<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর এলাকায় গত ১০ ডিসেম্বর সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে মানহীন সার কারখানা বন্ধে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একটি অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিন্তু একটি মানহীন সার কারখানার কর্তৃপক্ষ সেই ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রবেশ করতে দেয়নি। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়। কারখানা কর্তৃপক্ষের লোকজনের অসৌজন্যমূলক সেই ঘটনার ভিডিও এ প্রতিবেদকের কাছে এসেছে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সারা দেশে মানহীন ও ভেজাল নন-ইউরিয়া সারের যে বিস্তার ঘটেছে তার একটি ছোট উদাহরণ এটি। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অথবা কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় দেশের আনাচকানাচে গড়ে উঠছে মানহীন বিভিন্ন সার কারখানা। মানহীন সার কারখানা কেন বন্ধ করতে পারলেন না এমন বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সাতক্ষীরার সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনির হোসেন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাজধানীর পাশের জেলা গাজীপুরের বিভিন্ন উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে গড়ে উঠেছে মানহীন ও ভেজাল সার কারখানা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের গোপন তথ্যের ভিত্তিতে এসব সার কারখানার খোঁজও মিলছে। কিন্তু এসব সার কারখানা বন্ধ করা যাচ্ছে না বিধায় প্রতারিত হচ্ছেন কৃষকরা। এতে কৃষিপণ্যের ফলন কম হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মাটি, পানি ও পরিবেশ।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের (এসআরডিআই) সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে, দেশে ব্যবহৃত নন-ইউরিয়া সারের প্রায় ২৮ শতাংশই মানহীন। ১৩ ধরনের সারের ২৭৮টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৮১টি নমুনার মান সঠিক পাওয়া গেছে। আর ৭৭টি নমুনার মান সঠিক পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বেশি মানহীন সার হিসেবে এনপিকেএস, এমওপি ও জিংক সালফেট মনোহাইড্রেটের নাম উঠে এসেছে। নমুনা পরীক্ষায় আসা এনপিকেএস ও এমওপি সারের শতভাগই মানহীন পাওয়া গেছে। অন্যদিকে জিংক সালফেট মনোহাইড্রেট সারের মধ্যে মানহীন পাওয়া গেছে ৫৩ শতাংশ। এ ছাড়া ২৪ শতাংশ অর্গানিক ফার্টিলাইজার ও ২২ শতাংশ জিংক সালফেট হেপ্টাহাইড্রেট সার মানহীন পাওয়া গেছে। শতভাগ সঠিক মান পাওয়া গেছে তিনটি সারে। সেগুলো হলো ডিএপি, বোরন ও এসওপি। তুলনামূলক কম পরিমাণ মানহীন জিপসাম ও বরিক এসিড। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সারা দেশে প্রতিবছর প্রায় সাড়ে আট লাখ টন এমওপি সার ব্যবহার করা হয়। প্রায় শতভাগ আমদানির মাধ্যমে এই সারের চাহিদা মেটানো হয়। ফলে সংরক্ষণ ও বিপণনগত ত্রুটির কারণে এই সার মানহীন হয়ে পড়ছে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, দেশে সারের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৬৬ লাখ টন। এর মধ্যে ২৬ লাখ টন ইউরিয়া, সাড়ে সাত লাখ টন টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট), সাড়ে ১৬ লাখ টন ডিএপি (ডাই-অ্যামোনিয়া ফসফেট) এবং সাড়ে আট লাখ টন এমওপি সারের চাহিদা রয়েছে। এ ছাড়া অনান্য সারের চাহিদা প্রায় আট লাখ টন। ইউরিয়া সার কিছুটা দেশে উৎপাদন হলেও টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি সার আমদানি করা হয়। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি দিতে হয়েছে সরকারকে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">খাত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে সারের চাহিদা বাড়লেও সরকারি বা বেসরকারিভাবে সার সংরক্ষণের জন্য মজুদ সক্ষমতা বাড়ছে না। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ও বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) মাধ্যমে সারা দেশে সার সরবরাহ করা হয়। সরকারি এ দুই প্রতিষ্ঠানে গুদামের ধারণক্ষমতা ১০ লাখ টনের নিচে। ফলে সার অনেক সময় খোলা আকাশের নিচে রাখতে হয়। এতে সার জমাট বেঁধে যায়, অপচয় হয় এবং আর্দ্রতার কারণে সারের গুণগত মান নষ্ট হয়। মানসম্পন্ন সারের সঠিক মাত্রায় ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে জমির উর্বরাশক্তি ও পরিবেশের ভারসাম্য যেমন ঠিক রাখা সম্ভব হবে, তেমনি সরকারের ভর্তুকি ব্যয় কমিয়ে আনা সম্ভব।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ বিষয়ে কৃষিসচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান কালের কণ্ঠকে জানান, উৎপাদন ও বিপনন ত্রুটির কারণে দেশে মানহীন নন-ইউরিয়া সারের বিস্তার হয়েছে। তবে সেটিকে থামানোর জন্য উৎপাদন থেকে বিপণন পর্যায়ের সব ধরনের দুর্বলতাকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। সব ধরনের কারখানা সঠিক প্রক্রিয়ায় হয়েছে কি না, সঠিক মাত্রায় উপকরণ দিয়ে সার উৎপাদন করা হচ্ছে কি না এসব দেখা হচ্ছে। কৃষকরা যাতে কোনোভাবেই সার কিনে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত না হন তার নিশ্চয়তা দিতে মন্ত্রণালয় থেকে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কৃষিসচিব বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সার ব্যবহারে যেমন কৃষকদের সচেতনতা বাড়ানো হচ্ছে, তেমনি মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের আরো কঠোরভাবে তদারকি করার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। কৃষি পণ্যের উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে আমাদের মূলমন্ত্র হলো- ভালো মানের সার সঠিক মাত্রায় ব্যবহার করা। যার মাধ্যমে কৃষক অনেক কম পরিমাণে সার ব্যবহার করে অধিক ফলন পেতে পারেন। মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য আমরা জৈব সারের ব্যবহার বাড়ানোরও উদ্যোগ নিচ্ছি। মানহীন সার উৎপাদন ও বিপণন কোনোভাবেই আমরা হতে দিতে চাই না।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p>