<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বরগুনা-১ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর অর্থ ও সম্পদ করাই ছিল দুরন্ত নেশা। ১৫ বছরে তিনি ও তাঁর সহযোগীরা হয়েছেন বিত্তশালী। ১৯৯১ থেকে ২০২৩ সালে সাতবার তিনি মনোনয়ন পেয়ে পাঁচবারই হন সংসদ সদস্য। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে হেরে যান। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জমি দখল : সদর উপজেলা পরিষদের সামনে জলাশয় ভরাট করে নতুন ভবন বানিয়েছেন শম্ভু। এলাকায় এটি সংসদ সদস্যের রংমহল হিসেবে পরিচিত। অভিযোগ আছে, জলাশয় ভরাট, রাস্তা নির্মাণ, ড্রেনেজ নির্মাণ ও ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করে দিয়েছে পৌরসভা। তাঁর ভবনের পাশে পুকুরের সৌন্দর্য বাড়াতে জেলা পরিষদ থেকে এক কোটি ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ নেন। নিজস্ব ঠিকাদার দিয়ে করানো ওই টাকার কাজ হয়েছে নামমাত্র। ২০২২ সালে টিআর প্রকল্প দিয়ে ওই পুকুর খননের জন্য দুই লাখ ৩১ হাজার ৮৩৩ টাকা বরাদ্দও নেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কিভাবে নিলেন ওই জমি : ১৯৬১-৬২ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ করে। এর দুই পাশের জমি পাউবোর। ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ২০০৯ সালে এমপি নির্বাচিত হলে তাঁর মায়ের মাধ্যমে ওই জমি ফেরত চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন। পরে প্রভাব খাটিয়ে সম্পূর্ণ বেআইনি পন্থায় ওই জমি লিজ নিয়ে নিজের দখলে নেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বরগুনা টাউন হল ব্রিজ পার হয়ে উত্তরে গেলেই রাস্তার পূর্ব পাশে দেয়াল দিয়ে ঘেরা এমপি শম্ভু তাঁর নিজের নামে এক শতাংশ এবং দুই মেয়ের নামে ২০ শতাংশ জমি বিধান চন্দ্র শীল কাছ থেকে কিনেছেন। জমির সব টাকা বুঝে পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে জমির মালিক বিধান চন্দ্র শীল বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মনে বড় কষ্ট।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমতলী পৌরসভার শেষ সীমান্তে চাওড়া মৌজায় ৫ শতাংশ জমি আমতলী পৌরসভার সাবেক মেয়র মতিয়ার রহমানের কাছ থেকে নামমাত্র দামে নিজ নামে কিনে নেন। এ ছাড়া বরগুনার তালতলী উপজেলার ৪২ নম্বর বড় নিশানবাড়ি মৌজার ৪০৪ নম্বর খতিয়ানে নিদ্রা এলাকায় রয়েছে ১০ একরেরও বেশি জমি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বরগুনার চালিতাতলী এলাকার ফারুক হোসেন বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তালতলী উপজেলার বড় নিশানবাড়িয়া মৌজার ১৫০ নম্বর খতিয়ানের জমি আমরা নিলামে কিনি। ২০২১-২২ সালের দিকে এমপি শম্ভু, তাঁর ছেলে সুনাম দেবনাথসহ তিনজনে প্রায় ১৪ একর জমির দলিল করেন। তাঁর এক উপজাতিকে দাঁড় করিয়ে এই জমির দলিল করে নেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সরকারি কর্মকর্তাকে মারধর : সরকারি কর্মকর্তারাও হয়রানির শিকার হতেন সংসদ সদস্যের কাছে। অভিযোগ রয়েছে, সংসদ সদস্য নিজে ফোন করে বিভিন্ন বিষয়ে তদবির করতেন, চাপ প্রয়োগ করতেন। তাঁর কথা না শুনলে ওই কর্মকর্তাকে বদলি করতে ঊর্ধ্বতনদের কাছে অভিযোগ দিতেন। ২০১৪ সালে বরগুনায় বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারে বিশ্বব্যাংকের নেওয়া ৩০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প ঘিরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল মালেককে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কিল-ঘুষি মারেন সংসদ সদস্য। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিভিন্ন পদে স্বজনরা : সংসদ সদস্যের স্ত্রী মাধবী দেবনাথ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। একমাত্র ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক। ছেলের চাচাশ্বশুর সুবল তালুকদার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ঘুষ বাণিজ্য : নিয়োগ, মনোনয়ন, নির্বাচন, উন্নয়ন, নলকূপ বরাদ্দ, টিআর, কাবিখা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হেন কোনো খাত নেই, যেখান থেকে টাকা খাননি শম্ভু। বেশি টাকা পেলে কম টাকার প্রার্থীকে ভুলে যেতেন অনায়াসে। আছে দখল, মারধর, পারিবারিকীকরণের অভিযোগও। ২০১৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জেলা আওয়ামী লীগ তাঁর বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির ২৪টি অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করে। ওই সংবাদ সম্মেলন থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবিরের নেতৃত্বে সংসদ সদস্য শম্ভুকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হলফনামা : ১৫ বছরে সংসদ সদস্য শম্ভুর ব্যক্তিগত আয় বেড়েছে ২৬ গুণ। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি। এর মধ্যে স্থাবর সম্পদ বেড়েছে প্রায় ছয় গুণ এবং অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে প্রায় ২৬ গুণ। ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও সব শেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামা থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যেভাবে আয় বাড়ল : ২০০৮ সালে দাখিল করা হলফনামায় আইন পেশা থেকে ব্যক্তিগত আয় দেখানো হয় দুই লাখ ১০ হাজার টাকা। ২০১৪ সালে দাখিল করা হলফনামায় ব্যক্তিগত আয় দেখানো হয় ২৪ লাখ ৮১ হাজার ৮৩৬ টাকা। এখানে আইন পেশার পাশাপাশি আয়ের খাত হিসেবে দেখানো হয়েছে সঞ্চয়পত্রের সুদ, পরামর্শক ও এমপি হিসেবে সম্মানী ভাতা। ২০১৮ সালে আইন পেশা পরিবর্তিত হয়ে রূপ নেয় ব্যবসায়। তবে তখনো দায়িত্ব পালন করেন পরামর্শক হিসেবে। আয় দাঁড়ায় দ্বিগুণের কাছাকাছি। এই সময় হলফনামায় ব্যবসা, পরামর্শক, সঞ্চয়পত্র ও এমপির সম্মানী হিসেবে ব্যক্তিগত আয় দেখানো হয় ৪৫ লাখ ১৫ হাজার ৫৩৮ টাকা। সব শেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামা অনুযায়ী আইন পেশা, ব্যাংক সুদ ও এমপির সম্মানী থেকে আয় দেখানো হয়েছে ৫৫ লাখ ৩৮ হাজার ১৩১ টাকা। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী সংসদ সদস্য শম্ভুর ব্যক্তিগত আয় বেড়েছে ২৬ গুণের বেশি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শুধু ব্যক্তিগত আয়েই থেমে যায়নি সংসদ সদস্য শম্ভুর সম্পদের চাকা। টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় আসীন হয়ে বাড়িয়েছেন স্থাবর ও অবস্থাবর সম্পদ। আর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় অস্থাবর সম্পদ হিসেবে দেখিয়েছেন নগদ নিজ নামে দুই লাখ ও স্ত্রীর নামে ২৫ হাজার টাকা। ব্যাংকে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ নিজ নামে তিন কোটি ৩০ লাখ ৮০ হাজার ৩৯২ টাকা ও স্ত্রীর নামে ১৫ লাখ ৮৩ হাজার ৭১৪ টাকা। সঞ্চয়পত্র ও স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ নিজ নামে ৬৭ লাখ ৪৭ হাজার ৯৪৭ টাকা ও স্ত্রীর নামে ৭৬ লাখ ২৪ হাজার ৫১৪ টাকা। তবে একমাত্র ছেলে সুনাম দেবনাথের কোনো আয় বা সম্পদের তথ্য দুটি নির্বাচনের কোনো হলফনামায়ই উল্লেখ করা হয়নি। এ ছাড়া এমপি শম্ভুর আমতলা সড়কে একটি, বরগুনা সদর রোডে উপজেলা পরিষদ সংলগ্নে একটি বাড়ি, মহাসড়ক এলাকায় জমি, আমতলীতে চাওড়া মৌজায় ৫ শতাংশ এবং তালতলী উপজেলায় প্রায় ১৮ একর জমি থাকলেও হলফনামায় এসব বাড়ির কোনো তথ্য দেননি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">৫ আগস্টের আগে থেকেই তিনি ঢাকায় থাকতেন। এরপর থেকে তাঁকে আর দেখা যায়নি। এসব বিষয়ে জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি তাঁকে।</span></span></span></span></p>