<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নগরজীবনে নানা ব্যস্ততার মধ্যে একটুখানি আরাম খুঁজে পাওয়া সহজ নয়। আবার সহজও। সমরুচির সহজন পাশে থেকে উৎসাহ জোগালে পা পা করে খুলে যায় অনেক অজানা দরজা-জানালা। মানুষের রুচি তার প্রাত্যহিক জীবনযাপনের বোধ থেকে উৎসারিত। এই বোধই তাঁকে একসময় সহজন নির্বাচনে সহায়তা করে। যে সহজন মিলে একসময় গড়ে তোলা হয় সংঘ। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এসব সংঘের নানা প্রকারভেদ আছে। কেউ গড়ে প্রভাতি সংঘ। কেউ রাত্রি সংঘ। আবার কেউ সংগ্রাহকের সংঘ। এসব সংঘের সদস্যরা নানা আঙ্গিকে নগরে প্রশান্তি খোঁজেন। প্রদর্শনীসহ নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করেন।  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/09.September/22-09-2024/2/kalerkantho-lt-3a.jpg" height="534" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/09.September/22-09-2024/2/kalerkantho-lt-3a.jpg" style="float:left" width="350" />ভৌগোলিক আকারে আমাদের দেশটি অতি ছোট। তবে লোকসংখ্যার দিক থেকে বৃহৎ বহু দেশের তুলনায় অনেক বেশি বৃহৎ। এই বিপুল লোকসংখ্যার রয়েছে বিপুল অভিরুচি। প্রযুক্তির প্রসারে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই) সময় পর্বে মানুষ বিচ্ছিন্ন না হয়ে বরং নৈকট্য তৈরি করেছে। হোক সেটা প্রযুক্তির মাধ্যমে। কিন্তু নৈকট্য যে তৈরি হয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সম্প্রতি রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে সেচ ভবনের অডিটরিয়ামে হয়ে গেল তিন দিনের ডাকটিকিট প্রদর্শনী। ডাকটিকিট ঘিরে দেশে বিশাল সংঘ রয়েছে। এই সংঘের বিস্তার বিশ্বজোড়া। এরা পরস্পর পরস্পরের সহজন। একসময় বিচ্ছিন্নভাবে ব্যক্তি পর্যায়ে সংগ্রহ করা হতো ডাকটিকিট। তা এখন সংঘের মাধ্যমে। ডাকটিকিট সংগ্রহ ঘিরে গড়ে উঠেছে ডিলার ব্যবস্থা। অ্যান্টিক হয়ে যাওয়া বিভিন্ন দেশের ডাকটিকিট সংগ্রাহকরা ডিলারের মাধ্যমে তা সংগ্রহ করেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ডাকটিকিটের পাশাপাশি সেচ ভবনের প্রদর্শনীস্থলে পশরা সাজিয়ে বসেছিলেন নানা বস্তুর সংগ্রাহক ও ডিলাররা। মূলত প্রদর্শনী বলা হলেও সেখানে অংশ নেন সংগ্রাহক-ডিলার উভয়েই। নানা দেশের মুদ্রা ও কয়েন যেমন স্থান পেয়েছে প্রদর্শনীতে, তেমনি সংগ্রাহকদের মধ্যেও বেশ উদ্দীপনা লক্ষ করা গেছে। পাল-সেন, সুলতানি আমলের কয়েন সংগ্রহে বেশ তৎপর ছিলেন সংগ্রাহকরা। একইভাবে একসময় বাংলাদেশের ৫০ টাকার নোটে ভুলে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের নামের বানান ভুল ছাপা হয়। পরে অবশ্য ওই নোটটি বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। সেই নোটটি সংগ্রহ করতে অনেক সংগ্রাহককে ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আবার প্রদর্শনীর এক পাশে রিল ক্যামেরার পসরা নিয়ে বসেছিলেন একজন। ১৯১৩ সালের একটি রিল ক্যামেরা দেখিয়ে তিনি বলছিলেন ক্যামেরা সংগ্রাহকদের কথা। নেট দুনিয়ার আওতায় এখন আর নগর-গ্রাম বলে কিছু নেই। অনলাইনে সবাই সবাইকে চেনে। খুব সহজে যোগাযোগ হয়ে যায়। ফলে বিচিত্র ক্যামেরা যেমন গ্রামাঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা যায়, আবার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের একজন সংগ্রাহক খুব সহজে অনলাইনে নগর থেকে ক্যামেরা সংগ্রহ করে নিতে পারছেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রদর্শনীস্থলে অংশ নেওয়া বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল, বিচিত্র বস্তুর সংগ্রাহকরা নগরের চেয়ে বেশি সংখ্যায় প্রান্তে বসবাস করেন। আর বর্তমানে নগর বিনির্মাণের সময় পর্বে বিচিত্র বস্তু তেমন পাওয়াও যাচ্ছে না। ফলে সংগ্রহ করতে চাইলেও সম্ভব হয় না।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কোনো বস্তু বিপুল সংখ্যায় সংগ্রহে থাকলেই সংগ্রাহক হওয়া যায় না। কিংবা একে ভালো সংগ্রহও বলা যায় না। দেখতে হয় বস্তুটি কতটা দুর্লভ। বস্তুটির প্রাপ্যতা কতটা দুরূহ।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কথায় কথায় একজন সংগ্রাহক জানালেন, ফাউন্টেন পেন ও কালির ব্যবহার মানুষ ছেড়ে দিয়েছে বলপেন যখন সুলভ হয়ে যায়। এখন আর বলপেনও অনেককে ব্যবহার করতে হয় না। কম্পিউটারের মাধ্যমেই মানুষ লেখালেখির কাজ সারছেন। এমন বাস্তবতায় একজন সংগ্রাহক দোয়াত-কলমের ঈর্ষণীয় সংগ্রহ গড়ে তুলেছেন। যে সংগ্রহ ক্রমে দুর্লভ অ্যান্টিক হয়ে উঠছে। একইভাবে ম্যাচ বক্সের ব্যবহারও ক্রমে বিলোপ পাচ্ছে। একজন সংগ্রাহক দীর্ঘদিন ধরে দেশি-বিদেশি বিচিত্র সব ম্যাচ বক্সের রীতিমতো মিউজিয়াম গড়ে তুলেছেন। আবার শখে সংগ্রহ শুরু করলেও আরেকজন সংগ্রাহক বিপুলসংখ্যক হুক্কার সংগ্রহশালা গড়ে তুলেছেন। এই সংগ্রাহকরা শখের সংগ্রাহক হলেও ধীরে ধীরে তাঁদের সংগ্রহশালা ঈর্ষণীয় হয়ে উঠছে। এসব সংগ্রহ একসময় এই জনপদের অভিরুচির সাক্ষ্য দেবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একটি জনপদের সভ্যতা-রুচি দুই-চার বছরে গড়ে ওঠে না। এর জন্য প্রয়োজন হয় শত-হাজার বছর। সভ্যতা বিনির্মাণে মানুষের রুচি, জীবন-যাপনের ধরন ক্রমাগত অভিঘাত রেখে যায়। যেমন, একটি নগরের বাসিন্দাদের রুচি সম্পর্কে ধারণা নিতে ওই নগরের ফুটপাতে হাঁটতে হয়। ফুটপাত দেখেই ওই নগরের বাসিন্দাদের রুচি সম্পর্কে মোটামুটি অনুমান করা যায়। সেভাবেই ক্রমে সংগ্রাহকের সংগ্রহশালার ধরন একটি জনপদের মানুষের অভিরুচির সাক্ষ্য বহন করে।</span></span></span></span></p>