<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মানিকগঞ্জ-৩ (সদর-সাটুরিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার আগ পর্যন্ত সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের তেমন পরিচিতি ছিল না এলাকায়। অল্প কয়েকজন জানত যে তিনি ঢাকা সিটি করপোরেশনের একসময়ের মেয়র কর্নেল (অব.) আব্দুল মালেকের ছেলে। রাজনীতিতে ছিলেন না বললেই চলে। অথচ ২০০৮ সালে হুট করে তিনি আওয়ামী লীগের টিকিট পেয়ে গেলেন। ওই সময় অনেকে অবাক হয়ে যায়।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="হুট করে এসে সব কুক্ষিগত করেন জাহিদ মালেক" height="216" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/10.October/23-10-2024/09099.jpg" style="float:left" width="345" />পরবর্তী সময়ে কোন যোগ্যতায় তাঁকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হলো, তা নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। গুঞ্জন রয়েছে, শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা এবং </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দরবেশ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> হিসেবে পরিচিত সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বিশেষ সখ্যের মাধ্যমে জাহিদ মালেকের এই উত্থান। সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী থাকাকালে গত ১৫ বছরে তিনি হয়ে ওঠেন মানিকগঞ্জের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর ব্যক্তি। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ নেতাকর্মীদের বাইরে রেখে জাহিদ মালেক ঘনিষ্ঠ ও অনুসারীদের নিয়ে গড়ে তোলেন নিজ বলয়। এসব লোকজন দিয়ে পরিবহন চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, বালু ব্যবসা, বিচার বাণিজ্য, জমি দখল থেকে সবজির আড়তের নিয়ন্ত্রণ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এমন অনেক অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন তিনি। গত ১৫ বছরে এসব থেকে কয়েক শ কোটি টাকা আয় করে নেন তিনি। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নাম প্রকাশ না করে আওয়ামী লীগের স্থানীয় এক নেতা জাহিদ মালেক সম্পর্কে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমি ১৯৬৭ সালে স্কুলছাত্র থাকা অবস্থায় ছাত্রলীগে যোগ দিই। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছি। পরবর্তী সময়ে নির্বাচনের মাধ্যমে জেলা আওয়ামী লীগে ছোটখাটো পদও পাই। কিন্তু জাহিদ মালেক সংসদ সদস্য হওয়ার পর আমাকে সরিয়ে দিতে চাপ দেওয়া হয়। মাস্তান ছেলেপুলে দিয়ে আমাকে অপমান করে। বাধ্য হয়ে আওয়ামী লীগ থেকে নীরবে সরে যাই।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, কর্মী, সমর্থক, সাধারণ মানুষ, সংশ্লিষ্ট ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৫ বছরে জাহিদ মালেক বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। ২০০৮ সালে প্রথম যখন তিনি সংসদ সদস্য হন, তারপর সর্বশেষ হিসাবে তাঁর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ১১ গুণ। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের অদূরে গড়ে তুলেছেন ১০ তলা বাণিজ্যিক ভবন, নিজ গ্রাম সদর উপজেলার গড়পাড়ায় ছেলের নামে শুভ্র সেন্টার, বিশাল বাগানবাড়ি। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এবং দেশের বাইরে তাঁর রয়েছে শত শত কোটি টাকার স্থাপনা ও সম্পদ। মানিকগঞ্জের বিভিন্ন খাত থেকে জাহিদ মালেক অবৈধভাবে হাতিয়ে নিয়েছেন কমপক্ষে ২০০ কোটি টাকা।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তথ্য মতে, মানিকগঞ্জের পরিবহন খাত ও বালুমহাল থেকে গত ১৫ বছরে জাহিদ মালেকের আয় হয়েছে কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকা। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাটুরিয়া ও আরিচা ফেরিঘাট হয়ে যত যানবাহন চলাচল করে তার সব কটি যেতে হয় মানিকগঞ্জ শহরের বাসস্ট্যান্ড হয়ে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে এই বাসস্ট্যান্ডে আসা প্রতিটি যানবাহন থেকে চাঁদা তোলা হতো শ্রমিক ও মালিক সমিতির নামে। গড়ে প্রতিটি গাড়ি থেকে চাঁদা আদায় করা হতো ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা। পরিবহনের এই চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে আনতে জাহিদ মালেক প্রথমেই নিজের লোক দিয়ে মালিক সমিতি ও শ্রমিক সমিতি গঠন করেন। বেশ কয়েকবার হাত ঘুরে সর্বশেষ চাঁদা আদায়ের দায়িত্ব পান জাহিদ মালেকের ঘনিষ্ঠ সহযোগী জাহিদুল ইসলাম। শুরুতে তাঁর রাজনৈতিক কোনো পরিচয় না থাকলেও পরে জাহিদ মালেকের প্রভাব ও সহযোগিতায় মানিকগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন তিনি।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মানিকগঞ্জ সদর ও সাটুরিয়া উপজেলায় রয়েছে চারটি বালুমহাল। এগুলো সরকারিভাবে ইজারা দেওয়া হয়। প্রতিবছর এই বালুমহাল থেকে কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকার বালু বিক্রি হয়। প্রথমবার সংসদ সদস্য হয়েই জাহিদ মালেক তাঁর লোকজন দিয়ে বালুমহালের ইজারাদারদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করতেন। পরে প্রভাব খাটিয়ে নিজের লোকজনের নামে ইজারা নিতে শুরু করেন। বালুমহাল পরিচালনায় তিনি নিয়োগ দেন গড়পাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফসার সরকারকে। অভিযোগ রয়েছে, পরিবহন চাঁদাবাজি থেকে জাহিদুল ইসলাম এবং বালু ব্যবসা থেকে আফসার সরকার শতকোটি আয় করে দিয়েছেন সাবেক মন্ত্রী জাহিদ মালেককে। একই সঙ্গে তাঁরাও  কমপক্ষে অর্ধশত কোটি টাকার মালিক বনে যান। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মানিকগঞ্জে সরকারি সব দপ্তরের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করতেন জাহিদ মালেকের নিজস্ব লোকজন। তাঁর ফুফাতো ভাই সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এবং সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইসরাফিল হোসেনসহ কয়েকজন ছিলেন এর মূলে। মানিকগঞ্জ পৌরসভা, এলজিইডি, উপজেলা পরিষদ, সড়ক ও জনপথ, গণপূর্ত বিভাগ, শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সব জায়গায়ই ছিল তাঁর পদচারণ। অভিযোগ রয়েছে, জাহিদ মালেককে ১০ শতাংশ হারে টাকা দিয়ে ঠিকাদারদের কাজ নিতে হতো। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অন্যের জমি দখল করে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে সাবেক এই স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। জানা গেছে, সাটুরিয়ার ধানকোড়া ইউনিয়নের কামতা মৌজায় নিজের ১৫ বিঘা জমি ভরাট করার সময় পাশের আরেকজনের ৭৮ শতাংশ জমিও ভরাট করে দখলে নেন তিনি। জমির মালিক খাদেমুল ইসলাম পিনু এ ব্যাপারে মামলাও করেন। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্বাস্থ্যমন্ত্রী থাকাকালে জাহিদ মালেক মানিকগঞ্জে জাগির ইউনিয়নের উকিয়ারায় সরকারি ওষুধ উৎপাদক প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগসের কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই উদ্যোগের আগেই জাহিদ মালেক উকিয়ারায় নিজের, স্বজনদের ও অনুসারীদের নামে ৩১ একর নিচু জমি কিনে নেন। পরে সেই জমির কিছুটা ভরাট করে সাবরেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে জমির দাম কয়েক গুণ বাড়ানোর পাঁয়তারা করেন। কিন্তু মানিকগঞ্জের তৎকালীন জেলা প্রশাসক (ডিসি) আব্দুল লতিফ এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানান যে এই স্থানে কারখানা স্থাপন করলে সরকারের প্রায় ১০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হবে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে জাহিদ মালেক তাঁর লোকজন দিয়ে ডিসির অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করান। তবে এতে কাজ হয়নি। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আউটসোর্সিংয়ে কর্মী নিয়োগে জাহিদ মালেকের টাকা আয়ের আরেকটি পথ ছিল। তাঁর হয়ে এই বিষয়টি দেখভাল করতেন আফসার উদ্দিন সরকার। মানিকগঞ্জ কর্নেল মালেক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও ২৫০ শয্যার সদর হাসপাতালে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রত্যেকের কাছ থেকে কমপক্ষে দুই লাখ টাকা করে নেওয়া হয়। আবার চাকরি স্থায়ী করার কথা বলে পাঁচ লাখ টাকা করে নেওয়া হয়।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এস এ জিন্নাহ কবির বলেন, জাহিদ মালেক এবং তাঁর পরিবার মানিকগঞ্জে রামরাজত্ব গড়ে তোলে। এমন কোনো খাত নেই, যেখান থেকে তারা অবৈধ উপায়ে অর্থ কামিয়ে নেয়নি। মাদক ব্যবসায়ী, ছিনতাইকারী, ডাকাতির সঙ্গে জড়িতদের নিয়ে গড়ে তুলেছিল পেটোয়া বাহিনী। এদের জন্য সাধারণ মানুষ কথা বলতে পারেনি।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) মানিকগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গির আলম বিশ্বাস বলেন, ক্ষমতায় আসার পর জাহিদ মালেক তাঁর দলের পছন্দের নেতাকর্মীদের নিয়ে একটি শক্তিশালী বলয় তৈরি করেন। পরে তাঁরাই বালুমহাল, পরিবহন খাত, টেন্ডারবাজিসহ সব খাত নিয়ন্ত্রণ করে কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেন। এই অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর থেকে জাহিদ মালেক বা তাঁর ঘনিষ্ঠ কাউকে মানিকগঞ্জে দেখা যায়নি। মুঠোফোনে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"> </p>