<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">খুলনা মহানগরীর জোড়াগেটের সরকারি কর্মচারী আবাসিক এলাকাকে মানুষ চেনে সিঅ্যান্ডবি কলোনি নামে। গণ-আন্দোলনে গদিচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এ আবাসিকের ১৩টি ভবন ভেঙে বঙ্গবন্ধু নভো থিয়েটার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। গণ-অভ্যুত্থানের মুখে সরকার পতন হলেও রাজনৈতিক বিবেচনায় গৃহীত এই প্রকল্প বাস্তবায়নে আমলাদের উৎসাহ তাই প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। ৫৫০ কোটি টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এরই মধ্যে তোড়জোড় শুরু হয়েছে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">গণপূর্ত এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, খুলনায় বঙ্গবন্ধু নভো থিয়েটার প্রকল্পের অনুমোদন হয় ২০২২ সালের ৬ অক্টোবর। ডিপিপি অনুযায়ী মোট ব্যয় ধরা হয় ৫৫৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে জমির মূল্য ধরা হয় এক কোটি ২১ লাখ টাকা। চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রথমে জমি দেখা হয় নগরসংলগ্ন জিরো পয়েন্ট ও আশপাশ এলাকায়। কিন্তু পরে হঠাৎ জনগুরুত্বপূর্ণ আবাসিক এলাকায় নিয়ে আসা হয় প্রকল্পটি। সিঅ্যান্ডবি কলোনির আট একরেরও বেশি জমিতে থিয়েটার নির্মাণের জন্য এরই মধ্যে আন্ত মন্ত্রণালয় পর্যায়ে ওই আবাসিকের ৮.৩৫১ একর জমি হস্তান্তর হয়েছে। ছয়তলা ১৩টি ভবন নামমাত্র মূল্যে ভেঙে ফেলতে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। টেন্ডারে মাত্র তিনটি ভবনের প্রতিটি ১১ থেকে ১২ লাখ টাকায় বিক্রি হলেও বাকি ১০টি ভবন ভেঙে মালপত্র নিতে গিয়ে একেকটি ভবনের জন্য চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হয়। যেসব প্রতিষ্ঠান ভবনগুলো ভেঙে মালপত্র নেওয়ার জন্য সর্বনিম্ন দরদাতা নির্বাচিত হয় তার মধ্যে দুটি ভবন পায় মেসার্স এস কে ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া মেসার্স জননী আয়রন স্টোর ও মেসার্স রিযিক এন্টারপ্রাইজ নামের প্রতিষ্ঠান দুটি করে ভবনের টেন্ডার পায়। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ না হলেও তার জন্য বরাদ্দকৃত টাকা কিভাবে ব্যয় হবে সে ব্যাপারেও এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে প্রকল্প পরিচালক বলেছেন, অধিগ্রহণের টাকা ফেরত যাবে সরকারের কাছে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিঅ্যান্ডবি কলোনির এক বাসিন্দা বলেন, বিগত সরকারের আমলে আবাসিক এলাকার ১৩টি ভবন ভাঙার জন্য বুক ভ্যালু কম দেখিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে কাজগুলো ভাগবাটোয়ারা করে নেওয়া হয়। কিন্তু ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর কাজ পাওয়া অনেক নেতা পালিয়ে গেছেন। আবাসিক এলাকার মাঠে প্রতিদিন ভোরে খুলনার অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এবং বিকেলে অনেক শিক্ষার্থী খেলাধুলা করে। শহরের মধ্যে এত বড় মাঠ আর খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তাই নভো থিয়েটার স্থাপনের প্রকল্পটি ওই এলাকার জন্য বিষফোড়া হতে পারে বলে আশঙ্কা তাঁর। শুধু রাজনৈতিক কারণে আগের সরকার প্রকল্পটি হাতে নেয় বলেও তিনি মনে করেন।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এ ছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একজন সচিবের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় জোড়াগেটে করার উদ্যোগ নেওয়া হয় বলেও কানাঘুষা আছে। সরকার পরিবর্তনে কিছুদিন প্রকল্পের অগ্রগতি থেমে গেলেও আবারও তোড়জোড় শুরু হয়েছে। সূত্র মতে, গত ২৪ সেপ্টেম্বর খুলনা গণপূর্ত ভবনে এসংক্রান্ত একটি সভা হয়। ওই সভায় খুলনা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মিজবাহ উদ্দিন, খুলনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফ্রান্সিস আশিস ডি কস্তা, খুলনা গণপূর্ত জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী (স্টাফ অফিসার) তানজিলা শারমিন, খুলনা গণপূর্ত বিভাগ-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী অমিত কুমার বিশ্বাস এবং প্রকল্প পরিচালক (উপসচিব) মো. মশিউর রহমান উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায় ভবনগুলো দ্রুত ভেঙে প্রকল্পের কাজ শুরুর সিদ্ধান্ত হয়। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এর আগে ৯ সেপ্টেম্বরের এক পত্রে প্রকল্প পরিচালক এটিকে </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">অতিগুরুত্বপূর্ণ সংবেদনশীল স্থাপনা</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Arial Unicode MS Bold""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> হিসেবে উল্লেখ করেন। ২৮ সেপ্টেম্বর তাঁর সঙ্গে কথা হলে বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এমন কোনো শব্দ দিয়ে চিঠি লিখিনি। জনগণকে বিজ্ঞান শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করতে এটা করা হচ্ছে। প্রকল্পটি হলে জনগণের লাভ, শিশুদের লাভ।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Arial Unicode MS Bold""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">অন্তর্বর্তী সরকারের আমলের কোন সভার সিদ্ধান্তে প্রকল্পটির কাজ চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি নির্দিষ্ট করে কোনো দিন-তারিখ উল্লেখ না করে শুধু বলেছেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মুকাব্বির হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক মিটিংয়ে চলমান প্রকল্পগুলো এগিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তের আলোকে খুলনার বঙ্গবন্ধু নভো থিয়েটারটির কার্যক্রম শুরুর জন্য সম্প্রতি সভা হয়। ২৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত এ সভায় টেন্ডার আহ্বানের সিদ্ধান্ত হয়। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">প্রকল্প পরিচালক মশিউর রহমান বলেন, সরকার বদলের পর কাজটি চলমান থাকবে কি না এমন সন্দেহ ছিল। কিন্তু দেশের আট বিভাগে যেহেতু এমন আটটি প্রকল্প হবে সে জন্য সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ের এক সভায় এটির কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তিনি বলেন, যে ভবনগুলো ভেঙে ফেলা হবে সেগুলো অব্যবহৃত। জমি অধিগ্রহণের জন্য যা লাগে তা খরচ হবে, বাকি টাকা সরকার ফেরত পাবে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তবে </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বঙ্গবন্ধু নভো থিয়েটার</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Arial Unicode MS Bold""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> প্রকল্প সম্পর্কে মন্তব্য করতে রাজি হননি খুলনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফ্রান্সিস আশিস ডি কস্তা এবং খুলনা গণপূর্ত বিভাগ-১-এর  নির্বাহী প্রকৌশলী অমিত কুমার বিশ্বাস। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এদিকে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, উন্নয়নে দ্বিমত নেই, কিন্তু সেটি হতে হবে পরিকল্পিত। শুধু রাজনৈতিক কারণে এতগুলো টাকা খরচ করে নভো থিয়েটার তৈরি করা হলে কিভাবে ওই টাকা উঠবে বা উঠতে কত বছর লাগবে সেটি আগে জরিপ করা উচিত।</span></span></span></span></span></p> <p> </p>