<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দেশে শিক্ষাক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকরা। এমন তথ্য জানিয়ে শিক্ষকরা বলছেন, এসব মাদরাসার প্রায় ৪৪ হাজার শিক্ষক গত ৪০ বছর কোনো বেতন-ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এর পরও ধর্মের প্রতি তাঁদের সহানুভূতি থেকেই তাঁরা বিনা বেতনে শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন।  </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দেশে চালু থাকা শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে অন্যতম সাধারণ শিক্ষা ও মাদরাসা শিক্ষা। মাদরাসার ইবতেদায়ি শিক্ষা সাধারণ শিক্ষার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সমমান, কিন্তু বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে সাধারণ শিক্ষা, এমনকি মাদরাসার দাখিল পর্যায় থেকে শিক্ষা এগিয়ে গেলেও চরম অবহেলিত ইবতেদায়ি শিক্ষা। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শিক্ষক সংগঠনগুলো বলছে, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার সংখ্যা আট হাজার ৯৫৬। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগে শিক্ষকদের জমা দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই মাদরাসার সংখ্যা সাত হাজার ৪৫৩। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) ওয়েবসাইটে চার হাজার ৩১২টি মাদরাসার নাম এন্ট্রি করা। এর মধ্যে মাত্র এক হাজার ৫১৯টি মাদরাসা নিবন্ধিত। এসব মাদরাসার ছয় হাজার ৭৬ জন শিক্ষক বর্তমানে সরকার থেকে নামমাত্র ভাতা পান। চলতি অর্থবছর থেকে সহকারী শিক্ষকরা মাসে ভাতা পান তিন হাজার ৩০০ টাকা এবং ইবতেদায়িপ্রধানরা পান তিন হাজার ৫০০ টাকা। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শিক্ষকদের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিটি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষকের পদ পাঁচটি। এসব মাদরাসার প্রায় ৪৪ হাজার শিক্ষক গত ৪০ বছর কোনো বেতন-ভাতা না পেয়ে চরম মানবেতর জীবন যাপন করছেন। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হাবিবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা এমপিওভুক্তির ব্যাপারে সরকারের নীতিগত অনুমোদন রয়েছে। অর্থ বিভাগ থেকেও সম্মতি পাওয়া গেছে। এরপর অর্থ বিভাগের পরামর্শক্রমে আমরা একটি নীতিমালা তৈরি করেছি। এখন সেই নীতিমালার আলোকে একটি সফটওয়্যার তৈরির কাজ চলছে। সেটা তৈরি হলে অনলাইনে আবেদন চাওয়া হবে। যেসব মাদরাসা আবেদনে চাওয়া মানদণ্ড পূরণ করতে পারবে, তারাই এমপিওভুক্তি পাবে। চলতি অর্থবছরই ইবতেদায়ি মাদরাসার এমপিওভুক্তি শুরু হবে বলে আশা করছি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সূত্র জানায়, দেশে শুরুতে মাদরাসা শিক্ষার প্রাথমিক স্তর ফোরকানিয়া ইবতেদায়ি মাদরাসা নামে পরিচালিত হয়ে আসছিল। ১৯৮৪ সাল থেকে তা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা নামে সরকারি মঞ্জুরি পাওয়া শুরু করে। তাদের শিক্ষার্থীরাও সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে আসছে। ১৯৯৪ সালে একই পরিপত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে গড়ে ওঠা রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকরা মাসে ৫০০ টাকা ভাতা পেতে শুরু করেন। রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন ধাপে ধাপে বাড়তে থাকে। ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করা হয়। তাদের শিক্ষকরাও সরকারি হয়ে যান। তবে রেজিস্ট্রি করা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসাগুলোর শিক্ষকদের ভাতা বাড়িয়ে এক হাজার ২০০ টাকা করা হয়। এরপর ভাতা বাড়ানো হলে সহকারী শিক্ষকরা পান দুই হাজার ৩০০ টাকা। তবে প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের দেওয়া হয় দুই হাজার ৫০০ টাকা। সর্বশেষ চলতি অর্থবছরে তাঁদের বেতন বাড়িয়ে তিন হাজার ৩০০ এবং তিন হাজার ৫০০ টাকা করা হয়। অথচ বর্তমানে সাধারণ শিক্ষায় সরকারি প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা ১১তম গ্রেডে ১৯ হাজার টাকারও বেশি বেতন পান। রয়েছে উৎসব ভাতাসহ অন্য সব সুবিধা। এ ছাড়া ৫ শতাংশ হারে বেতন বাড়ছে তাঁদের। সহকারী শিক্ষকরা ১৩তম গ্রেডে ১৭ হাজার ৫০০ টাকা বেতন পান। উৎসব ভাতা ও বার্ষিক ৫ শতাংশ হারে বেতন বৃদ্ধি তো আছেই।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শিক্ষকরা বলছেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো মূলত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে। অন্যদিকে মাদরাসা শিক্ষার প্রাথমিক স্তর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় না নেওয়ার কারণেই বিপাকে পড়ছে। ২০০৩ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় স্বতন্ত্র হিসেবে যাত্রা করলেও মাদরাসার এই স্তর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে থেকে যায়। বর্তমানে তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের অধীনে রয়েছে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকরা কঠোর আন্দোলনে নামেন। তখন সরকার মাদরাসাগুলো এমপিওভুক্তকরণের লক্ষ্যে তথ্য যাচাই-বাছাইয়ে একটি কমিটি করে। এমনকি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইবতেদায়ি মাদরাসা এমপিওভুক্তির জন্য নীতিগত অনুমোদন দেন। এরপর এমপিওভুক্তির লক্ষ্যে ইবতেদায়ি মাদরাসার তথ্য কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগে জমা হলেও অজানা কারণে আর অগ্রগতি হয়নি। পরে একাধিকবার আন্দোলনে নামেন শিক্ষকরা। মন্ত্রী-সচিবদের আশ্বাসে আবার আন্দোলন স্থগিতও করেন, কিন্তু তাঁদের ভাগ্যে কোনো পরিবর্তন আসেনি। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দেশে আলিম, ফাজিল ও কামিল স্তরের আট হাজার ২২৯টি মাদরাসা রয়েছে। এসব মাদরাসার সঙ্গে যেসব সংযুক্ত ইবতেদায়ি মাদরাসা রয়েছে, সেগুলো আবার আলাদা। তাদের শিক্ষকরা অন্যান্য স্তরের মতো এমপিওভুক্ত। তাঁরা সরকারি স্কেলে মূল বেতন, এক হাজার টাকা বাড়িভাড়া এবং ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান, কিন্তু স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকদের ভাগ্যে এসব সুযোগ-সুবিধার কোনোটিই জোটেনি।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষা বাস্তবায়ন কমিটির মহাসচিব মো. আরিফ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">৪০ বছর ধরে আমাদের শিক্ষকরা দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। মাদরাসা অধিদপ্তরে গেলে বলে ফাইল মন্ত্রণালয়ে। আবার মন্ত্রণালয় অজুহাত দেয় ফাইল আরেক জায়গায়। আমরা আর কত ঘুরব? আমরা সরকারের কাছে এই বৈষম্যের নিরসন চাই।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"> </p>