<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">দেশে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে। বাঘের একমাত্র আশ্রয়স্থল সুন্দরবনে বন বিভাগ জরিপ চালিয়ে দেখেছে, গত ছয় বছরে ১১টি বাঘ বেড়েছে। ২০১৮ সালের জরিপে বাঘের সন্ধান মিলেছিল ১১৪টি। আর এ বছর নতুন জরিপে পাওয়া গেছে ১২৫টি। এর মধ্যে খুলনায় বাঘের সংখ্যা বেশি বেড়েছে। কমেছে সাতক্ষীরায়। চোরা শিকারিদের প্রভাব ও বাঘের খাবার (হরিণ) কমে যাওয়ায় সুন্দরবনের সাতক্ষীরা এলাকায় বাঘের সংখ্যা কমেছে জরিপকারী দলটির ধারণা। সার্বিকভাবে দেশে বাঘ বৃদ্ধির এই সংবাদটিকে আনন্দের ও তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সুন্দরবন বাঘ জরিপ-২০২৪</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Arial Unicode MS Bold""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">-এর ফলাফল ঘোষণা উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান উপস্থিত ছিলেন। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, আজ বন বিভাগ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাঘ বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। গত বছরের জানুয়ারি, এপ্রিল, নভেম্বর এবং ২০২৪ সালের মার্চে সুন্দরবনে নতুন ওই জরিপ চালানো হয়। বনের দুই হাজার ২৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে স্থাপন করা হয় ৬৫৭টি ক্যামেরা ফাঁদ। বাঘ এসব ক্যামেরার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছবি ওঠে। ক্যামেরায় ওঠা মোট ৩১ হাজার ৪৮২টি ছবির মধ্যে বাঘের ছবি ছিল সাত হাজার ২৯৭টি। একটি বাঘের অনেক ছবি ওঠে। ক্যামেরা ছাড়াও সুন্দরবনের এক হাজার ৩০৬ কিলোমিটার খালপারে সরেজমিন জরিপ করা হয়। এসব খালে বাঘের পায়ের ছাপ গুনে বাঘের সংখ্যা ও ঘনত্ব পরিমাপ করা হয়। ক্যামেরায় মোট ৮৪টি আর ৪১টি বাঘ খাল জরিপের মাধ্যমে পাওয়া গেছে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">জরিপসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বাঘ জরিপের জন্য সুন্দরবনে গাছের সঙ্গে মাটি থেকে ৫০ সেন্টিমিটার ওপরে ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। ক্যামেরার সামনে দিয়ে কোনো বাঘ বা অন্য যেকোনো প্রাণী গেলে ক্যামেরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেটির ছবি ও ১০ সেকেন্ডের ভিডিও ধারণ করে রাখে। এরপর ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ে পাওয়া ছবি বন অধিদপ্তরের রিসোর্স ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ইউনিটে বিশ্লেষণ করে বাঘের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়। এ ছাড়া সুন্দরবনের খালে সাধারণত সব বাঘ পানি খেতে আসে। এতে খালের পারে বাঘের পায়ের ছাপ পড়ে। বাঘের ধরন অনুযায়ী ওই ছাপ ভিন্ন হয়। এভাবে পায়ের ছাপ দেখেও বাঘের সংখ্যা গোনা যায়। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা বলেন, ২০২৩-২৪ সালে সুন্দরবনে পরিচালিত জরিপে ১২৫টি বাঘ পাওয়া যায়। বনে প্রতি ১০০ বর্গকিলোমিটারে বাঘ পাওয়া যায় ২.৬৪টি। ২০১৮ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ৯.৬৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২০১৫ সালের তুলনায় বাঘের সংখ্যা ১৭.৯২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">উপদেষ্টা বলেন, সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা নির্ণয়ের জন্য সর্বপ্রথম ২০১৫ সালে আধুনিক পদ্ধতি ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ জরিপ করা হয় এবং এই জরিপে বাঘ পাওয়া যায় ১০৬টি এবং প্রতি ১০০ বর্গকিলোমিটারে বাঘ পাওয়া যায় ২.১৭টি। ২০১৮ সালে দ্বিতীয় পর্যায়ে সুন্দরবনে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে জরিপে ১১৪টি বাঘ পাওয়া যায় এবং প্রতি ১০০ বর্গকিলোমিটারে বাঘ পাওয়া যায় ২.৫৫টি। ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে বাঘ বৃদ্ধি পায় আটটি এবং বাঘ বৃদ্ধির শতকরা হার ছিল প্রায় ৮ শতাংশ।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আরো বলেন, বাঘ সংরক্ষণে সরকার গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। বাঘসহ সুন্দরবনের অন্যান্য বন্য প্রাণীর অবাধ বিচরণ ও প্রজননের উদ্দেশ্যে বনের ৫৩.৫২ শতাংশ এলাকাকে রক্ষিত এলাকা ঘোষণা করে সেখান থেকে সব ধরনের বনজসম্পদ আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাঘ-মানুষের দ্বন্দ্ব হ্রাসে লোকালয়সংলগ্ন এলাকায় ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ নাইলনের ফেন্সিং তৈরি করা হচ্ছে। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সময় বাঘ ও অন্যান্য বন্য প্রাণীর আশ্রয়ের জন্য বনের ভেতরে ১২টি মাটির উঁচু কিল্লা-ডিবি নির্মাণ করা হয়েছে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তিনি বলেন, বাঘের আক্রমণে নিহত ব্যক্তির পরিবারকে তিন লাখ টাকা এবং মারাত্মক আহত ব্যক্তিকে এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রদান করা হচ্ছে। বাঘসংক্রান্ত অপরাধ উদঘাটনে তথ্য প্রদানকারীকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা সম্মানী প্রদান করা হচ্ছে। লোকালয়ে চলে আসা বাঘকে ফের বনে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে ৪৯টি ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে এবং টিমের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বাঘ সংরক্ষণে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রতিবছর বিশ্ব বাঘ দিবস পালনসহ বিভিন্ন গণসচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ অব্যাহত রয়েছে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি নিঃসন্দেহে দেশের সবার জন্য আনন্দদায়ক ও তাৎপর্যপূর্ণ সংবাদ। বাঘ যেহেতু অতি বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী এবং বাঘের জন্য এখনো বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান, সেহেতু বাঘ সংরক্ষণে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। শুধু সুন্দরবন নয়, আমরা শালবন বাঁচানোর উদ্যোগ নিয়েছি। ৪১ হাজার একর শালবন ছিল, সেটা কমতে কমতে এখন ২০ হাজার একরে চলে এসেছে। তবে আমার চেষ্টা থাকবে আমি কতটুকু বাড়াতে পারি, সেখানে আপনাদের সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সংবাদ সম্মেলনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম এ আজিজ বলেন, বাঘের প্রজননের জন্য সুন্দরবনের অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। আগামীতে বাঘের সংখ্যা আরো বাড়বে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আইইউসিএন বাঘকে বাংলাদেশে অতি বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ২০১০ সালে ১৩টি টাইগার রেঞ্জ কান্ট্রির মধ্যে বর্তমানে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, রাশিয়া, চীন থাইল্যান্ড, মায়ানমার, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এই ১০টি দেশে বাঘ রয়েছে। অবশিষ্ট তিনটি দেশ ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও লাওসের বনাঞ্চল থেকে বাঘ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিশ্বব্যাপী বর্তমানে বাঘের সংখ্যা মাত্র তিন হাজার ৮৪০টি।</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p> </p>