<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">লাল বেনারসি জড়িয়ে তুমি যে, আমার সীমানাটা ছাড়িয়ে গেলে</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Arial Unicode MS Bold""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী এসডি রুবেলের গাওয়া গানের বেনারসি শাড়ির বাজার এখন আর আগের মতো নেই। আগে লাল বেনারসি ছাড়া মেয়ের বিয়েই হতো না। কালের বিবর্তনে লাল বেনারসি নীল বেদনায় পরিণত হয়েছে। জৌলুস হারাচ্ছে আড়াইহাজারের বেনারসি পল্লী। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে জগদ্বিখ্যাত বেনারসি শিল্প আজ অন্ধকারের মুখোমুখি। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত কয়েক হাজার লোকের জীবন-জীবিকা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে অর্ধেকের বেশি বেনারসি শাড়ি কারখানা। তাঁতি-কারিগর ও মহাজনরা হতাশায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। ভারতীয় শাড়ির আগ্রাসনের কারণে তাঁতিদের নিপুণ ছোঁয়ায় তৈরি করা বেনারসি শাড়ি বাজার হারাতে বসেছে। তবু তাঁদের স্বপ্ন টিকে আছে। কারণ এখনো আড়াইহাজারের বেনারসি শাড়ি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে লন্ডন, ইউরোপ, কানাডা, সিঙ্গাপুরে যাচ্ছে। এক যুগ আগেও এখানকার বেনারসি শাড়ির বাজার ছিল ৮৫ কোটি টাকার। তবে এখন বিক্রি দাঁড়িয়েছে ৪২ কোটি টাকায়।  </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">জানা যায়, ১৯৫৩ সালে লতব্দী গ্রামের বেনারসি তাঁতি ঈমান হোসেন (পাগলা), জসিমদ্দিন খান ও নুরুল ইসলাম বেনারসি শাড়ি বুনন শুরু করেন। এভাবেই আড়াইহাজারের বেনারসি শাড়ি শিল্পের গোড়পত্তন হয়।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আড়াইহাজারের ফতেহপুর ইউনিয়নের লতব্দী ও হাইজদী ইউনিয়নের সিঙ্গাপুর, নারান্দি এলাকার প্রায় আড়াই শ পরিবার বেনারসি ও কাতান শাড়ি তৈরি করছে। আগে এখানে ৪০০ পরিবার ছিল। এখন পরিবার কমে এসেছে। বন্ধ হয়ে গেছে অনেক কারখানা। কয়েকজন তাঁতি বলেন, মসলিন শাড়ির উত্তরাধিকারী এই বেনারসিশিল্প নালা-নর্দমার পাশে রাস্তায় অবৈধভাবে ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গড়ে উঠেছে। বাঁশের খুঁটি ও বেড়ার ঘরে এসব তাঁত কারখানায় প্রায়ই আগুন লাগে। ফলে নিমিষেই নিঃস্ব হয়ে যায় তিল তিল করে গড়ে তোলা তাঁতিদের বেঁচে থাকার স্বপ্ন। অনেকে নিরাশ হয়ে পেশা পরিবর্তন করছেন। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">টাকার অভাবে বেশির ভাগ তাঁতি তাঁদের ছেলেমেয়েকে স্কুলে পড়াতে পারেন না। কেউ কেউ ছেলেমেয়েদের স্কুলে দিলেও বেশি দূর পড়াতে পারেন না।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">১৯৯০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বেনারসির স্বর্ণ যুগ ছিল। তখন ভারতীয় শাড়ি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল। তাঁতি শহীদুল্লাহ বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আগে মহাজন-দোকানদাররা শাড়ির জন্য এসে তাগাদা দিতেন। ঈদের সময় দোকানদাররা অগ্রিম টাকা দিয়ে যেতেন শাড়ির জন্য। সবই এখন স্বপ্ন মনে হয়।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Arial Unicode MS Bold""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তাঁতি আব্দুল আলী বলেন, বেনারসি শিল্পকে বাঁচাতে হলে একটি তাঁত ব্যাংক, সেলস সেন্টার ও তাঁত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা জরুরি। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বেনারসি পল্লীতে ১৫ থেকে ২০ প্রকারের বিভিন্ন নাম ও ডিজাইনের শাড়ি রয়েছে। এর মধ্যে বেনারসি কাতান, বুটি কাতান, হাড্ডি কাতান, পিওর কাতান, দুপিয়ান সিল্ক, সানন্দা, গাদোয়ান, মাসলাইস কটন, জুটনেট, সুপারনেট, পুদনমা বা পাড় ছাড়া কাতান, অপেরা কাতান, টিস্যু কাতান, কোটাসিল্ক, কাঞ্জিবলন ইত্যাদির চাহিদা বেশি। ভারতীয় শাড়ির মধ্যে নেট শাড়ি, গুপি, কোকিলা দির কাতান, রেম্বো, কলাবেরি ইত্যাদির কদর বেশি।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">একেকজন কারিগর দিনে গড়ে তিন থেকে চারটি শাড়ি বুনতে পারেন। প্রতিটি শাড়ি বুননের মজুরি দেওয়া হয় ২০০ টাকা করে। একজন কারিগর দিনে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকার কাজ করতে পারেন। প্রতিটি শাড়ি বাজারজাত করা পর্যন্ত মূল্য দাঁড়ায় ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা। বাজারে সেগুলো এক হাজার ২০০ থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হয়। বাজারজাত করা পর্যন্ত শাড়িপ্রতি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করে লাভ আসে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কারখানা মালিকদের হিসাব অনুযায়ী বছরে প্রায় ৪২ কোটি টাকার শাড়ি বেচাকেনা করেন তাঁরা। মালিক এমদাদ হোসেন বলেন, আগে বিদেশেও বেনারসির কদর ছিল অনেক। এখনো নেয়, তবে কম।</span></span></span></span></span></p>