<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত সাড়ে ১৫ বছরে বহুবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও সরকারি চাকরিজীবীরা তাঁদের সম্পদের হিসাব দেননি। অবশেষে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সব সরকারি চাকরিজীবীকে সম্পদের হিসাব দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে। কিভাবে তাঁদের সম্পদের যথাযথ হিসাব পাওয়া যায়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এখন সেই কৌশল খুঁজছে বলে জানা গেছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গতকাল রবিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমান সব সরকারি চাকরিজীবীকে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তবে তাঁরা সম্পদের হিসাব কিভাবে দেবেন সেই দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়নি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ১৯৭৯ সালের সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা দ্রুত যুগোপযোগী করে নতুন বিধিমালা চূড়ান্ত করা হবে। ২০১২ সালের শুদ্ধাচার কৌশলও সংশোধন করা হচ্ছে। এসব নীতিমালায় নিয়মিত সম্পদের হিসাব দেওয়ার বিধান নিশ্চিত করা হবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জানতে চাইলে জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমান কালের কণ্ঠেকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সব সরকারি কর্মচারীকে সম্পদের হিসাব জমা দিতে হবে। এখন কী পদ্ধতিতে কিভাবে জমা দেবেন সে বিষয়ে আমরা ফরম্যাট রেডি করে দেব। এ ছাড়া ১৯৭৯ সালের সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা এবং ২০১২ সালের শুদ্ধাচার কৌশল যুগোপযোগী করা হচ্ছে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সর্বশেষ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত ৪ জুলাই সচিব সভায় সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা-১৯৭৯ এবং জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলে সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দেওয়ার কথা বলা হলেও এ নিয়ে ওই সভায় মতানৈক্য দেখা দেয়। বৈঠকে কয়েকজন সচিব বলেন, আয়কর আইন-২০২৩ অনুযায়ী এসব তথ্য গোপন থাকবে। আর কোনো কোনো সচিব বলেছেন, পরিবারের সম্পদের হিসাবও জমা দিতে হবে। তবে প্রত্যেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হিসাব বিবরণী জমা দেবেন। এই তথ্য কর্তৃপক্ষকে গোপন রাখতে হবে। জনগণের কাছে প্রকাশ করা যাবে না। এর জন্য প্রয়োজনীয় জনবলও নিয়োগ করতে হবে। কারণ বিদ্যমান জনবল দিয়ে প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ সরকারি চাকরিজীবীর সম্পদের হিসাব যাচাই-বাছাই করা সম্ভব নয়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা-১৯৭৯ অনুযায়ী সরকারি চাকরিজীবীদের পাঁচ বছর পর পর সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দেওয়া আর জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের স্বল্পমেয়াদি সুপারিশ ছিল</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রতিবছর নির্দিষ্ট সময়ে জনপ্রশাসনে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করা। কিন্তু লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ এ ক্ষেত্রে আগে ভেটিংকৃত অংশ থেকে সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা উপবিধি-১০(২) বাদ দিয়েছে। বিষয়টি আয়কর আইন, ২০২৩-এর ৩০৯ ধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ উপবিধি-১০(২) বাদ দেয়। একইভাবে ১১ ধারার বিষয়ে মতামত দেয় লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ। এ নিয়ে সচিবদের বৈঠকে মতানৈক্য হয়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আয়কর আইন, ২০২৩-এর ৩০৯ ধারায় ৩০৯(১) বলা হয়েছে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, এই ধারার বিধান সাপেক্ষে, নিম্নবর্ণিত বিষয়সংবলিত সব বিবরণ বা তথ্য গোপনীয় থাকবে এবং তা প্রকাশ করা যাবে না, যথা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">(ক) এই আইনের বিধানাবলির অধীন প্রস্তুতকৃত বিবৃতি, দাখিলকৃত রিটার্ন বা হিসাব বিবরণী বা দলিলাদি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যাঁরা সম্পদের হিসাব চেয়ে নির্দেশনা দিচ্ছেন, আগে তাঁদের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। এতে অধস্তন কর্মকর্তাদের মধ্যে একটা বার্তা যাবে। তাহলে এই উদ্যোগ সহজে বাস্তবায়িত হবে।</span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাস্তবায়িত হয়নি দুর্নীতি দমনের উদ্যোগ</span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সরকারি চাকরিজীবীদের দুর্নীতি দমনের লক্ষ্যে ২০১২ সালে প্রতিবছর নির্দিষ্ট সময়ে জনপ্রশাসনে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়ার কথা বলা হয়। অথচ সরকারি কর্মচারীদের এই নিয়ম মানাতে না পেরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার গত বছরের শেষের দিকে এ নিয়ম বদলে ফেলার প্রস্তাব করেছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এরপর সরকার সমালোচনার মুখে পড়ায় সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা-১৯৭৯ সংশোধনীর প্রক্রিয়া ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। </span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তিন সচিবের সিদ্ধান্তে হিসাব নেওয়া বন্ধ</span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">২০২২ সালের ১৬ জুন জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে তৎকালীন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছিলেন, সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদের হিসাবের বিবরণী দেওয়া বাধ্যতামূলক করতে আচরণ বিধিমালা-১৯৭৯ হালনাগাদ করা হচ্ছে। প্রতিমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর উল্টো সম্পদের হিসাবে ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব করে সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ২০২২-এর খসড়া চূড়ান্ত করে সরকার। এ ছাড়া ২০২২ সালের ২৭ নভেম্বর সচিবদের এক সভা শেষে তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদসচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সরকারি কর্মচারীদের আর আলাদা করে সম্পদের হিসাব সরকারকে দিতে হবে না। এন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‌</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিআর, আমি এবং জনপ্রশাসনসচিব বসেছিলাম। বিষয়</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‌</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">টি পরিষ্কার করে দিয়েছি, সম্পদের হিসাব আর আলাদা করে দেওয়ার দরকার নেই। প্রতিবছর রিটার্ন দাখিলের সময় এক পৃষ্ঠায় সম্পদের যে বিবরণী দি</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‌</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তে হয়, সে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‌</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">টি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে দাখিল করবেন সরকারি কর্মচারীরা।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সাবেক মন্ত্রিপরিষদসচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের অনেকের বেতনের বাইরেও আয় আছে। এই আয়ের হিসাব দেওয়ার সংস্কৃতি গড়ে না ওঠায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এটি বাস্তবায়নের জন্য কঠোর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। অনলাইনে জমা দেওয়ার বিধান চালু করতে হবে। তাহলে সহজেই জমা দেওয়া যাবে এবং পর্যালোচনা করা সম্ভব হবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত সাড়ে ১৫ বছরে আমলাদের একটি অংশের ভাষ্য ছিল, কর্মচারীদের এই বিধিমালা সেকেলে এবং বর্তমানে তা প্রতিপালনযোগ্য নয়। কারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখন আয়কর রিটার্ন জমা দেন এবং প্রত্যেকের ব্যক্তিগত টিন নম্বর রয়েছে। এটি ১৯৭৯ সালের আইন। জিয়াউর রহমান আইনটি প্রণয়ন করেন। তিনি অবৈধ স্বৈরশাসক ছিলেন, তাঁর আইন এখনো বহাল রাখা উচিত নয়। এ ছাড়া যাঁরা এ বিধিমালা বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত, তাঁরাই সম্পদের হিসাব দেন না। এই বিধিমালা সংশোধনীর নামে ১০ বছর সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিধিমালাটি করা হয়েছিল ৪৪ বছর আগে। এরপর ২০০২ ও ২০১১ সালে তা সংশোধন করা হয়। প্রয়োজনীয় নির্দেশনাগুলো সংশোধন করা হয়নি। তাই ২০১৪ সালে ফের সংশোধন কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু ১০ বছরেও চূড়ান্ত করতে পারেনি আওয়ামী লীগ সরকার।</span></span></span></span></p>