<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আওয়ামী লীগ আমলে তেলবাজির কারণেই অনেক প্রকল্প পাস হয়েছে। বিশেষ করে শেখ পরিবারের নামে কোনো প্রকল্প প্রস্তাব করা হলে সেটি বাদ দেওয়া হয়েছে এমন নজির নেই। ঠিক এমনই একটি প্রকল্প খুলনা ওয়াসার ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট। গোপালগঞ্জের মধুমতী নদী থেকে খুলনা শহরে পানি সরবরাহের ওই প্রকল্পটির পেছনে ব্যয় হয়েছে দুই হাজার ৬০০ কোটি টাকা। ওই ট্রিটমেন্ট প্লান্টটিরও নাম দেওয়া হয়েছিল </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বঙ্গবন্ধু ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। যেটির অবস্থান পূর্ব রূপসার <img alt="২৬শ কোটি টাকার মেগাপ্রকল্প ধ্বংসের পথে" height="320" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/12 December/14-12-2024/9999.jpg" style="float:left" width="343" />পাথরঘাটায়। যদিও ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পতিত সরকারের ঐতিহাসিক দিনেই সেটির নাম তড়িঘড়ি করে পাল্টে করা হয় </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। তবে ওই প্রকল্পটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যত দুর্নীতি হয়েছে সেটি এখনো খতিয়ে দেখা হয়নি। এরই মধ্যে খুলনা ওয়াসার তৎকালীন আলোচিত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ আমলের ও প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক থেকে শুরু করে যারাই এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তারা রয়েছেন বহাল তবিয়তে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সম্প্রতি রূপসার ওই প্লান্ট পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে, ল্যাবে থাকা দুইপাল্লার বড় ফ্রিজ এক বছরের বেশি সময় ধরে নষ্ট। কিট না থাকায় পানির মান পরীক্ষাও বন্ধ এবং পরীক্ষা ছাড়াই পানি সরবরাহ করা হয়, যা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে, আশঙ্কা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের। এ ছাড়া পুরো অ্যাডমিন বিল্ডিংয়ের বেশ কিছু এসি ঠিকমতো কাজ করছে না।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জেপিআরে ছয়টি সাবমারসিবল পাম্পের মধ্যে তিন নম্বর পাম্পটি প্রায় দেড় বছর এবং ছয় নম্বরটি দুই বছর ধরে নষ্ট হয়ে আছে বলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মচারী জানান। এ ছাড়া অপর চারটি পাম্পও বিভিন্ন সময় নষ্ট থাকে। আবার ফ্লো মিটার দুটিও দুই বছর ধরে নষ্ট। মেডিমেন্টেশনের আটটি মোটরের মধ্যে ছয়টি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। ১৬ নম্বর ফিল্টার চার বছর ধরে নষ্ট। আন্ডারগ্রাউন্ডে ৩২ স্টার বিডিটি মেশিন পড়ে রয়েছে। দুই পাশের আন্ডারগ্রাউন্ডের লাইট না থাকায় এলাকাটি সব সময় অন্ধকার। যেখানে দিনের বেলায়ও কাজ করার উপায় নেই।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্লান্টের প্রেসার চেঞ্জওভার ডিভাইসের একটি ছয় মাস ধরে নষ্ট। যার কারণে একটি পাম্প দিয়ে ড্রেজিং দেওয়া হয় না। ইউসিপি রুমের সব ইকুইপমেন্ট নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রাখতে এসি ব্যবহার করার কথা থাকলেও ওই রুমের এসি এক বছর ধরে নষ্ট। রিজার্ভার হিসেবে ব্যবহৃত পুকুরের দক্ষিণ এবং উত্তর পাশ ভেঙে পড়েছে অনেক আগেই। এ ছাড়া সীমানাপ্রাচীরের উত্তর পাশে ১০০ ফুটের মতো কাঁটাতার না থাকায় বাইরের মানুষ অনায়াসে যাতায়াত করতে পারে। সরোজমিন পরিদর্শনকালেও দেখা গেছে, বহিরাগতরা প্লান্টের ঘাস কেটে ভ্যান ভর্তি করে নিয়ে যাচ্ছে বাধাহীনভাবেই। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রকল্প এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওয়াসার কর্মকর্তাদের কেউ সেখানে তদারকি করতে গিয়ে থাকেন এমন নজির চোখে পড়েনি। শুধু ঊর্ধ্বতন কোনো কর্তৃপক্ষ কখনো পরিদর্শনে গেলে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে ঘষে মেজে সব কিছু পরিষ্কার করে রাখা হয়। তখনই কেবল দেখা মেলে স্থানীয় তদারককারীদের।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সম্প্রতি সরেজমিন পরিদর্শনকালে সেখানে ওয়াসার কোনো স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পাওয়া যায়নি। শুধু নিরাপত্তাসহ যারাই সেখানে কর্মরত আছেন সবাই আউটসোর্সিং কর্মী হিসেবে নিয়োজিত। এভাবে একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান অদক্ষতা ও দুর্নীতির কারণে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে গেলেও দায়িত্বপ্রাপ্তদের কোনো মাথাব্যথা নেই। এর কারণ হিসেবে একাধিক সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগ আমলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর ডিও লেটার নিয়ে পদায়ন হওয়ায় কেউ কেউ এটিকে অকার্যকর করার ষড়যন্ত্র করতে পারেন। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তবে খুলনা ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরমান সিদ্দিকী বলেন, ওয়াসায় জনবল সংকট রয়েছে। এ জন্য আউটসোর্সিং দিয়ে চালানো হচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রামের মতো খুলনা ওয়াসার বাজেটও নেই। এ জন্য কিছুটা মেইনটেন্যান্স সমস্যা রয়েছে। তবে নিয়মিত রিপোর্ট করা হচ্ছে। মেইনটেন্যান্সও হচ্ছে। মধুমতী নদীর মোল্লাহাট প্রান্তে প্রকল্পের ইনটেক্ট প্লান্ট থেকে শুরু করে ৩৪ কিলোমিটার পাইপলাইন হয়ে রূপসার ১১০ এমএলডি সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের রিজার্ভ পুকুরে পানি রাখা হয়। সেখান থেকে পরিশোধনের পরই রূপসা নদীর রিভারক্রসিং থেকে শহরের সাতটি রিজার্ভার এবং ১০টি ওভারহেড ট্যাংকের মাধ্যমে নগরবাসীকে পানি সরবরাহের জন্য ওই প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। প্রকল্পটি ২০১১ সাল থেকে শুরু হয়ে ২০১৮ সালে শেষ হয় এবং ২০১৯ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে এর যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন নগরীতে ৫০-৬০ হাজার লিটার পানি সরবরাহ করা হয় বলেও খুলনা ওয়াসার একটি সূত্র জানিয়েছে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অবশ্য খুলনা ওয়াসার মধুমতী নদীর পানি আনার ওই প্রকল্প নিয়ে শুরু থেকেই নগরবাসীর ছিল মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ না করেই গ্রহীত ওই প্রকল্পটি নিয়ে সচেতন নাগরিকদের পক্ষ থেকে বিরূপ মন্তব্য করা হয়েছিল। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ প্রসঙ্গে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) খুলনার সভাপতি অ্যাডভোকেট কুদরত-ই-খুদা বলেন, ওয়াসার ওই প্রকল্পটিই একটি অপরিকল্পিত ও প্রশ্নবিদ্ধ প্রকল্প। এমনিতেই মধুমতীর পানি এখন লবণাক্ত। তা ছাড়া একটি প্রকল্পের আগে আগামী এক শ বছরের পরিকল্পনা থাকা দরকার। তার কিছুই করা হয়নি ওই প্রকল্পের ক্ষেত্রে। শোনা যাচ্ছে, প্লান্টের যন্ত্রাংশ ক্রয়ের ক্ষেত্রেও দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। এগুলো </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ক্রিমিনাল অফেন্স</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">-এর আওতায় পড়ে। এমতাবস্থায় প্লান্টটি অকেজো হয়ে পড়লে শেষ পর্যন্ত কি খুলনাবাসীকে পরিশোধন বা ট্রিটমেন্ট ছাড়াই পানি দেবে খুলনা ওয়াসা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এমন প্রশ্নও দেখা দিয়েছে। তা ছাড়া ল্যাবরেটরিতে যদি সব কিছু পরীক্ষা না করেই পানি সরবরাহ করা হয় সেটিও তো একটি ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়। এ জন্য যারা এসব প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত শাস্তির আওতায় না আনা হলে এমন দুর্নীতি অনিয়ম চলতেই থাকবে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p>