<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক মামলার রায় ঘিরে ধুম পড়ে যায়। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও তার অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাজা দিতে উঠে পড়ে লাগে আওয়ামী লীগ সরকার। তড়িঘড়ি রায় দিতে গিয়ে মৃত ব্যক্তিকেও সাজা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ১৫ বছর আওয়ামী লীগ সরকার বিচার বিভাগকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আইনজ্ঞরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছিল। আইনের বাইরে গিয়ে সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে বাধ্য করা হয়েছে। অনেক বিচারক নিজের পদোন্নতি ও সরকারের সুবিধা নিতে স্বেচ্ছায় এসব নির্দেশনা পালন করেছেন। পাশাপাশি সরকার নিজেদের মতাদর্শের বিচারকদের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করেছে। এতে বিচার বিভাগ হয়ে ওঠে ফরমায়েশি রায়ের হাতিয়ার। সাক্ষীদের জবানবন্দিতে আসামিদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ছাড়াই তাঁদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত বছরের ২ আগস্ট জ্ঞাতআয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৯ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই মামলায় তাঁর স্ত্রী জুবাইদা রহমানের তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে আদালত তারেক রহমানের জ্ঞাতআয়বহির্ভূত দুই কোটি ৭৪ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭ টাকার সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দিয়েছেন। এ রায়ের পর বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ফরমায়েশি রায় সরকারপ্রধানের হিংসা ও আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ। এক দফার আন্দোলনকে নেতৃত্বশূন্য করতে আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে প্রতিহিংসা মেটানো হয়েছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চলতি বছরের ১ জানুয়ারি শ্রম আইন লঙ্ঘন মামলায় নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত। সাজার পাশাপাশি পৃথক দুই ধারায় ৩০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ২৫ দিনের আরো সাজা দেওয়া হয়। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ডক্টর ইউনূস বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যে দোষ করিনি, সেই দোষে শাস্তি পেলাম। এ রায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও ব্যাপক আলোচিত হয়। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গত ৭ আগস্ট শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল ড. ইউনূসের সাজা বাতিল করেন।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৭ ধারার মামলায় মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসিরের দুই বছরের সাজা দেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল। এ রায়েও সমালোচনার ঝড় ওঠে। কারাদণ্ডের রায় বাতিল করতে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা উদ্বেগ জানায়। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গত ২২ আগস্ট এ রায় বাতিল করেন হাইকোর্ট। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে নিজেই বলেছেন আমরা অনেকের সাজা দিয়েছি। এগুলো যে রাজনৈতিক রায় সেটা প্রমাণিত। রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সাজা দিতে রাত ৮-৯টা পর্যন্ত সাক্ষ্য নিয়েছেন বিচারকরাও। বিচারকদের সঙ্গে আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বক্তব্যের রেকর্ড ফাঁস করা গেলে সব কিছু স্পষ্ট হবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিএনপির সহআইনবিষয়ক সম্পাদক আইনজীবী সৈয়দ জয়নাল আবেদীন মেজবাহ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের নির্দেশনায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও আইন মন্ত্রণালয়ের প্রচণ্ড চাপের মুখে আসামিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও ফরমায়েশি রায় কার্যকর করতে বাধ্য করেছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জামায়াতে ইসলামীর প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আইনজীবী মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, আওয়ামী লীগ যতগুলো মামলায় সাজা দিয়েছে, সব মামলায় মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফরমায়েশি রায় দেওয়া হয়েছে। এমনকি মারা যাওয়ার দুই বছর পর মামলা দেওয়া হয়েছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ভাটারা থানার মামলায় ১৫ জনের সাজার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সত্য ও মিথ্যার বাইরে ভৌতিক মামলার সংস্কার করেছিল। যে ঘটনা ঘটেনি তবু রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে মামলা, গ্রেপ্তার ও সাজা দেওয়া হয়েছে, যা আইনের অপপ্রয়োগ। বিচারকদের এসব মামলা আমলে নেওয়া ঠিক হয়নি। অনেকে অতি উৎসাহী হয়ে এসব মামলায় সাজা দিয়েছেন। তাঁদের জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত।</span></span></span></span></p>