<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কোনো জনপদের বিশেষ কোনো স্থাপনায় এমনি এমনি টেরাকোটা (পোড়ামাটির নকশা কিংবা শিল্পকর্ম) যুক্ত হয়েছে, বিষয়টি তেমন নয়। এর সঙ্গে বহু অনুষঙ্গ জড়িত</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জলবায়ু, মাটি, ওই জনপদের স্থাপনার ধরন, মানুষের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অভিরুচি ইত্যাদি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একদা জলবায়ুজনিত কারণে বাংলা জনপদের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় টিনের ঘর নির্মাণ করা হতো। ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে টেরাকোটার ব্যবহার হতো না। আর উত্তরাঞ্চলে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় মাটির ঘর নির্মাণ হতো। এসব মাটির স্থাপনাকে কেন্দ্র করে বিপুলভাবে ব্যবহৃত হয় টেরাকোটা। যার রেশ এখনো কাটেনি। প্রচলিত আছে শতবর্ষ পর পর বড় ধরনের ভূমিকম্প সংঘটিত হয়। এতে অনেক জনপদ ধ্বংস হয়ে মাটিচাপা পড়ে। অন্য কারণও আছে। হাজার হাজার বছর পর প্রত্ন খননে বেরিয়ে আসে সেসব জনপদের নগরী ও বহু স্থাপনা। খননে জনপদের মানুষ ও স্থাপনায় ব্যবহৃত নানা ধরনের তৈজস সংগ্রহ করে বৈজ্ঞানিক নিরীক্ষায় নির্ধারণ করা হয় সভ্যতার বিভিন্ন কালপর্ব। এত গেল প্রাতিষ্ঠানিক দিক। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/11.November/25-11-2024/2/kalerkantho-lt-2a.jpg" height="570" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/11.November/25-11-2024/2/kalerkantho-lt-2a.jpg" style="float:left" width="350" />প্রাচীন প্রত্নসম্পদ ঘিরে ব্যক্তি পর্যায়ের সংগ্রাহকেরও কমতি নেই। কেউ শখ থেকে, কেউ নেশা থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রত্নসম্পদ সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে টেরাকোটা একটি। তবে ব্যক্তি পর্যায়ের সংগ্রাহকের জন্য টেরাকোটা সংগ্রহ যেমন সহজ নয়, সংরক্ষণ করাও অনেক শ্রমসাধ্য। কথায় আছে শখের তোলা লাখ টাকা। এই শখ ও সংগ্রহের নেশায় ডা. ফরহাদুর রহমান নিজের সংগ্রহশালাকে অনন্য করে তুলেছেন দুর্লভ সব টেরাকোটায়।       </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন ও সুলতানি আমলের টেরাকোটার নানা নিদর্শন রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংগ্রহশালায় দেখতে পাওয়া গেলেও দেশে ফরহাদুর রহমান ছাড়া ব্যক্তি পর্যায়ে আর কোনো সংগ্রাহকের সংগ্রহে এত বিপুল টেরাকোটা রয়েছে কি না তা জানা নেই।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইন্দিরা রোডের বাসায় নিজের টেরাকোটার সংগ্রহ দেখাতে দেখাতে ফরহাদুর রহমান বলছিলেন, অনেকের মতো তিনিও শুরুতে ছিলেন প্রাচীন ধাতব মুদ্রার সংগ্রাহক। তবে বহুজনের কাছে প্রাচীন মুদ্রার সংগ্রহ থাকায় নিজেকে বিশেষ বস্তুর বিশেষ সংগ্রাহক করে তুলতে বেছে নেন টেরাকোটা। ধীরে ধীরে তার সংগ্রহশালায় যুক্ত হচ্ছে হাজার বছরের প্রাচীন টেরাকোটা।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলা অঞ্চলে মাটি সহজলভ্য হওয়ায় প্রাচীনকাল থেকে টেরাকোটা শিল্পচর্চা শুরু। প্রাচীনকালে পোড়ামাটি দিয়ে ফলক, পুতুল, কলসি-হাঁড়ি ইত্যাদি তৈরি হতো। পাশাপাশি বাংলা অঞ্চলে পাথর সহজলভ্য না হওয়ায় ইট পুড়িয়ে ভবন, মূর্তি ও ভাস্কর্য নির্মাণ করা হতো। বাংলা অঞ্চলে টেরাকোটার সবচেয়ে প্রাচীন নিদর্শন পাওয়া যায় উয়ারী-বটেশ্বর ও মহাস্থানগড়ে। আর টেরাকোটা শিল্পের অসামান্য উদাহরণ কান্তজিউ মন্দির। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তবে ব্যক্তি পর্যায়ের সংগ্রাহকরা প্রত্নখনন স্থান থেকে টেরাকোটা সংগ্রহ করেন না। ডা. ফরহাদুর রহমান বলছিলেন, প্রত্নখনন স্থানের আশপাশের যে গ্রামগুলো রয়েছে সেসব গ্রামের অধিবাসীরা নানা প্রয়োজনে যখন মাটির কিছুটা গভীরে গর্ত করেন তখন নানা ধরনের টেরাকোটা বেরিয়ে আসে। আগে এসব টেরাকোটার গুরুত্ব বুঝতেন না তারা। সংগ্রাহকরা যখন টেরাকোটা সংগ্রহে গ্রামে-গঞ্জে যেতে শুরু করেন এবং টেরাকোটার সন্ধান করতে থাকেন, তখন অনেক গ্রামবাসী এর গুরুত্ব বুঝে টেরাকোটা রেখে দিতে শুরু করেন। পরে অর্থের বিনিময়ে সংগ্রাহকদের হাতে তুলে দেন। অনেকে ভালোবেসেও সংগ্রাহকদের দিয়ে দেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ডা. ফরহাদুর রহমানের এমন অভিজ্ঞতাও রয়েছে, হয়তো চলে গেছেন উত্তরবঙ্গের কোনো নিভৃত গ্রামে। সেখানে গ্রামের একপ্রান্তে কোনো কিশোরের হাতে হয়তো দেখতে পেলেন ভাঙা টেরাকোটার একটি অংশ, আরেক প্রান্তে গিয়ে কোনো গৃহিণীর কাছে পেয়ে গেলেন বাকি অংশ। বারবার ওই সব অঞ্চল ঘুরে বেড়ানোয় স্থানীয়দের আপন হয়ে উঠেছেন তিনি। ফলে ডা. ফরহাদুরের জন্য তারা রেখে দেন এসব মহাদুর্লভ টেরাকোটা। সেটি আস্ত হোক কিংবা ভাঙা হোক।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দেশে টেরাকোটাসহ প্রত্নসম্পদ সংগ্রহে আইনি কিছু জটিলতা রয়েছে। আবার এসব প্রাচীন দুর্লভ সম্পদ নিজের সংগ্রহে রাখায় রয়েছে আইনি বাধ্যবাধকতা। কিন্তু যেসব প্রতিষ্ঠানের এসব প্রত্নসম্পদ সংগ্রহ করার কথা লোকবল সংকটের অজুহাতে তারা অনেকটা উদাসীন। ফলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে টেরাকোটাসহ দেশের অনেক প্রত্নসম্পদ। নানা ফরমেটে পাচারও হয়ে যাচ্ছে। দেশে আলাদাভাবে টেরাকোটার একক সংগ্রহশালা কিংবা জাদুঘর নেই। ডা. ফরহাদুর বলছিলেন, এই সমস্যা সমাধানে একটি আইন করা যেতে পারে। যেমন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ব্যক্তি পর্যায়ের সংগ্রাহক তার সংগ্রহের একটি তালিকা করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে রাখবেন। যাতে কর্তৃপক্ষের জানা থাকে সংগ্রাহকের কাছে কোন কোন প্রত্নসম্পদটি রয়েছে। এতে সংগ্রহের যে নেশা ও ভালোবাসা, তাতে আর কোনো প্রশ্ন থাকল না। পেশায় মাইক্রোবায়োলজিস্ট হয়েও ডা. ফরহাদুর রহমান স্বপ্ন দেখেন একদিন টেরাকোটার একটি মিউজিয়াম হবে তার।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হাজার বছর আগের টেরাকোটার ধরন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, হিন্দুদের মন্দির কিংবা স্থাপনায় ব্যবহৃত হয়েছে রামায়ণ-মহাভারতের দেবদেবী ও যুদ্ধবিগ্রহের টেরাকোটা। আবার বোদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা টেরাকোটায় বিশেষভাবে ব্যবহার করেছে বুদ্ধার অবয়ব। মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ মসজিদ কিংবা বাসভবনের টেরাকোটার নকশায় ব্যবহার করেছে ফুল-লতাপাতা কিংবা আল্পনা।    </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আধুনিক ইউরোপীয় স্থাপত্যশৈলীর প্রভাবে ক্রমে টেরাকোটার প্রচলন কমে গেলেও নতুন করে ফের শুরু হয়েছে টেরাকোটার ব্যবহার। আধুনিক নগর সভ্যতায় করপোরেট হাউস কিংবা বিলাসী অনেক ভবনের দেয়ালে, নামপত্রে ফের নান্দনিক টেরাকোটা শিল্পের ব্যবহার শুরু হয়েছে। কালের বিবর্তনে অনেক শিল্প হারিয়ে গেলেও নানা মোটিফে ফের ফিরে আসে। যেমন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ফিরে আসছে টেরাকোটা। </span></span></span></span></p>