<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বিএনপির এক নেতার দৌরাত্ম্যে যশোরের নওয়াপাড়ার ব্যবসায়ীরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। আসাদুজ্জামান জনি নামের ওই নেতা একের পর এক দখল করে নিচ্ছেন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। তাঁর পালিত সন্ত্রাসীদের চাঁদা না দিয়ে কেউ ব্যবসা করতে পারছেন না। তবে তাঁর ভাষ্য, দখল নয়, তিনি বরং বিভিন্ন ঘাট দখলমুক্ত করেছেন; যেখানে বিএনপির কর্মী ও সাধারণ মানুষ কাজের সুযোগ পেয়েছে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">অভয়নগর উপজেলা ও নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা জনির বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা থেকে শুরু করে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের শরণাপন্ন হয়েছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় সংগঠনও নানা কর্মসূচি পালন করেছে চাঁদাবাজ, দখলদারদের শাস্তি দাবি করে। যৌথ বাহিনী জনিকে আটক করতে এক দফা অভিযানও চালিয়েছে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">যশোরের শিল্প ও বাণিজ্য শহর নওয়াপাড়া। সড়ক, রেল ও নৌ যোগাযোগ থাকায় সার, কয়লা, রড, সিমেন্টসহ নানা পণ্যের রমরমা কারবার এখানে। গড়ে উঠেছে নানা ধরনের শিল্প-কারখানা।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">গত সাড়ে ১৫ বছর নওয়াপাড়ার ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ছিল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের। ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পরই দৃশ্যপট পাল্টে যায়। বিএনপি নওয়াপাড়া পৌর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান জনি তাঁর অনুসারীদের নিয়ে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেন।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">অভয়নগর থানায় গত ১৫ অক্টোবর একটি লিখিত এজাহার দেন সরকার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবু সাইদ সরকার। এতে বলা হয়, আগের দিন রাত ১০টার দিকে আসাদুজ্জামান জনির নেতৃত্বে ২০ থেকে ২৫ জনের একটি দল হানা দেয় সরকার গ্রুপের কার্যালয়ে। তারা বাকিতে তিন ট্রাক কয়লা দেওয়ার জন্য চাপাচাপি করতে থাকে। রাজি না হওয়ায় সাইদ সরকারের ওপর চড়াও হয় দুর্বৃত্তরা। তাঁকে মারধর ছাড়াও ক্যাশবাক্সে রক্ষিত নগদ প্রায় পাঁচ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়। সাইদ সরকার এই বিষয়ে পুলিশ ছাড়াও বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও বিএনপি নেতাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">থানার তৎকালীন ওসি এস এম আকিকুল ইসলাম এই ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপপরিদর্শক (এসআই) মনিরুল ইসলামকে দায়িত্ব দেন। কিন্তু জনির বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আজ পর্যন্ত অভিযোগটি মামলা হিসেবেও গ্রহণ করেনি পুলিশ।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">অভয়নগর থানায় নতুন যোগ দেওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এমাদুল করিম অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড না হওয়ার কথা স্বীকার করে কালের কণ্ঠকে বলেন, তদন্ত চলছে। অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে মামলা হবে। তবে অভিযুক্ত জনি বলছেন ভিন্ন কথা। তাঁর ভাষ্য, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ওই রাতে সরকার গ্রুপের কার্যালয়ে সামান্য ঝামেলা হয়। সেখানে আমি হাজির ছিলাম না। খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে ঘটনার জন্য আমার রাজনৈতিক ছোট ভাই সৈকতকে শাস্তি দিই। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হেফাজতে ইসলামের নেতা মাওলানা মাসুম বিল্লাহসহ সবাই খুশি হন।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">জনির বিরুদ্ধে আরো যত অভিযোগ</span></span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, কেন্দ্রীয় ও যশোর জেলা কমিটির কাছে দলের নওয়াপাড়া পৌর কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান জনির বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিএনপি সমর্থক ব্যবসায়ী ইসরাইলের কাদিরপাড়া গ্রামের বাড়ি জোর করে দখল, লুট ও অগ্নিসংযোগ, শহরের তালতলায় </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ব্রাইট ঘাট</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> জোর করে দখল, ওই সময় ঘাটের শ্রমিক সরদার জাকির ও শ্রমিক উজ্জ্বল মাসুদের বাড়ির গরু ধরে নিয়ে বাজারে বিক্রি করে দেওয়া হয়।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">অভিযোগে বলা হয়, মাইলপোস্ট এলাকা থেকে ঠিকাদার নওশাদের এক ট্রাক পাথর লুটে নিয়ে বিক্রি করে দেয় জনির লোকজন। এর পরদিন </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">চাকলাদার ঘাট</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> দখল এবং ৬০টি মোটর লুট ও মেহগনিগাছ লুট করা হয়।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">৯ আগস্ট নওয়াপাড়া বাজারের ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মৃত সিরাজুল ইসলাম খোকনের বাড়ির জমি দখল করে নেয় জনির লোকজন। শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের আলীপুর এলাকার আওয়ামী লীগ ক্যাডার নজরুল খানকে টাকার বিনিময়ে অফিস প্রতিষ্ঠিত করে দেন জনি।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">অভিযোগ, পাঁচ লাখ টাকা চুক্তিতে জনি নওয়াপাড়া হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফাল্গুন মণ্ডলকে পুনর্বাসিত করতে আসেন ১৯ আগস্ট। পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর ফাল্গুনকে দেখে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে বিক্ষোভ করেন। তখন এমরান হোসেন নামের এক শ্রমিককে জখম করে জনির লোকজন।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">১৭ সেপ্টেম্বর চেঙ্গুটিয়ার মোসলেম সরদারের মালিকানাধীন </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">রাজধানী ঘাট</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> দখল করে জনির লোকজন। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী বাহিনী লালন, মাদক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ, চোরাচালানের অভিযোগ করা হয়েছে।</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">অভিযোগের বিষয়ে জনির ভাষ্য</span></span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">জনি প্রতিটি অভিযোগই অস্বীকার করে কালের কণ্ঠকে বলেন, চাকলাদার ঘাটটি বিগত সরকারের সময় যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার দখল করে নিয়েছিলেন। পটপরিবর্তনের পর তিনি ঘাটটি দখলমুক্ত করে আসল মালিক মাঈনুদ্দিনকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। জনি বলেন, তিনি কখনো ব্রাইট ঘাটে যাননি। পাথর লুটের অভিযোগ অসত্য। শ্রমিক নেতা ফাল্গুনকে পুনর্বাসনচেষ্টার অভিযোগও ঠিক না। স্বৈরাচারের দোসরদের দখলে থাকা বিভিন্ন স্থাপনা দখলমুক্ত করে বরং বিএনপি কর্মী ও সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><strong><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বিএনপি নেতাদের ভাষ্য</span></span></span></span></span></strong></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বিএনপি নেতারা আসাদুজ্জামান জনির বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলো কবুল করে নিচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, জনির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় নওয়াপাড়ার ব্যবসায়ী-জনতার কাছে প্রমাণিত হয়েছে যে বিএনপি কোনো দুর্বৃত্তের সঙ্গে নেই। দলের নওয়াপাড়া পৌর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম মোল্যা কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ছেলেটা (জনি) একসময় পৌর ছাত্রদলের সভাপতি ছিল। ও যে এত খারাপ হয়ে যাবে আমরা তা ভাবিনি।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">অভয়নগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম হায়দার ডাবলু বলেন, জনিকে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে জেলা কমিটির কাছে। তাতে কোনো কাজ না হওয়ায় কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের কাছে আরজি জানানো হয়েছে। এতেও কিছু না হওয়ায় গত ৯ নভেম্বর অভিযোগ দেওয়া হয়েছে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">প্রসঙ্গত, অভয়নগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফারাজী মতিয়ার রহমান ও সাধারণ সম্পাদক কাজী গোলাম হায়দার ডাবলু এবং নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির সভাপতি আবু নঈম মোড়ল ও সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল করিম মোল্যা সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখলবাজিতে অভিযুক্ত আসাদুজ্জামান জনি ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের আরজি জানিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে আবেদন করেন গত ৩১ অক্টোবর। ওই আবেদনে জানানো হয়, এর আগে একই অভিযোগ ১৯ আগস্ট ও ২২ সেপ্টেম্বর দুই দফা জেলা বিএনপিকে এবং ২৫ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বরাবর পাঠানো হয়।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">যশোর জেলা বিএনপির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু নওয়াপাড়ার জনির বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার কথা নিশ্চিত করে কালের কণ্ঠকে বলেন, বিষয়টি দেখা হচ্ছে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">দলের নেতাদের অভিযোগের বিষয়ে আসাদুজ্জামান জনি বলছেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। নেতাদের বিভিন্ন অনৈতিক কাজের বিরোধিতা করায় তিনি চক্ষুঃশূল হয়েছেন।</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p> </p> <p> </p>