<p><span style="color:#c0392b">গ্রামবাংলার পরিচিত পাখি বন ছাতারে। চেঁচামেচির জন্য এরা বিখ্যাত। একটি দলে ১২টি পাখিও থাকতে পারে। তবে সাধারণত দলে সাতটি পাখি থাকে। যে কারণে দেশের কোথাও পাখিটি ‘সাতভাওলা’ বা ‘সাতভাই’ নামে পরিচিত</span></p> <p> </p> <p>হেমন্তের এক দুপুর। গ্রামের খোলা ফসলের মাঠ থেকে একটি বাজপাখি উড়ে এসে বসেছে পুকুরপারের মেঘশিরীষগাছের ডালে। কয়েকটি বনফিঙ্গে চট করে কোথা থেকে উড়ে এসে ডাকাডাকি শুরু করল, সেই সঙ্গে বাজপাখিটিকে বিরক্ত করতে লাগল। ফিঙ্গের এমন ক্যাঁচম্যাচ শুনে একদল মেটে-বাদামি রঙের পাখি উড়ে এলো। তারাও  কিচিরমিচির শুরু করে দিল।</p> <p>এই পাখির দলটি গ্রামবাংলার অতি পরিচিত। আমাদের বরিশালে বলে ‘ক্যাচকেইচ্চা’। চেঁচামেচির জন্য এরা বিখ্যাত। একটি দলে ১২টি পাখিও থাকতে পারে। তবে সাধারণত দলে সাতটি পাখি থাকে। যে কারণে দেশের কোথাও পাখিটি ‘সাতভাওলা’ বা ‘সাতভাই’ নামে পরিচিত।</p> <p>বনের অনেক পাখি আছে, যারা শিকারি পাখি দেখে ভয় পায় এবং অ্যালার্ম কল (সতর্ক সংকেতের জন্য এক ধরনের ডাক) দেয়, যাতে বনের পাখিরা সতর্ক হয় এবং শিকারি পাখি থেকে রক্ষা পেতে নিরাপদ জায়গায় গিয়ে লুকিয়ে থাকতে পারে। তবে কয়েক প্রজাতির পাখি আছে, তারা শিকারি পাখিদের তেমন ভয় পায় না। তাদের মধ্য ফিঙ্গে ও পাতিকাক অন্যতম। সাতভাওলা পাখিও অনেকটা সাহসী বটে। তারাও বাজপাখি দেখলে সতর্ক কল দেয়। তবে ফিঙ্গের মতো ঠোঁকর দেয় না।</p> <p>শৈশবে বরিশালের গ্রামে প্রতিদিন বন ছাতারে দেখতাম। সব সময় দলে চলতে দেখেছি। মাটিতে জোড়া পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে চলে। চলার পথে পড়ে থাকা ঝরাপাতা ঠোঁট দিয়ে উল্টে খাবার খোঁজে। গ্রামের বনে গুইসাপ দেখলে এরা খুব েঁচচামেচি করে। এদের কণ্ঠস্বর কর্কশ। তবে এরা গায়কী পাখি। বরিশালের গ্রামে প্রচলিত আছে, যে বাড়িতে এই পাখি চেঁচামেচি শুরু করে, সে বাড়িতে ঝগড়া লাগে।</p> <p>ঢাকার মিরপুরের উদ্ভিদ উদ্যানে একদল বন ছাতারে বাস করে। এরা সাভার এলাকায় নিয়মিত ভ্রমণ করে। বন ছাতারের খাবারের তালিকায় আছে ফড়িং, পিঁপড়া, গুবরে পোকা, শুঁয়াপোকা, তেলাপোকা, মাকড়সা, ব্যাঙ, শস্যদানা, রসালো ফল, বীজ ও ফুলের মধু।</p> <p>গাজীপুরের গ্রামে দেখেছি, বন ছাতারে বাড়ির লোকজনের ফেলে দেওয়া ভাত খায়। বন ছাতারে বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি। দেশের প্রায় সব বিভাগের গ্রামীণ বনে, ফলের বাগানে ও মুক্ত বনে পাওয়া যায়। শালবন ও সুন্দরবনেও আমি তাদের দল দেখেছি। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার মাঠেও দেখেছি তাদের ঘুরে বেড়াতে। তবে পার্বত্য চট্টগ্রামের গভীর বনে আমি তাদের কখানো দেখিনি।</p> <p>বন ছাতারে সামাজিক পাখি। প্রজনন মৌসুমে এরা উঁচু গাছে ঝোপালো শাখায় লতাপাতা, ঘাস, শুকনা শিকড় বিছিয়ে বাসা বানায়। বাসার আকার মাঝারি গোলাকার। বরিশালের গ্রামের রেইনট্রি, তেঁতুল ও আমগাছে এদের বাসা দেখেছি। এরা বাসা বানিয়ে চার থেকে সাতটি ঘন নীল বর্ণের ডিম পাড়ে। ছানা ফুটলে দলের পাখিরা সকলে মিলে ছানাদের যত্ন নেয়। এই পাখির ইংরেজি নাম ঔঁহমষব ইধননষবৎ। ১৮২৩ সালে ফরাসি প্রাণিবিদ চার্লস ডুমন্ট দে স্যান্তে  প্রথম এই পাখির বর্ণনা করেছিলেন।</p> <p> </p> <p>লেখক : নিসর্গী ও পরিবেশবিদ, জার্মান অ্যারোস্পেস সেন্টার</p> <p> </p>