<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসনে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয় কৃষিবিদ ড. আব্দুর রাজ্জাককে। সে সময় চাকরি ছেড়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়লাভ করেন তিনি। পরে তাঁকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০০৮ সালে এমপি হয়ে খাদ্যমন্ত্রী, ২০১৪ সালে এমপি, ২০১৮ সালে এমপি হয়ে কৃষিমন্ত্রী এবং ২০২৪ সালে আবারও এমপি নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক থেকে মনোনীত হন প্রেসিডিয়াম সদস্য। মন্ত্রী এবং দলের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তি হয়ে নিজ এলাকায় শুরু করেন স্বজনপ্রীতির সঙ্গে একচ্ছত্র ক্ষমতার দাপট। সাবেক এই মন্ত্রী এবং তাঁর আত্মীয়-স্বজনের বিরুদ্ধে রয়েছে দখল-দুর্নীতি আর অবৈধ সম্পদ অর্জনের সীমাহীন অভিযোগ। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তাঁর ক্ষমতার দাপট থেকে রেহাই পাননি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও। স্বজনপ্রীতি এবং নিজ দলে গ্রুপিং তৈরির কারণে নির্বাচনী এলাকায় তাঁর জনপ্রিয়তা নামতে নামতে তলানিতে ঠেকে। এদিকে সাবেক এই মন্ত্রীর গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়লে নির্বাচনী এলাকায় আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আলোচিত সিদ্দিকী ও খান পরিবারের কর্তৃত্ব হারানোর পর অদ্বিতীয় হয়ে ওঠেন ড. আব্দুর রাজ্জাক। তাঁর নির্দেশ ও আদেশেই চলত এখানকার সব কর্মকাণ্ড। তাঁর একক কর্তৃত্বের কারণে জেলা, ধনবাড়ী ও মধুপুর উপজেলায় আওয়ামী লীগ খণ্ডবিখণ্ড হয়ে পড়ে। পছন্দের লোকদের পদে বসাতে ত্যাগী নেতাকর্মীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েন। এ নিয়ে সংঘর্ষ ও মামলা-মোকদ্দমাও হয়েছে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ড. রাজ্জাকের নির্বাচনী এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর ক্ষমতার দাপটে তটস্থ থাকত এলাকার সাধারণ মানুষ। মুখ বুজে তাঁর অন্যায় অবিচার সহ্য করত ভুক্তভোগীরা। প্রতিবাদ করলে হামলা-মামলার শিকার হতে হতো। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সাবেক এই মন্ত্রী আওয়ামী লীগকে স্বজনপ্রীতির আখড়া বানিয়েছিলেন। এলাকার ঠিকাদারির সব কাজ পেতেন তাঁর পকেটের লোকজন। এসব বাস্তবায়ন করতেন তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী মাকসুদুর রহমান মাসুদ। অস্ট্রেলিয়ায় মাসুদের বাড়ি কেনা এবং দুর্নীতি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এদিকে গত ১৫ সেপ্টেম্বর সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের অবৈধ সম্পদ ও দুর্নীতি নিয়ে দুদকে লিখিত অভিযোগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অভিযোগে বলা হয়েছে, ধনবাড়ী উপজেলার মুর্শিদি এলাকায় জায়গা কিনে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে সুইমিংপুলসহ বিলাসবহুল অট্টালিকা নির্মাণ করেছেন তিনি। আমেরিকায় রয়েছে তাঁর একাধিক পেট্রল পাম্প, সুপারশপসহ অন্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। ধনবাড়ীর ভাইঘাট পালবাড়ী এলাকার মতি ড্রাইভারের ছেলে রাব্বির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা তিনি বিদেশে পাচার করেছেন। কৃষিমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি কৃষকদের চাষের জন্য রাইস হারভেস্টার দেন, যার বাজারমূল্য ১৫-১৬ লাখ টাকার কম। অথচ এসিআই কম্পানির মাধ্যমে এসব হারভেস্টার ৩৭ লাখ টাকা করে কিনেছেন। আবার একই মেশিন বারবার বিক্রি দেখিয়েছেন। এসব লুটপাটের খবর একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। রাজ্জাক ক্ষমতার অপব্যবহার করে গত ১৫ বছর ঐতিহ্যবাহী মধুপুরের শাল ও গজারির বন উজাড় করেছেন। একই সঙ্গে নিয়োগ ও তদবির বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল অর্থ কামিয়েছেন। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলেন, আব্দুর রাজ্জাক এবং তাঁর আত্মীয়-স্বজন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। সাবেক মন্ত্রীর মদদে কোটি কোটি টাকায় মালিক হয়েছে তাঁর ঘনিষ্ঠজনরা। নিজ ইউনিয়ন মুশুদ্দীতে অসুস্থ বৃদ্ধ মামা নান্নু মাস্টারকে চেয়ারম্যান এবং গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহোদর ভাই কায়সারকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান বানিয়েছেন। পার্শ্ববর্তী পাইস্কা ইউনিয়নে দুঃসময়ের ত্যাগী নেতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান নৌকা প্রতীক পেলেও তাঁকে ফেল করিয়ে খালাতো ভাই বাবুলকে চেয়ারম্যান বানিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া আরেক খালাতো ভাই হারুনার রশিদ হিরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উপজেলা চেয়ারম্যান হন। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ধনবাড়ীর কৃষকরা জানান, চেয়ারম্যান কায়সার মন্ত্রী ভাইয়ের প্রভাব খাটিয়ে এলাকাবাসীর কাছ থেকে জমি কেনার কথা বলে জমি নিয়ে আর টাকা দেননি। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি। এ নিয়ে মানববন্ধনও করা হয়েছে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মেহেদী হাসান রনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সাবেক মন্ত্রী ড. রাজ্জাক ভিন্নমত সহ্য করতে পারতেন না, সেটা দলের ভেতরে কিংবা বাইরে। আমাকে ঢাকায় ডিবি পুলিশ দিয়ে হয়রানি করেছেন। আমাকে মেরে ফেলার জন্য আমার বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর করা হয়েছে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ধনবাড়ী উপজেলার বীরতারা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শফি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ধনবাড়ীতে তিনি রাজনীতিকে বিরাজনীতিকরণ করে আত্মীয়দের দিয়ে দলসহ সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর মতের বাইরে গেলে হামলা করতেন, মামলা দিতেন। অনিয়মই ছিল তাঁর নিয়ম। জায়গাজমি দখল, কৃষি মন্ত্রণালয়ে ঠিকাদারিসহ সব কিছু করত তাঁর স্বজনরা। আমরা সাবেক মন্ত্রী এবং তাঁর দুর্নীতিবাজ আত্মীয়-স্বজনের বিচার দাবি করছি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ধনবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মীর ফারুক হোসেন ফরিদ বলেন, সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক তাঁর পরিবারের বাইরে কিছু চিন্তা করতে পারতেন না। তাঁর আত্মীয়দের সুযোগ দিতে যা করা দরকার তা-ই করতেন। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ধনবাড়ী উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ এম আজিজুর রহমান বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ড. আব্দুর রাজ্জাক অসচ্ছল ঘরের সন্তান ছিলেন। কিন্তু তিনি এমপি থেকে মন্ত্রী হয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা লুটপাট করেছেন, গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। দেশের বাইরেও অর্থ পাচার করেছেন। তাঁর আত্মীয়-স্বজনেরও বিপুল সম্পদের মালিক করেছেন। আমরা বর্তমান সরকারের কাছে দাবি করছি, সাবেক এই মন্ত্রীর সব অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান করে দ্রুত ক্রোক করা হোক।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ধনবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের ভাই কায়সার বর্তমানে পলাতক। তাঁর বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ পেয়েছিলাম। সেই জমি উদ্ধার করে প্রকৃত মালিককে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। আরো অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p>