<p style="text-align:left"><span style="color:#c0392b"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গোল পায়রা মূলত বন্য কবুতর। এরা গ্রাম কিংবা শহরের পুরনো দালানকোঠা, শিলাময় উঁচু পাহাড়, গুহা, গিরিখাত, পুরনো ধ্বংসাবশেষ ও লোকালয়ে দল বেঁধে থাকে। গোল পায়রা শস্যভুক পাখি। খাদ্যতালিকায় আছে বীজ, শস্য ও অঙ্কুর। শহরে বসবাসকারী পায়রারা এখন মানুষ রুটি দিলেও খায়। গোল পায়রা শিলা অথবা দালানের ফোকরে শুকনা কাঠি দিয়ে বাসা তৈরি করে</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তখন জোয়ার। একটি কাঠভর্তি নাও ভিড়েছে খালের কূলে। গাঁয়ের ঘ্রাণ জমে আছে সেই কাঁঠাল কাঠে। বরিশাল শহরের ঝাউতলার ডা. তারিণী কুমার লেনের ছোট্ট গলিটি শেষ হয়ে গেছে খালের প্রান্তে। সেটির নাম জেলখাল। ওই খাল কীর্তনখোলার জল বয়ে নিয়ে আসে বরিশাল শহরের মধ্যে। সম্ভবত কীর্তনখোলা নদীকেই কবি জীবনানন্দ দাশ বলেছেন জলঝিরি। নদীর সেই জল আবার ছোট-মাঝারি নালা হয়ে শহরের কোনো কোনো পুকুরেও পৌঁছে যেত। জলের সঙ্গে যেত মাছও। মাঝে মাঝে দু-একটা উদবিড়াল চলে আসত। ঝাউতলার অন্যদিকে জেলখালের উত্তর পারে বসবাস ছিল সনাতন ধর্মের অনেক পরিবারের। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ভোঁদড় বা উদবিড়াল দিয়ে মাছ ধরত। তাদের পোষা উদবিড়াল মাঝে মাঝে শহরের নানা পুকুরে যেত মাছ খেতে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নব্বই দশকের প্রথম দিকে বরিশাল শহরে ছিল টিনের চালের ঘরের দাপট। তা ছাড়া আছে কিছু ইট-সুরকির পুরাতন ভবন। এসবের মধ্যে গুপ্তবাড়ির ভবনটি উল্লেখযোগ্য। অনেক জায়গাজুড়ে থাকা বাড়িটির চারপাশে ইট-সুরকির মোটা দেয়াল। দেয়ালে জন্মাত শেওলা, ঢেঁকিশাক ও  নানা পরগাছা। বর্ষায় দেয়ালের অনেকটাই সবুজ হয়ে যেত। শীতের সময় কেবল শুকনা পাতা ও শিকড়গুলো পুরনো দেয়ালে চিত্রকল্পরূপে লেগে থাকত। গুপ্তবাড়ির পেছনের বুনো গাছগাছড়ার বাগান খুবই ঘন ছিল। সেই বনে নানা জাতের বুনো পাখি থাকত। জমিদারবাড়ির আদলে তৈরি গুপ্তবাড়িটি আমাদের কাছে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাবুর বাড়ি</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> হিসেবে পরিচিত ছিল। বাড়িটি আসলে ব্রিটিশ শাসন আমলে বরিশাল পৌরসভার চেয়ারম্যান ডা. তারিণী কুমার গুপ্তের। শহরে এটি গুপ্তবাড়ি নামেই পরিচিত। সে বাড়িতে আমরা অনেক বিড়াল ও কুকুর দেখতাম। গুপ্তবাড়ির মাসিমা মানুষের ফেলে যাওয়া কিংবা রাস্তায় অসহায় থাকা বিড়াল-কুকুর তাদের বাড়িতে নিয়ে রাখতেন এবং পুষতেন। গুপ্তবাড়ির পুকুরে আমরা নিয়মিত গোসল করতাম। সেই পুকুরে কানি বক ও মাছরাঙা দেখতাম। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পুরনো এই বাড়ির ভবনে বসবাস করত শত শত গোল পায়রা। প্রধানত এরা জালালি কবুতর নামে পরিচিত। আমাদের ছেলেবেলায় এ বাড়ির ভবনে অনেক গোল পায়রা দেখেছি। সকালে এসব কবুতর শহরের চারপাশের গ্রামের মাঠে ও ফসলের ক্ষেতে আধার খেতে যেত। সন্ধ্যার আগেই সব কবুতর দল বেঁধে ফিরে আসত। সম্প্রতি গুপ্তবাড়ির কবুতর থাকার বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে বরিশালের সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মী সুশান্ত ঘোষ জানান, ২০০৫ সাল পর্যন্ত কবুতর গুপ্তবাড়িতে ছিল। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জীবাশ্ম প্রমাণ থেকে জানা যায়, এই কবুতরের উৎপত্তি দক্ষিণ এশিয়ায়। গোল পায়রা মূলত বন্য কবুতর। এরা গ্রাম কিংবা শহরের পুরনো দালানকোঠা, শিলাময় উঁচু পাহাড়, গুহা, গিরিখাত, পুরনো ধ্বংসাবশেষ ও লোকালয়ে দলবেঁধে থাকে। গোল পায়রা শস্যভুক পাখি। খাদ্যতালিকায় আছে বীজ, শস্য ও অঙ্কুর। শহরে বসবাসকারী পায়রারা এখন মানুষ রুটি দিলেও খায়। গোল পায়রা শিলা অথবা দালানের ফোকরে শুকনো কাঠি দিয়ে বাসা তৈরি করে। দুটি সাদা রঙের ডিম পাড়ে। ছানা ফুটতে প্রায় ২০ দিন লাগে। ইউরোপে গোল পায়রা দেখা যায় শহরের গির্জায়। প্রধানত নিরাপদ থাকায় এরা গির্জার ভবনে থাকতে পছন্দ করে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : নিসর্গী ও পরিবেশবিদ, জার্মান এরোস্পেস সেন্টার</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p>