<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এক যুগ আগে ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশন গার্মেন্টসে অগ্নিকাণ্ডে ১১১ শ্রমিক নিহত হন। ভয়াবহ ওই ঘটনার পরদিন ২০১২ সালের ২৫ নভেম্বর আশুলিয়া থানায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে মামলা করা হয়। ২০১৫ সালে এই মামলায় গার্মেন্টস মালিকসহ ১৩ জনের আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়। বিচার শুরুর পর ৯ বছরে মাত্র ১৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। ৮৯ জনের সাক্ষ্য এখনো নেওয়া হয়নি। এতে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের সবাই চাইলেও সাক্ষী না আসায় আলোচিত এই মামলার বিচার এগোয়নি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ বিষয়ে ঢাকা জেলা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) কালাম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়ার পেছনে রাষ্ট্রপক্ষের দায় রয়েছে। দীর্ঘসূত্রতায় মামলার আসামি বা বাদী উভয় পক্ষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়। বর্তমান সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্রুত সব মামলা নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি, এই মামলা এভাবে ঝুলে থাকবে না। দ্রুততম সময়ে মামলাটি নিষ্পত্তি করা হবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বর্তমানে মামলাটি ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ নাসরিন জাহানের আদালতে বিচারাধীন। ২০১৬ সালে মামলার বাদী এসআই খায়রুল ইসলামসহ পাঁচজন আদালতে সাক্ষ্য দেন। ২০১৭ সালে দুজন, ২০১৯ ও ২০২১ সালে একজন করে দুজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। তবে ২০১৮, ২০২০ ও ২০২৩ সালে এই মামলায় কোনো সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়নি। চলতি বছরে এ পর্যন্ত মাত্র চারজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। গত ২২ অক্টোবর সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ঠিক ছিল। তবে ওই দিন সাক্ষী উপস্থিত না হওয়ায় আদালত পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ২৭ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তাজরীন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্ত শেষে পরের বছর ১৯ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক এ কে এম মহসিনুজ্জামান খান আদালতে প্রতিষ্ঠানটির মালিক, ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন। ঘটনার তিন বছর পর ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আসামিদের আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এই মামলার আসামিরা হলেন প্রতিষ্ঠানের মালিক দেলোয়ার হোসেন, চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার, শামীম মিয়া, স্টোর ইনচার্জ (সুতা) আল আমিন, সিকিউরিটি ইনচার্জ আনিসুর রহমান, সিকিউরিটি সুপারভাইজার আল আমিন, স্টোর ইনচার্জ হামিদুল ইসলাম লাভলু, প্রশাসনিক কর্মকর্তা দুলাল উদ্দিন, প্রকৌশলী এম মাহবুবুল মোর্শেদ, নিরাপত্তারক্ষী রানা ওরফে আনোয়ারুল, ফ্যাক্টরি ম্যানেজার আব্দুর রাজ্জাক, প্রডাকশন ম্যানেজার মোবারক হোসেন মঞ্জুর ও শহীদুজ্জামান দুলাল। এর মধ্যে আল আমিন, আনোয়ারুল, শামীম ও মোবারক পলাতক।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এদিকে গত ২২ অক্টোবরের আদেশে বিচারক উল্লেখ করেছেন, দীর্ঘ ৯ বছর পার হলেও রাষ্ট্রপক্ষ এই মামলার অভিযোগপত্রের গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীকে হাজির করতে পারেনি। অবশিষ্ট সাক্ষীর প্রতি বারবার জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা সত্ত্বেও রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষীদের আদালতে হাজির করতে পারেনি। ফলে সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন না হওয়ায় একদিকে যেমন মামলার জট বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে আসামিপক্ষ হয়রানির শিকার হচ্ছে। মামলা নিষ্পত্তিতে বিলম্বের কারণে রাষ্ট্রের ব্যয়ভার বাড়ছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭১(২) ধারা অনুযায়ী যা কিছুই থাকুক না কেন, মামলার শুনানির সময় সাক্ষী যাতে আদালতে উপস্থিত হন তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব পুলিশ অফিসারের হবে। সাক্ষীকে উপস্থিত হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপারের মাধ্যমে তামিলকারী পুলিশ অফিসারের প্রতি সমন প্রেরণের বিধান রয়েছে। মামলায় সাক্ষীকে আগামী ধার্য তারিখে উপস্থিত করার নির্দেশ প্রদান করা হলো। সাক্ষী হাজির করতে ব্যর্থতার দায়ভার সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার ওপর বর্তাবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আসামি দুলাল, হামিদুল, আনিস ও আল আমিনের আইনজীবী রোকেয়া বেগম বলেন, এই মামলায় বেশির ভাগ সাক্ষী আদালতে ভুল সাক্ষ্য দিয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদনও সঠিক না। দীর্ঘদিন ধরে সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে থাকলেও সেটা যথাযথভাবে শেষ হচ্ছে না। সাক্ষী যদি না আসেন তবুও তো মামলার সুরাহা করা প্রয়োজন। কারণ অভিযুক্ত আসামিরা চাকরি ফেলে নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন। তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেটার সত্যতা নেই। আইনগত দিক বিবেচনা করে মামলা নিষ্পত্তি হলে তারা খালাস পাবেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তাজরীন ফ্যাশনের মালিক দেলোয়ারের আইনজীবী হেলেনা পারভীন বলেন, এটা নিছক দুর্ঘটনা ছিল। এখানে কারোর হাত ছিল না। মালিক ঘটনাস্থলে ছিলেন না। যারা ভুক্তভোগী তাদের ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন। এখনো সেই গার্মেন্টস চালু করতে পারিনি। মামলার ঘানি টানতে গিয়ে তিনি একদম পথে বসে গেছেন। তবুও বছরের পর বছর পার হলেও মামলাটির বিচার শেষ হচ্ছে না। আমরা মামলা শেষ করতে চেষ্টা করছি। কিন্তু কেন শেষ হচ্ছে না, সেটা একমাত্র আল্লাহ জানেন।</span></span></span></span></p>