<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নভেম্বরের শেষ দিকে কিংবা ডিসেম্বরের মাঝামাঝি শুরু হবে ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা। এই শেষ সময়ে এসেও পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বাঁ চোখের রেটিনা ফেটে গেছে, আর ডান চোখের কর্নিয়া নষ্ট হয়ে গেছে। অপারেশনের পরও বাঁ চোখে শুধুই অন্ধকার। ডান চোখে প্রচণ্ড ঝাপসা। ফলে পড়ালেখা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। অন্তত একটা চোখ যদি ভালো হতো, পরীক্ষা দিতে পারতাম।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নিজের বর্তমান বাস্তবতা নিয়ে আর্দ্র কণ্ঠে এভাবে কালের কণ্ঠকে হতাশার কথা জানালেন নরসিংদী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মোজাম্মেল হক (২৬)। ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে গত ১৮ জুলাই নরসিংদী জেলখানা মোড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে তাঁর দুই চোখ প্রচণ্ড জখম হয়েছে। এখন চিকিৎসায়ও আর দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাচ্ছেন না তিনি।  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মোজাম্মেল কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাবার বয়স ৬০ বছর। তিনি শারীরিকভাবে বেশ অসুস্থ। বাবার পর সংসারের সব দায়িত্ব ছিল আমার। অথচ এখন আমি নিজেই পরিবারের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছি। নিজের খরচটাও বাবার কাছ থেকে নিতে হচ্ছে। সংসার সাজানোর স্বপ্ন এখন শুধুই দুঃস্বপ্ন। আমি আদৌ সুস্থ হব কি না, তা-ও জানি না। এ নিয়ে ট্রমায় আছি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জানা যায়, দুই ভাই-বোনের মধ্যে মোজাম্মেল বড়। ছোট বোন একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। বাবা নূর মোহাম্মদ একটি বেসরকারি কম্পানিতে ছোট পদে চাকরি করেন। মা মরিয়ম বেগম গৃহিণী। দাদিসহ পাঁচ সদস্যের পরিবার নরসিংদিতেই বসবাস করে। চাকরির স্বল্প বেতন দিয়ে ছেলেমেয়ের পড়াশোনা এবং সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন নূর মোহাম্মদ। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মোবাইলে মরিয়ম বেগম বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমাদের আর্থিক অবস্থা ভালো না। একজনের আয়ে অনেক কষ্টে সংসার চলছিল। এ জন্য ছেলেটা পড়ালেখার পাশাপাশি খণ্ডকালীন চাকরি করে সংসারের হাল ধরেছিল। ছেলে মোজাম্মেলই আমাদের পরিবারের একমাত্র অবলম্বন। কিন্তু সেই ছেলে আন্দোলনে গিয়ে পুলিশের গুলিতে চোখ হারিয়েছে। ওর ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন আমরা বড় আতঙ্কের মধ্যে আছি। দুটি চোখই যদি অন্ধ হয়ে যায়, তাহলে তো ওর ভবিষ্যৎ অন্ধকার। অন্তত একটি চোখ যদি ভালো হতো, জীবনটা টেনে নিতে পারত।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মোজাম্মেলের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চোখের পাশাপাশি ওর শরীরের বিভিন্ন অংশে অন্তত ৪০টি ছররা গুলি লেগেছে। চোখের অপারেশন করা হলেও শরীর থেকে অন্য গুলিগুলো এখনো বের করা হয়নি। চোখের চিকিৎসা শেষ হলে বাকি চিকিৎসা করা হবে। চোখের চিকিৎসা নিতেই এখন প্রতিনিয়ত নরসিংদী থেকে ঢাকায় যেতে হচ্ছে পরিবারটিকে। আর মোজাম্মেল চোখের দৃষ্টিশক্তি কতটা ফিরে পাবেন, সেটিও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না চিকিৎসকরা। তাঁরা জানিয়েছেন, মোজাম্মেলের চোখের রেটিনা ভালো হওয়ার সম্ভাবনা কম। অপারেশনের পর বাকি সবটাই ভাগ্যের বিষয়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসার দাবি জানিয়ে মোজাম্মেলের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, দেশের বাইরে চোখ প্রতিস্থাপনের সুযোগ রয়েছে, উন্নত প্রযুক্তিও আছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সহায়তায় বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মোজাম্মেলকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তবে উন্নত প্রযুক্তি না থাকায় এই চিকিৎসা অপর্যাপ্ত। তাই সরকারের কাছে আমাদের আহবান, দেশের বাইরে নিয়ে মোজাম্মেলের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। অন্তত একটি চোখ ভালো হলে ওর জীবনটা কিছুটা সহনীয় হতো। দুই চোখ অন্ধ হয়ে গেলে ওর শিক্ষাজীবন, কর্মজীবন, সংসারজীবন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সব কিছু বিভীষিকাময় হয়ে উঠবে। </span></span></span></span></p>