<p>ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে শেখ হাসিনার তৈরি করা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা হাজার হাজার মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে। আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে গণতন্ত্রকামী নাগরিকরা গুম-খুন ও বর্বর নির্যাতনের শিকার হয়েছে। জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সব মত-পথের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে ফ্যাসিবাদকে দেশ থেকে বিদায় করেছে। শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার নিশ্চিতে একইভাবে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।</p> <p>গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী জুলুমে ভুক্তভোগীদের গণজমায়েত কর্মসূচিতে বক্তারা এসব কথা বলেন। আওয়ামী শাসনামলে গুম-খুনের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারগুলোর সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ এই গণজমায়েতের আয়োজন করে।</p> <p>সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা যারা আজ এখানে এসেছি, তারা বিগত সাড়ে ১৫ বছরে কোনো না কোনোভাবে ফ্যাসিবাদের নিপীড়নের শিকার হয়েছি। নিপীড়িতদের কোনো দল থাকে না। আমাদের একটাই পরিচয়—মজলুম। আজকে সব মজলুম আমরা এক পাটাতনে দাঁড়িয়েছি। এই নিপীড়িত মানুষ ও পরিবারগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এই ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য আমাদের একটি জাতীয় মঞ্চ গঠন করা প্রয়োজন বলে মনে করি।’</p> <p>আওয়ামী লীগকে যারা পুনর্বাসনের চেষ্টা করবে, তারা গণশত্রু হিসেবে চিহ্নিত হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, হাসিনা সরকারের আমলে মানবাধিকার হরণ করা হয়েছে, গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। যত দুঃশাসন ও লুটপাট হয়েছে, তার তালিকা করে শেষ করা যাবে না। একটি দল বারবার মানবাধিকার হরণ করেছে, তাদের বিদায় হয়ে গেছে। ভারতকে বলতে চাই, এটি আওয়ামী লীগের বাংলাদেশ নয়, ফ্যাসিবাদের বাংলাদেশ নয়। বাংলাদেশের সঙ্গে আত্মমর্যাদার ভিত্তিতে, ন্যায্যতার ভিত্তিতে কথা বলতে হবে।</p> <p>সমাবেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পাঠানো বার্তা পাঠ করেন দলটির আন্তর্জাতিক সেলের সদস্য ইশরাক হোসেন। বার্তায় তারেক বলেন, ‘শেখ হাসিনা জাতিসংঘের মানবাধিকারের ঘোষণাপত্রকে অগ্রাহ্য করে ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার চেষ্টা করেছে। পতিত খুনি হাসিনা এ জন্য দেশের জনগণের ওপর অমানবিক অত্যাচার চালিয়েছে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ভোটাধিকার হরণ, গুম, গুপ্তহত্যা-খুনের মাধ্যমে দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ভূলুণ্ঠিত করেছে। আন্তর্জাতিক তদন্ত এবং অব্যাহত সমালোচনা সত্ত্বেও একদলীয় শাসন কায়েমের মাধ্যমে ক্রমাগত মানবাধিকার লঙ্ঘন করে দেশকে কারাগারে পরিণত করেছিল। বিএনপির সাহসী নেতাকর্মীরা হাতের মুঠোয় প্রাণ নিয়ে গত দেড় দশক যাবৎ দুর্বার আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে গেছে। জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের রক্তাক্ত পাটাতন নির্মাণ করে দিয়েছে তারা।’</p> <p>জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, সব গুম-খুন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাস্টারমাইন্ড শেখ হাসিনা। তার মতো ফ্যাসিবাদীর বিচার না হলে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা ভূলুণ্ঠিত হবে।</p> <p>বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেন, বাংলাদেশের মানুষ সত্য অনুসরণ করে, আইন অনুসরণ করে, মানবাধিকার অনুসরণ করে। তারা অর্থ-বিত্তের বিরুদ্ধে গিয়ে মৌলিক অধিকার চায়; যার প্রমাণ জুলাইয়ের অভ্যুত্থান। তারা জীবন দিয়েছে, তবে গণতন্ত্রকে রক্ষা করেছে।</p> <p>নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো নতুন বাংলাদেশ গড়তে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সামনে নির্বাচন আসছে, তখন হয়তো দলগুলো একে অন্যের বিরুদ্ধে কথা বলবে। তবে নির্বাচনের লড়াইয়ের মধ্যেও ফ্যাসিবাদীদের বিচারের দাবিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।</p> <p>গুম কমিশনের সদস্য ও মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলেন, বিগত সাড়ে ১৫ বছরে গুম-খুনের শিকার ব্যক্তি ও পরিবারগুলো ৫ আগস্টের পর থেকে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছে। শিগগিরই এসব বিষয়ে বিস্তারিত প্রকাশ করব।</p> <p>গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, শেখ হাসিনার বিচার নিশ্চিতে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ফ্যাসিবাদ এখনো পরাস্ত হয়নি, রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে রয়েছে।</p> <p>এবি পার্টির সদস্যসচিব মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘মত ও পথের দূরত্ব থাকার পরও আমরা সব ভুলে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম। নতুন প্রজন্ম জীবন দিয়ে আমাদের হাতে নতুন বাংলাদেশ তুলে দিয়েছে। শেখ হাসিনার হাতে সংঘটিত গুম-খুনের বিচার নিশ্চিতে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।’</p> <p>বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, আওয়ামী লীগের বিচার কোনো প্রতিহিংসার বিষয় নয়, গত সাড়ে ১৫ বছরের গুম-খুনের ঘটনার ন্যায়বিচারের বিষয়।</p> <p>বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, শহীদের রক্ত শুকানোর আগে অনেক মুরব্বি আওয়ামী লীগকে ক্ষমার কথা বলছেন, নির্বাচনে আনার কথা বলছেন। আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিতের আগে তাদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করলে সেটি শহীদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করা হবে।</p> <p>মায়ের ডাকের সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম তুলির সভাপতিত্বে গণজমায়েতে আরো বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব আরিফ সোহেল, হেফাজতে ইসলামের কোষাধ্যক্ষ মুফতি মুনির হোসাইন কাশেমীসহ আওয়ামী লীগের আমলে গুম-খুন ও নিপীড়নের শিকার ব্যক্তি ও পরিবারগুলোর সদস্যরা।</p> <p> </p>