাবর

অস্ত্র মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ড থেকে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবরকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ে আদালত বলেছেন, অস্ত্র উদ্ধার, আটক এবং তাঁর বিরুদ্ধে মামলার পুরো বিষয়টি ছিল কারসাজি। আর এই কারসাজির প্রধান ভিকটিম (ভুক্তভোগী) হলেন লুত্ফুজ্জামান বাবর।

বিচারিক আদালতের সাজার বিরুদ্ধে বাবরের আপিল মঞ্জুর করে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরীন আক্তারের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল বুধবার এই রায় দেন।

হাইকোর্টে বাবরের আপিলের শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সাদ্দাম হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সুলতানা আক্তার রুবী।

রায়ের পর আইনজীবী শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, এই রায়ের মধ্য দিয়ে লুত্ফুজ্জামান বাবরের বিরুদ্ধে আর কোনো সাজা থাকল না।

নির্বাচন থেকে শুরু করে সব কিছুর জন্য তিনি এখন আইনগতভাবে উপযুক্ত। আমরা আশা করব, দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে সামনে রেখে তিনি পরবর্তী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবেন।

মামলার প্রক্রিয়া নিয়ে রায়ের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে এই আইনজীবী বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে রাজি না হওয়ায় এই মামলা করা হয়েছিল। তাঁকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার পর তাঁর বাড়ি থেকে অস্ত্র উদ্ধারের নাটক সাজানো হয়েছিল।

যেদিন তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়, তার সাত দিন পর মামলা করা হয়েছে। এই জন্য হাইকোর্ট রায়ে বলেছেন, এই মামলাটি করার যে প্রক্রিয়া সেই প্রক্রিয়াই ছিল অবৈধ। এ জন্য মামলার প্রক্রিয়াটিই অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। আর যেসব সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে বাবরকে সাজা দেওয়া হয়েছে, সেসব সাক্ষ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণ করে হাইকোর্ট রায়ে বলেছেন, একজনের সাক্ষ্যের সঙ্গে আরেকজনের সাক্ষ্যের কোনো মিল নেই। এগুলোর সবই ছিল এক-এগারো সরকারের কারসাজি।
এই কারসাজির প্রধানতম ভিকটিম (ভুক্তভোগী) ছিলেন লুত্ফুজ্জামান বাবর। এই মামলায় বাবরের আটকাদেশকে হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করেছেন বলেও জানান আইনজীবী শিশির মনির।

মামলার বিবরণীতে বলা হয়েছে, ২০০৭ সালের ২৭ মে যৌথ বাহিনী লুত্ফুজ্জামান বাবরকে বাসা থেকে আটক করে। পরদিন তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গ্রেপ্তারের সাত দিন পর অর্থাত্ ৩ জুন বাবরের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় অস্ত্র আইনের ১৯(ক) ও ১৯(চ) ধারায় একটি মামলা করেন গুলশান থানার এসআই হেলাল উদ্দিন।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তারের দিন রাত সাড়ে ৯টায় যৌথ বাহিনী ও গুলশান থানা পুলিশ বাবরের বাসায় তল্লাশি চালায়। ওই তল্লাশি অভিযানে রিভলভার, পিস্তল, রাইফেল ও শটগান জব্দ করা হয়। এসব অস্ত্রের লাইসেন্সের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তাঁর স্ত্রী তিনটি অস্ত্রের লাইসেন্স দেখালেও রিভলভারেরটি দেখাতে পারেননি। এর ২০ দিন পর ২০০৭ সালের ২৩ জুন তদন্তকারী কর্মকর্তা বাবরের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। অভিযোগ গঠনের পর বিচার শুরু হলে আদালত রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ প্রমাণে ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেন। সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ২০০৭ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার মেট্রোপলিটন স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-৯ বাবরকে অস্ত্র আইনের ১৯(ক) ধারায় ১০ বছর এবং ১৯(চ) ধারায় সাত বছর সর্বমোট ১৭ বছরের সাজা ঘোষণা করে রায় দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালেই হাইকোর্টে আপিল করেন বাবর, যার ওপর শুনানি শেষে খালাসের রায় দিলেন উচ্চ আদালত।

গত বছর ১ ডিসেম্বর ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার মামলা থেকে বাবরকে খালাস দেন হাইকোর্ট। এই মামলায় তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন বিচারিক আদালত। এরপর গত ১৮ ডিসেম্বর বহুল আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলা থেকেও তাঁকে খালাস দেওয়া হয়। এই মামলায়ও তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। আর ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনায় অস্ত্র আইনের আরেক মামলায় গত ১৪ জানুয়ারি হাইকোর্ট তাঁকে খালাস দেন। এই মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়েছিল তাঁকে।

 

 

 

 

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ