<p>রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামালকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এই আদেশ জারি করা হয়। এই আদেশের প্রায় এক মাস পরও তা অমান্য করে ডিজি পদে বহাল তবিয়তে কাজ করে যাচ্ছেন এই কর্মকর্তা।</p> <p>ওএসডি করা সমাজসেবার ডিজি ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল অফিস করার কথা কালের কণ্ঠ’র কাছে স্বীকার করেছেন। ওএসডি হওয়ার পর কিভাবে কাজ করছেন—জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে আমার অফিস করার মৌখিক নির্দেশ আছে। ওই নির্দেশে কাজ করে যাচ্ছি।</p> <p>মৌখিক নির্দেশ কতটা যৌক্তিক—এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে আদেশ হলেও দায়িত্বে থাকা মন্ত্রণালয় থেকে আমার অবমুক্তি না হওয়া পর্যন্ত অফিস করতে পারি। তা ছাড়া এখানে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।</p> <p>জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যদি অন্যত্র আপনাকে দায়িত্ব দেয়, তাহলে কী করবেন—এমন প্রশ্নের জবাবে আবু সালেহ মোস্তফা কামাল বলেন, তখন ভারপ্রাপ্ত ডিজির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করে অবমুক্তি নিয়ে সেখানে যোগদান করব।</p> <p>তাহলে ওএসডি আদেশের পর কেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেননি—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় অবমুক্ত করেনি।</p> <p>সমাজসেবা ডিজির ওএসডির প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, তাঁর নতুন পদায়ন করা পদ হচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রথম গ্রেডের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। জারি করা এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। অর্থাৎ যেদিন আদেশ জারি করা হয়েছে, ওই তারিখ থেকে কার্যকর। </p> <p>অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অভিযোগ করেছেন, রাষ্ট্রপতির আদেশে করা প্রজ্ঞাপনের নির্দেশ মানছেন না ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল। তিনি দপ্তরে নিয়মিত আসছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে সভা করছেন। নানা কাজের নির্দেশনা দিচ্ছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ছুটির দিনও অধিদপ্তরের অর্থ ব্যয়ে তিনি দাপ্তরিক সফরে উত্তরবঙ্গে গেছেন। </p> <p>মৌখিক নির্দেশে দায়িত্ব পালনের কথা জানালেও এখনো ডিজি হিসেবে কাজ করছেন কাগজে-কলমে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল সই করা এক অফিস আদেশে সমাজসেবা অধিদপ্তরের চার পরিচালককে পদায়ন করেছেন। </p> <p>গত মঙ্গলবার অধিদপ্তর, ঢাকা ও এর অধীন বিভাগ এবং জেলা কর্মকর্তাদের নিয়ে মাসিক সমন্বয় সভা করেছেন। ওই সভায় প্রশাসন ও অর্থ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন, প্রতিষ্ঠান, সামাজিক নিরাপত্তাসহ অধিশাখাগুলোর কার্যক্রম এবং অন্যান্য অনেক বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন বিদায়ি ডিজি। এর আগে গত ১৯ সেপ্টেম্বর বদলি হওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তাকে নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেন। </p> <p>এ বিষয়ে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও মতামত পাওয়া যায়নি। মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাঁরা মতামত দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে নাম না প্রকাশ করার শর্তে একজন কর্মকর্তা জানান, অধিদপ্তরের ডিজি ওএসডি হওয়ার পরও নড়ছেন না। দায়িত্ব চালিয়ে যাচ্ছেন। মন্ত্রণালয়েও বৈঠক করছেন।   </p> <p>আবু সালেহ মোস্তফা কামালের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অধিদপ্তরের নানা অনিয়ম, গোপন নথি গায়েব ও আলামত নষ্ট করতে ওএসডি হওয়ার পরও তিনি মন্ত্রণালয়ের মৌখিক নির্দেশের কথা বলে শুধু রুটিন দায়িত্ব নয়, আগের মতো দপ্তরের সব কাজ করছেন। বাস্তবে রাষ্ট্রপতির আদেশের পর মৌখিক নির্দেশে এটা কোনো কর্মকর্তা করতে পারেন না। </p> <p>এ ব্যাপারে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আদেশ জারি করার পর কোনো কর্মকর্তা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বা দপ্তরে থাকতে পারবেন না। আর ওএসডি এক ধরনের শাস্তি। জারি করা প্রজ্ঞাপনে অবিলম্বে কার্যকর বলা থাকলে তাঁকে দ্রুত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যোগদান করা উচিত। কারণ জনপ্রশাসন থেকে তাঁর বেতন-ভাতা হবে, এখানে তাঁকে হাজিরা দিতে হবে। কিন্তু আবু সালেহ মোস্তফা কোনো অবস্থায় আগের দপ্তরে দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। </p> <p>জানা গেছে, আলোচিত ৪৬৩ জন ইউনিয়ন সমাজকর্মী নিয়োগে নানা অনিয়মের কারণে এ প্রক্রিয়াটি তিনবার স্থগিত হয়। পরে দ্বিগুণ পদ বাড়িয়ে ৯৬২ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী মো. নুরুজ্জামান, মন্ত্রণালয়ের সচিব ও সমাজসেবার ডিজি—এই তিনজনের বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনসহ অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। </p> <p>বিদায়ি ডিজির বিরুদ্ধে অনিয়মের মধ্যে ৯০৭ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে কারসাজি করার অভিযোগ আছে। এ ছাড়া সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রকল্প—ভুয়া পেশাজীবী সাজিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, সমাজসেবা অধিদপ্তরে মাত্র ছয় মাসে অফিস খরচ সাড়ে আট কোটি টাকা দেখানো, ভবন মেরামতের নামে কোটেশনের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া, নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে গত ১৭ সেপ্টেম্বর তাঁকে ওএসডি করে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।</p> <p>ওএসডি হওয়ার পর এসব আলামত নষ্ট করতেই নিয়মিত অফিস করার অভিযোগ রয়েছে ওএসডি করা এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এসব অনিয়মের অভিযোগে ওএসডি হওয়ার পরও দপ্তরের দায়িত্ব পালন করায় গত ২৬ সেপ্টেম্বর তাঁর বিরুদ্ধে অধিদপ্তরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। ছাত্র-জনতার ব্যানারে ওই মানববন্ধনে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা কর্মকর্তাদের বিচার দাবি করা হয়।</p> <p> </p> <p> </p> <p> </p>