<p><strong>শুমচা প্রজাতির পোশাকি বাংলা নাম দেওয়া হয়েছে ‘প্রতীচী খয়রামাথা শুমচা’ এবং ইংরেজি নাম হয়েছে ‘ওয়েস্টার্ন হুডেড পিটা’। দু-এক সপ্তাহ পর এ পাখির একটিকেও আর এই দেশে দেখা যাবে না। ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের টুটাফুটা বনের সোঁদামাটিতে বর্ষায় এরা বাসা বেঁধেছিল</strong></p> <p>ছানাপোনা নিয়ে এখন বাংলাদেশ ছেড়ে যাচ্ছে শত শত শুমচা পাখি। একটি শুমচা প্রজাতির পোশাকি বাংলা নাম দেওয়া হয়েছে ‘প্রতীচী খয়রামাথা শুমচা’ এবং ইংরেজি নাম হয়েছে ‘ওয়েস্টার্ন হুডেড পিটা’। দু-এক সপ্তাহ পর এ পাখির একটিকেও আর এই দেশে দেখা যাবে না। ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের টুটাফুটা বনের সোঁদামাটিতে বর্ষায় এরা বাসা বেঁধেছিল। কোনো বাসায় একটি বা দুটি ছানা হয়েছে, কোনো বাসা হয়েছে ব্যর্থতার স্তূপ। তা যা-ই হোক, সবাই এখন দেশ ছেড়ে উড়াল দিয়েছে; সবাই চলেছে দক্ষিণে। তবে তা নিয়ে আমরা মোটেও শঙ্কিত নই। আশ্বিন মাস এলে প্রতিবছরই এ পাখি দেশত্যাগ করে। কিন্তু প্রতি জ্যৈষ্ঠে এরা আবার এ দেশেই ফিরে আসে। না এসে কি উপায় আছে, বাংলাদেশই তো এদের জন্মভূমি!</p> <p>তবু কাগজে-কলমে এরা পরিযায়ী পাখি; আমজনতার ভাষায় ‘অতিথি পাখি’। আপন আঁতুড়ঘরে ফিরে এলে কাউকে কি অতিথি বলা যায়? যায় না; আমরা তাই এ পাখিকে অতিথি বলি না। নানা কারণে পাখিকে এক দেশ থেকে অন্য দেশে, এমনকি এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে যেতে হয়। পাখি যেখানেই যাক, নিজের দেশ মনে করেই আহার্যের খোঁজ কিংবা বাসা করতে যায়; শখের ভ্রমণে যায় না। প্রতিবছর পাখির এই যাওয়া-আসা চলছে পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাবের কোটি বছর আগে থেকেই। কোটি বছর ধরেই শুমচা পাখিরা গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শরৎকালে এই দেশে বাস করে।      </p> <p>সবুজ গোল বলের মতো এই পাখি বৃষ্টিভেজা বনতলে লাফিয়ে লাফিয়ে চলে আর ঝরাপাতা সরিয়ে দেখে কোথাও কেঁচো, কেন্নো ইত্যাদি কীট মেলে কি না। ভেজা মাটিতে হাঁটার জন্য এ পাখির লম্বা পা দুটি পালকহীন ও লেজটি খর্বাকার। পুরুষ পাখিগুলো চলতে চলতে ডাকিনীর মতো ডাকে ‘হুহুয়া, হুয়া’। এই ডাকের বঙ্গানুবাদ হলো, ‘এ বন আমার’। বনের এ অংশে অন্য পুরুষ এলে লড়াই হবে। অন্ধকার বনের লতাপাতার সঙ্গে মিশে থাকার জন্য শুমচার বেশির ভাগ পালকের রং সবুজ হলেও লড়াই করার সময় বুক টান করে দাঁড়ালে তলপেটে আগুনের মতো লাল পালক দৃশ্যমান হয়। বুভুক্ষু সাপ, বেঁজি, বনবিড়াল ইত্যাদি শত্রুর চলাফেরার দিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখে সে সারা দিন বনতলে হাঁটে এবং বড় বিপদের শঙ্কা থাকলেই শুধু উড়ে গাছের ডালে গিয়ে বসে। বিপদ কেটে গেলেই সে আবার মাটিতে নেমে আসে।</p> <p>বাংলাদেশে মোট পাঁচ প্রজাতির শুমচা পাখি আছে। এর মধ্যে তিন প্রজাতির শুমচা বৃষ্টিভেজা ছয় মাস এ দেশে থাকে, বাসা বাঁধে, ডিম দেয় ও ছানা পালে। আশ্বিন মাসে মাটি শুকিয়ে এলে এরা দক্ষিণে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপিন্স চলে যায়, যেখানে বর্ষণ আরো চলবে। গ্রীষ্মের এই বিরল পরিযায়ী পাখিদের মধ্যে ‘খয়রামাথা শুমচা’ ছাড়া রয়েছে ‘দেশি শুমচা’ ও ‘নীল শুমচা’। সম্প্রতি খয়রামাথা শুমচা পাখি পাঁচটি প্রজাতিতে ভাগ হয়ে গেছে। আমাদের পাখিটির নতুন নাম ‘প্রতীচী খয়রামাথা শুমচা’, পাপুয়া দ্বীপেরটির ‘প্রাচী খয়রামাথা শুমচা’ এবং ভারতের নিকোবার দ্বীপেরটির নাম ‘নিকোবার খয়রামাথা শুমচা’ হয়েছে। একইভাবে সুলায়েসি দ্বীপপুঞ্জেরটির নাম ‘মিনাহাসা খয়রামাথা শুমচা’ এবং নিউ গিনি দ্বীপপুঞ্জেরটির ‘বিয়াক খয়রামাথা শুমচা’ রাখা হয়েছে।  </p> <p> </p>