<p><span style="color:#d35400"><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">না সজনী না, আমি জানি জানি সে আসিবে না</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> কিংবা </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহ দহন লাগে। তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ রকম বহু রবীন্দ্রসংগীত যার কণ্ঠেরজাদুতে অনন্যরূপে শ্রোতার মন উন্মন করে, সেই বরেণ্য রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী পাপিয়া সারোয়ার পাড়ি জমালেন অনন্তলোকে। তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর </span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">পাপিয়া আপার সঙ্গে আমার সম্পর্কটা দীর্ঘদিনের। যদিও তিনি অনেক সিনিয়র। আমার চেয়ে অন্তত ২০ বছরের বড় তো হবেনই। ছোটবেলা থেকে আপার গান শুনেছি টেলিভিশনে। অনেক অনুপ্রাণিতও হতাম তখন। আমি যখন শান্তি নিকেতনে পড়তাম তখনো আপা আমাকে গান শিখিয়েছেন। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তার বাড়িতে যাওয়ার অনুমতি কম মানুষের ছিল। যে কয়েকজন তার বাড়িতে যেতে পারতেন, তাদের মধ্যে আমি ছিলাম অন্যতম। আপা বেশ কয়েক বছর ধরে ক্যান্সারের সঙ্গে লড়েছেন। প্রথম দিকে আমি নিয়মিত দেখতে যেতাম। তবে শেষের দিকে আর যাইনি। অনেকটা ইচ্ছা করেই এড়িয়ে গিয়েছি। কারণ আপা আমাকে দেখলে ভেঙে পড়তেন। অনেক স্মৃতিচারণা করতেন। তা ছাড়া বলতেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">হয়তো আর বাঁচব না!</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">। আপার কথা শুনে আমার খুব কষ্ট হতো। চোখে পানি নামত। কিন্তু তাকে বুঝতে দিতাম না। শেষদিকে মনে হয়েছে, আপার সামনে যাওয়া উচিত হবে না। কারণ আমাকে দেখলেই তিনি ভেঙে পড়েন। হয়তো ভাবতেন, তার জীবনীশক্তি কমে আসছে বলেই আমি বারবার দেখতে যাচ্ছি।</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বাংলাদেশে যে কয়েকজন গুণী রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী আছেন তাদের মধ্যে পাপিয়া আপা অন্যতম। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে রবীন্দ্রসংগীত চর্চা শুরু হয়েছে পাপিয়া আপাদের হাত ধরেই। তিনি আজ আমাদের মাঝে নেই, এটা ভাবতেই খারাপ লাগছে। সবাইকে এক দিন চলে যেতে হবে</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এটা চিরন্তন সত্য। তবে এই সত্যটা মেনে নেওয়া সবচেয়ে কঠিন। ধীরে ধীরে আমরা গুণীজনদের হারিয়ে ফেলছি। মিতা হক আপা চলে গেলেন, সাদী মহম্মদ ভাই চলে গেলেন, এবার চলে গেলেন পাপিয়া আপা। তার প্রস্থানে আমি যেমন শোকাহত, নিশ্চয়ই সমানভাবে তার শ্রোতারাও। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">রবীন্দ্রসংগীত চর্চাকে পাপিয়া আপা তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। সারা দেশে সম্মেলন করেছেন। তিনি রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন পরিষদের সেক্রেটারি থাকার সময় আমাকে নিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকেও আমাকে সঙ্গে রাখতেন। খুব মিশুক প্রকৃতির মানুষ ছিলেন পাপিয়া আপা। অল্প সময়ের মধ্যে মানুষের আপন হয়ে যেতেন। মনের মণিকোঠায় ঠাঁই করে নিতেন। এমন মানুষ এত দ্রুত চলে যাওয়াটা সংগীতের জন্য ক্ষতি। আরেকজন পাপিয়া সারোয়ার আর কবে আসবেন বা আদৌ আসবেন কি না তা জানি না।<br /> এখন তো শুদ্ধসংগীত চর্চা কম হচ্ছে। রবীন্দ্রসংগীত শিল্পীদের মধ্যেও অতটা সিরিয়াস মনোভাব নেই। অথচ এই মানুষগুলো রবীন্দ্রসংগীতের জন্য নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। ধ্যানে-জ্ঞানে ছিল রবীন্দ্রসংগীত। আমরা দিনে দিনে সব অগ্রজকে হারিয়ে ফেলছি। এক দিন আমরাও থাকব না। তখন জানি না রবীন্দ্রসংগীত বা নজরুলগীতির চর্চা হবে কি না! রবীন্দ্রনাথের দর্শন আগামী প্রজন্ম কতটুকু ধারণ করতে পারবে সেটাও ভবিষ্যৎ বলতে পারবে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আমার একটাই চাওয়া, সাদী ভাই, মিতা আপা, পাপিয়া আপারা যেন কালের আবর্তে হারিয়ে না যান, সেদিকে সরকার খেয়াল রাখুক। দরকার পড়লে তাদের অ্যালবামগুলো সংগ্রহে রাখতে একটা আর্কাইভ করা হোক আলাদা করে। তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানতে পারবে। তাদের আদর্শে বড় হতে পারবে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">পাপিয়া আপার জন্য অনেক দোয়া রইল। না ফেরার দেশে তিনি ভালো থাকুন। </span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">লেখক : রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী </span></span></span></span></span></p> <p> </p>