<p><span style="color:#e74c3c"><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সবুজ রঙের বলে এসব পাতাফড়িংয়ের আরেক নাম শ্যামা পোকা। বাংলায় হেমন্ত এক লক্ষ্মীমন্ত ঋতু</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ সময় ঘরে ঘরে ওঠে নতুন ধান, মাঠ পড়ে থাকে শূন্য হয়ে। সবুজ পাতাফড়িংরা ধানগাছের সবুজ পাতার রস খেয়ে বাঁচে। কিন্তু ধানগাছ বুড়ো হলে তার রসও কমে আসে, তখন সবুজ পাতাফড়িংদের খাদ্যের সংকট দেখা দেয়। কিছু চালাক শ্যামা পোকা আশপাশের শ্যামা, খুদে শ্যামা, দূর্বা, আরালি ইত্যাদি সবুজ ঘাস বেছে নেয়, তার পাতার রস খেয়ে আপৎকালীন খাদ্যসংকট দূর করে</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ঘনঘোর অমাবস্যার রাত। ঘুটঘুটে অন্ধকার। গ্রামের আলোহীন এমন এক রাতে গেলে সেখানকার রাস্তার পাশের ঝোপঝাড়ে অনেক জোনাকি পোকার দেখা মেলে। ছোটবেলায় এসব দৃশ্য প্রায়ই চোখে পড়ত। এখন বিদ্যুতায়িত গ্রামের সেই নিশুতি রাতের প্রকৃতি বদলে গেছে। বিদ্যুতের আলো আর নানা রকম যান্ত্রিক শব্দে এখন ঝিঁঝি পোকার ডাকও ঠাহর করা যায় না। ছোটবেলায় এ রকম কয়েক বছরের নিকষ কালো রাত কেটেছে এপাড়া থেকে ওপাড়ায় শ্যামাপূজা দেখে। এখনকার মতো সে সময় বিদ্যুতের বাতি ছিল না; পূজামণ্ডপে কেরোসিনের হ্যাজাক জ্বালিয়ে আলোকিত করা হতো। মণ্ডপের সামনেও দু-একটা হ্যাজাকবাতি জ্বলত। সেসব হ্যাজাকবাতির কোনো কোনোটা আবার দেবদারুর কাঁচা ডালের আগা আঁটি বেঁধে চিমনির গায়ে ঝুলিয়ে কিছুটা আড়াল করে রাখা হতো। কেননা সেই তীব্র আলোয় ঝাঁক বেঁধে ছুটে আসত এক ধরনের ছোট ছোট পোকা। আলোর পাশে গেলেই ওদের লাফালাফিতে অতিষ্ঠ হতে হতো। কখনো কখনো দেখতাম, মুখে-গায়ে চিটচিট করে লাফিয়ে পড়ত সেসব পোকা, আর চিটমিট করে উঠত গা। ওদের উৎপাতে দেবীদর্শনই দায় হয়ে পড়ত। তখন চিনতাম না সেই পোকাদের। এখন চিনি, ওগুলো সবুজ পাতাফড়িং, বাদামি গাছফড়িং, সাদাপিঠ গাছফড়িং, সাদা পাতাফড়িং, আঁকাবাঁকা পাতাফড়িং, কমলামাথা পাতাফড়িং। এগুলো সবই ধানগাছের রস চোষা পোকা। কিন্তু শ্যামাপূজায় এখন এত বেশি আলোর ঝলকানি সত্ত্বেও সেই পোকাদের আর উৎপাত করতে দেখি না। শহরে শ্যামাপূজার উৎসব হয়, কিন্তু পোকার উৎপাত নেই। এবার রমনা কালীমন্দির ও জগন্নাথ হলের শ্যামাপূজায় গিয়ে সে অবস্থাই দেখলাম। জানি না গ্রামেও সে রকম কি না।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সবুজ রঙের বলে এসব পাতাফড়িংয়ের আরেক নাম শ্যামা পোকা। শ্যামাপূজার সময় এদের ব্যাপক উদয় হয় বলেই কি শ্যামা পোকা? ঠিক জানি না। তবে শুধু কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসেই এদের এই উৎপাত কেন? সেটা অবশ্য জানি। বাংলায় হেমন্ত এক লক্ষ্মীমন্ত ঋতু</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এ সময় ঘরে ঘরে ওঠে নতুন ধান, মাঠ পড়ে থাকে শূন্য হয়ে। সবুজ পাতাফড়িংরা ধানগাছের সবুজ পাতার রস খেয়ে বাঁচে। ধানগাছগুলো যখন যুবতি ছিল, তখন তার রস খেয়ে সবুজ পাতাফড়িংরা পুষ্ট হতো, মিলনে মত্ত হয়ে ধানগাছের পাতায় পাতায় ওদের ডিম গেঁথে দিত। সেসব ডিম ফুটে শ্যামা পোকার ছানারা ছড়িয়ে পড়ত দলে দলে। কিন্তু ধানগাছ বুড়ো হলে তার রসও কমে আসে, পাতাও শক্ত হয়ে ওঠে। তাই লাখ লাখ সবুজ পাতাফড়িংয়ের খাদ্যের সংকট দেখা দেয়। কিছু চালাক শ্যামা পোকা আশপাশের শ্যামা, খুদে শ্যামা, দূর্বা, আরালি ইত্যাদি সবুজ ঘাস বেছে নেয়, তার পাতার রস খেয়ে আপৎকালীন খাদ্যসংকট দূর করে। ধান যখন কাটা হয়ে যায়, তখন ওরা আর যাবে কোথায়? তবে লোকালয়ে ওরা কখনো খাদ্যের জন্য হানা দেয় না, ওদের মরণের জন্য সেখানে যায়। আলোই ওদের জন্য মরণের ফাঁদ। আলোর ঝলকানিতে ওরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো ছুটে আসে আর আলোতে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে। আমি নিজেও ওদের এই মরণ প্রত্যক্ষ করেছি বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালিয়ে, হ্যাজাক ও হারিকেন জ্বালিয়ে। হ্যাজাকের আলোতেই দেখেছি সবচেয়ে বেশি ওরা আকৃষ্ট হয়। রাতে পড়ার টেবিলে টেবিল ল্যাম্পের আলোতেও দেখেছি এই পোকাদের আসতে। টেবিলের ওপর হেঁটে বেড়াচ্ছে, লাফালাফি করছে। মজা পেয়েছিলাম এদের সর্বদিকী চলাচল দেখে। ওর কাছে যে পাশে আঙুল নিয়ে যাই, ও তার উল্টো দিকে হাঁটতে শুরু করে। বেশ দ্রুত সে হামাগুড়ি দেওয়ার মতো হেঁটে হেঁটে সরে যায়, সব দিকেই সে দ্রুত চলতে পারে। বিপদ বুঝলে লাফ দিয়ে অনেক দূরে চলে যায় বা উড়ে যায়।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সবুজ পাতাফড়িং বা শ্যামা পোকা এ দেশে ধানের একটি ক্ষতিকর পোকা। কিভাবে ক্ষতি করে তা দেখার জন্য দুটি মাটির টবে দুটি অক্ষত ধানের কুশিয়ালা গাছ লাগিয়ে সেই টবে বাঁশের চটার খাঁচা বানিয়ে একটি বস্তার মতো স্বচ্ছ পলিথিনের থলে দিয়ে ঢেকে পোকার চিড়িয়াখানা বানিয়েছিলাম। তার একটিতে ১০টি সবুজ পাতাফড়িং ছেড়ে দিয়েছিলাম, অন্যটিতে কোনো পোকা ছাড়িনি। পরদিন দেখলাম, সবুজ পাতাফড়িংরা ধানগাছের আড়ালে বসে কুড়কুড় করে পাতায় সাদা সাদা দাগ তুলে রস চুষছে। কয়েক দিন পর দেখলাম, সেই ধানগাছটির কয়েকটি পাতা হলদে কমলা হওয়া শুরু করেছে। বুঝলাম, যে পোকাগুলো ছেড়েছিলাম তার মধ্যে অন্তত একটি পোকা ছিল ধানের টুংরো রোগের ভাইরাস জীবাণুর বাহক। এখন ধানগাছে সে ওই রোগের বিস্তার ঘটিয়ে ফেলে লক্ষণ সৃষ্টি করে ফেলেছে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এ দেশে ডেল্টোসেফালিডি পরিবারের দুই প্রজাতির সবুজ পাতাফড়িং দেখা যায়</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—<em>Nephotettix virescens </em>I <em>Nephotettix nigropictus</em>.</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> পূর্ণবয়স্ক সবুজ পাতাফড়িং প্রায় সাড়ে তিন মিলিমিটার লম্বা, দেহের রং সবুজ এবং পাখার ওপরে কালো দাগ থাকে। এই পোকা দিনের বেলা আড়ালে লুকিয়ে থাকে এবং সন্ধ্যার পর বের হয়। সবুজ পাতাফড়িংকে ১৯০৮ সালে এ দেশে ধানের গৌণ ক্ষতিকর পোকা হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছিল। পরে ১৯৫৬ সালে এই পোকাকে মুখ্য ক্ষতিকর পোকার মর্যাদা দেওয়া হয়, যা এখনো বহাল রয়েছে।</span></span></span></span></span></p> <p> </p>