<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এক ইতালিপ্রবাসীর টাকার গরমে অস্থির ফরিদপুরের মধুখালীর একটি পরিবার। অভিযোগ পাওয়া গেছে, এই পরিবারের মেয়ে রিমা খাতুনকে ভুয়া তথ্য দিয়ে বিয়ে করেন ইতালিপ্রবাসী সুরুজ মাতুব্বর। তার প্রতারণা ধরা পড়ার পর রিমা খাতুনকে ডিভোর্স দিতেও বাধ্য করা হয়। পরে সুরুজ মাতুব্বর টাকা ঢেলে এক নারীকে বাদী সাজিয়ে রিমার বাবা হারুন বিশ্বাস, ছোট ভাই সজল বিশ্বাস, বোনের স্বামী ইমান মোল্লা ও রিমা খাতুনের বিরুদ্ধে ফরিদপুরের মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করান। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ওই মামলায় পুলিশ হারুন বিশ্বাস ও সজল বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করে। ১৯ দিন পর গত ১২ নভেম্বর হারুন বিশ্বাস জামিনে মুক্তি পেলেও এখনো কারাভোগ করছেন সজল বিশ্বাস। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভাঙ্গা থানার সাব-ইন্সপেক্টর অমিয় মজুমদার জানিয়েছেন, তারা তদন্ত করে মামলাটি ভুয়া বলে প্রমাণ পেয়েছেন। ভুয়া মামলায় পিতা-পুত্রকে গ্রেপ্তারের কারণে এরই মধ্যে ভাঙ্গা থানার ওসি ও সাব-ইন্সপেক্টর অমিয় মজুমদারের বিরুদ্ধে আইজিপি ও ফরিদপুরের পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। তবে সুরুজ মাতুব্বরের পরিবারের ভয়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে অসহায় রিমা খাতুনকে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রিমা খাতুন কালের কণ্ঠকে জানান, ২০২৩ সালের ৩ জানুয়ারি ১০ লাখ এক টাকা দেনমোহরে তার বিয়ে হয় পার্শ্ববর্তী ভাঙ্গা থানার দেওড়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে ইতালিপ্রবাসী সুরুজ মাতুব্বরের সঙ্গে। বিয়ের পর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় সুরুজের বাড়িতে। একদিন পরই তার গয়না নিয়ে যেতে চান সুরুজের আত্মীয়রা। তারা জানান, এই গয়না ধার করে আনা। ফেরত দিতে হবে। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করায় শ্বশুরবাড়িতে মারধরের শিকার হতে হয় নববধূ রিমাকে। অবশেষে তাকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তবে শ্বশুরবাড়ির লোকজন সোশ্যাল মাধ্যম ও মুঠোফোনের মাধ্যমে নানা রকম হুমকি-ধমকি দিতে থাকে। ডিভোর্স না দিলে ওই গৃহবধূকে মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়। পরে রিমা ফরিদপুরের এসপির কাছে ২০২৩ সালের ৯ এপ্রিল একটি অভিযোগ করেন। স্বামী সুরুজ মাতুব্বর, সুরুজের বোন কাকলী আক্তার (৩২), জা সোনিয়া আক্তার (২৫) অভিযুক্ত হন। এ ছাড়া রিমা তাদের বিরুদ্ধে পারিবারিক আদালতে খরপোষ ও দেনমোহরের টাকার দাবিতেও মামলা করেন। এতে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন আরো ক্ষিপ্ত হয়। প্রতিশোধ নিতেই রিমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন মানবপাচারের মতো একটি মামলা করে রিমার বাবা হারুন বিশ্বাস, ভাই সজল বিশ্বাস, বোনজামাই ইমান মোল্লা ও রিমার নামে। এই মামলায় মেহেদি শেখ নামের একজনকে আসামি করা হয়, যাকে রিমার পরিবার চেনে না বলে জানায়। এ ছাড়া দেশে থাকা সুরুজের ভাইয়েরা রিমাকে হত্যা করবে বলেও হুমকি দিতে থাকে। এ অবস্থায় রিমা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তবে এরই মধ্যে তার বাবা ও ভাইকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পুলিশ। উল্লেখ্য, রিমা উচ্চশিক্ষিত হলেও স্বামী সুরুজ অল্পশিক্ষিত। তা ছাড়া বিয়ের আগে সুরুজ নিজেকে উচ্চশিক্ষিত দাবি করার পাশাপাশি প্রভূত সম্পত্তির মালিক বলে জাহির করেন, যা সত্য নয়। প্রবাসী হওয়ার সুবাদে কাঁচা টাকা রয়েছে তার।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুরুজের ভাই মতিয়ার মাতুব্বর বৃহস্পতিবার রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, তাঁর ভাই সুরুজ এখন ইতালিতে। মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অনেকটা ধমকের সুরে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আপনাকে তো আমি চিনি না। আপনার সঙ্গে আমি কেন কথা বলব।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রিমা খাতুন জানান, তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে অনেক অপবাদ দেওয়া হচ্ছে। টাকা দিয়ে তাদের এলাকার অনেককে কিনেও নিয়েছে। তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমি আমার জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাই প্রশাসনের সহযোগিতা চাই।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এদিকে রিমার পরিবারের বিরুদ্ধে মানবপাচার মামলায় বলা হয়, সীমার স্বামী মাকুল তালুকদারকে মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা বলে রিমার বাবা, ভাইসহ অন্য আসামিরা পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে তাকে মালয়েশিয়া পাঠায়। কিন্তু ওখানে যাওয়ার পর তার স্বামীকে একটি কক্ষে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের ভিডিও দেখিয়ে রিমার বাবা আরো তিন লাখ টাকা আদায় করেন। মামলার সময় তার স্বামীর ওপর নির্যাতনের (হাত-পা বাঁধা) একটি ছবিও সংযুক্ত করা হয়। আদালত থেকে মামলাটি তদন্তের জন্য ভাঙ্গা থানায় পাঠানোর পর গত ২৫ অক্টোবর রাতে মধুখালীর মথুরাপুর গ্রামে হারুন বিশ্বাসের বাড়িতে অভিযান চালান এসআই অমিয় মজুমদার। সেখান থেকে হারুন বিশ্বাস ও তার ছেলে সজল বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যান। আদালত তাদের কারাগারে পাঠান। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত ১২ নভেম্বর জামিনে মুক্তি পান হারুন বিশ্বাস। এখনো কারাবন্দি সজল বিশ্বাস। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অমিয় মজুমদার বৃহস্পতিবার রাতে কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আদালত থেকে তদন্তের জন্য আসার পর তিনি অভিযান চালিয়ে দুজন আসামিকে গ্রেপ্তার করেন। আসামিদের গ্রেপ্তার করতে তার ওপর চাপ ছিল। ফলে তিনি তদন্তের আগেই অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসেন। পরে তদন্ত করে দেখতে পান অভিযোগকারী সীমা মিথ্যা তথ্য দিয়ে আদালতে মানবপাচারের মতো একটি গুরুতর মামলা করেছেন। মামলা তদন্ত করতে গিয়ে সীমা বেগমের কাছে তার স্বামীর পাসপোর্ট নম্বর এবং কোন ফ্লাইটে মালয়েশিয়া গিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি তথ্য দিতে পারেননি। এ ছাড়া সীমার মোবাইল ফোনও বন্ধ। তিনি বলেন, নির্যাতনের শিকার বলে তার স্বামীর যে ছবিটি তিনি দিয়েছিলেন সেই ছবির ব্যক্তিটি তার স্বামী কি না তা-ও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ অবস্থায় মামলাটি যে ভুয়া সেটা প্রমাণিত।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পুরো বিষয়টি আমরা আদালতকে জানাব। মিথ্যা মামলার জন্য আদালত যে নির্দেশ দেবেন সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p>