<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বেশিদিন আগের কথা নয়। বছর কুড়ি আগের কথা। নেশাটা ডালপালা মেলতে থাকে। উচ্চশিক্ষার কারণে মানিকগঞ্জ ছেড়ে রাজধানীতে চলে আসার পর নেশাটা আরো বিস্তার লাভ করে। কতজন কত কী সংগ্রহ করে</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">পুরনো কয়েন</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">, ডাকটিকিট, নানা ধরনের অ্যান্টিক। শুরুতে গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে বাবার হাত ধরে সেসবও সংগ্রহ করছিলেন। তবে বিশেষ কিছু চাই। চলতি শতাব্দীর শুরুর দিকে একদিন নানাবাড়ি গেলে কথায় কথায় নানাকে নতুন আগ্রহের কথাটা জানান। সমর্থন পাওয়া গেলে নতুন উদ্যমে শুরু হয় হুক্কা সংগ্রহ। একটি, দুটি থেকে সেই সংগ্রহ এখন ঈর্ষণীয় পর্যায়ে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সাধারণ অর্থে বাংলা জনপদের মানুষ হুক্কা বলতে নারকেলের খোল দিয়ে তৈরি হুক্কাকে বোঝে। শুরুটা তাই দিয়ে হয়েছিল। এমনও হয়েছে</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">, বিশেষ একটি হুক্কা সংগ্রহে মানিকগঞ্জের গ্রামে গিয়ে হুক্কার মালিককে খুঁজে পেতে চাষের মাঠে গিয়ে প্রত্যাশিত ব্যক্তিকে আলে বসে হুক্কা সেবনরত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রস্তাব করা হয়, অন্য ধরনের নতুন একটি হুক্কা কিনে দিলে প্রত্যাশিত হুক্কাটি পাওয়া যাবে কি না। নিরাশ হতে হয়নি। পাওয়া গেল। প্রকৃত সংগ্রাহকের কাজ এমনটাই। এভাবে বছর কুড়ি গড়ালে এটাও টের পান নাবিল খান, সংগ্রহ যত বাড়ছে, সংরক্ষণ তত কঠিন হয়ে উঠছে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"><img alt="হুক্কার ভুবনে এক সন্ধ্যা" height="300" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/10.October/02-10-2024/4_kaler-kantho--2-10-2024 (1f.jpg" style="float:left" width="500" />কারণ প্রচলিত নারকেলের খোলের বাইরে হুক্কা রূপ</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">-বৈচিত্র্যে, আকারে-প্রকারে এলাহি এক ব্যাপার। পিতল, তামা, জার্মান সিলভার, কাচ, পাথর, দস্তা, রুপা, ঢালাই, মাটি এসব উপকরণ নিয়ে একসময় মনোহর সব হুক্কা তৈরি হতো। এসব উপকরণ দিয়ে তৈরি হুক্কার বিশাল এক সংগ্রহশালা গড়ে তুলেছেন নাবিল খান। পেশায় ফ্যাশন ডিজাইনার হলেও নেশায় তিনি জাত সংগ্রাহক। মিরপুরের বাসায় সম্প্রতি এক সন্ধ্যায় তাঁর হুক্কার সংগ্রহ দেখতে দেখতে মনে হলো এক সময় এ বিষয়ে গবেষণার জন্য সংগ্রহশালাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">হুক্কা তৈরি সুচারু এক শিল্পকর্ম। ইংরেজরা যখন ভারতবর্ষে তামাক নিয়ে আসে</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">, তখন এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষায় ষোলো শ শতকে মোগল সম্রাটের জামানায় তামাক সেবনে ভারতবর্ষে শুরু হয় হুক্কার প্রচলন। ওই সময় মূলত অভিজাতরাই হুক্কার ব্যবহারে তামাক সেবন করতেন। ফলে এই হুক্কা তো যেনতেন হুক্কা হলে চলবে না। তাই বিচিত্র সব উপকরণে বনেদি হুক্কা তৈরিতে ব্যবহার করা হতো শৈল্পিক সব নকশা। নাবিল খান যখন তাঁর সংগ্রহের হুক্কা দেখাচ্ছিলেন, সেগুলোতে দেখা গেছে বিদ্রিওয়্যার, ডোকরা, মুরাদাবার এসব নকশা। আবার হুক্কার আকৃতিতেও রয়েছে বৈচিত্র্য। কোনোটি আমের তো কোনোটি ফুলদানির। আবার কোনোটি ময়ূর কিংবা প্রদীপের। নারীর অবয়বে তৈরি হুক্কাও রয়েছে। কোনো কোনো হুক্কার শরীরে খোদাই করা আছে বিচিত্র সব পশু। একটিতে খোদাই দেখতে পাওয়া যায় শ্রীমতী কামিনী সুন্দরী দাসীর নাম, যিনি একসময় নদীয়ার জমিদার ছিলেন। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষরা বাঁশের তৈরি হুক্কা ব্যবহার করেন।  </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">একদা ভারতবর্ষের বাংলা অঞ্চলেও নবাব এবং জমিদাররা তামাক সেবনে হুক্কার ব্যবহার করতেন। রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংগ্রহশালায় তার নমুনা বিশেষ দুর্লভ নয়। তবে বাংলার গ্রামগঞ্জে সাধারণ মানুষের মধ্যে হুক্কার ব্যবহার কিভাবে এবং কখন থেকে শুরু হয়েছে তা গবেষণার বিষয়। কারণ মোগল সম্রাট কিংবা নবাব কিংবা জমিদারদের মতো অভিজাতরা তামাক সেবনে যে হুক্কার ব্যবহার করতেন সেটির ব্যবহার সাধারণে চলে আসা খুব সহজ ব্যাপার না। আবার গ্রামগঞ্জে যখন হুক্কার ব্যবহার প্রায় বিলুপ্ত হতে শুরু করেছে</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">, তখন উত্তরাধুনিক এই জামানায় নগর সভ্যতায় সেই হুক্কা শিসার আদলে ফিরতে শুরু করেছে। নগর সভ্যতায় অভিজাতদের কাছে বর্তমানে বিশেষ কদর পাচ্ছে শিসা বার। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কথায় কথায় নাবিল খান বলছিলেন</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">, ভারতবর্ষের বাইরে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ, তুরস্ক এমনকি উত্তর আমেরিকার অনেক অঞ্চলেও তামাক সেবনে হুক্কার ব্যবহার রয়েছে। আবার হুক্কা সংগ্রহ একেবারে সহজ কর্ম নয়। দেশের প্রধান শহরগুলোর এন্টিকশপের বাইরে হুক্কা সংগ্রহে নাবিল খানকে ছুটে যেতে হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে শুরু করে পাবনা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, কুমিল্লা, নোয়াখালী হয়ে রাঙামাটি পর্যন্ত। এসব হুক্কা সংগ্রহ কিছুটা ব্যয়বহুলও। বিলাসী একটি হুক্কা সংগ্রহে ২০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থ খরচ করতে হয়। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সংগ্রহ ও সংগ্রাহকদের কিছু বিড়ম্বনার কথাও জানালেন নাবিল খান। দেশের প্রচলিত আইনে অনেক দুর্লভসামগ্রী ব্যক্তিগত সংগ্রহে রাখা বিধিসম্মত নয়। ফলে অনেক সংগ্রাহক আছেন</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">, যাঁরা তাঁদের ব্যক্তিগত সংগ্রহ জনসমক্ষে আনতে রাজি নন। আবার এসংক্রান্ত রাষ্ট্রের কোনো প্রতিষ্ঠানে ওই সব দুর্লভসামগ্রী দেওয়া হলে সামান্য স্বীকৃতিও মেলে না। তার পরও দেওয়া হলে অযত্ন-অবহেলায় একসময় সেসবের আর খোঁজ মেলে না। এমন বাস্তবতায় ওসব দুর্লভসামগ্রী দেখা থেকে বঞ্চিত হন দেশের মানুষ। এসব কারণে নাবিল খান সংগ্রাহকদের জন্য রাষ্ট্রের কাছে বিশেষ লাইসেন্স চাইলেন। যাতে সংগ্রাহকরা নির্ভয়ে তাঁদের সংগ্রহে থাকা দুর্লভসামগ্রী সর্বসাধারণের জন্য অবমুক্ত করতে পারেন।    </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif"">          </span></span></p> <p> </p>