<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তখন বিকেল ৩টা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে জড়ো হতে শুরু করে আগ্রহী সাধারণ মানুষ। বিস্ময় নিয়ে তারা দেখছিল, চত্বরটিতে জমাট বেঁধে আছে রঙিন ফেনার স্তূপ। তার ভেতর থেকে ধীরে বেরিয়ে আসছেন অচেনা এক মানুষ। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ফেনার স্তূপ থেকে বেরিয়ে আসার এ দৃশ্য একটি পরিবেশনার অংশ। ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সৃষ্ট স্লোগান </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শোনো মহাজন আমরা হাজারজন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> শিরোনামে গতকাল শনিবার বিশেষ এই পরিবেশনার আয়োজন করে শিল্পকলা একাডেমি। একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক মোস্তফা জামান জানান, মানুষ তার চারপাশে অহেতুক ফেনা তৈরি করে রাখে। নিজের তৈরি এই ফেনায় শেষে নিজেই হারিয়ে যায়। ফেনা থেকে বের হয়ে আসা মানে মুক্তি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ছাত্র-জনতার উচ্চারিত বহুত্ববাদী গণতন্ত্র, ধর্ম ও জাতিনিরপেক্ষ জনমুখী সংস্কৃতির বিকাশে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পারফরম্যান্স</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> শিল্পীদের নিয়ে দুই দিনের এই আয়োজন সাজানো হয়েছে। গত শুক্রবার ঢাবি চারুকলার বকুলতলায় ছিল প্রথম দিনের আয়োজন। সেখানে ছিল ৪১ জন শিল্পীর দলগত পরিবেশনা। প্রায় দুই ঘণ্টার সেই পরিবেশনায় শিল্পীরা দেহভঙ্গি দিয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, স্বৈরাচারের নির্মমতা, শেষে ছাত্র-জনতার বিজয় তুলে ধরেছেন। আয়োজনটির শুরুতে ছিল বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে অনির্ধারিত পাঠ। আরো ছিল ছাতা হাতে রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা কবিতার আবৃত্তিও।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গতকাল স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে ছিল প্রায় তিন ঘণ্টার পরিবেশনা। সেখানে দুজন কোরীয় শিল্পীসহ মোট ১০ জন শিল্পীর পৃথক পরিবেশনা ছিল। শৈল্পিক এই পরিবেশনার একটি দৃশ্যে কালো পোশাকে মুখোশ পরা এক তরুণী উচ্চকণ্ঠে বারবার বলতে থাকেন </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শোনো মহাজন আমরা হাজারজন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> কথাটি। সেখানে ভিড় জমানো মানুষকে একে একে জিজ্ঞেস করতে থাকেন তাদের কী নাম! দুই হাতে থাকা দীর্ঘ দুটি সাদা কাগজ তুলে ধরে জানতে চান, এই তালিকায় তাদের কারো নাম আছে কি না? এরপর আবারও উচ্চকণ্ঠে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শোনো মহাজন আমরা হাজারজন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> বলতে বলতে তালিকাটি তিনি ছিঁড়ে ফেলেন। ফুঁ দিতে থাকেন বাঁশিতে। ভেঙে ফেলেন নিজের মুখোশ। সেই ছিন্ন তালিকা কুড়িয়ে এনে আগুন ধরিয়ে দেন আরেকজন। এরপর সেই ছাই দিয়ে দুটি কাগজে ইংরেজি হরফে লেখেন </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এশিয়ান পিস</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এমন আরো কয়েকটি টুকরো দৃশ্য তৈরি করা হয় পরিবেশনাটিতে। সব দৃশ্যই প্রতীকী ও বহুমাত্রিক। এসব দৃশ্যান্তরের মধ্য দিয়ে তুলে ধরা হয় বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মসংগ্রাম। বহু মত ও পথের মানুষের উপস্থিতি, শান্তি-সম্প্রীতির লড়াই। পরিবেশনার এক পর্যায়ে পুরো শরীরে দড়ি পেঁচিয়ে একজন তরুণী দর্শকদের সামনে গিয়ে দাঁড়ান। তার কাঁধ থেকে মাথা পর্যন্ত চারকোনা আয়নায় ঢাকা। যখনই কারো সামনে গিয়ে তিনি দাঁড়াচ্ছিলেন, তখন আয়নায় নিজের মুখটিই দেখতে পাচ্ছিলেন প্রত্যেক দর্শক। মুখঢাকা সেই আয়না খুলে তরুণী চেষ্টা করতে থাকেন শরীরে প্যাঁচানো দড়িটি খোলার। তাকে সহায়তায় এগিয়ে আসেন আপাদমস্তক বোরকায় ঢাকা এক তরুণী দর্শক। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তরুণী বাঁধনমুক্ত হওয়ার পর শোনা যায় জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত কবিতার পঙক্তি</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আবার আসিব ফিরে ধানসিড়িটির তীরে এই বাংলায়/হয়তো মানুষ নয় হয়তো বা শঙ্খচিল শালিকের বেশে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> এ সময় একগুচ্ছ গোলাপ হাতে হাজির হন এক নারী। তিনি একটি-দুটি করে গোলাপ চিবিয়ে খেতে থাকেন। তার সংক্ষিপ্ত উপস্থিতির পর রঙিন ফেনার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসেন আরেকজন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পরিবেশনাটির প্রায় শেষ পর্যায়ে লাল কাপড়ে নাক-মুখ ঢাকা এক তরুণকে দেখা যায় বাঁশে সরিষার তেল মাখতে। সেই বাঁশ নিয়ে চোখঢাকা তরুণ খুঁজতে থাকেন মাটিতে রাখা একটি হেলমেট। বেশ কিছু সময় চেষ্টার পর মাটিতে থাকা সেই হেলমেটের ওপর বাঁশের লাঠির সজোর আঘাতে তা ভেঙে টুকরা টুকরা হয়ে যায়।</span></span></span></span></p>