<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেল বর্তমানে ঘাড়ের ওপর বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যানবাহনস্বল্পতায় এই টানেল বেশির ভাগ সময় ফাঁকা থাকে। নির্মাণের আগে যে জরিপ সমীক্ষা চালানো হয় তাতে বলা হয়েছিল, টানেলটি চালু হলে দৈনিক ২০ হাজারের বেশি যানবাহন চলাচল করবে। অথচ বর্তমানে দৈনিক গড়ে যানবাহন চলাচল করছে মাত্র সাড়ে চার হাজার। এতে দিনে গড়ে টোল আদায় হচ্ছে ১২ লাখ টাকার মতো। বিপরীতে বার্ষিক খরচ ধরে রক্ষণাবেক্ষণে প্রতিদিন খরচ হচ্ছে ৩৭ লাখ টাকা। অর্থনৈতিক সংকটের এই সময় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চীন থেকে নেওয়া ছয় হাজার ৭০ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধে বিপাকে পড়েছে সরকার। অন্য প্রকল্পে নেওয়া ঋণের অর্থ থেকে পরিশোধ করতে হচ্ছে এই ঋণ ও সুদ। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে শুরু হয়েছে টানেলের জন্য নেওয়া চীনা ঋণের কিস্তি পরিশোধ। ওই বছর ১৬০ কোটি টাকা ঋণ ও সুদ পরিশোধ করা হয়। গত অর্থবছরে প্রায় ২২০ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। ফলে ঋণ পরিশোধে বর্তমানে সরকারকে ঋণ করতে হচ্ছে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শুধু কর্ণফুলী টানেলই নয়, বড় অঙ্কের ঋণ নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে পদ্মা রেল সেতু, মেট্রো রেল, দোহাজারী-ঘমধুম রেলসহ বড় বড় মেগাপ্রকল্প। এসব প্রকল্প যে উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছিল তা সফল হয়নি। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের পর যে ফলাফল পাওয়ার কথা, তার ছিটেফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না। ফলে এসব প্রকল্পে ঋণ করে আনা বড় বিনিয়োগ জলে গেছে। এসব প্রকল্প থেকে যে আয় হচ্ছে তার চেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে পরিচালনা বাবদ। ফলে সরকারকে একরকম ঋণ করেই ওই সব ঋণের অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে, যা রিজার্ভ সংকটের এই সময় অন্তর্বর্তী সরকারকে বিপাকে ফেলেছে। আবার এর ফলে প্রতিবছর বাজেট সহায়তা হিসেবে ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ করতে হচ্ছে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শুধু গত অর্থবছরেই বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে সরকারকে ২৩ হাজার কোটি টাকা বাজেট সহায়তার নামে ঋণ নিতে হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে নিতে হয়েছে সাড়ে ১৯ হাজার কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে বাজেট সহায়তা নিতে হয়েছে ২৬ হাজার কোটি টাকা। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এদিকে চলতি অর্থবছরে সরকারকে প্রায় সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ ও সুদ পরিশোধ করতে হবে। গত অর্থবছরে সরকারকে ঋণ ও সুদ বাবদ ৩.৩৫ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে পরিশোধ করতে হয়েছে ২.৬৭ বিলিয়ন ডলার। আগামী অর্থবছরে এই ঋণ পরিশোধের পরিমাণ পাঁচ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইআরডিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ, কর্ণফুলী টানেল ও মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের  মতো বেশ কিছু মেগাপ্রকল্পের গ্রেস পিরিয়ড শেষ হওয়ায় বাংলাদেশের ওপর এসব প্রকল্পের জন্য নেওয়া ঋণের আসল ও সুদ পরিশোধের চাপ ক্রমে বাড়ছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, মেট্রো রেল, শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের মতো মেগাপ্রকল্পগুলোর ঋণ পরিশোধ শুরু হলে চাপ আরো বাড়বে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বৈদেশিক ঋণ নিয়ে গবেষণা করা পরিকল্পনা কমিশনের এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশ বৈদেশিক ঋণ নেয় যে প্রকল্প থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আসবে বা ভালো রিটার্ন আসবে সেই প্রকল্পে। আর আমাদের দেশে রাজনৈতিক নেতাদের ইচ্ছামতো নেওয়া অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে বৈদেশিক ঋণ নেওয়া হয়। শতাধিক প্রকল্প আছে, যেগুলোতে বৈদেশিক ঋণ নেওয়া হয়েছে, কিন্তু প্রকল্পে তেমন কোনো আউটপুট নেই। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের এপ্রিলে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের জন্য চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ২.৬৬৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি হয়। ওই ঋণের পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ড শেষ হয়েছে গত এপ্রিলে। ফলে চলতি অর্থবছর থেকে এ ঋণের আসলের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে। ১৫ বছরে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। ২০২৬ সালের শেষে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য নেওয়া ১১.৩৮ বিলিয়ন ডলারের ঋণ পরিশোধ শুরু হবে। ২০ বছর মেয়াদের এ ঋণের জন্য প্রতিবছর ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি আসল পরিশোধ করতে হবে। একই সময় মেট্রো রেল ও শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের ঋণের আসল পরিশোধও শুরু হবে। তখন বার্ষিক আসল পরিশোধ পাঁচ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। এতে ২০২৬-২৭ অর্থবছরে ঋণ পরিশোধে বড় উল্লম্ফন ঘটবে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এসব ঋণের টেকসই হওয়াটা নির্ভর করছে বাংলাদেশের এসব মেগাপ্রকল্পের সুফল আদায় এবং স্থানীয় উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর সক্ষমতার ওপর। গত অর্থবছর থেকে আর্থিক হিসাবে যে ঘাটতি দেখা দিয়েছে, সেটি আগের মতো উদ্বৃত্তে আনার পথে ঋণের আসল পরিশোধ বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। একের পর এক বড় ঋণগুলোর গ্রেস পিরিয়ড শেষ হওয়ার কারণে আর্থিক হিসাবে আসল পরিশোধ আগামী দিনে বাড়তেই থাকবে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তাঁরা বলছেন, ঋণের আসল পরিশোধের চাপ মোকাবেলায় সরকারকে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে অর্থছাড় বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে। তবে আগামী বছরগুলোয় অর্থছাড় বাড়ানো গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হবে বলে উল্লেখ করেন তাঁরা।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ডলার সংকটের এই সময় বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ অর্থনীতিতে বড় ধরনের চাপ তৈরি করছে। সরকার কি ঋণ নিয়েই বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করবে, এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ঋণ নিয়ে ঋণ পরিশোধ করলে তো ঋণের বোঝা বাড়তেই থাকবে। এ ক্ষেত্রে ঋণগুলোর ব্যবহারে উৎপাদনশীলতা নিশ্চিত করতে হবে। ঋণ ব্যবহার করে রিটার্ন যাতে সময় মতো পাওয়া যায়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। আর বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে তো বৈদেশিক মুদ্রাই লাগবে। তাই বৈদেশিক মুদ্রা আসার ক্ষেত্রে যাতে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয়, সে জন্য পলিসিগুলো ঠিক রাখা দরকার। বৈদেশিক মুদ্রা না এলে তো পরিশোধে চাপ পড়বেই।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p>