<p><em><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রথম ধাপে নেতৃত্ব দেওয়ার মাধ্যমে আওয়ামী সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠেন নুরুল হক নুর। ফলে বিভিন্ন সময় স্বৈরাচারী সরকারের নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে তাঁকে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগেও তাঁকে কারাবরণ এবং রিমান্ডে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। ৬ আগস্ট মুক্তি পান তিনি। এরই মধ্যে তাঁর দল গণ অধিকার পরিষদও রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পেয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর পরিববর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সংস্কার, সংবিধান ও নির্বাচন নিয়ে কালের কণ্ঠ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">র সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন তাসীন মল্লিক</span></span></span></span></em></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কালের কণ্ঠ : ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতি একটি নতুন মোড় নিয়েছে। বিষয়টিকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নুরুল হক নুর : শেখ হাসিনার দীর্ঘ দেড় দশকের একদলীয় শাসনে রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে জনগণ কোনো কিছুর প্রতিকার পায়নি। সব কিছুই এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে গিয়েছিল। নির্যাতন, নিপীড়ন, নিষ্পেষণ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য মানুষ একটি ধারাবাহিক লড়াই করেছে। রাজনৈতিক দলগুলোও দীর্ঘ ১৫ বছর স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করেছে, যার সফল পরিণতি ছিল গত ৫ আগস্ট। এখানে হয়তো ছাত্ররা নেতৃত্বে ছিল। কিন্তু পেছনে আপামর জনসাধারণ চূড়ান্ত লড়াইটা করেছে। এখন মানুষ পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন রাজনীতি চায়। নতুন সামাজিক চুক্তি চায়, নতুন নেতৃত্ব চায়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কালের কণ্ঠ : অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। এই সরকারকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নুরুল হক নুর : সাধারণ মানুষের একটা প্রত্যাশা ছিল</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শেখ হাসিনার পতনের পর দেশটা ভালো চলবে। মানুষ ভালো থাকবে। তবে সব কিছু পর্যালোচনা করলে দেখা যাচ্ছে, ৫ আগস্টের পর গত দুই মাসে মানুষের প্রত্যাশা কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে। জনগণ নিত্যপণ্য কিনতে গিয়ে উচ্চমূল্যের কারণে হতাশ হচ্ছে। প্রতিনিয়িত দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে যুদ্ধ করছে। এগুলো সরকার নিয়ন্ত্রণ করবে, এটি আমাদের প্রত্যাশা। যদিও দুই মাস এই সরকারের কাজ মূল্যায়নের জন্য যথেষ্ট সময় নয়। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনে দেশের রাজনীতি, নির্বাচনব্যবস্থা, প্রশাসন, বিচার বিভাগ ধ্বংস হয়ে গেছে। মানুষের প্রত্যাশা, রাষ্ট্রের আমূল সংস্কার হবে। বিশেষত প্রশাসন, বিচার বিভাগ ও রাজনীতির সংস্কার হবে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এটিই জনগণের প্রত্যাশা। সংস্কার উদ্যোগ নেওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকার হয়তো সে জায়গায় কিছুটা এগিয়েছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কালের কণ্ঠ : অভ্যুত্থানের পর দেশে নতুন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গণ অধিকার পরিষদ দেশের জনগণের উদ্দেশে কী বার্তা দিতে চায়?</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নুরুল হক নুর : আন্দোলন যেহেতু তরুণদের নেতৃত্বে হয়েছে, মানুষের প্রত্যাশা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তরুণদের মাধ্যমে আগামীর রাষ্ট্র পরিচালনা হোক। মানুষ বলছে, তারা পুরনো রাজনৈতিক জঞ্জালের মধ্যে আর যেতে চায় না। পুরনো রাজনৈতিক দলগুলোকে জনগণ আর বিশ্বাস করতে চায় না। তাই একটি নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিকাশ ছাড়া জনগণের মুক্তি হবে না। মানুষ পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন রাজনীতি চায়। নতুন সামাজিক চুক্তি চায়, নতুন নেতৃত্ব চায়। সে ক্ষেত্রে আমরা তারুণ্যের প্রতিনিধিত্বশীল রাজনৈতিক দল। আমরা বিকল্প নেতৃত্বকে জাতির সামনে হাজির করব। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কালের কণ্ঠ : দায়িত্ব গ্রহণের পর অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছে। গণ অধিকার পরিষদের প্রতিনিধিরাও সেখানে অংশ নিয়েছিলেন। সরকারের প্রতি আপনাদের কী বার্তা ছিল?</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নুরুল হক নুর : অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আমাদের দুই দফা আলাপ হয়েছে। ১২ আগস্টের সংলাপে সরকার কিভাবে স্থিতিশীল হতে পারে সে বিষয়ে কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছিলাম। একই সঙ্গে দেড় দশক ধরে যারা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহবান জানিয়েছিলাম। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যারা গণহত্যার নির্দেশ দিয়েছে ও মদদ দিয়েছে, তাদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দ্বিতীয় দফায় সরকার ছয়টি সংস্কার কমিশনের বিষয়ে আলোচনার জন্য ডেকেছিল। কিন্তু সেদিন আসলে বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ পাওয়া যায়নি। এর পরও আমরা বলেছি, সরকারের যে কাঠামো তা আসলে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যথেষ্ট নয়। সে জন্য আমরা বলেছি, যেহেতু এটি একটি অভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকার, তাই এই সরকারের কাঠামোতে সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে একে জাতীয় সরকারে রূপ দেওয়া যেতে পারে। মানুষ রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য এই সরকারকে দায়িত্ব দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জনগণের মৌলিক আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়েছিল বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক সমাজের, সে প্রত্যাশা গত ৫০ বছরে কোনো রাজনৈতিক দল পূরণ করেনি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কালের কণ্ঠ : সংলাপ ছাড়াও একাধিক জায়গায় জাতীয় সরকার গঠনের আহবান আপনারা জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানতে চাই।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নুরুল হক নুর : অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আমরা আহবান জানিয়েছিলাম জাতীয় ঐকমত্যের সরকার প্রতিষ্ঠার। কারণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটি রাজনৈতিক পরিবর্তনের যে গণ-আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে, তা পূরণে রাজনৈতিক ভিত্তি লাগবে, জনভিত্তি লাগবে। এই সরকার যেহেতু রাজনৈতিক কোনো সরকার নয়, তাহলে এই সরকারের রাজনৈতিক ভিত্তি কী হবে? রাজনৈতিক ভিত্তি হতে পারে রাজনৈতিক দলকে সরকারে যুক্ত করা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কালের কণ্ঠ : গণ অধিকার পরিষদ কী কী সংস্কার প্রত্যাশা করে? অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সংলাপে কী কী প্রস্তাবনা দিয়েছেন?</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নুরুল হক নুর : সব সংস্কার এই সরকার করতে পারবে না। এই সরকারকে একটি নির্বাচন করতে হবে। হয়তো সরকার দেড় থেকে দুই বছর মেয়াদে সংস্কারের নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত একটি নির্বাচন দিতে হবে। প্রথমত আমরা বলেছি, জনগণ যে ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে বিজয়ী হয়েছে, তার মূল উৎপাটন করতে আইনগত পদক্ষেপ নিতে হবে। ফ্যাসিবাদের সঙ্গে যারা জড়িত, প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনতে হবে। ফ্যাসিবাদী রাজনীতি যারা করেছে তাদের নিষিদ্ধ করতে হবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দ্বিতীয়ত, ফ্যাসিস্ট শক্তি যেসব রাষ্ট্রকাঠামো ধ্বংস করেছে, রাষ্ট্রের যেসব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে, সেগুলো পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিতে হবে। প্রশাসন ও বিচার বিভাগের ঢালাও সংস্কার করতে হবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একই সঙ্গে কিছু মৌলিক সংস্কারের কথা বলেছি; যেমন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একই ব্যক্তি যেন দলীয় প্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধান না হন। জাতীয় সংসদকে চার বছর মেয়াদি করার প্রস্তাব করেছি। সংসদকে কার্যকর করার জন্য সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনব্যবস্থার পক্ষে আমরা প্রস্তাব রেখেছি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কালের কণ্ঠ : সংবিধান সংস্কার নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও প্রতিষ্ঠান ভিন্ন ভিন্ন মত দিচ্ছে। এ বিষয়ে গণ অধিকার পরিষদের বক্তব্য কী?</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নুরুল হক নুর : আমাদের সংবিধানটি ১৯৭২ সালে প্রণীত হয়েছিল। অথচ বাহাত্তরের সংবিধান তিয়াত্তর সালেই দুইবার সংশোধন করা হয়েছে। বাহাত্তরের সংবিধানে এ দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হয়নি। আমরা মনে করি, অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণে যে সরকার গঠিত হয়েছে, তাদের জনভিত্তি রয়েছে সংবিধান বাতিল করে নতুন সংবিধান রচনা করার।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সভাপতি, গণ অধিকার পরিষদ</span></span></span></span></p>